বিজনেস আওয়ার ডেস্ক: ছুটির দিনেও বস আপনাকে ইমেইল করছেন বা কাজ শেষ হওয়ার পরেও অফিসের মেসেজ থেকে মুক্তি নেই? আপনি যদি অস্ট্রেলিয়ায় থাকেন, তাহলে এখন থেকে আর এ ধরনের পরিস্থিতিতে পড়তে হবে না। অফিসের ইমেইল-ফোন আসলেও তা অগ্রাহ্য করতে পারবেন কর্মীরা।
গত সোমবার (২৬ আগস্ট) অস্ট্রেলিয়ায় পাস হওয়া নতুন আইন বলছে, বেশিরভাগ ক্ষেত্রে কাজের সময়ের বাইরে পাঠানো ইমেইল না পড়লে বা ফোন না ধরলে সেই কর্মীকে কোনো শাস্তি দেওয়া যাবে না।
এই আইনের সমর্থকদের মতে, অফিসের ফোন বা ইমেইল মানুষের ব্যক্তিগত জীবনের ব্যাঘাত ঘটায়। নতুন আইন তার বিরুদ্ধে একটি কড়া বার্তা দেবে।
অস্ট্রেলিয়ার সুইনবার্ন প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর জন হপকিন্স বলেন, ডিজিটাল প্রযুক্তি আসার আগে এমন অনধিকার চর্চা ছিল না। মানুষ কাজ শেষ করে বাসায় যেতেন। পরের দিন কাজে ফেরা পর্যন্ত কোনো যোগাযোগ থাকতো না। কিন্তু এখন ইমেইল, মেসেজ, ফোনকল সবই আসতে থাকে কাজ শেষ হওয়ার পরেও, এমনকি ছুটির দিনেও।
অস্ট্রেলিয়া ইনস্টিটিউট গত বছর একটি জরিপ চালিয়েছিল, যেখানে দেখা যায়, ২০২৩ সালে অস্ট্রেলীয়রা গড়ে ২৮১ ঘণ্টা বাড়তি বেতনবিহীন কাজ করেছেন। এই কাজের আর্থিক মূল্য দাঁড়ায় ১৩০ বিলিয়ন অস্ট্রেলীয় ডলারের সমান (৮ হাজার ৮০০ কোটি মার্কিন ডলার)।
ইউরোপ এবং লাতিন আমেরিকার কয়েকটি দেশেও এমন আইন রয়েছে। এবার সেই তালিকায় যুক্ত হলো অস্ট্রেলিয়াও।
বিজ্ঞাপন খাতে কর্মরত রেচেল আবদেলনুরের মতে, এই আইন তাকে নিজের জন্য সময় বের করতে সাহায্য করবে। তিনি বলেন, এমন আইন থাকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমরা এত সময় কাটাই আমাদের ফোনে, সারাক্ষণ ইমেইল চেক করতে থাকি। আজকাল সত্যিই বিচ্ছিন্ন থাকা খুব কঠিন।
যে ধরনের কাজের ক্ষেত্রে কোনো বাঁধাধরা সময় থাকে না বা জরুরি পরিস্থিতিতে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা কাউকে যোগাযোগ করতে চেষ্টা করলে সেই কর্মী নির্দিষ্ট কিছু ক্ষেত্রে তা ফেরাতে পারেন।
এক্ষেত্রে কোন দাবি যুক্তিযুক্ত এবং কোনটি নয়, তা ঠিক করবে অস্ট্রেলিয়ার ফেয়ার ওয়ার্ক কমিশন। এই সংস্থা প্রতিটি কর্মীর কাজের ধরন, তার ব্যক্তিগত জীবন ও কোন সময়ে ও পরিস্থিতিতে তার সঙ্গে বস যোগাযোগ করেন, এসব খতিয়ে দেখবে।
কোনো কর্মীকে এই আইন ভঙ্গের জন্য ১৯ হাজার অস্টেলীয় ডলার পর্যন্ত জরিমানা করা হতে পারে। আর সংস্থার জন্য জরিমানার পরিমাণ যেতে পারে ৯৪ হাজার অস্টেলীয় ডলার পর্যন্ত।
কিন্তু অস্ট্রেলিয়ার কিছু উদ্যোক্তা ও ব্যবসায়ী সংস্থাদের অভিযোগ, এই আইন কর্মী ও তাদের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের মধ্যে অস্পষ্টতা সৃষ্টি করবে। এতে কাজে বৈচিত্র্য কমবে ও অর্থনীতির ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।
সূত্র: রয়টার্স, ডয়েচে ভেলে
বিজনেস আওয়ার/ ২৭ আগস্ট / হাসান