বিজনেস আওয়ার প্রতিবেদক : রাইট শেয়ার ইস্যুর মাধ্যমে শেয়ারবাজার থেকে বড় অর্থ সংগ্রহের পরেও নিয়মিতভাবে বোনাস শেয়ার ঘোষণা করছে জিপিএইচ ইস্পাতের পরিচালনা পর্ষদ। যার ব্যতিক্রম হয়নি ২০১৯-২০ অর্থবছরের ব্যবসায়ও। অথচ কোম্পানিটির মুনাফা আগের অর্থবছরের তুলনায় এক-তৃতীয়াংশে নেমে এসেছে। এছাড়া একই গ্রুপের এমআই সিমেন্টের ব্যবসাও নাজুক হয়ে পড়েছে। যে কোম্পানিটির পরিচালকদেরকে আর্থিক অনিয়মের দায়ে সম্প্রতি শাস্তি প্রদান করেছে বংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
কোম্পানিটির ২০১৮-১৯ অর্থবছরে শেয়ারপ্রতি ২.২৪ টাকা করে মোট ৮০ কোটি ৬২ লাখ টাকার মুনাফা হয়েছিল। যা ২০১৯-২০ অর্থবছরে শেয়ারপ্রতি ০.৭৯ টাকা করে মোট ২৯ কোটি ৮৮ লাখ টাকার মুনাফা হয়েছে। ওই অর্থবছরের শেষ প্রান্তিকে করোনা মহামারির প্রভাব পড়ার আগেই কোম্পানিটির ৩য় প্রান্তিকে মুনাফায় ধস নামে।
জিপিএইচ ইস্পাত ২০০৮ সালে ব্যবসায় শুরু করে। এরপরে ৪ বছরের মাথায় ২০১২ সালে শেয়ারবাজারে আসে। ওইসময়ে কোম্পানিটি প্রতিটি শেয়ার ৩০ টাকা (প্রিমিয়াম ২০ টাকা) দরে ইস্যুর মাধ্যমে ৬০ কোটি টাকা সংগ্রহ করে। এর ৪ বছর পরে (২০১৬ সাল) এসে ১৪ টাকা দরে ১৮ কোটি ৭১ লাখ ১০ হাজার রাইট শেয়ার ইস্যু করে। এর মাধ্যমে কোম্পানিটি শেয়ারবাজার থেকে ২৬১ কোটি ৯৫ লাখ ৪০ হাজার টাকা সংগ্রহ করে। কিন্তু তারপরেও কোম্পানিটির পর্ষদ বোনাস শেয়ার থেকে বেরোতে পারেনি।
আরও পড়ুন……
১১২ টাকা ইস্যু মূল্যের এমআই সিমেন্ট দেয় ১ টাকা লভ্যাংশ
এমআই সিমেন্টের প্রত্যেক পরিচালককে ১০ লাখ টাকা জরিমানা
দীর্ঘদিন ধরে পরিচালকদের ব্যক্তিগত কোম্পানিতে বিনাসুদে শত শত কোটি টাকার ঋণ প্রদান
ড্রাগণ সোয়েটার ও ওয়াইম্যাক্সের শুধুমাত্র বোনাস ঘোষণা, দিতে হবে অতিরিক্ত কর
২৮ কোম্পানির লভ্যাংশ ঘোষণা
সোনালি পেপার অতিরিক্ত কর দিতে রাজি, তবুও অর্ধেক নগদ লভ্যাংশ দেবে না
২০১৬ সালে রাইট শেয়ার ইস্যুর পরে ২০১৬-১৭ অর্থবছরের ব্যবসায় কোম্পানিটির পর্ষদ ৫ শতাংশ নগদ ও ৫ শতাংশ বোনাস শেয়ার ঘোষণা করে। যা ২০১৭-১৮ অর্থবছরে শুধুমাত্র ১০ শতাংশ বোনাস শেয়ার এবং ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ৫ শতাংশ নগদ ও ৫ শতাংশ বোনাস শেয়ার ঘোষণা করা হয়। আর সর্বশেষ ২০১৯-২০ অর্থবছরের ব্যবসায় ৫ শতাংশ নগদ ও ৫ শতাংশ বোনাস শেয়ার ঘোষণা করা হয়েছে। অর্থাৎ রাইট শেয়ার ইস্যুর মাধ্যমে কোম্পানিটি বড় অর্থ সংগ্রহের পরেও নিয়মিত বোনাস শেয়ার দিয়ে যাচ্ছে।
নিয়মিত বোনাস শেয়ার প্রদান ও ২০১৬ সালে রাইট ইস্যুর মাধ্যমে কোম্পানিটির বর্তমানে পরিশোধিত মূলধন দাড়িঁয়েছে ৩৭৮ কোটি ২০ লাখ টাকা। যার পরিমাণ আইপিও পূর্ব ছিল মাত্র ৫০ কোটি টাকা। অর্থাৎ তালিকাভুক্তির পরে কোম্পানিটির পরিশোধিত মূলধন বাড়ানো হয়েছে ৩২৮ কোটি ২০ লাখ টাকা বা ৬৫৬ শতাংশ। এছাড়া ২০১৯-২০ অর্থবছরের ব্যবসায় আরও ১৮ কোটি ৯১ লাখ টাকার পরিশোধিত মূলধন বাড়ানোর ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।
২০১২ সালে জিপিএইচ শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্তির পরে কোম্পানিটির পর্ষদ ৯ বার লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে। এরমধ্যে ৪ বার শুধুমাত্র বোনাস শেয়ার ঘোষণা করেছে। আর ৩ বার বোনাস শেয়ারের পাশাপাশি নগদ লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে। আর ২ বার শুধুমাত্র নগদ লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে।
কোম্পানিটির ২০১৯-২০ অর্থবছরে শেয়ারপ্রতি ০.৭৯ টাকা হিসেবে মোট ২৯ কোটি ৮৮ লাখ টাকার নিট মুনাফা হয়েছে। এরমধ্য থেকে ৫ শতাংশ বা শেয়ারপ্রতি ০.৫০ টাকা হিসাবে মোট ১৮ কোটি ৯১ লাখ টাকার নগদ লভ্যাংশ বিতরন করা হবে। অর্থাৎ মুনাফার ৬৩.২৯ শতাংশ শেয়ারহোল্ডারদের মাঝে বিতরন করা হবে।
এদিকে ৫ শতাংশ বোনাস বা শেয়ারপ্রতি ০.৫০ টাকা হিসাবে ১৮ কোটি ৯১ লাখ টাকা দিয়ে পরিশোধিত মূলধন বাড়ানো হবে। মুনাফার অতিরিক্ত লভ্যাংশ ঘোষণা করা ৭ কোটি ৯৪ লাখ টাকার রিজার্ভ কমে আসবে।
উল্লেখ্য মঙ্গলবার (২৭ অক্টোবর) লেনদেন শেষে জিপিএইচ ইস্পাতের শেয়ার দর দাড়িঁয়েছে ২৭.১০ টাকায়।
বিজনেস আওয়ার/২৮ অক্টোবর, ২০২০/এস
2 thoughts on “রাইটে বড় অর্থ সংগ্রহের পরেও নিয়মিত বোনাস শেয়ার ঘোষণা”