ঢাকা , বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

মানবিক ভিসা চালু করতে যাচ্ছে পর্তুগাল

  • পোস্ট হয়েছে : ০৩:৩৮ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৪ অক্টোবর ২০২৪
  • 44

আমিরুল ইসলাম ,পর্তুগাল থেকে: দেশে দেশে যুদ্ধ নিপীড়ন এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের কারণে অনেক মানুষ নিজ দেশ ছেড়ে পালাতে বাধ্য হচ্ছে। ইউরোপের দেশ পর্তুগাল সেইসব বিপন্ন ও জীবন ঝুঁকিতে থাকা মানুষের জন্য একটি নতুন সুযোগ সৃষ্টি করেছে।

সম্প্রতি পর্তুগাল সরকার “মানবিক ভিসা” নামে একটি নতুন ভিসা চালু করার প্রস্তাব অনুমোদন করেছে। এটি বিপদাপন্ন ব্যক্তিদের জন্য এক নতুন আশ্রয়ের দিকনির্দেশনা হতে পারে।

১১ অক্টোবর, পর্তুগালের জাতীয় সংসদে মানবিক ভিসার বিল অনুমোদন করা হয়েছে। এই ভিসার আওতায় নির্যাতিত বা জীবন-ঝুঁকিতে থাকা ব্যক্তিরা পর্তুগালের দূতাবাস থেকে ভিসা আবেদন করতে পারবেন, এমনকি তাদের নিজ দেশে থাকলেও বা পার্শ্ববর্তী দেশের দূতাবাসে আবেদন করার সুযোগ থাকবে।

এর মাধ্যমে, জন্মভূমিতে অত্যাচারের শিকার এবং নিজেদের দেশে বসবাস ঝুঁকিপূর্ণ মনে করা ব্যক্তিরা পর্তুগালে এসে নতুন জীবন শুরু করতে পারবেন।

পর্তুগালে বর্তমানে এমন একটি আশ্রয় আবেদন প্রক্রিয়া রয়েছে, যেখানে কোনো বিদেশি নাগরিককে পর্তুগালে আসার পরই অভিবাসন অধিদপ্তরে আবেদন করতে হয়। কিন্তু নতুন এই মানবিক ভিসা তাদের জন্য এক নতুন রাস্তা খুলে দিচ্ছে, যারা সশরীরে উপস্থিত না হয়ে দূতাবাস থেকে আবেদন করতে চান।

এই নতুন বিধান শুধুমাত্র মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে সাহায্য প্রদানই নয়, এটি পর্তুগালের নতুন অভিবাসন নীতিমালার অংশ।

মানবিক ভিসা ছাড়াও, নতুন আইনের মাধ্যমে অভিবাসীদের জন্য আরেকটি সুবিধা যুক্ত করা হয়েছে। যে কোনো বিদেশি নাগরিক যদি পর্তুগালে কাজ করেন এবং ১২ মাস ধরে সোশ্যাল সিকিউরিটিতে কন্ট্রিবিউশন প্রদান করেন, তবে তারা নিয়মিত হওয়ার জন্য আবেদন করতে পারবেন। এটি অভিবাসীদের জন্য স্থায়ী বৈধতা অর্জনের একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।

গত ৩ জুন পর্তুগাল সরকার অভিবাসীদের নিয়মিত হওয়ার আইনের কিছু ধারা বন্ধ করে দেয়। কিন্তু এখন যাদের জন্য নিয়মিত হওয়ার পথ বন্ধ হয়ে গিয়েছিল, তারা এই নতুন আইনের মাধ্যমে পুনরায় সুযোগ পাবেন।

তবে, এই প্রস্তাবনা এখনও পুরোপুরি কার্যকর হয়নি। এটি এখন সাংবিধানিক অধিকার, স্বাধীনতা এবং গ্যারান্টি সংক্রান্ত সংসদীয় কমিটিতে আলোচিত হচ্ছে। সেখানে চূড়ান্ত অনুমোদনের পর এটি পর্তুগালের রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠানো হবে। রাষ্ট্রপতি অনুমোদন দিলে এই প্রস্তাবিত আইনটি গ্যাজেটে প্রকাশিত হয়ে কার্যকর হবে।

মানবিক ভিসা এবং নতুন অভিবাসন নীতিমালা বিশ্বজুড়ে নির্যাতিত ও বিপদাপন্ন মানুষের জন্য পর্তুগালকে একটি নতুন আশা হিসেবে দাঁড় করাচ্ছে। পর্তুগাল এভাবে মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে বিশ্বকে একটি উদাহরণ প্রদান করছে, যেখানে মানুষের অধিকার ও জীবন সুরক্ষিত রাখার জন্য নতুন পথ তৈরি করা হচ্ছে।

পর্তুগালের মানবিক ভিসা শুধু একটি আইন নয়, এটি মানবতার প্রতি এক গভীর প্রতিশ্রুতি। বিশ্ব যেখানে নির্যাতন ও জীবন-ঝুঁকিতে থাকা মানুষের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে, সেখানে পর্তুগাল তাদের জন্য একটি আশ্রয় হয়ে উঠতে চায়। নতুন নীতিমালা কার্যকর হলে, পর্তুগাল আরও বেশি মানুষের জন্য মুক্তির পথ হয়ে উঠবে।

ফেসবুকের মাধ্যমে আপনার মতামত জানান:
ট্যাগ :

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার মেইলে তথ্য জমা করুন

মানবিক ভিসা চালু করতে যাচ্ছে পর্তুগাল

পোস্ট হয়েছে : ০৩:৩৮ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৪ অক্টোবর ২০২৪

আমিরুল ইসলাম ,পর্তুগাল থেকে: দেশে দেশে যুদ্ধ নিপীড়ন এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের কারণে অনেক মানুষ নিজ দেশ ছেড়ে পালাতে বাধ্য হচ্ছে। ইউরোপের দেশ পর্তুগাল সেইসব বিপন্ন ও জীবন ঝুঁকিতে থাকা মানুষের জন্য একটি নতুন সুযোগ সৃষ্টি করেছে।

সম্প্রতি পর্তুগাল সরকার “মানবিক ভিসা” নামে একটি নতুন ভিসা চালু করার প্রস্তাব অনুমোদন করেছে। এটি বিপদাপন্ন ব্যক্তিদের জন্য এক নতুন আশ্রয়ের দিকনির্দেশনা হতে পারে।

১১ অক্টোবর, পর্তুগালের জাতীয় সংসদে মানবিক ভিসার বিল অনুমোদন করা হয়েছে। এই ভিসার আওতায় নির্যাতিত বা জীবন-ঝুঁকিতে থাকা ব্যক্তিরা পর্তুগালের দূতাবাস থেকে ভিসা আবেদন করতে পারবেন, এমনকি তাদের নিজ দেশে থাকলেও বা পার্শ্ববর্তী দেশের দূতাবাসে আবেদন করার সুযোগ থাকবে।

এর মাধ্যমে, জন্মভূমিতে অত্যাচারের শিকার এবং নিজেদের দেশে বসবাস ঝুঁকিপূর্ণ মনে করা ব্যক্তিরা পর্তুগালে এসে নতুন জীবন শুরু করতে পারবেন।

পর্তুগালে বর্তমানে এমন একটি আশ্রয় আবেদন প্রক্রিয়া রয়েছে, যেখানে কোনো বিদেশি নাগরিককে পর্তুগালে আসার পরই অভিবাসন অধিদপ্তরে আবেদন করতে হয়। কিন্তু নতুন এই মানবিক ভিসা তাদের জন্য এক নতুন রাস্তা খুলে দিচ্ছে, যারা সশরীরে উপস্থিত না হয়ে দূতাবাস থেকে আবেদন করতে চান।

এই নতুন বিধান শুধুমাত্র মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে সাহায্য প্রদানই নয়, এটি পর্তুগালের নতুন অভিবাসন নীতিমালার অংশ।

মানবিক ভিসা ছাড়াও, নতুন আইনের মাধ্যমে অভিবাসীদের জন্য আরেকটি সুবিধা যুক্ত করা হয়েছে। যে কোনো বিদেশি নাগরিক যদি পর্তুগালে কাজ করেন এবং ১২ মাস ধরে সোশ্যাল সিকিউরিটিতে কন্ট্রিবিউশন প্রদান করেন, তবে তারা নিয়মিত হওয়ার জন্য আবেদন করতে পারবেন। এটি অভিবাসীদের জন্য স্থায়ী বৈধতা অর্জনের একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।

গত ৩ জুন পর্তুগাল সরকার অভিবাসীদের নিয়মিত হওয়ার আইনের কিছু ধারা বন্ধ করে দেয়। কিন্তু এখন যাদের জন্য নিয়মিত হওয়ার পথ বন্ধ হয়ে গিয়েছিল, তারা এই নতুন আইনের মাধ্যমে পুনরায় সুযোগ পাবেন।

তবে, এই প্রস্তাবনা এখনও পুরোপুরি কার্যকর হয়নি। এটি এখন সাংবিধানিক অধিকার, স্বাধীনতা এবং গ্যারান্টি সংক্রান্ত সংসদীয় কমিটিতে আলোচিত হচ্ছে। সেখানে চূড়ান্ত অনুমোদনের পর এটি পর্তুগালের রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠানো হবে। রাষ্ট্রপতি অনুমোদন দিলে এই প্রস্তাবিত আইনটি গ্যাজেটে প্রকাশিত হয়ে কার্যকর হবে।

মানবিক ভিসা এবং নতুন অভিবাসন নীতিমালা বিশ্বজুড়ে নির্যাতিত ও বিপদাপন্ন মানুষের জন্য পর্তুগালকে একটি নতুন আশা হিসেবে দাঁড় করাচ্ছে। পর্তুগাল এভাবে মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে বিশ্বকে একটি উদাহরণ প্রদান করছে, যেখানে মানুষের অধিকার ও জীবন সুরক্ষিত রাখার জন্য নতুন পথ তৈরি করা হচ্ছে।

পর্তুগালের মানবিক ভিসা শুধু একটি আইন নয়, এটি মানবতার প্রতি এক গভীর প্রতিশ্রুতি। বিশ্ব যেখানে নির্যাতন ও জীবন-ঝুঁকিতে থাকা মানুষের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে, সেখানে পর্তুগাল তাদের জন্য একটি আশ্রয় হয়ে উঠতে চায়। নতুন নীতিমালা কার্যকর হলে, পর্তুগাল আরও বেশি মানুষের জন্য মুক্তির পথ হয়ে উঠবে।

ফেসবুকের মাধ্যমে আপনার মতামত জানান: