ঢাকা , রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ৭ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

প্রতিপক্ষের ত্রাস, বাংলাদেশের জয়ের নায়ক জাকের আলী

  • পোস্ট হয়েছে : ০৮:১৯ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২০ ডিসেম্বর ২০২৪
  • 5

স্পোর্টস ডেস্ক: শেষ টেস্টে বাংলাদেশের জয়ের প্রকৃত নায়ক কে? জ্যামাইকার কিংসটনের সাবিনা পার্কে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে বাংলাদেশের ঐতিহাসিক টেস্ট জয়ের সত্যিকার রূপকার ও স্থপতি কে? তা নিয়ে খানিক বিতর্ক আছে। কারণ, ওই টেস্টের বাঁকবদলের কয়েকটা ঘটনা ছিল। প্রত্যেকটির নায়কই পৃথক।

যেমন, প্রথম ইনিংসে মাত্র ১৬৪ রানে অলআউট হয়েও ফাস্টবোলার নাহিদ রানার (৫/৬১) হাত ধরে ১৮ রানের লিড পায় বাংলাদেশ। তারপর অতিব প্রয়োজনীয় সময়ে ১০৬ বলে ৫ ছক্কা ও ৬ বাউন্ডারিতে ৯১ রানের অসাধারণ ইনিংস খেলে দলকে জয়ের পথে অনেক দূর এগিয়ে দেন জাকের আলী অনিক। কার্যত ওই ইনিংসের ওপর ভর করেই জয়ের প্রথম আভাস পায় বাংলাদেশ। না হয় দুইশর আশেপাশেই আটকে যেতো বাংলাদেশের লিড।

জাকেরের ওই ইনিংসের ওপর ভর ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ২৮৭ রানের চ্যালেঞ্জিং ছুঁড়ে দেয় বাংলাদেশ। শেষ কাজটা করেন তাইজুল ইসলাম। বাঁহাতি স্পিনারের দুর্দান্ত বোলিংয়ে (৫০ রানে ৫ উইকেট) ১৮৫ রানে অলআউট হয় ক্রেইগ ব্রাথওয়েটের দল। ১০১ রানের স্মরণীয় জয়ে টেস্ট সিরিজে সমতা ফিরিয়ে আনে বাংলাদেশ।

ম্যাচ জয়ের আলোকে চিন্তা করলে নাহিদ রানা ও তাইজুলকে টপকে জাকের আলীই টেস্ট জয়ের সত্যিকার রূপকার মনে হয়। বোলাররা যতই দলকে ম্যাচে ফেরান না কেন, জাকের আলীর ওই ইনিংস না খেললে বাংলাদেশ কিছুতেই ওয়েস্ট ইন্ডিজকে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিতে পারতো না। তাই ম্যাচ জয়ের আসল নায়ক জাকের আলীকেই ধরা যায়।

কাকতালীয়ভাবে তৃতীয় ও শেষ টি-টোয়েন্টিতে তাই হলো। লেগস্পিনার রিশাদ হোসেন (৩/২১) তাসকিন আহমেদ (২/৩০), শেখ মেহেদী (২/১৩) ও হাসান মাহমুদ (১/৯) অবশ্যই দারুণ বোলিং করেছেন। ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ১০৯ রানে বেঁধে ফেলে দলকে ৮০ রানের জয়ে অন্যতম ভূমিকা রেখেছেন। তারপরও ক্যারিবীয়দের ‘বাংলা ওয়াশ’ করার নায়ক জাকের আলীকেই মানতে হয়।

প্রথম দুই ম্যাচে ব্যাটাররা রানখরায় ছিলেন, ৩০ রানের ঘর পার হতেই কষ্ট হচ্ছিল। শেষ ম্যাচে পারভেজ হোসেন ইমন (২১ বলে ৩৯), মেহেদী হাসান মিরাজ (২৩ বলে ২৯) ভালো শুর করে দিলেও ১১৪ রানে ৬ উইকেট পড়ে গিয়েছিল। এরপর জাকের আলী একদিক আগলে রেখে ৪১ বলে ৬ ছক্কা ও ৩ বাউন্ডারিতে ৭২ রানের হার না মানা ইনিংস উপহার দিয়ে দলকে ১৮৯ রানের বিশাল স্কোর গড়ে দিয়েছেন। সেই বড় পুঁজিতেই ধরা দিয়েছে বড় জয়।

সাকিব আল হাসানের মতো ‘চ্যাম্পিয়ন অলরাউন্ডার’ নেই। অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত ও তাওহিদ হৃদয়ের মতো দুজন পরিণত এবং কার্যকর ব্যাটারও অনুপস্থিত। ব্যাটারদের ব্যাটে তেমন রান নেই।

শেষ ম্যাচে ১৫তম ওভারের খেলা চলাকালীন ১১৪ রানে ৬ উইকেট হারানোর পর মনে হয়েছিল ১৫০-১৬০ এর মধ্যে আটকে যাবে বাংলাদেশ। কারণ, তখন জাকের আলীই ছিলেন শেষ স্বীকৃত ব্যাটার। তার সঙ্গী ছিলেন পেসার তানজিম সাকিব। তানজিমকে নিয়ে সপ্তম উইকেটে ঝড়ের বেগে ছক্কা ও চার হাঁকিয়ে জাকের আলী তুলে নিলেন ৫০ রান। শেষ ৩০ বলে হলো ৭৫ রান। যার বড় অংশই এসেছে জাকের আলীর ছক্কা-চার থেকে।

জাকের আলী প্রমাণ করলেন, ব্যাটারদের কেউ না থাকলেও এক বুক সাহস নিয়ে দলকে বড় পুঁজি গড়ে দেওয়ার কাজটা ভালোমতো পালন করতে পারেন। একা দল টানার সামর্থ্য রাখেন। শেষ টেস্ট ও শেষ টি-টোয়েন্টি দেখার পর অনেক ভক্ত মনে করেন, জাকের আলী আগামীর বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ের দায়িত্ব কাঁধে নিতে সক্ষম।

বিজনেস আওয়ার/ ২০ ডিসেম্বর / রানা

ফেসবুকের মাধ্যমে আপনার মতামত জানান:
ট্যাগ :

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার মেইলে তথ্য জমা করুন

প্রতিপক্ষের ত্রাস, বাংলাদেশের জয়ের নায়ক জাকের আলী

পোস্ট হয়েছে : ০৮:১৯ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২০ ডিসেম্বর ২০২৪

স্পোর্টস ডেস্ক: শেষ টেস্টে বাংলাদেশের জয়ের প্রকৃত নায়ক কে? জ্যামাইকার কিংসটনের সাবিনা পার্কে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে বাংলাদেশের ঐতিহাসিক টেস্ট জয়ের সত্যিকার রূপকার ও স্থপতি কে? তা নিয়ে খানিক বিতর্ক আছে। কারণ, ওই টেস্টের বাঁকবদলের কয়েকটা ঘটনা ছিল। প্রত্যেকটির নায়কই পৃথক।

যেমন, প্রথম ইনিংসে মাত্র ১৬৪ রানে অলআউট হয়েও ফাস্টবোলার নাহিদ রানার (৫/৬১) হাত ধরে ১৮ রানের লিড পায় বাংলাদেশ। তারপর অতিব প্রয়োজনীয় সময়ে ১০৬ বলে ৫ ছক্কা ও ৬ বাউন্ডারিতে ৯১ রানের অসাধারণ ইনিংস খেলে দলকে জয়ের পথে অনেক দূর এগিয়ে দেন জাকের আলী অনিক। কার্যত ওই ইনিংসের ওপর ভর করেই জয়ের প্রথম আভাস পায় বাংলাদেশ। না হয় দুইশর আশেপাশেই আটকে যেতো বাংলাদেশের লিড।

জাকেরের ওই ইনিংসের ওপর ভর ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ২৮৭ রানের চ্যালেঞ্জিং ছুঁড়ে দেয় বাংলাদেশ। শেষ কাজটা করেন তাইজুল ইসলাম। বাঁহাতি স্পিনারের দুর্দান্ত বোলিংয়ে (৫০ রানে ৫ উইকেট) ১৮৫ রানে অলআউট হয় ক্রেইগ ব্রাথওয়েটের দল। ১০১ রানের স্মরণীয় জয়ে টেস্ট সিরিজে সমতা ফিরিয়ে আনে বাংলাদেশ।

ম্যাচ জয়ের আলোকে চিন্তা করলে নাহিদ রানা ও তাইজুলকে টপকে জাকের আলীই টেস্ট জয়ের সত্যিকার রূপকার মনে হয়। বোলাররা যতই দলকে ম্যাচে ফেরান না কেন, জাকের আলীর ওই ইনিংস না খেললে বাংলাদেশ কিছুতেই ওয়েস্ট ইন্ডিজকে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিতে পারতো না। তাই ম্যাচ জয়ের আসল নায়ক জাকের আলীকেই ধরা যায়।

কাকতালীয়ভাবে তৃতীয় ও শেষ টি-টোয়েন্টিতে তাই হলো। লেগস্পিনার রিশাদ হোসেন (৩/২১) তাসকিন আহমেদ (২/৩০), শেখ মেহেদী (২/১৩) ও হাসান মাহমুদ (১/৯) অবশ্যই দারুণ বোলিং করেছেন। ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ১০৯ রানে বেঁধে ফেলে দলকে ৮০ রানের জয়ে অন্যতম ভূমিকা রেখেছেন। তারপরও ক্যারিবীয়দের ‘বাংলা ওয়াশ’ করার নায়ক জাকের আলীকেই মানতে হয়।

প্রথম দুই ম্যাচে ব্যাটাররা রানখরায় ছিলেন, ৩০ রানের ঘর পার হতেই কষ্ট হচ্ছিল। শেষ ম্যাচে পারভেজ হোসেন ইমন (২১ বলে ৩৯), মেহেদী হাসান মিরাজ (২৩ বলে ২৯) ভালো শুর করে দিলেও ১১৪ রানে ৬ উইকেট পড়ে গিয়েছিল। এরপর জাকের আলী একদিক আগলে রেখে ৪১ বলে ৬ ছক্কা ও ৩ বাউন্ডারিতে ৭২ রানের হার না মানা ইনিংস উপহার দিয়ে দলকে ১৮৯ রানের বিশাল স্কোর গড়ে দিয়েছেন। সেই বড় পুঁজিতেই ধরা দিয়েছে বড় জয়।

সাকিব আল হাসানের মতো ‘চ্যাম্পিয়ন অলরাউন্ডার’ নেই। অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত ও তাওহিদ হৃদয়ের মতো দুজন পরিণত এবং কার্যকর ব্যাটারও অনুপস্থিত। ব্যাটারদের ব্যাটে তেমন রান নেই।

শেষ ম্যাচে ১৫তম ওভারের খেলা চলাকালীন ১১৪ রানে ৬ উইকেট হারানোর পর মনে হয়েছিল ১৫০-১৬০ এর মধ্যে আটকে যাবে বাংলাদেশ। কারণ, তখন জাকের আলীই ছিলেন শেষ স্বীকৃত ব্যাটার। তার সঙ্গী ছিলেন পেসার তানজিম সাকিব। তানজিমকে নিয়ে সপ্তম উইকেটে ঝড়ের বেগে ছক্কা ও চার হাঁকিয়ে জাকের আলী তুলে নিলেন ৫০ রান। শেষ ৩০ বলে হলো ৭৫ রান। যার বড় অংশই এসেছে জাকের আলীর ছক্কা-চার থেকে।

জাকের আলী প্রমাণ করলেন, ব্যাটারদের কেউ না থাকলেও এক বুক সাহস নিয়ে দলকে বড় পুঁজি গড়ে দেওয়ার কাজটা ভালোমতো পালন করতে পারেন। একা দল টানার সামর্থ্য রাখেন। শেষ টেস্ট ও শেষ টি-টোয়েন্টি দেখার পর অনেক ভক্ত মনে করেন, জাকের আলী আগামীর বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ের দায়িত্ব কাঁধে নিতে সক্ষম।

বিজনেস আওয়ার/ ২০ ডিসেম্বর / রানা

ফেসবুকের মাধ্যমে আপনার মতামত জানান: