ঢাকা , রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সঠিক অ্যাকাউন্টসের আইপিও অনুমোদন ১ মাসে- বিএসইসি চেয়ারম্যান

  • পোস্ট হয়েছে : ০৪:০৪ অপরাহ্ন, শনিবার, ৩১ অক্টোবর ২০২০
  • 71

বিজনেস আওয়ার প্রতিবেদক : বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম বলেছেন, আমাদের হাতে গত ২-৩ বছরের যত পেন্ডিং প্রাথমিক গণপ্রস্তাব (আইপিও) ফাইল ছিল, তা প্রায় শেষ করে ফেলেছি। সামনের দিনগুলোতে আইপিও অনুমোদনের ক্ষেত্রে ৩ মাসও সময় লাগবে না। কেউ যদি সঠিক অ্যাকাউন্টস ও কাগজপত্র জমা দেয়, তাহলে ১ মাসের মধ্যেই করে দিতে পারব।

শনিবার (৩১ অক্টোবর) ‘শেয়ারবাজারের সর্বশেষ পরিস্থিতি এবং টেকসই উন্নয়ন’ শীর্ষক সেমিনারে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান ও বিশেষ অতিথি হিসেবে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই সভাপতি শেখ ফজলে ফাহিম এবং ডিসিসিআই সভাপতি সামস মাহমুদ অংশ নেন। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিএমবিএর ফার্স্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট মো. মনিরুজ্জামান। ওয়েবিনারটি যৌথভাবে আয়োজন করে ক্যাপিটাল মার্কেট জার্নালিষ্টস ফোরাম (সিএমজেএফ) এবং বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স এসোসিয়েশন (বিএমবিএ)।

শিবলী রুবাইয়াত বলেন, ভালো প্রাথমিক গণপ্রস্তাব (আইপিও) দেখে দেওয়ার চেষ্টা করছি। এ ব্যাপারে আমাদের ইতিবাচক মনোভাব আছে। আমরা ভালো আইপিও দিতে গিয়ে দেখি বিগত কত বছর যাবৎ একটি কোম্পানির ভালো ব্যবসা করে আসছে, কত সময়ের মধ্যে পরিশোধিত মূলধনের পরিবর্তন ও অ্যাকাউন্টস। সুতরাং আমরা ভালো কোম্পানিকে আইপিও দেওয়ার চেষ্টা করছি। ভালোভাবে বিচার বিশ্লেষন করে দিচ্ছি। এক্ষেত্রে কেউ যদি কারসাজি করে থাকে, তাহলে শাস্তির ব্যবস্থাও করছি। সামনের দিনগুলোতে ভালো ভালো কোম্পানির আইপিও দিতে কাজ করছি।

তিনি বলেন, আমরা সরকারি কোম্পানি আনার চেষ্টা করছি। তবে এক্ষেত্রে আস্তে-ধীরে চলার নীতিতে কাজ দেখতে পাচ্ছি। আমরা চাপ প্রয়োগ করে দ্রুত আনার চেষ্টা করছি। অর্থমন্ত্রী মহোদয় এ বিষয়ে আন্তরিক। অবশ্য ২টি কোম্পানি থেকে শেয়ারবাজারে আসার প্রাথমিক ইঙ্গিত পেয়েছি।

তিনি আরও বলেন, আমরা আইপিওর কাজ করতে গিয়ে অনেক কাগজের ঘাটতি পাই। আবার যা পাই, সেখানে ভুল থাকে। এগুলো দিতে আসলে আবার অনেক সময় চলে যায়। এক্ষেত্রে আমাদের অফিসে বিলম্ব হয় না। কাগজপত্র যাচাই করতে গিয়ে বিলম্ব হয়। এতটুকু কথা দিতে পারি, আমাদের অফিসে বেশি সময় লাগবে না।

নিরীক্ষা নিয়ে সমালোচনা উঠেছে জানিয়ে তিনি বলেন, আমরা একটি বিদেশী কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি হয়েছে। তারা আমাদের এখানে অনলাইনে অ্যাকাউন্টস দাখিলের ফরমেট দেবে। সেখান থেকে সরকারি রেগুলেটররা অ্যাকাউন্টসের তথ্যগুলো নেওয়ার চেষ্টা করব। এর মাধ্যমে ভিন্ন ভিন্ন জায়গায় ভিন্ন অ্যাকাউন্টস জমা দেওয়ার সমস্যাটা লাঘব হবে।

তিনি বলেন, ফেসবুক ও অবৈধ নিউজপোর্টালে গুজব ছড়ানো নিয়ে কেউ কেউ বলেছেন। আমরাও এমনটি দেখতে পাই। তারা গুজব ছড়িয়ে বাজারকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করে। তাদেরকে কেউ কেউ ব্যবহার করছে বলে মনে হয়। তাই সিএমজেএফকে এ বিষয়ে সহযোগিতার জন্য বলব। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের অবৈধ গুজব ছড়ানো নিয়ে সরকারি বিভিন্ন সংস্থা কাজ করছে। তারা এ ব্যাপারে কয়েকটি ব্যবস্থাও নিয়েছে। তবে কিছু নিউজপোর্টাল থেকে ভূয়া নিউজ ছড়ানোর বিষয়ে সিএমজেএফকে ভূমিকা রাখার জন্য বলব।

শেখ ফজলে ফাহিমের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে তিনি বলেন, আমাদের এই বাজারে ডে ট্রেডিংয়ের জন্য যেনো কেউ না আসে। ডে ট্রেডিং করতে গেলেই লক্ষ্য থেকে বিচ্যুত হয়ে যাই। একটু দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগের উদ্দেশ্য নিয়ে আসলে ভালো হয়। প্রতিদিন কোন শেয়ারের দাম বাড়ে না। এখানে ডিমান্ড-সাপ্লাইয়ের সঙ্গে বাড়ার বিষয়টি থাকে। সুতরাং শেয়ারের দাম কখনো বাড়বে, কখনো কমবে। তবে অনেকেই এটা মেনে নিতে পারেন না। এ ব্যাপারে বিনিয়োগকারীদেরকে সচেতন করতে ফিন্যান্সিয়াল লিটারেসি প্রোগ্রাম করছি। এর রেজাল্ট আপনারা দেখতে পাবেন।

আইসিবিকে পূন:গঠনে কাজ হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, আশা করি ডিসেম্বরের মধ্যেই সরকারকে এ বিষয়ে প্রস্তাব দিতে পারব। এছাড়া আইসিবির বিনিয়োগ পদ্ধতি নিয়ে যে সমালোচনা আছে, আশা করি সামনে তা হবে না। এই প্রতিষ্ঠানের জন্য একটি বড় ফান্ড সংগ্রহের চেষ্টা করছি। যাতে তারা চাহিদা অনুযায়ি সাপোর্ট দিতে পারি। একইসঙ্গে নেগেটিভ ইক্যুইটির সমস্যা সমাধানে আমরা কিছু ফান্ড চেয়েছি। আমরা আরেকটি ফান্ড কাজ করছি। এখনই বিস্তারিত বলতে চাচ্ছি না।

তিনি বলেন, মার্জিন ঋণের সুদ হার বেশি নিয়ে ব্রোকারদের সঙ্গে কথা বলেছি। তারা যে হারে মার্জিন দেয়, সেটাকে আমরা অযৌক্তিক বলে মনে করছি।

বিএসইসির এই চেয়ারম্যান বলেন, বাইব্যাক ও ডিলিস্টিং নিয়ে কাজ করছি। এখন একটি স্কিপ্টের মাধ্যমে ডিলিস্টিংয়ের কাজ করছি। আর বাইব্যাকের জন্য ৩-৪ মাস আগেই প্রস্তাব দিয়েছি। এটি কোম্পানি আইনের বিষয়।

মিউচ্যুয়াল ফান্ড নিয়ে অনেকেই কথা বলেছেন জানিয়ে তিনি বলেন, আমরা কিন্তু কারও চাপে না, নিজেরাই মিউচ্যুয়াল ফান্ডের উন্নয়নে কাজ করছি। এই খাতকে সত্যিকার রুপ দেওয়ার জন্য অনেক দিন ধরে কাজ করে যাচ্ছি। মিউচ্যুয়াল ফান্ডের ম্যানেজমেন্ট খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সবাই আশা করে এই খাতের ম্যানেজমেন্ট বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে বিনিয়োগ করে রিটার্ন দেবে। কিন্তু আমরা খেয়াল করেছি কয়েক বছরে এমনকি কিছু মিউচ্যুয়াল ফান্ড শুরু থেকে আজ পর্যন্ত কোন রিটার্ন দেয়নি। এটা ঠিক না বলে মনে করি। অবশ্যই ম্যানেজমেন্ট ভালো হতে হবে। বিনিয়োগকারীদেরকে সঠিক রিটার্ন দিতে হবে। অন্যথায় এই খাতকে জনপ্রিয় করতে পারব না। তবে কিছু ফান্ড ঠিকই লভ্যাংশ দিয়েছে।

আরও পড়ুন……..
স্টক এক্সচেঞ্জের চোখের সামনে দিয়ে ম্যানুপুলেশন হয়, কিন্তু অ্যাকশান নেই- সালমান এফ রহমান

তিনি বলেন, আমরা মিউচ্যুয়াল ফান্ডকে আরও জনপ্রিয় করতে চাই। এখানে একজন বক্তা বলেছেন শেয়ারবাজারে ফান্ডের অবদান ৩ শতাংশ। এটা আরও বাড়াতে কাজ করছি।

অনেকেই আমাদেরকে আরও অনেক দায়িত্বের কথা বলেছেন জানিয়ে বিএসইসি চেয়ারম্যান বলেন, আমাদের লোকবল খুবই কম। সব যদি আমাদের দিয়ে দেন, তাহলে করতে পারব না। এতো বড় বাজারে সবাই যদি বিএসইসির কাছেই সব আশা করে, তাহলে বাস্তবায়ন করাটা কঠিন। সেকেন্ডারি মার্কেট নিয়ে অনেকে আমাদেরকে বলেন। কিন্তু এই বাজারের যদি স্টক এক্সচেঞ্জের সার্ভেইল্যান্স সিস্টেম আছে। আমরা তাদের এই সিস্টেমকে কাজ করানোর জন্য বলব। আমাদের ১০০ জন লোকবল দিয়ে ১১০০ কোম্পানির কাজ করার পরও যদি প্রতিদিনের লেনদেন নিয়ে কাজ করতে হয়, তাহলে সম্ভব হবে না। এক্ষেত্রে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।

এখন থেকে স্বতন্ত্র পরিচালকদের সাবমিশন অনলাইনে হয়ে যাবে বলে জানান শিবলী রুবাইয়তা। তিনি বলেন, সব শর্ত পরিপালন করলে স্বতন্ত্র পরিচালক হওয়ার যোগ্যতা অর্জন করা যাবে। এছাড়া অনলাইনে বিও অ্যাকাউন্ট খোলার কাজ করছেন বলে যোগ করেন তিনি।

স্বতন্ত্র পরিচালকদের দায়িত্ব অনেক গুরুত্বপূর্ণ উল্লেখ করে তিনি বলেন, কোন কোন কোম্পানিতে মনে হয়েছে, নিজেদের সুবিধামতো স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগ দেয়া হয়। যাতে সঠিক দায়িত্ব পালন করা হচ্ছে না। একারনে আমাদেরকে হস্তক্ষেপ করতে হচ্ছে। কয়েকটি কোম্পানিতে স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগ করে দিয়েছি। উনারাই হচ্ছেন আমাদের চোখ-কান। কিন্তু উনারা যদি আত্মীয়স্বজন হন, তাহলে সঠিক দায়িত্ব পালন করা কঠিন। আগামিতে যাকে ইচ্ছা, তাকে স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগ দেওয়ার সুযোগ থাকবে না। ভালো স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগে সম্মানির বিষয়টি দেখতে হবে। একারনে সাধারন পরিচালকদের থেকে তাদের সম্মানি ৩গুণ করার কথা ভাবছি।

তিনি বলেন, এবারের বাজেটে তালিকাভুক্ত ও অতালিকাভুক্ত কোম্পানির কর হার ব্যবধান কমানো বুঝতে পারিনি। তবে আগামি বাজেটে বর্তমান ৭.৫০ শতাংশের ব্যবধানটা বাড়িয়ে দেওয়ার জন্য দাবি থাকবে।

বিজনেস আওয়ার/৩১ অক্টোবর, ২০২০/আরএ

ফেসবুকের মাধ্যমে আপনার মতামত জানান:
ট্যাগ :

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার মেইলে তথ্য জমা করুন

সঠিক অ্যাকাউন্টসের আইপিও অনুমোদন ১ মাসে- বিএসইসি চেয়ারম্যান

পোস্ট হয়েছে : ০৪:০৪ অপরাহ্ন, শনিবার, ৩১ অক্টোবর ২০২০

বিজনেস আওয়ার প্রতিবেদক : বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম বলেছেন, আমাদের হাতে গত ২-৩ বছরের যত পেন্ডিং প্রাথমিক গণপ্রস্তাব (আইপিও) ফাইল ছিল, তা প্রায় শেষ করে ফেলেছি। সামনের দিনগুলোতে আইপিও অনুমোদনের ক্ষেত্রে ৩ মাসও সময় লাগবে না। কেউ যদি সঠিক অ্যাকাউন্টস ও কাগজপত্র জমা দেয়, তাহলে ১ মাসের মধ্যেই করে দিতে পারব।

শনিবার (৩১ অক্টোবর) ‘শেয়ারবাজারের সর্বশেষ পরিস্থিতি এবং টেকসই উন্নয়ন’ শীর্ষক সেমিনারে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান ও বিশেষ অতিথি হিসেবে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই সভাপতি শেখ ফজলে ফাহিম এবং ডিসিসিআই সভাপতি সামস মাহমুদ অংশ নেন। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিএমবিএর ফার্স্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট মো. মনিরুজ্জামান। ওয়েবিনারটি যৌথভাবে আয়োজন করে ক্যাপিটাল মার্কেট জার্নালিষ্টস ফোরাম (সিএমজেএফ) এবং বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স এসোসিয়েশন (বিএমবিএ)।

শিবলী রুবাইয়াত বলেন, ভালো প্রাথমিক গণপ্রস্তাব (আইপিও) দেখে দেওয়ার চেষ্টা করছি। এ ব্যাপারে আমাদের ইতিবাচক মনোভাব আছে। আমরা ভালো আইপিও দিতে গিয়ে দেখি বিগত কত বছর যাবৎ একটি কোম্পানির ভালো ব্যবসা করে আসছে, কত সময়ের মধ্যে পরিশোধিত মূলধনের পরিবর্তন ও অ্যাকাউন্টস। সুতরাং আমরা ভালো কোম্পানিকে আইপিও দেওয়ার চেষ্টা করছি। ভালোভাবে বিচার বিশ্লেষন করে দিচ্ছি। এক্ষেত্রে কেউ যদি কারসাজি করে থাকে, তাহলে শাস্তির ব্যবস্থাও করছি। সামনের দিনগুলোতে ভালো ভালো কোম্পানির আইপিও দিতে কাজ করছি।

তিনি বলেন, আমরা সরকারি কোম্পানি আনার চেষ্টা করছি। তবে এক্ষেত্রে আস্তে-ধীরে চলার নীতিতে কাজ দেখতে পাচ্ছি। আমরা চাপ প্রয়োগ করে দ্রুত আনার চেষ্টা করছি। অর্থমন্ত্রী মহোদয় এ বিষয়ে আন্তরিক। অবশ্য ২টি কোম্পানি থেকে শেয়ারবাজারে আসার প্রাথমিক ইঙ্গিত পেয়েছি।

তিনি আরও বলেন, আমরা আইপিওর কাজ করতে গিয়ে অনেক কাগজের ঘাটতি পাই। আবার যা পাই, সেখানে ভুল থাকে। এগুলো দিতে আসলে আবার অনেক সময় চলে যায়। এক্ষেত্রে আমাদের অফিসে বিলম্ব হয় না। কাগজপত্র যাচাই করতে গিয়ে বিলম্ব হয়। এতটুকু কথা দিতে পারি, আমাদের অফিসে বেশি সময় লাগবে না।

নিরীক্ষা নিয়ে সমালোচনা উঠেছে জানিয়ে তিনি বলেন, আমরা একটি বিদেশী কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি হয়েছে। তারা আমাদের এখানে অনলাইনে অ্যাকাউন্টস দাখিলের ফরমেট দেবে। সেখান থেকে সরকারি রেগুলেটররা অ্যাকাউন্টসের তথ্যগুলো নেওয়ার চেষ্টা করব। এর মাধ্যমে ভিন্ন ভিন্ন জায়গায় ভিন্ন অ্যাকাউন্টস জমা দেওয়ার সমস্যাটা লাঘব হবে।

তিনি বলেন, ফেসবুক ও অবৈধ নিউজপোর্টালে গুজব ছড়ানো নিয়ে কেউ কেউ বলেছেন। আমরাও এমনটি দেখতে পাই। তারা গুজব ছড়িয়ে বাজারকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করে। তাদেরকে কেউ কেউ ব্যবহার করছে বলে মনে হয়। তাই সিএমজেএফকে এ বিষয়ে সহযোগিতার জন্য বলব। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের অবৈধ গুজব ছড়ানো নিয়ে সরকারি বিভিন্ন সংস্থা কাজ করছে। তারা এ ব্যাপারে কয়েকটি ব্যবস্থাও নিয়েছে। তবে কিছু নিউজপোর্টাল থেকে ভূয়া নিউজ ছড়ানোর বিষয়ে সিএমজেএফকে ভূমিকা রাখার জন্য বলব।

শেখ ফজলে ফাহিমের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে তিনি বলেন, আমাদের এই বাজারে ডে ট্রেডিংয়ের জন্য যেনো কেউ না আসে। ডে ট্রেডিং করতে গেলেই লক্ষ্য থেকে বিচ্যুত হয়ে যাই। একটু দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগের উদ্দেশ্য নিয়ে আসলে ভালো হয়। প্রতিদিন কোন শেয়ারের দাম বাড়ে না। এখানে ডিমান্ড-সাপ্লাইয়ের সঙ্গে বাড়ার বিষয়টি থাকে। সুতরাং শেয়ারের দাম কখনো বাড়বে, কখনো কমবে। তবে অনেকেই এটা মেনে নিতে পারেন না। এ ব্যাপারে বিনিয়োগকারীদেরকে সচেতন করতে ফিন্যান্সিয়াল লিটারেসি প্রোগ্রাম করছি। এর রেজাল্ট আপনারা দেখতে পাবেন।

আইসিবিকে পূন:গঠনে কাজ হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, আশা করি ডিসেম্বরের মধ্যেই সরকারকে এ বিষয়ে প্রস্তাব দিতে পারব। এছাড়া আইসিবির বিনিয়োগ পদ্ধতি নিয়ে যে সমালোচনা আছে, আশা করি সামনে তা হবে না। এই প্রতিষ্ঠানের জন্য একটি বড় ফান্ড সংগ্রহের চেষ্টা করছি। যাতে তারা চাহিদা অনুযায়ি সাপোর্ট দিতে পারি। একইসঙ্গে নেগেটিভ ইক্যুইটির সমস্যা সমাধানে আমরা কিছু ফান্ড চেয়েছি। আমরা আরেকটি ফান্ড কাজ করছি। এখনই বিস্তারিত বলতে চাচ্ছি না।

তিনি বলেন, মার্জিন ঋণের সুদ হার বেশি নিয়ে ব্রোকারদের সঙ্গে কথা বলেছি। তারা যে হারে মার্জিন দেয়, সেটাকে আমরা অযৌক্তিক বলে মনে করছি।

বিএসইসির এই চেয়ারম্যান বলেন, বাইব্যাক ও ডিলিস্টিং নিয়ে কাজ করছি। এখন একটি স্কিপ্টের মাধ্যমে ডিলিস্টিংয়ের কাজ করছি। আর বাইব্যাকের জন্য ৩-৪ মাস আগেই প্রস্তাব দিয়েছি। এটি কোম্পানি আইনের বিষয়।

মিউচ্যুয়াল ফান্ড নিয়ে অনেকেই কথা বলেছেন জানিয়ে তিনি বলেন, আমরা কিন্তু কারও চাপে না, নিজেরাই মিউচ্যুয়াল ফান্ডের উন্নয়নে কাজ করছি। এই খাতকে সত্যিকার রুপ দেওয়ার জন্য অনেক দিন ধরে কাজ করে যাচ্ছি। মিউচ্যুয়াল ফান্ডের ম্যানেজমেন্ট খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সবাই আশা করে এই খাতের ম্যানেজমেন্ট বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে বিনিয়োগ করে রিটার্ন দেবে। কিন্তু আমরা খেয়াল করেছি কয়েক বছরে এমনকি কিছু মিউচ্যুয়াল ফান্ড শুরু থেকে আজ পর্যন্ত কোন রিটার্ন দেয়নি। এটা ঠিক না বলে মনে করি। অবশ্যই ম্যানেজমেন্ট ভালো হতে হবে। বিনিয়োগকারীদেরকে সঠিক রিটার্ন দিতে হবে। অন্যথায় এই খাতকে জনপ্রিয় করতে পারব না। তবে কিছু ফান্ড ঠিকই লভ্যাংশ দিয়েছে।

আরও পড়ুন……..
স্টক এক্সচেঞ্জের চোখের সামনে দিয়ে ম্যানুপুলেশন হয়, কিন্তু অ্যাকশান নেই- সালমান এফ রহমান

তিনি বলেন, আমরা মিউচ্যুয়াল ফান্ডকে আরও জনপ্রিয় করতে চাই। এখানে একজন বক্তা বলেছেন শেয়ারবাজারে ফান্ডের অবদান ৩ শতাংশ। এটা আরও বাড়াতে কাজ করছি।

অনেকেই আমাদেরকে আরও অনেক দায়িত্বের কথা বলেছেন জানিয়ে বিএসইসি চেয়ারম্যান বলেন, আমাদের লোকবল খুবই কম। সব যদি আমাদের দিয়ে দেন, তাহলে করতে পারব না। এতো বড় বাজারে সবাই যদি বিএসইসির কাছেই সব আশা করে, তাহলে বাস্তবায়ন করাটা কঠিন। সেকেন্ডারি মার্কেট নিয়ে অনেকে আমাদেরকে বলেন। কিন্তু এই বাজারের যদি স্টক এক্সচেঞ্জের সার্ভেইল্যান্স সিস্টেম আছে। আমরা তাদের এই সিস্টেমকে কাজ করানোর জন্য বলব। আমাদের ১০০ জন লোকবল দিয়ে ১১০০ কোম্পানির কাজ করার পরও যদি প্রতিদিনের লেনদেন নিয়ে কাজ করতে হয়, তাহলে সম্ভব হবে না। এক্ষেত্রে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।

এখন থেকে স্বতন্ত্র পরিচালকদের সাবমিশন অনলাইনে হয়ে যাবে বলে জানান শিবলী রুবাইয়তা। তিনি বলেন, সব শর্ত পরিপালন করলে স্বতন্ত্র পরিচালক হওয়ার যোগ্যতা অর্জন করা যাবে। এছাড়া অনলাইনে বিও অ্যাকাউন্ট খোলার কাজ করছেন বলে যোগ করেন তিনি।

স্বতন্ত্র পরিচালকদের দায়িত্ব অনেক গুরুত্বপূর্ণ উল্লেখ করে তিনি বলেন, কোন কোন কোম্পানিতে মনে হয়েছে, নিজেদের সুবিধামতো স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগ দেয়া হয়। যাতে সঠিক দায়িত্ব পালন করা হচ্ছে না। একারনে আমাদেরকে হস্তক্ষেপ করতে হচ্ছে। কয়েকটি কোম্পানিতে স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগ করে দিয়েছি। উনারাই হচ্ছেন আমাদের চোখ-কান। কিন্তু উনারা যদি আত্মীয়স্বজন হন, তাহলে সঠিক দায়িত্ব পালন করা কঠিন। আগামিতে যাকে ইচ্ছা, তাকে স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগ দেওয়ার সুযোগ থাকবে না। ভালো স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগে সম্মানির বিষয়টি দেখতে হবে। একারনে সাধারন পরিচালকদের থেকে তাদের সম্মানি ৩গুণ করার কথা ভাবছি।

তিনি বলেন, এবারের বাজেটে তালিকাভুক্ত ও অতালিকাভুক্ত কোম্পানির কর হার ব্যবধান কমানো বুঝতে পারিনি। তবে আগামি বাজেটে বর্তমান ৭.৫০ শতাংশের ব্যবধানটা বাড়িয়ে দেওয়ার জন্য দাবি থাকবে।

বিজনেস আওয়ার/৩১ অক্টোবর, ২০২০/আরএ

ফেসবুকের মাধ্যমে আপনার মতামত জানান: