বিনোদন ডেস্ক: আনন্দ-বিনোদনের সীমানা পেরিয়ে কিছু ছবি দর্শকের অনুভূতির ঘরে প্রবেশ করে। শিউলি ফুলের মতো সুবাস ছড়িয়ে হৃদয়ে গেঁথে থাকে অনেক দিন। তেমনই এক ছবি সুজিত সরকারের ‘অক্টোবর’। পঞ্জিকার পাতায় অক্টোবর এলেই দর্শকের মনে ফের সুবাস ছড়ায় ২০১৮ সালের এই ছবি।
মঙ্গলবার থেকে ফেসবুক-ইনস্টাগ্রামে অনেকে ছবিটি নিয়ে স্মৃতিকাতর হচ্ছেন। রুপালি পর্দার ‘অক্টোবর’-এর নানা দিক তুলে ধরেছেন কামরুল ইসলাম।
গৌরচন্দ্রিকা
হেমন্তের শিশিরভেজা সকাল। রুপার দানার মতো শিশির বসে আছে সবুজ ঘাসের ডগায়। তার ওপর সাদা-লালচে শিউলি ফুল। উপমহাদেশের মানুষের কাছে এই দৃশ্য অচেনা নয়। কিন্তু চলচ্চিত্রের পর্দায় দৃশ্যটি অন্য মাত্রায় নিয়ে গেছেন সুজিত সরকার। ছবিতে শিউলি আইয়ার যখন শিউলি ফুল কুড়িয়ে সুগন্ধ নেন, সে ঘ্রাণ যেন পর্দার এপারে থাকা দর্শকের নাকেও এসে ঠেকে হেমন্তের হিম বাতাসের মতো। এ রকম স্নিগ্ধ কিছু কারণেই দর্শকের হৃদয়ে জায়গা করে নিয়েছে তাঁর ‘অক্টোবর’।
বিষণ্নতার আলপিন
ছবিতে নাটকীয় গল্প থাকবে, মোড়ে মোড়ে থাকবে গান, সঙ্গে হয়তো নৃত্যের সমন্বয়—এ রকম গত্বাঁধা রীতিতে এগোয়নি ‘অক্টোবর’। ছবিতে গতি নেই, তবু রয়েছে ধরে রাখার জাদুকরী শক্তি। নায়ক-নায়িকার মধ্যে দৃশ্যমান প্রেম-রসায়ন নেই, অথচ তাঁদের ভালোবাসা কী দারুণ প্রভাব ফেলে দর্শকমনে। শিউলির পা পিছলে পড়ে আহত হওয়া, সুস্থতার পথে কিছুটা এগিয়ে ফের মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়া, তারপর ড্যান ওয়ালিয়ার গন্তব্যহীন পথচলা; পুরোটাজুড়েই বিষাদের ঘোর, যা মুহূর্তে মুহূর্তে দর্শকের হৃদয়ে বিষণ্নতার আলপিন বিঁধে দেয়।
যেমনটা সচরাচর দেখা যায় ইউরোপিয়ান চলচ্চিত্রে। সুইডেন, নেদারল্যান্ডস বিভিন্ন দেশের ছবি অনুপ্রাণিত করেছে সুজিতকে। বিষয়টি নিয়ে কালের কণ্ঠের এক সাক্ষাৎকারে নির্মাতা সুজিত সরকার বলেছিলেন, ‘ইরানিয়ান-ফ্রেঞ্চ-নেদারল্যান্ডসের কিছু সিনেমা দেখেছি। প্রভাবিত তো করেই, ইউরোপিয়ান সিনেমার অনেক বড় একটা ইনফ্লুয়েন্স আছে আমাদের সিনেমাজগতে।’
অচেনা বরুণ
‘অক্টোবর’ প্রসঙ্গে দুটো দিক দিয়ে অচেনা বরুণ ধাওয়ান। প্রথমত, পর্দায় তাঁর উপস্থিতি অচেনা। এর আগে এমনরূপে-অভিনয়ে পাওয়া যায়নি তাঁকে। এ নিয়ে শুরুতে বেগ পেতে হয়েছিল বেশ। পরে ধীরে ধীরে মানিয়ে নেন, মজাও পান। দ্বিতীয় অচেনা অধ্যায় অভিনেত্রীর দিক থেকে। ছবিতে বরুণের সঙ্গে আছেন বনিতা সান্ধু। জন্ম, বেড়ে ওঠা যুক্তরাজ্যের ওয়েলসে। ভারতীয় বংশোদ্ভূত হলেও তিনি চিনতেন না বরুণকে। ‘অক্টোবর’ করতে এসেই চিনেছেন সহশিল্পীকে। এমনকি ওই সময় আলিয়া ভাটকেও চিনতেন না বনিতা। ছবি মুক্তির সময়ে গণমাধ্যমের সাক্ষাৎকারে এসব সরল স্বীকারোক্তি দিয়েছিলেন অভিনেত্রী।
চরিত্রের তরে কত কিছু
ছবিতে হোটেল ম্যানেজমেন্ট শিক্ষার্থী বরুণ ধাওয়ান। চরিত্রটির জন্য তাঁকে হোটেলের টয়লেট পরিষ্কার থেকে শুরু করে বাসনকোসন ধোয়া, ঘর মোছার মতো কাজগুলোও করতে হয়েছে বরুণকে। মজার ব্যাপার হলো, যে হোটেলে শুটিং হয়েছিল, সেখানে বিদেশি অতিথিদের অনেকে ভাবতেন, বরুণ ওই হোটেলেরই কর্মী!
পারিশ্রমিকে ছাড়
ক্যারিয়ারের শুরু থেকেই স্বল্প কিংবা মাঝারি বাজেটে ছবি বানিয়ে আসছেন সুজিত। এ ছবির বাজেট ৩৩ কোটি রুপি। বলিউডে যা মাঝারি বাজেট। বরুণ ধাওয়ান তখন বলিউডের উঠতি তারকা। ফলে তাঁর পারিশ্রমিকও চড়া। কিন্তু সুজিতের ছবিতে অভিনয়ের আগ্রহ এবং ‘অক্টোবর’-এর গল্পভাবনা শুনে পারিশ্রমিকে ছাড় দেন অভিনেতা। অর্ধেক পারিশ্রমিকে ছবিটি করেছিলেন বরুণ।
ফরিদপুরের ছেলে
অনেকেরই জানা, সুজিত সরকার বাঙালি। তাঁর ছোটবেলা কেটেছে কলকাতায়। তারপর বাবার চাকরির সুবাদে চলে যান দিল্লি। পড়াশোনা, বেড়ে ওঠা সবই ভারতের রাজধানীতে। তবে অনেকেই হয়তো জানেন না, সুজিতের পূর্বপুরুষের [বাবা] ভিটা বাংলাদেশের ফরিদপুরে।
গল্প চুরির অভিযোগ
মুক্তির পর ‘অক্টোবর’-এর বিরুদ্ধে গল্প চুরির অভিযোগ তোলেন মারাঠি নির্মাতা সারিকা মেনে। অভিযোগ, তাঁর ‘আরতি’ [২০১৭] ছবি থেকে নেওয়া হয়েছে ‘অক্টোবর’-এর গল্প। সুজিত সরকার তখন জানান, তাঁর প্রতিটি ছবির গল্প ব্যক্তিগত জীবনের খুব ঘনিষ্ঠ। তাঁর মা যখন অসুস্থ হয়ে তিন মাস হাসপাতালে ছিলেন, সে সময়ের অভিজ্ঞতা ছবিতে তুলে এনেছেন তিনি। পরে ভারতের স্ক্রিনরাইটারস অ্যাসোসিয়েশন বিষয়টির সুরাহা করে দেয়।
বক্স অফিস
নাম ‘অক্টোবর’ হলেও ছবিটি মুক্তি পেয়েছিল ২০১৮ সালের ১৩ এপ্রিল। বক্স অফিসে মন্দের ভালো ব্যবসা করেছে এটি। মুক্তির আগে ছবিটি নিয়ে দর্শকের আগ্রহ দেখা গেলেও প্রথম দিনে মাত্র চার কোটি ২৫ লাখ রুপি আয় করে ‘অক্টোবর’। ৩৩ কোটি রুপির ছবিটির ভারতে আয় ৩৯ কোটি রুপি এবং বিশ্বব্যাপী আয়ের মোট অঙ্কটা ৫৮ কোটি।
বিজনেস আওয়ার/ ১০ অক্টোবর / রানা