বিজনেস আওয়ার প্রতিবেদক: গত সপ্তাহজুড়ে দেশের শেয়ারবাজারে বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম কমছে। ফলে মূল্যসূচকের বড় পতন হয়েছে। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) যে কয়টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম বেড়েছে, তার প্রায় ছয়গুণ প্রতিষ্ঠানের স্থান হয়েছে দাম কমার তালিকায়। এ পতনের বাজারে শেয়ার দাম কমার ক্ষেত্রে নেতৃত্ব দিয়েছে লিন্ডে বাংলাদেশে। সপ্তাহজুড়ে দাম কমায় পাঁচ দিনেই কোম্পানিটির শেয়ার দাম সম্মিলিতভাবে প্রায় ৪৯৩ কোটি টাকা কমে গেছে।
গত সপ্তাহজুড়ে ডিএসইতে লেনদেন হওয়া প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে মাত্র ৫৭টির স্থান হয়েছে দাম বাড়ার তালিকায়। বিপরীতে দাম কমেছে ৩৩১টির। আর ৮টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। এমন বাজারে বিনিয়োগকারীদের বড় অংশই লিন্ড বাংলাদেশের শেয়ার কিনতে খুব একটা আগ্রহী না হওয়ায় সপ্তাহজুড়েই দাম কমেছে। ফলে ডিএসইতে দাম কমার শীর্ষ স্থানটি দখল করেছে প্রতিষ্ঠানটি।
গত সপ্তাহে দাম শীর্ষ স্থানটি দখল করলেও কিছুদিন আগেই এ কোম্পানিটি শেয়ারবাজারে ইতিহাস সৃষ্টি করে। সেপ্টেম্বরের শুরুরদিকে কোম্পানিটির পরিচালনা পর্ষদ শেয়ারহোল্ডারদের জন্য রেকর্ড ৪১০০ শতাংশ অন্তর্বর্তী নগদ লভ্যাংশ ঘোষণা করে। অর্থাৎ কোম্পানিটির শেয়ারহোল্ডাররা অন্তর্বর্তী লভ্যাংশ হিসেবে প্রতিটি শেয়ারের বিপরীতে নগদ ৪১০ টাকা করে পাবেন। দেশের শেয়ারবাজারের ইতিহাসে এর আগে কোনো কোম্পানি এতবেশি অন্তর্বর্তী লভ্যাংশ ঘোষণা করেনি।
রেকর্ড এ লভ্যাংশ ঘোষণার পর কোম্পানিটির শেয়ার দামও বাড়ে। লভ্যাংশের তথ্য প্রকাশের দিনে কোম্পানিটির প্রতিটি শেয়ারের দাম বাড়ে ২৩৪ টাকা ১০ পয়সা বা ১৭ দশমিক ৮৩ শতাংশ। তবে এরপর থেকে কোম্পানিটির শেয়ার দাম কমার ধারা দেখা যায়। রেকর্ড ডেট পার হওয়ার পর পতনের মাত্রা আরও বাড়ে। লভ্যাংশ পাওয়ার যোগ্য বিনিয়োগকারী নির্ধারণে রেকর্ড ডেট নির্ধারণ করা হয় ২৫ সেপ্টেম্বর।
এ রেকর্ড ডেট পার হওয়ার পর প্রতিটি কার্যদিবসেই কোম্পানিটির শেয়ার দাম কমেছে। অর্থাৎ গত সপ্তাহে লেনদেন হওয়া প্রতিটি কার্যদিবসেই লিন্ডে বাংলাদেশের শেয়ার দাম কমেছে। গত সপ্তাহজুড়ে কোম্পানিটির শেয়ার দাম কমেছে ২৪ দশমিক ২৯ শতাংশ। টাকার অঙ্কে প্রতিটি শেয়ারের দাম কমেছে ৩২৩ টাকা ৯০ পয়সা।
এতে এক সপ্তাহেই কোম্পানিটির শেয়ার দাম সম্মিলিতভাবে কমেছে ৪৯২ কোটি ৯২ লাখ ৮৯২ টাকা। সপ্তাহের শেষ কার্যদিবস শেষে কোম্পানিটির শেয়ার দাম দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৯ টাকা ৩০ পয়সা, যা আগের সপ্তাহের শেষ কার্যদিবস শেষে ছিল ১ হাজার ৩৩৩ টাকা ২০ পয়সা।
শেয়ার দামে এমন পতন হওয়া কোম্পানিটি ২০২৩ সালের ৩১ ডিসেম্বর সমাপ্ত বছরে বিনিয়োগকারীদের ১ হাজার ৫৪০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দেয়। তার আগে ২০২২ সালে ৪২০ শতাংশ নগদ, ২০২১ সালে ৫৫০ শতাংশ নগদ নগদ লভ্যাংশ দেয়। অর্থাৎ কোম্পানিটি নিয়মিত বিনিয়োগকারীদের ভালো লভ্যাংশ দিয়েছে।
১৯৭৬ সালে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়া কোম্পানিটির পরিশোধিত মূলধন ১৫ কোটি ২১ লাখ টাকা। আর শেয়ার সংখ্যা ১ কোটি ৫২ লাখ ১৮ হাজার ২৮০টি। এর মধ্যে ৬০ শতাংশ আছে উদ্যোক্তা ও পরিচালকদের কাছে। বাকি শেয়ারের মধ্যে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে ১০ দশমিক ৭০ শতাংশ এবং প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের কাছে ২৯ দশমিক ৩০ শতাংশ আছে।
লিন্ডে বাংলাদেশের পরেই গত সপ্তাহে দাম কমার তালিকায় ছিল কাট্টালি টেক্সটাইল। সপ্তাহজুড়ে এ কোম্পানিটির শেয়ার দাম কমেছে ২২ দশমিক ৩০ শতাংশ। ১৮ দশমিক ৬০ শতাংশ দাম কামার মাধ্যমে পরের স্থানে রয়েছে মিরাকেল ইন্ডাস্ট্রিজ।
এছাড়া গত সপ্তাহে দাম কমার শীর্ষ ১০ প্রতিষ্ঠানের তালিকায় থাকা বে-লিজিংয়ের ১৮ দশমিক ৮৪ শতাংশ, ওয়েস্টার্ন মেরিন শিপইয়ার্ডের ১৭ দশমিক ৯৫ শতাংশ, ইন্দো-বাংলা ফার্মাসিউটিক্যালসের ১৭ দশমিক ৯২ শতাংশ, অলিম্পিক অ্যাকসেসরিজের ১৭ দশমিক ৭৫ শতাংশ, জিএসপি ফিন্যান্সের ১৭ দশমিক ৩৯ শতাংশ, ন্যাশনাল টি’র ১৭ দশমিক ১২ শতাংশ এবং ফরচুন সুজের ১৬ দশমিক ৬৭ শতাংশ দাম কমেছে।
বিজনেস আওয়ার/ ০৫ অক্টোবর / রহমান