বিনোদন ডেস্ক: এ বছর ৩১ মে চিকিৎসা শেষে সিঙ্গাপুর থেকে দেশে ফেরেন গানের পাখি সাবিনা ইয়াসমিন। চার মাস পর আবারও দেশটিতে গেলেন চিকিৎসার জন্য। সব ঠিক থাকলে ১০ অক্টোবর দেশে ফিরবেন, গানের মঞ্চেও হবেন নিয়মিত। জানা গেছে, বাংলা গানের কিংবদন্তি কণ্ঠশিল্পী সাবিনা ইয়াসমিন ২ অক্টোবর ফের সিঙ্গাপুরে গেছেন।
সেখানে এক সপ্তাহ চিকিৎসা নেবেন বলে জানিয়েছেন তাঁর সহকর্মী ও সংগীতশিল্পী দিনাত জাহান মুন্নী। তিনি আমেরিকা থেকে মুঠোফোনে বলেন, ‘আপা এখন অনেকটাই সুস্থ। ফিরতে চান গানে। তবে এখনই গান গাইতে পারবেন কি না তা জানতে এবং চেকআপ করাতে সিঙ্গাপুর গিয়েছেন।
চেকআপের পর সব কিছু ঠিক থাকলে ১০ অক্টোবর বাংলাদেশে ফিরবেন তিনি। আমি যেমন আপার নিয়মিত খোঁজ-খবর নিই, তিনিও আমার খোঁজ রাখেন। চার দিন আগেই আমার সঙ্গে ভিডিও কলে কথা বলেছেন। শারীরিক অবস্থা জানিয়েছেন।
শুধু তা-ই নয়, আমার জন্য বেশ কয়েকটি শাড়িও পাঠিয়েছেন তিনি। ছোট বোনের মতো স্নেহ করেন বলেই আমাকে উপহার দিতে ভালোবাসেন।’
২০০৭ সালে প্রথম ক্যান্সার ধরা পড়ে সাবিনা ইয়াসমিনের। তখনো চিকিৎসা নিয়েছিলেন সিঙ্গাপুরে। ক্যান্সার জয় করে এক বছর পরেই গানে ফেরেন ‘একটি বাংলাদেশ তুমি জাগ্রত জনতার’ গায়িকা। তবে ১৭ বছর পর আবার ক্যান্সারে আক্রান্ত হন তিনি। চলতি বছর ২৪ ফেব্রুয়ারি চিকিৎসার জন্য ফের যান সিঙ্গাপুরে।
প্রায় তিন মাস চিকিৎসা নিয়েছেন দেশটির ন্যাশনাল ক্যান্সার সেন্টারে। শারীরিকভাবে সুস্থ অনুভব করার পর ৩১ মে দেশে ফেরেন ‘গানের পাখি’। তখন জানিয়েছিলেন, শারীরিকভাবে সম্পূর্ণ সুস্থ হয়েছেন। কোনো ওষুধ বা থেরাপি লাগবে না আর। খুব শিগগির ফিরবেন গানে। গতকাল সাবিনা ইয়াসমিনের স্নেহধন্য কণ্ঠশিল্পী রাফি তালুকদার জানান, নিয়মিত রেওয়াজও শুরু করেছিলেন ‘প্রথম বাংলাদেশ’ গায়িকা। বেশ কয়েকটি নতুন গানের প্রস্তাবও হাতে ছিল। তবে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়েই গানে ফেরার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন সাবিনা। আর সে কারণেই সিঙ্গাপুরে গেছেন।
রাফি বলেন, ‘ক্যান্সারের মতো মারণব্যাধি জয় করাটা অনেক কঠিন। তবে আপা সেটা করে দেখিয়েছেন। তাঁর মনোবল আমাদের অনুপ্রাণিত করে। এর মধ্যে বেশ কয়েকটা নতুন গান ও স্টেজ শোর প্রস্তাব পেয়েছেন আপা। সেগুলো করবেন কি না বা শরীরে সায় দেবে কি না সেটা জানার জন্যই এবার সিঙ্গাপুরে গেছেন তিনি। সেখানকার ন্যাশনাল ক্যান্সার সেন্টারে তাঁর চেকআপ শুরু হয়েছে।’
জানা গেছে, ওরাল ক্যান্সারে আক্রান্ত সাবিনা ইয়াসমিন। চলতি বছরই একটা সার্জারি করা হয়েছে তাঁর। যেটাতে ব্যয় হয়েছে ৫০ লাখ টাকার বেশি। এ ছাড়া থেরাপির পেছনেও ৭৫ লাখ টাকার বেশি ব্যয় হয়েছে। তবে জীবন্ত এই কিংবদন্তি কারো কাছে আর্থিক সহযোগিতা চাননি এখনো।
কণ্ঠশিল্পী দিনাত জাহান মুন্নী বলেন, ‘একজন শিল্পী সারা জীবনে কত টাকা আয় করতে পারেন বলেন! নিশ্চয়ই কোটি কোটি টাকা নয়। আর আমাদের দেশে তো সেটা সম্ভবও নয়। সাবিনা আপার ক্যারিয়ার পাঁচ দশকের বেশি সময়ের। হয়তো সারা জীবনের তিলে তিলে করা সঞ্চয় তিনি চিকিৎসার পেছনেই ব্যয় করে ফেললেন! তার পরও যদি পুরোপুরি সুস্থ হন তাহলে কোনো কষ্ট থাকবে না।’
সাবিনা ইয়াসমিন গত বছর চাঁদপুরে সর্বশেষ ওপেন এয়ার কনসার্ট করেছিলেন। ২৪ ফেব্রুয়ারির সেই কনসার্টটি ছিল চাঁদপুর সরকারি কলেজের ৭৫ বছর পূর্তি উপলক্ষে। সাবিনা ইয়াসমিন ছাড়া আরো সেখানে গান পরিবেশন করেছিলেন ভারতের নচিকেতা চক্রবর্তী ও দিনাত জাহান মুন্নী।
কোকিলকণ্ঠীখ্যাত সাবিনা ইয়াসমিন ১৪ বার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছেন। গানে অসামান্য অবদান রাখার কারণে ১৯৯৬ সালে সর্বোচ্চ বেসামরিক রাষ্ট্রীয় সম্মাননা স্বাধীনতা পুরস্কার অর্জন করেন। ১৯৮৪ সালে তিনি দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক রাষ্ট্রীয় সম্মাননা একুশে পদকও পেয়েছিলেন। এ ছাড়া দেশ-বিদেশের আরো অনেক পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন তিনি।
বিজনেস আওয়ার/ ০৪ অক্টোবর / রানা