বিজনেস আওয়ার প্রতিবেদক: দেশে সরকার পটপরিবর্তনের পর আত্মগোপনে বা বিদেশে চলে গেছেন অনেকেই। ব্যতিক্রম হয়নি ব্যাংকের ক্ষেত্রেও। অন্তবর্তী সরকার গঠনের পর অনেক ব্যাংকের কর্তাব্যক্তিরাও দেশে ছেড়েছেন। এ কারণে বোর্ড সভায় সশরীরে উপস্থিত থাকার যে বাধ্যবাধকতা রয়েছে সেখানে অনেক পরিচালকই উপস্থিত না হয়ে ভার্চ্যুয়ালি যোগ দিতেন। নিয়ম না মানার ফলে পদ হারাতে বসেছেন বেসরকারি ২৮ ব্যাংকের ৬০ পরিচারক।
জানা গেছে, বোর্ড সভায় সশরীরে যোগ না দেওয়া ওই সব পরিচালকদের বাদ দেওয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকগুলো। তবে যেসব ব্যাংকে বিদেশি শেয়ারহোল্ডার পরিচালক রয়েছেন তাঁদের ক্ষেত্রে এ নিয়ম প্রযোজ্য হবে না। এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়ার পর নিয়ম অনুযায়ী তা বাংলাদেশ ব্যাংককে জানাবে ব্যাংকগুলো।
শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর দেশে অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় আছে। এতে রাষ্ট্রায়ত্তসহ বিভিন্ন বেসরকারি ব্যাংকের চেয়ারম্যান পদে পরিবর্তন এসেছে। কয়েকটি ব্যাংকের চেয়ারম্যান স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করেছেন। পাশাপাশি ইসলামী ব্যাংকসহ কয়েকটি বেসরকারি ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে দিয়ে ছোট আকারে বোর্ড গঠন করা হয়েছে। তবে ব্যাংকিং কোম্পানি আইন অনুযায়ী একটি ব্যাংকে সর্বোচ্চ ২০ জন পরিচালক নিয়োগ করা যাবে। আর স্বতন্ত্র পরিচালক হবেন অনধিক তিনজন।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক গত ১৮ে সেপ্টেম্বর ব্যাংকগুলোর হাইব্রিড মিটিং (ভার্চুয়াল সভা) বাতিলের নির্দেশনা দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে। এই নির্দেশনা মেনে এরপর থেকে পরিচালকদের সশরীর উপস্থিতিতে বোর্ড সভা হচ্ছে। তবে বেসরকারি খাতের ২৮টি ব্যাংকের ৬০ জন পরিচালক সশরীরে সভায় উপস্থিত হচ্ছেন না। তাঁদের সভায় উপস্থিত হতে ব্যাংকগুলোর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। কিন্তু জবাবে তাঁরা সভায় থাকতে না পারার কথা জানিয়েছেন।
জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক হুসনে আরা শিখা বলেন, সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংক সব ব্যাংক এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠানের বোর্ডের ভার্চুয়াল সভা বাতিল করেছে। সেই নীতি অনুযায়ী বোর্ড সভায় উপস্থিত না থাকলে পরিচালক থাকার বিষয়ে আইন অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। তবে বিদেশি শেয়ারহোল্ডার পরিচালকদের অনুপস্থিতির কারণে আপাতত বাদ দেওয়ার কোনো সিদ্ধান্ত নেই।
ব্যাংকগুলোর হাইব্রিড মিটিং বাতিলের নির্দেশনার পর গত ২৪ সেপ্টেম্বর ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানেরও (এনবিএফআই) হাইব্রিড মিটিং বাতিল করে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। অর্থাৎ এখন থেকে আর্থিক প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা পর্ষদের সভায় পরিচালকদের সশরীর উপস্থিত থাকতে হবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের একাধিক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে তাদের মদদপুষ্টরা নানা কৌশলে ব্যাংকে পরিচালক হয়। তাদের যোগসাজশে ব্যাংক খাতে ঋণের নামে ডাকাতি হয়েছে। সব মিলিয়ে ব্যাংক খাত থেকে পরিচালকদের ঋণ প্রায় আড়াই লাখ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে।
২০২৩ সালে সুশাসন নিশ্চিতে ব্যাংকের পরিচালক নিয়োগের নিয়ম কঠোর করে বাংলাদেশ ব্যাংক। সে অনুযায়ী কোনো ব্যাংক কোম্পানির পরিচালক হওয়ার জন্য বয়স হতে হবে সর্বনিম্ন ৩০ বছর। একই সঙ্গে পরিচালক হতে হলে ১০ বছরের ব্যবস্থাপনা বা ব্যবসায়িক বা পেশাগত অভিজ্ঞতা থাকতে হবে।
যেসব ব্যাংকের পরিচালকদের পদ ছাড়তে হচ্ছে তাদের মধ্যে রয়েছেন- ইসলামী ব্যাংকের চেয়ারম্যান আহসানুল আলম, স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংকের চেয়ারম্যান কাজী আকরাম উদ্দিন আহমেদ, ইউসিবির চেয়ারম্যান সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরীর স্ত্রী রুকমিলা জামান, আল-আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংকের চেয়ারম্যান আবদুস সালাম, সাউথইস্ট ব্যাংকের চেয়ারম্যান আলমগীর কবির, এক্সিম ব্যাংকের চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম মজুমদার, রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংকের চেয়ারম্যান জিয়াউল হাসান সিদ্দিকী, অগ্রণী ব্যাংকের চেয়ারম্যান জায়েদ বখত এবং রূপালী ব্যাংকের চেয়ারম্যান কাজী সানাউল হক।
বিজনেস আওয়ার/ সেপ্টেম্বর ৩০/ রহমান