বিজনেস আওয়ার প্রতিবেদক: পোশাক শিল্পখাতে বিদ্যমান অস্থিরতা ও সমস্যা নিরসনে সরকারের কাছে ১৮টি দাবি উত্থাপন করেছে শ্রমিক পক্ষ। এদের মধ্যে মজুরি বোর্ড পুনর্গঠন করে মজুরি পুনর্নির্ধারণ ও বাৎসরিক ন্যূনতম ১০ শতাংশ ইনক্রিমেন্টের (বেতন বৃদ্ধি) দাবি ছিল।
তবে সেই দাবি মেনে নিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে মালিকপক্ষ বিজিএমইএ। সোমবার (২৩ সেপ্টেম্বর) বিজিএমইএ উত্তরা অফিসে এক জরুরি সাধারণ সভায় এ সিদ্ধান্তের কথা জানায় সংগঠনটি। কারণ হিসেবে তারা বিদ্যুৎ ও গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধি, শিল্পের অক্ষমতা এবং উৎপাদনের খরচ বৃদ্ধির কথা উল্লেখ করেছে।
সভা শেষে বিজিএমইএ সভাপতি খন্দকার রফিকুল ইসলাম বলেন, শ্রমিকদের যৌক্তিক যে দাবিগুলো আছে সেগুলো মানা হবে।
তিনি বলেন, কারখানায় পর্যাপ্ত নিরাপত্তা দিতে না পারলে আমরা বিজিএমইএর সব সদস্য সম্মিলিতভাবে কারখানা বন্ধ করে দিতে বাধ্য হবো।
এর আগে দুপুরে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের এক সভায় ১৮টি দাবি উত্থাপন করে শ্রমিক পক্ষ। এতে সভাপতিত্ব করেন শ্রম ও কর্মসংস্থান সচিব এ এইচ এম সফিকুজ্জামান।
শ্রমিকদের দাবিগুলো হলো
১. মজুরি বোর্ড পুনর্গঠনপূর্বক শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি পুনর্নির্ধারণ করতে হবে
২. যে সব কারখানায় ২০২৩ সালে সরকার ঘোষিত নিম্নতম মজুরি ও এখনো বাস্তবায়ন করা হয়নি তা দ্রুত বাস্তবায়ন করতে হবে
৩. শ্রম আইন সংশোধন করতে হবে
৪. কোনো শ্রমিকের চাকরি পাঁচ বছর পূর্ণ হওয়ার পর চাকরি থেকে অব্যাহতি দিলে/চাকরিচ্যুত হলে একটি বেসিকের সমান অর্থ প্রদান করতে হবে, এর সাথে সাংঘর্ষিক
শ্রম আইনের ২৭ ধারাসহ অন্য ধারাসমূহ সংশোধন করতে হবে
৫. সব প্রকার বকেয়া মজুরি অবিলম্বে পরিশোধ করতে হবে
৬. হাজিরা বোনাস (২২৫ টাকা), টিফিন বিল (৫০ টাকা), নাইট বিল (১০০ টাকা) সব কারখানায় সমান হারে বাড়াতে হবে
৭. সব কারখানায় প্রভিডেন্ড ফান্ড ব্যবস্থা চালু করতে হবে
৮. বেতনের বিপরীতে বাৎসরিক ইনক্রিমেন্ট ন্যূনতম ১০ শতাংশ নির্ধারণ করতে হবে
৯. শ্রমিকদের জন্য রেশনিং ব্যবস্থা চালু করতে হবে
১০. বিজিএমইএ কর্তৃক নিয়ন্ত্রিত বায়োমেট্রিক ব্ল্যাকলিস্টিং করা যাবে না; বায়োমেট্রিক তালিকা সরকারের নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে
১১. সব প্রকার হয়রানিমূলক এবং রাজনৈতিক মামলা প্রত্যাহার করতে হবে
১২. ঝুট ব্যবসার আধিপত্য বন্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে, প্রয়োজনে এ বিষয়ে আইন করতে হবে
১৩. কলকারখানায় বৈষম্যবিহীন নিয়োগ প্রদান করতে হবে
১৪. জুলাই বিপ্লবে শহীদ এবং আহত শ্রমিকদের ক্ষতিপূরণ এবং চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করতে হবে
১৫. রানা প্লাজা এবং তাজরীন ফ্যাশনস দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্তদের কল্যাণে তদন্তান্তে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে
১৬. শ্রম আইন অনুযায়ী সব কারখানায় ডে-কেয়ার সেন্টার স্থাপন করতে হবে
১৭. অন্যায্যভাবে শ্রমিক ছাঁটাই বন্ধ করতে হবে ও
১৮. নারী শ্রমিকদের মাতৃত্বকালীন ছুটির মেয়াদ ১২০ দিন নির্ধারণ করতে হবে।
সম্প্রতি বাংলাদেশের পোশাকশিল্পে অস্থিরতা চলছে। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের অনুপ্রেরণায় পোশাক খাতের শ্রমিকসহ বিভিন্ন গোষ্ঠী নতুন সরকারের কাছে দাবি-দাওয়া নিয়ে আন্দোলন করছে।
পোশাকশিল্প এলাকা হিসেবে পরিচিত সাভার, আশুলিয়া, গাজীপুর ও নারায়ণগঞ্জে প্রতিদিনই পোশাক শ্রমিকদের বিক্ষোভ ও সড়ক অবরোধের খবর পাওয়া যাচ্ছে।
শিল্পাঞ্চল আশুলিয়ায় আজ সকালে আব্দুল্লাহপুর-বাইপাইল সড়ক অবরোধ করেন শ্রমিকরা। পরে দুপুরে অবরোধ তুলে নেওয়া হয়। এদিন বন্ধ ছিল ৫২টি শিল্প-কারখানা।
এদিকে গাজীপুরের টঙ্গীতে চার দফা দাবিতে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন সিজন ড্রেসেস লিমিটেড নামের একটি কারখানার শ্রমিকরা। সোমবার সকাল পৌনে ১০টা থেকে টঙ্গী খাঁ পাড়া এলাকায় মহাসড়কে বিক্ষোভ শুরু করেন তারা।
এতে সেখানে যানচলাচল বন্ধ ও ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের উভয় পাশে কয়েক কিলোমিটারজুড়ে তীব্র যানজট দেখা দেয়। পরে বিকেল ৫টার দিকে অবরোধকারীরা মহাসড়ক থেকে চলে যান।
বিজনেস আওয়ার/ ২৩ সেপ্টেম্বর / রহমান