ঢাকা , রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ভারতের জন্য ‘কূটনৈতিক মাথাব্যথা’ হয়ে উঠেছেন শেখ হাসিনা

  • পোস্ট হয়েছে : ০৫:৪৭ অপরাহ্ন, সোমবার, ২ সেপ্টেম্বর ২০২৪
  • 53

বিজনেস আওয়ার ডেস্ক: ছাত্র-জনতার অভূতপূর্ব অভ্যুত্থানের পর সাবেক প্রধানমন্ত্রীর ভারতে পালিয়ে যাওয়া ও সেখানেই অবস্থান করার চার সপ্তাহ পার হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে রাজনীতি বিশ্লেষকরা বলছেন, তাকে স্বাগত জানানো ভারতের জন্য কূটনৈতিক মাথাব্যথা হয়ে উঠেছেন শেখ হাসিনা।

এদিকে, যাদের নেতৃত্বে বাংলাদেশের ঐতিহাসিক এই অভ্যুত্থান সৃষ্টি হয়েছে, সেই শিক্ষার্থী প্রতিনিধিরা শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে এনে বিক্ষোভ চলাকালে নিরস্ত্র ছাত্র-জনতাকে হত্যার বিচার করতে চান। তবে আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, শেখ হাসিনাকে যদি বাংলাদেশে ফিরিয়ে দেওয়া হয়, তাহলে ঘনিষ্ঠ মিত্র ও প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক খারাপ হতে পারে।

বিরোধ নিষ্পত্তিকারী থিঙ্ক-ট্যাঙ্ক ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের টমাস কিন বলেন, হাসিনার পতনের কারণে ভারত এ অঞ্চলে তার সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ মিত্রকে হারিয়েছে। ভারত স্পষ্টতই শেখ হাসিনাকে বাংলাদেশে ফেরত দিতে চায় না। কারণ, এমনটি করলে নয়াদিল্লির ঘনিষ্ঠ মিত্র দেশগুলোর নেতারা ভাবতে পারেন, তারা বিপদে পড়লে শেষ পর্যন্ত ভারত তাদের রক্ষা করবে না।

আবার শেখ হাসিনার পতনের পর, বাংলাদেশে প্রকট হয়েছে ভারতবিদ্বেষ। ১৫ বছরেরও বেশি সময় ধরে যারা হাসিনার নির্মম নির্যাতনের শিকার হয়েছেন, তারা প্রকাশ্যে ভারতকে শত্রু বলে আখ্যা দিয়েছেন। এমনকি, সম্প্রতি দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে ভয়াবহ বন্যা হয়েছে, তার জন্যও সরাসরি ভারতকে দায়ী করেছে বাংলাদেশের সাধারণ জনগণের বিরাট একটি অংশ। সব মিলিয়ে মোদী সরকার বাংলাদেশে যে বিরাট প্রভাব বিস্তার করেছিল, তাতে ভাটা পড়তে শুরু করেছে।

বাংলাদেশের সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক নিয়েও দুশ্চিন্তায় পড়েছে ভারত। এমন পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক ঠিক রাখার ও ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে সমর্থনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।

কূটনৈতিক সমস্যা

গত ২২ আগস্ট বাংলাদেশ সরকার শেখ হাসিনার ‘ডিপ্লোম্যাটিক’ বা অফিসিয়াল পাসপোর্ট প্রত্যাহার করে নেওয়ায় ভারতে এখন তার অবস্থানের বৈধ ভিত্তিটা কী, সে প্রশ্নও উঠতে শুরু করেছে। ভারতীয় অনেক সূত্র বলছে, তারা বিষয়টি বোঝেন। তবে তাকে (হাসিনা) এই মুহূর্তে ফেরত পাঠানোর বিষয়ে মত নেই।

এই পটভূমিতে দিল্লিতে ভারতের শীর্ষ পর্যায়ের সরকারি কর্মকর্তা ও বিশ্লেষকদের সঙ্গে কথা বলে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি যে আভাস পেয়েছে, তা হলো- এই মুহূর্তে শেখ হাসিনাকে নিয়ে ভারতের সামনে কার্যত তিনটি পথ খোলা রয়েছে।

প্রথমত, বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রীর জন্য তৃতীয় কোনো দেশে আশ্রয়ের ব্যবস্থা করা, যেখানে তিনি নিরাপদে ও সুরক্ষিত পরিবেশে থাকার নিশ্চয়তা পাবেন।

দ্বিতীয়ত, শেখ হাসিনাকে রাজনৈতিক আশ্রয় (পলিটিক্যাল অ্যাসাইলাম) দিয়ে ভারতেই রেখে দেওয়া।

তৃতীয় পথটা হয়তো এখনই বাস্তবায়ন সম্ভব নয়– কিন্তু ভারতে কর্মকর্তা ও পর্যবেক্ষকদের একটি অংশ বিশ্বাস করেন, কিছুদিন পরে উপযুক্ত পরিস্থিতি এলে বাংলাদেশে শেখ হাসিনার ‘রাজনৈতিক প্রত্যাবর্তনে’র জন্যও ভারত চেষ্টা করতে পারে।

সূত্র: এএফপি, বিবিসি

বিজনেস আওয়ার/ সেপ্টেম্বর ০২ / হাসান

ফেসবুকের মাধ্যমে আপনার মতামত জানান:
ট্যাগ :

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার মেইলে তথ্য জমা করুন

ভারতের জন্য ‘কূটনৈতিক মাথাব্যথা’ হয়ে উঠেছেন শেখ হাসিনা

পোস্ট হয়েছে : ০৫:৪৭ অপরাহ্ন, সোমবার, ২ সেপ্টেম্বর ২০২৪

বিজনেস আওয়ার ডেস্ক: ছাত্র-জনতার অভূতপূর্ব অভ্যুত্থানের পর সাবেক প্রধানমন্ত্রীর ভারতে পালিয়ে যাওয়া ও সেখানেই অবস্থান করার চার সপ্তাহ পার হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে রাজনীতি বিশ্লেষকরা বলছেন, তাকে স্বাগত জানানো ভারতের জন্য কূটনৈতিক মাথাব্যথা হয়ে উঠেছেন শেখ হাসিনা।

এদিকে, যাদের নেতৃত্বে বাংলাদেশের ঐতিহাসিক এই অভ্যুত্থান সৃষ্টি হয়েছে, সেই শিক্ষার্থী প্রতিনিধিরা শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে এনে বিক্ষোভ চলাকালে নিরস্ত্র ছাত্র-জনতাকে হত্যার বিচার করতে চান। তবে আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, শেখ হাসিনাকে যদি বাংলাদেশে ফিরিয়ে দেওয়া হয়, তাহলে ঘনিষ্ঠ মিত্র ও প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক খারাপ হতে পারে।

বিরোধ নিষ্পত্তিকারী থিঙ্ক-ট্যাঙ্ক ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের টমাস কিন বলেন, হাসিনার পতনের কারণে ভারত এ অঞ্চলে তার সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ মিত্রকে হারিয়েছে। ভারত স্পষ্টতই শেখ হাসিনাকে বাংলাদেশে ফেরত দিতে চায় না। কারণ, এমনটি করলে নয়াদিল্লির ঘনিষ্ঠ মিত্র দেশগুলোর নেতারা ভাবতে পারেন, তারা বিপদে পড়লে শেষ পর্যন্ত ভারত তাদের রক্ষা করবে না।

আবার শেখ হাসিনার পতনের পর, বাংলাদেশে প্রকট হয়েছে ভারতবিদ্বেষ। ১৫ বছরেরও বেশি সময় ধরে যারা হাসিনার নির্মম নির্যাতনের শিকার হয়েছেন, তারা প্রকাশ্যে ভারতকে শত্রু বলে আখ্যা দিয়েছেন। এমনকি, সম্প্রতি দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে ভয়াবহ বন্যা হয়েছে, তার জন্যও সরাসরি ভারতকে দায়ী করেছে বাংলাদেশের সাধারণ জনগণের বিরাট একটি অংশ। সব মিলিয়ে মোদী সরকার বাংলাদেশে যে বিরাট প্রভাব বিস্তার করেছিল, তাতে ভাটা পড়তে শুরু করেছে।

বাংলাদেশের সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক নিয়েও দুশ্চিন্তায় পড়েছে ভারত। এমন পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক ঠিক রাখার ও ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে সমর্থনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।

কূটনৈতিক সমস্যা

গত ২২ আগস্ট বাংলাদেশ সরকার শেখ হাসিনার ‘ডিপ্লোম্যাটিক’ বা অফিসিয়াল পাসপোর্ট প্রত্যাহার করে নেওয়ায় ভারতে এখন তার অবস্থানের বৈধ ভিত্তিটা কী, সে প্রশ্নও উঠতে শুরু করেছে। ভারতীয় অনেক সূত্র বলছে, তারা বিষয়টি বোঝেন। তবে তাকে (হাসিনা) এই মুহূর্তে ফেরত পাঠানোর বিষয়ে মত নেই।

এই পটভূমিতে দিল্লিতে ভারতের শীর্ষ পর্যায়ের সরকারি কর্মকর্তা ও বিশ্লেষকদের সঙ্গে কথা বলে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি যে আভাস পেয়েছে, তা হলো- এই মুহূর্তে শেখ হাসিনাকে নিয়ে ভারতের সামনে কার্যত তিনটি পথ খোলা রয়েছে।

প্রথমত, বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রীর জন্য তৃতীয় কোনো দেশে আশ্রয়ের ব্যবস্থা করা, যেখানে তিনি নিরাপদে ও সুরক্ষিত পরিবেশে থাকার নিশ্চয়তা পাবেন।

দ্বিতীয়ত, শেখ হাসিনাকে রাজনৈতিক আশ্রয় (পলিটিক্যাল অ্যাসাইলাম) দিয়ে ভারতেই রেখে দেওয়া।

তৃতীয় পথটা হয়তো এখনই বাস্তবায়ন সম্ভব নয়– কিন্তু ভারতে কর্মকর্তা ও পর্যবেক্ষকদের একটি অংশ বিশ্বাস করেন, কিছুদিন পরে উপযুক্ত পরিস্থিতি এলে বাংলাদেশে শেখ হাসিনার ‘রাজনৈতিক প্রত্যাবর্তনে’র জন্যও ভারত চেষ্টা করতে পারে।

সূত্র: এএফপি, বিবিসি

বিজনেস আওয়ার/ সেপ্টেম্বর ০২ / হাসান

ফেসবুকের মাধ্যমে আপনার মতামত জানান: