ঢাকা , শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
জাতিসংঘের প্রতিবেদন

মিয়ানমারে বেসামরিকদের হত্যা ও নির্যাতন বাড়িয়েছে জান্তা

  • পোস্ট হয়েছে : ০১:১৩ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪
  • 44

বিজনেস আওয়ার ডেস্ক: মিয়ানমারের সামরিক সরকার বেসামরিক নাগরিকদের হত্যা ও গ্রেফতার ব্যাপকভাবে বাড়িয়েছে বলে জাতিসংঘের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। দেশটিতে ২০২১ সালের অভ্যুত্থানের পর থেকে লক্ষাধিক মানুষকে গ্রেফতার করা হয়েছে, যা বিরোধীদের চুপ করানোর প্রচেষ্টার অংশ বলে মনে করা হচ্ছে। খবর আল জাজিরা।

গতকাল মঙ্গলবার (১৭ সেপ্টেম্বর) জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাই কমিশনার ভলকার টার্ক কর্তৃক প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অভ্যুত্থানের পর থেকে মিয়ানমার সামরিক বাহিনী ৫ হাজার ৩৫০ জন বেসামরিককে হত্যা করেছে। এই মৃত্যুর মধ্যে ২ হাজার ৪১৪ জন ২০২৩ সালের এপ্রিল থেকে ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত সাম্প্রতিক প্রতিবেদনের সময়কালে মারা গেছেন, যা পূর্ববর্তী প্রতিবেদনের সময়ের তুলনায় ৫০ শতাংশ বেশি। শত শত মানুষ বিমান ও আর্টিলারি হামলায় নিহত হয়েছেন।

জাতিসংঘের মানবাধিকার দপ্তরের মিয়ানমার দলের প্রধান জেমস রোডহেভার বলেন, মানবাধিকার বিপর্যয়ের গভীরে ডুবে যাচ্ছে মিয়ানমার। জেনেভায় সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে রোডহেভার বলেন, মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী আইনি ব্যবস্থাকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে এই সংকট সৃষ্টি করেছে। প্রায় সকল প্রকার বিরোধিতাকে অপরাধ হিসেবে গণ্য করছে।

জাতিসংঘের প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে যে, অভ্যুত্থানের পর থেকে সারা দেশে প্রায় ২৭ হাজার ৪০০ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে এবং ধারণা করা হচ্ছে, সামরিক প্রশিক্ষণ কেন্দ্রগুলোতে তাদের রাখা হয়েছে। আটককৃতদের মধ্যে এমন শিশুরাও আছে, যাদের অভিভাবকদের খুঁজে পাওয়া যায়নি।

জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক মুখপাত্র লিজ থ্রসেল এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, অভ্যুত্থানের পর থেকে কমপক্ষে ১ হাজার ৮৫৩ জন মানুষ হেফাজতে মারা গেছেন, যার মধ্যে ৮৮ জন শিশু। তাদের মৃত্যুর কারণ জিজ্ঞাসাবাদে নির্যাতন, আটককালে অন্যান্য খারাপ আচরণের শিকার বা প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত করা।

বন্দিদের সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে রোডহেভার বলেন, যোগ করেন, বন্দিদের খাবার বা পানি ছাড়াই রাখা হতো। অনেক সময় সিলিং থেকে ঝুলিয়ে রাখা হয়। শক্ত বা ধারালো বস্তুর ওপর হাঁটু গেড়ে বসতে বা হামাগুড়ি দিতে বাধ্য করা হয়। সাপ বা পোকামাকড়ের মতো প্রাণী ছেড়েও ভয় দেখানো হয় বন্দিদের।

তিনি আরো বলেন, অন্যান্য বন্দিরা লোহা, বাঁশের লাঠি, বেত, রাইফেলের বাট, চামড়ার ফিতে, বৈদ্যুতিক তার এবং মোটরসাইকেলের চেন দিয়ে মারধরের কথা বলেছেন।

মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী জাতিসংঘের প্রতিবেদনের বিষয়ে এখনো কোনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি।

অভ্যুত্থানের পরের দমন-পীড়ন পর্যবেক্ষণ করা মানবাধিকার সংগঠন অ্যাসিসটেন্স অ্যাসোসিয়েশন ফর পলিটিকাল প্রিজনার্সের সাম্প্রতিক তথ্য অনুযায়ী, অভ্যুত্থানের পর থেকে কমপক্ষে ৫ হাজার ৬৬৫ জন বেসামরিক মানুষের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করা গেছে। তারা আরো ২ হাজার ৫০০ মৃত্যুর বিষয়টি যাচাই করছে।

বিজনেস আওয়ার/ সেপ্টেম্বর ১৮/ এ এইচ

ফেসবুকের মাধ্যমে আপনার মতামত জানান:
ট্যাগ :

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার মেইলে তথ্য জমা করুন

জাতিসংঘের প্রতিবেদন

মিয়ানমারে বেসামরিকদের হত্যা ও নির্যাতন বাড়িয়েছে জান্তা

পোস্ট হয়েছে : ০১:১৩ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪

বিজনেস আওয়ার ডেস্ক: মিয়ানমারের সামরিক সরকার বেসামরিক নাগরিকদের হত্যা ও গ্রেফতার ব্যাপকভাবে বাড়িয়েছে বলে জাতিসংঘের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। দেশটিতে ২০২১ সালের অভ্যুত্থানের পর থেকে লক্ষাধিক মানুষকে গ্রেফতার করা হয়েছে, যা বিরোধীদের চুপ করানোর প্রচেষ্টার অংশ বলে মনে করা হচ্ছে। খবর আল জাজিরা।

গতকাল মঙ্গলবার (১৭ সেপ্টেম্বর) জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাই কমিশনার ভলকার টার্ক কর্তৃক প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অভ্যুত্থানের পর থেকে মিয়ানমার সামরিক বাহিনী ৫ হাজার ৩৫০ জন বেসামরিককে হত্যা করেছে। এই মৃত্যুর মধ্যে ২ হাজার ৪১৪ জন ২০২৩ সালের এপ্রিল থেকে ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত সাম্প্রতিক প্রতিবেদনের সময়কালে মারা গেছেন, যা পূর্ববর্তী প্রতিবেদনের সময়ের তুলনায় ৫০ শতাংশ বেশি। শত শত মানুষ বিমান ও আর্টিলারি হামলায় নিহত হয়েছেন।

জাতিসংঘের মানবাধিকার দপ্তরের মিয়ানমার দলের প্রধান জেমস রোডহেভার বলেন, মানবাধিকার বিপর্যয়ের গভীরে ডুবে যাচ্ছে মিয়ানমার। জেনেভায় সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে রোডহেভার বলেন, মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী আইনি ব্যবস্থাকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে এই সংকট সৃষ্টি করেছে। প্রায় সকল প্রকার বিরোধিতাকে অপরাধ হিসেবে গণ্য করছে।

জাতিসংঘের প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে যে, অভ্যুত্থানের পর থেকে সারা দেশে প্রায় ২৭ হাজার ৪০০ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে এবং ধারণা করা হচ্ছে, সামরিক প্রশিক্ষণ কেন্দ্রগুলোতে তাদের রাখা হয়েছে। আটককৃতদের মধ্যে এমন শিশুরাও আছে, যাদের অভিভাবকদের খুঁজে পাওয়া যায়নি।

জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক মুখপাত্র লিজ থ্রসেল এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, অভ্যুত্থানের পর থেকে কমপক্ষে ১ হাজার ৮৫৩ জন মানুষ হেফাজতে মারা গেছেন, যার মধ্যে ৮৮ জন শিশু। তাদের মৃত্যুর কারণ জিজ্ঞাসাবাদে নির্যাতন, আটককালে অন্যান্য খারাপ আচরণের শিকার বা প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত করা।

বন্দিদের সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে রোডহেভার বলেন, যোগ করেন, বন্দিদের খাবার বা পানি ছাড়াই রাখা হতো। অনেক সময় সিলিং থেকে ঝুলিয়ে রাখা হয়। শক্ত বা ধারালো বস্তুর ওপর হাঁটু গেড়ে বসতে বা হামাগুড়ি দিতে বাধ্য করা হয়। সাপ বা পোকামাকড়ের মতো প্রাণী ছেড়েও ভয় দেখানো হয় বন্দিদের।

তিনি আরো বলেন, অন্যান্য বন্দিরা লোহা, বাঁশের লাঠি, বেত, রাইফেলের বাট, চামড়ার ফিতে, বৈদ্যুতিক তার এবং মোটরসাইকেলের চেন দিয়ে মারধরের কথা বলেছেন।

মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী জাতিসংঘের প্রতিবেদনের বিষয়ে এখনো কোনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি।

অভ্যুত্থানের পরের দমন-পীড়ন পর্যবেক্ষণ করা মানবাধিকার সংগঠন অ্যাসিসটেন্স অ্যাসোসিয়েশন ফর পলিটিকাল প্রিজনার্সের সাম্প্রতিক তথ্য অনুযায়ী, অভ্যুত্থানের পর থেকে কমপক্ষে ৫ হাজার ৬৬৫ জন বেসামরিক মানুষের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করা গেছে। তারা আরো ২ হাজার ৫০০ মৃত্যুর বিষয়টি যাচাই করছে।

বিজনেস আওয়ার/ সেপ্টেম্বর ১৮/ এ এইচ

ফেসবুকের মাধ্যমে আপনার মতামত জানান: