ঢাকা , রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

গোপালগঞ্জে তৈরি হচ্ছে পলিথিনের বিকল্প পলিমার ব্যাগ

  • পোস্ট হয়েছে : ৭ মিনিট আগে
  • 1

বিজনেস আওয়ার প্রতিবেদক: পলিথিন নিষিদ্ধ করেছে সরকার। আর তাই পলিথিন ব্যাগের বিকল্প হিসেবে তৈরি হচ্ছে পলিমার ব্যাগ। তবে এটি পচনশীল। যেটা পচে তৈরি হবে জৈবসার। যা পরিবেশের ক্ষতি না করে বরং মাটির উর্বরতা বৃদ্ধিতে সাহায্য করবে।

ভুট্টা ও উদ্ভিদজাত কেমিক্যাল দ্বারা তৈরি এই বায়ো-ডিগ্রেডেবল পলিমারের ব্যাগ সাধারণ পলিথিন ব্যাগের তুলনায় বেশি ধারণক্ষমতা সম্পন্ন ও বেশি টেকসই। ফলে এটা ব্যবহারও করা যাবে দীর্ঘদিন। পরিবেশবান্ধব ও নান্দনিক হওয়ায় ব্যবহার করা যাবে বড় বড় শপিংমলেও।

গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার কড়পাড়া ইউনিয়নের তারগ্রাম এলাকায় অবস্থিত জেকে পলিমার ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড নামক একটি প্রতিষ্ঠানে উদপাদন শুরু হয়েছে পচনশীল এ বায়ো-ডিগ্রেডেবল পলিমার ব্যাগের। গত সপ্তাহে আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়েছে এর উৎপাদন। প্রতিষ্ঠানটিতে প্রতিদিন তৈরি হচ্ছে একটন পচনশীল পলিমার ব্যাগ। ৩টি সাইজের শপিংব্যাগে ১ কেজি থেকে ২০ কেজি পর্যন্ত ওজনের মালামাল বহন করা সম্ভব।

নিষিদ্ধ পলিথিনের তুলনায় পরিবেশবান্ধব এ ব্যাগ কিনতে খরচ তুলনামূলক কিছুটা বেশি। ২ পিস এককেজি মালামাল বহনকারী ব্যাগের দাম ১ টাকা এবং ২০ কেজির কেজি বহনকারী প্রতি পিস ব্যাগের দাম ২০ টাকা।

শনিবার (২৩ নভেম্বর) কড়পাড়া ইউনিয়নের তারগ্রাম এলাকায় জেকে পলিমার ইন্ডাস্ট্রিজের কারখানায় গিয়ে দেখা যায়, বিদেশ থেকে আমদানিকৃত তিন স্তরের অত্যাধুনিক মেশিনে উৎপাদন হচ্ছে এই পরিবেশবান্ধব পলিথিন ব্যাগ। এই মেশিনে প্রতিদিন এক টন শপিংব্যাগ উৎপাদিত হচ্ছে। প্রতি কেজি ব্যাগ বিক্রি হচ্ছে ৬০০ টাকা কেজি দরে। যাচ্ছে আশপাশের বিভিন্ন বাজারে।

কারখানাটির মেশিন অপারেটর মোস্তাফিজের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এই পরিবেশবান্ধব বায়ো-ডিগ্রেডেবল পলিমার ব্যাগের কাঁচামাল বিদেশ থেকে আমদানি করা হয়। ভুট্টার নির্যাস ও উদ্ভিদজাত পলিমার দিয়ে তৈরি এ কাঁচামাল প্রতি কেজি ৪৫০-৫০০ টাকা দরে কিনতে হয়।

কোম্পানি ম্যানেজার সাইফুল ইসলাম বলেন, পরিবেশবান্ধব এই বায়ো-ডিগ্রেডেবল পলিমার ব্যাগ যেমন পরিবেশকে রক্ষা করবে তেমনি পচে মাটির উর্বরতা বৃদ্ধি করবে। মাত্র শুরু করলেও আমরা সাধারণের বেশ সাড়া পাচ্ছি। পরিবেশবান্ধব হওয়ায় আমরাও উৎপাদনে আশাবাদী হচ্ছি। বর্তমানে দিনে একটন অর্থাৎ একহাজার কেজি উৎপাদন হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, আমরা পরীক্ষার জন্য বুয়েটে স্যাম্পল পাঠিয়েছি। এছাড়াও নিজস্ব ল্যাবে পরীক্ষা করেছি। পরীক্ষায় সফল হয়েছি। এটি মাটির সংস্পর্শে আসার তিন থেকে পাঁচ মাসের মধ্যে পচে মাটিতে রূপ নেবে। তবে সেটি জৈব সার হয়ে মাটির উর্বরতা আরও বাড়াবে।

কোম্পানির মালিক কামরুজ্জামান কামাল সিকদার বলেন, সরকারের পলিথিন ব্যাগ নিষিদ্ধের উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে পলিথিনের বিকল্প হিসেবে আমরা বায়ো-ডিগ্রেডেবল পলিমার ব্যাগ উৎপাদন শুরু করেছি। এটি পলিথিনের মতোই, তবে পচনশীল। শুধু তাই নয়, পচে মাটিতে জৈব সার তৈরি হবে। এটি সাধারণ পলিথিন ব্যাগের তুলনায় কিছুটা ব্যয়বহুল হলেও পরিবেশবান্ধব। তাই দেশ ও পরিবেশের কথা চিন্তা করে সবাই এটি ব্যবহার করবে বলে আমি বিশ্বাস করি।

এ বিষয়ে পরিবেশ অধিদপ্তর গোপালগঞ্জের পরিদর্শক মিজানুর রহমান বলেন, পলিথিন নিষিদ্ধের পর দেশে বায়ো-ডিগ্রেডেবল ব্যাগ উৎপাদন শুরু হয়েছে। সেটি পাট দিয়ে তৈরি হচ্ছে। সদর উপজেলার এই কারখানাটি আমাদের নলেজে নেই। তারা যদি ভুট্টা থেকে তৈরি করে থাকে তাহলে ঠিক আছে, ওইটি বায়ো ডিগ্রেডেবল। তবে ভুট্টার পাশাপাশি কেমিক্যাল পরিমাণ মতো হতে হবে। তা না হলে সেটি বায়ো-ডিগ্রেডেবল বলে বিবেচিত হবে না। কারখানাটি সম্পর্কে আমার জানা ছিল না। তবে যেহেতু জেনেছি আমরা সেখান থেকে নমুনা সংগ্রহ করে আমাদের নিজস্ব ল্যাবে পরীক্ষা করে দেখবো।

বিজনেস আওয়ার/ ২৪ নভেম্বর/ রহমান

ফেসবুকের মাধ্যমে আপনার মতামত জানান:
ট্যাগ :

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার মেইলে তথ্য জমা করুন

গোপালগঞ্জে তৈরি হচ্ছে পলিথিনের বিকল্প পলিমার ব্যাগ

পোস্ট হয়েছে : ৭ মিনিট আগে

বিজনেস আওয়ার প্রতিবেদক: পলিথিন নিষিদ্ধ করেছে সরকার। আর তাই পলিথিন ব্যাগের বিকল্প হিসেবে তৈরি হচ্ছে পলিমার ব্যাগ। তবে এটি পচনশীল। যেটা পচে তৈরি হবে জৈবসার। যা পরিবেশের ক্ষতি না করে বরং মাটির উর্বরতা বৃদ্ধিতে সাহায্য করবে।

ভুট্টা ও উদ্ভিদজাত কেমিক্যাল দ্বারা তৈরি এই বায়ো-ডিগ্রেডেবল পলিমারের ব্যাগ সাধারণ পলিথিন ব্যাগের তুলনায় বেশি ধারণক্ষমতা সম্পন্ন ও বেশি টেকসই। ফলে এটা ব্যবহারও করা যাবে দীর্ঘদিন। পরিবেশবান্ধব ও নান্দনিক হওয়ায় ব্যবহার করা যাবে বড় বড় শপিংমলেও।

গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার কড়পাড়া ইউনিয়নের তারগ্রাম এলাকায় অবস্থিত জেকে পলিমার ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড নামক একটি প্রতিষ্ঠানে উদপাদন শুরু হয়েছে পচনশীল এ বায়ো-ডিগ্রেডেবল পলিমার ব্যাগের। গত সপ্তাহে আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়েছে এর উৎপাদন। প্রতিষ্ঠানটিতে প্রতিদিন তৈরি হচ্ছে একটন পচনশীল পলিমার ব্যাগ। ৩টি সাইজের শপিংব্যাগে ১ কেজি থেকে ২০ কেজি পর্যন্ত ওজনের মালামাল বহন করা সম্ভব।

নিষিদ্ধ পলিথিনের তুলনায় পরিবেশবান্ধব এ ব্যাগ কিনতে খরচ তুলনামূলক কিছুটা বেশি। ২ পিস এককেজি মালামাল বহনকারী ব্যাগের দাম ১ টাকা এবং ২০ কেজির কেজি বহনকারী প্রতি পিস ব্যাগের দাম ২০ টাকা।

শনিবার (২৩ নভেম্বর) কড়পাড়া ইউনিয়নের তারগ্রাম এলাকায় জেকে পলিমার ইন্ডাস্ট্রিজের কারখানায় গিয়ে দেখা যায়, বিদেশ থেকে আমদানিকৃত তিন স্তরের অত্যাধুনিক মেশিনে উৎপাদন হচ্ছে এই পরিবেশবান্ধব পলিথিন ব্যাগ। এই মেশিনে প্রতিদিন এক টন শপিংব্যাগ উৎপাদিত হচ্ছে। প্রতি কেজি ব্যাগ বিক্রি হচ্ছে ৬০০ টাকা কেজি দরে। যাচ্ছে আশপাশের বিভিন্ন বাজারে।

কারখানাটির মেশিন অপারেটর মোস্তাফিজের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এই পরিবেশবান্ধব বায়ো-ডিগ্রেডেবল পলিমার ব্যাগের কাঁচামাল বিদেশ থেকে আমদানি করা হয়। ভুট্টার নির্যাস ও উদ্ভিদজাত পলিমার দিয়ে তৈরি এ কাঁচামাল প্রতি কেজি ৪৫০-৫০০ টাকা দরে কিনতে হয়।

কোম্পানি ম্যানেজার সাইফুল ইসলাম বলেন, পরিবেশবান্ধব এই বায়ো-ডিগ্রেডেবল পলিমার ব্যাগ যেমন পরিবেশকে রক্ষা করবে তেমনি পচে মাটির উর্বরতা বৃদ্ধি করবে। মাত্র শুরু করলেও আমরা সাধারণের বেশ সাড়া পাচ্ছি। পরিবেশবান্ধব হওয়ায় আমরাও উৎপাদনে আশাবাদী হচ্ছি। বর্তমানে দিনে একটন অর্থাৎ একহাজার কেজি উৎপাদন হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, আমরা পরীক্ষার জন্য বুয়েটে স্যাম্পল পাঠিয়েছি। এছাড়াও নিজস্ব ল্যাবে পরীক্ষা করেছি। পরীক্ষায় সফল হয়েছি। এটি মাটির সংস্পর্শে আসার তিন থেকে পাঁচ মাসের মধ্যে পচে মাটিতে রূপ নেবে। তবে সেটি জৈব সার হয়ে মাটির উর্বরতা আরও বাড়াবে।

কোম্পানির মালিক কামরুজ্জামান কামাল সিকদার বলেন, সরকারের পলিথিন ব্যাগ নিষিদ্ধের উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে পলিথিনের বিকল্প হিসেবে আমরা বায়ো-ডিগ্রেডেবল পলিমার ব্যাগ উৎপাদন শুরু করেছি। এটি পলিথিনের মতোই, তবে পচনশীল। শুধু তাই নয়, পচে মাটিতে জৈব সার তৈরি হবে। এটি সাধারণ পলিথিন ব্যাগের তুলনায় কিছুটা ব্যয়বহুল হলেও পরিবেশবান্ধব। তাই দেশ ও পরিবেশের কথা চিন্তা করে সবাই এটি ব্যবহার করবে বলে আমি বিশ্বাস করি।

এ বিষয়ে পরিবেশ অধিদপ্তর গোপালগঞ্জের পরিদর্শক মিজানুর রহমান বলেন, পলিথিন নিষিদ্ধের পর দেশে বায়ো-ডিগ্রেডেবল ব্যাগ উৎপাদন শুরু হয়েছে। সেটি পাট দিয়ে তৈরি হচ্ছে। সদর উপজেলার এই কারখানাটি আমাদের নলেজে নেই। তারা যদি ভুট্টা থেকে তৈরি করে থাকে তাহলে ঠিক আছে, ওইটি বায়ো ডিগ্রেডেবল। তবে ভুট্টার পাশাপাশি কেমিক্যাল পরিমাণ মতো হতে হবে। তা না হলে সেটি বায়ো-ডিগ্রেডেবল বলে বিবেচিত হবে না। কারখানাটি সম্পর্কে আমার জানা ছিল না। তবে যেহেতু জেনেছি আমরা সেখান থেকে নমুনা সংগ্রহ করে আমাদের নিজস্ব ল্যাবে পরীক্ষা করে দেখবো।

বিজনেস আওয়ার/ ২৪ নভেম্বর/ রহমান

ফেসবুকের মাধ্যমে আপনার মতামত জানান: