বিজনেস আওয়ার প্রতিবেদক: গাজীপুরের টঙ্গীর তুরাগ নদের তীরে আগামী শুক্রবার থেকে শুরু হচ্ছে বিশ্ব ইজতেমা। তাবলিগ জামাত বাংলাদেশ শুরায়ি নেজামের অধীনে ছয় দিনব্যাপী এই ইজতেমা হবে দুই পর্বে। এ উপলক্ষে ইজতেমার যাবতীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে।
এবারের ইজতেমাকে সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন করতে গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ, জেলা প্রশাসন, গাজীপুর সিটি করপোরেশনসহ বিভিন্ন সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে।
এরইমধ্যে ইজতেমা ময়দানে সুবিশাল চটের ছাউনি দেওয়া হয়েছে। ময়দানের উত্তর-পশ্চিম প্রান্তে বিদেশি মেহমানদের জন্য টিনের ছাউনিযুক্ত পৃথক কামরা তৈরি করা হয়েছে। বিদেশি মেহমানদের নিবাসটি বিশেষ নিরাপত্তা ও নজরদারির মধ্যে রাখা হচ্ছে।
এদিকে বুধবার (২৯ জানুয়ারি) সকাল ১০টার দিকে আইজিপি বাহারুল আলম ইজতেমা ময়দান পরিদর্শন করবেন। পরে তিনি গণমাধ্যম কর্মীদের সঙ্গে এ বিষয়ে মতবিনিময় সভা করবেন। বিশ্ব ইজতেমা ময়দানের ২নং গেইটের বিদেশি নিবাসের কাছে এ মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হবে। এতে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত থাকবেন বলে জানা গেছে।
তাবলিগ জামাত বাংলাদেশ শুরায়ি নেজামের মিডিয়া সমন্বয়ক হাবিবুল্লাহ রায়হান জানান, এবারের ইজতেমা হযরত ওলামায়ে কেরামের তত্ত্বাবধানে শুরায়ি নেজামের অধীনে দুই পর্বে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। প্রথম পর্ব ৩১ জানুয়ারি, ১ ও ২ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত হবে। বিরতিহীনভাবে দ্বিতীয় পর্ব ৩, ৪ ও ৫ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত হবে। এবারের ইজতেমায় অংশগ্রহণের জন্য পুরো ৬৪টি জেলাকে দুই ভাগে বিভক্ত করা হয়েছে। কোন জেলা কোন পর্বে অংশগ্রহণ করবে তা এরইমধ্যে জেলাওয়ারি মুরুব্বিদের জানানো হয়েছে।
তিনি জানান, ৩১ জানুয়ারি শুরু হওয়া ইজতেমার প্রথম পর্বে অংশগ্রহণ করছেন গাজীপুর, টঙ্গী, ধামরাই, গাইবান্ধা, নাটোর, মৌলভীবাজার, রাজশাহী, দোহার, ডেমরা, কাকরাইল, নড়াইল, ঠাকুরগাঁও, লালমনিরহাট, নবাবগঞ্জ, নীলফামারী, দিনাজপুর, রংপুর, বগুড়া, নারায়ণগঞ্জ, বরিশাল, ভোলা, চুয়াডাংগা, কুষ্টিয়া, যশোর, মাগুরা, বাগেরহাট, সাতক্ষীরা, ময়মনসিংহ, চট্টগ্রাম, নেত্রকোনা, শেরপুর, ফরিদপুর, হবিগঞ্জ, সুনামগঞ্জ, ফেনী, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, খুলনা, পটুয়াখালী, কুমিল্লা, ঝিনাইদহ, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, পিরোজপুর, কুড়িগ্রাম, পঞ্চগড় ও রাজবাড়ী জেলা। এ পর্বে ঢাকার মিরপুর, কাকরাইল ও ঢাকার একাংশসহ মোট ৪১টি জেলার মুসল্লিরা অংশ নেবেন।
দ্বিতীয় পর্বে অংশগ্রহণ করবেন- মুন্সিগঞ্জ, জামালপুর, মানিকগঞ্জ, জয়পুরহাট, সিলেট, সিরাজগঞ্জ, মেহেরপুর, টাংগাইল, পাবনা, নরসিংদী, সাভার, কিশোরগঞ্জ, কক্সবাজার, নোয়াখালী, গোপালগঞ্জ, ঝালকাঠি, বরগুনা, মাদারীপুর, শরীয়তপুর, খাগড়াছড়ি, রাঙ্গামাটি, নওগাঁ ও বান্দরবন জেলা। এ পর্বে ঢাকার যাত্রাবাড়ী, কেরানীগঞ্জ, মোহাম্মাদপুর, ঢাকার একাংশসহ ২২টি জেলার মুসল্লিরা অংশগ্রহণ করবেন।
মিডিয়া সমন্বয়ক হাবিবুল্লাহ রায়হান আরও জানান, ইজতেমা আয়োজনের জন্য মাঠ এখন পুরোপুরি প্রস্তুত। মঙ্গলবার বিকেল থেকেই প্রথম পর্বে ইজতেমায় অংশগ্রহণের জন্য বিভিন্ন খিত্তা ও পয়েন্টের জিম্মাদাররা দায়িত্ব পালন শুরু করেছেন। বুধবার সকাল থেকে তাবলীগ জামাতের দেশি-বিদেশি মেহমান ও সাধারণ ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা জামাতভুক্ত হয়ে ইজতেমা মাঠে আসতে শুরু করবেন। এরইমধ্যে ডিএমপি ট্রাফিক বিভাগ ইজতেমায় আগত যানবাহন সম্পর্কে ট্রাফিক নির্দেশনা প্রদান করেছেন।
দুই পর্বে বিশ্ব ইজতেমা করার কারণ সম্পর্কে তিনি বলেন- তাবলিগের মেহনত একটি দ্বিনের অন্যতম মেহনত এবং দ্বিনের ধারক বাহক হচ্ছেন হযরত ওলামায়ে কেরাম। ধর্মপ্রাণ মুসল্লি ভাইয়েরা ওলামায়ে কেরামের তত্ত্বাবধানে থেকেই তাবলিগের মেহনত করতে চান। এই সংখ্যাটা এত ব্যাপক যে টঙ্গী ইজতেমা মাঠের ১৬০ একর জায়গায় তাদের অবস্থান করাটা খুবই কষ্টদায়ক হয়ে যায়। গত কয়েক বছর শুরায়ি নেজামের অধীনে যেসব ইজতেমা অনুষ্ঠিত হয়েছে, আপনারা জেনে থাকবেন আমাদের সাথীরা স্থায়ী টয়লেটের ছাদগুলোর ওপরে, আশেপাশে ছোট ছোট মাঠগুলোর ভেতরে এবং রাস্তায় ধুলাবালির ভেতর কষ্ট করে অবস্থান করেছেন। এবার দুই পর্বে ইজতেমা হওয়ার কারণে তাদের কষ্ট কিছুটা হলেও লাঘব হবে।
ইজতেমায় আগত মুসল্লিদের পারাপারের জন্য তুরাগ নদের ওপর সেনাবাহিনী ৫টি এবং বিআইডব্লিউটিএ একটি অস্থায়ী পল্টুন ব্রিজ নির্মাণ করেছে। ইজতেমায় আগত মুসল্লিদের সুবিধার্থে এবারো গাজীপুর জেলা প্রশাসন, পুলিশ, র্যাব, বিজিবি, ফায়ার সার্ভিস, জেলা সিভিল সার্জন, সিটি করপোরেশন, ডেসকো, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর সমন্বয় করে ইজতেমা ময়দানের যাবতীয় কার্যক্রম পরিচালনা করছেন। এছাড়া ইজতেমায় অংশগ্রহণকারী মুসল্লিদের ওজু, গোসলের জন্য সুপেয় খাবারের পানি সরবরাহ, রান্নার জন্য উপযুক্ত স্থান নির্বাচন করে দেওয়া হয়েছে।
মুসল্লিদের বিনামূল্যে চিকিৎসার জন্য স্বাস্থ্য বিভাগও নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। টঙ্গী আহসান উল্লাহ মাস্টার জেনারেল হাসপাতালে অতিরিক্ত শয্যা সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে। এছাড়া ইজতেমা ময়দানের পাশে বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল ও সেবা সংস্থা বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবার জন্য অর্ধশতাধিক ক্যাম্প স্থাপন করেছে।
অপরদিকে মাওলানা সা’দ অনুসারীদের ইজতেমা আগামী ১৪, ১৫ ও ১৬ ফেব্রুয়ারি টঙ্গীর ইজতেমা ময়দানে অনুষ্ঠিত হবে বলে জানিয়েছেন গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-কমিশনার (দক্ষিণ) নুর মোহাম্মদ নাসিরুদ্দিন। তিনি বলেন, মন্ত্রণালয় থেকে সিদ্ধান্তের আলোকেই সা’দ অনুসারীরা ওই সময়ে ইজতেমায় যোগ দেবেন।
বিজনেস আওয়ার/ ২৯ জানুয়ারি / রহমান