ঢাকা , রবিবার, ০২ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ২০ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

মহাসমাবেশে নামছে ক্ষতিগ্রস্ত বিনিয়োগকারীরা, বিএসইসি’র হুমকি

  • পোস্ট হয়েছে : ১৬ মিনিট আগে
  • 2

বিজনেস আওয়ার প্রতিবেদক: শেয়ারবাজারের ক্ষতিগ্রস্ত বিনিয়োগকারীদের নিয়ে আগামী সোমবার (৩ ফেব্রুয়ারি) মতিঝিলে প্রতিবাদ মহাসমাবেশ কর্মসূচির ডাক দিয়েছে বাংলাদেশ ক্যাপিটাল মার্কেট ইনভেস্টর অ্যাসোসিয়েশন (বিসিএমআইএ)। বিনিয়োগকারীদের এ সমাবেশে বিএনপি, জামায়াত, এবি পার্টি ও গণঅধিকার পরিষদসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ এবং শেয়ারবাজারের ক্ষতিগ্রস্ত বিনিয়োগকারীরা বক্তব্য রাখবেন। তবে এ সমাবেশ বন্ধ করতে স্বয়ং নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) বিরুদ্ধে হুমকির অভিযোগ উঠেছে। বিভিন্ন ব্রোকারেজ হাউজ ও মার্চেন্ট ব্যাংকের কর্মকর্তারা এই সমাবেশে যাতে অংশ না নেয়, তার জন্য হুমকি দেওয়ার অভিযোগ তোলেন সমাবেশের প্রধান মুখপাত্র মো. নূরুল ইসলাম মানিক। শনিবার (১ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর বিজয়নগরে ক্যাপিটাল মার্কেট জার্নালিস্টস ফোরামের (সিএমজেএফ) কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান বিসিএমআইএ’র।

তিনি জানান, “আগামী সোমবার আমরা মহাসমাবেশ করবো। তবে এই সমাবেশে ব্রোকারেজ হাউজের কর্মী ও বিনিয়োগকারীরা যাতে অংশ না নেয়, তার জন্য হুমকি দিচ্ছে বিএসইসি।”

তিনি আরও জানান, “বিনিয়োগকারীদের সমাবেশ বন্ধ করতে বিএসইসির এমন কর্মকান্ডের যে তথ্য পাওয়া গেছে তা ন্যক্কারজনক। এটা স্বৈরাচারী আচরণ, এটা ঠিক না। প্রতিটি মানুষ ন্যায্য অধিকারের জন্য কথা বলবে, প্রতিবাদ ও সমাবেশ করবে এটাই বাস্তবতা। বিএসইসির এমন আচরণের তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি।”

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মোহাম্মদ রেজাউল করিম বলেন, “এটা সম্পূর্ণ মিথ্যা ও গুজব। কমিশন থেকে কাউকে এমন হুমকি দেওয়া হয়নি।”

তিনি আরও বলেন, “সাধারণ বিনিয়োগকারীদের অধিকার আছে সমাবেশ করা। কমিশন কখনো বাধা দেবে না। তবে কারো বিরুদ্ধে এমন কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার সুষ্ঠু প্রমাণ মিললে কমিশন ব্যবস্থা নেবে।”

এর আগে, শনিবার সিএমজেএফ কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে প্রতিবাদ সমাবেশ কর্মসূচির ঘোষণা দেওয়া হয়। সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনের পক্ষ থেকে সারাদেশের সব বিনিয়োগকারীকে মহাসমাবেশে অংশগ্রহণের আহ্বান জানানো হয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে আরও বক্তব্য রাখেন সংগঠনের সিনিয়র মুখপাত্র এস এম ইকবাল হোসেন এবং মুখপাত্র মো. ফরিদ আহমেদ। মহাসমাবেশে বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহণের আহ্বান জানিয়ে সংবাদ সম্মেলন থেকে জানানো হয়, সোমবার দুপুর ২টায় ঢাকার মতিঝিলে ডিএসই ভবনের সামনে প্রতিবাদ মহাসমাবেশ হবে।

এসময় সংগঠনের সিনিয়র মুখপাত্র এস এম ইকবাল হোসেন বলেন, “শেয়ারহারা বিনিয়োগকারীদের পুঁজি ফিরিয়ে আনার জন্য যা করার, যেখানে যাওয়ার- আমরা তাই করবো।”

তিনি বলেন, “শেয়ারবাজারে লুটতরাজ চলছে। ২০১০ সাল থেকে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট পর্যন্ত সবকিছু মেনে নিয়েছিলাম। কিন্তু ৫ আগস্টের পর নতুন আশা জাগে। বিনিয়োগকারীরা ভেবেছিল আওয়ামী লীগের আমলে যে লুটপাট হয়েছে, সবকিছু পুষিয়ে আমরা লাভের দিকে যাবো। বিরাট পরিবর্তন হবে, এটাই আশা ছিল। সেটাই হচ্ছিল। তিন দিন বাজার ভালো ছিল। কিন্তু তারপর নিয়ন্ত্রক সংস্থায় এমন লোকদের দায়িত্ব দেওয়া হলো যারা বিনিয়োগকারীদের ধ্বংস থেকে আরও ধ্বংস করছেন। ২০১০ সাল থেকে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট পর্যন্ত যা হয়েছে, গত ৫ মাসে তার থেকে বেশি ক্ষতি হয়েছে। পাঁচ মাসে ৬৬ হাজার কোটি টাকা শেয়ারবাজার থেকে উধাও হয়ে গেছে। এর জবাব কে দেবে?”

এস এম ইকবাল হোসেন বলেন, “৩ ফেব্রুয়ারি মহাসমাবেশ করার পর পরিস্থিতির উন্নতি না হলে আমরা প্রধান উপদেষ্টা বরাবর স্মারকলিপি দেবো। এর আগে আমরা কোনো স্মারকলিপি দেইনি। তবে বিএসইসির বর্তমান চেয়ারম্যানের পদত্যাগের দাবিতে অর্থ উপদেষ্টার সঙ্গে দেখা করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু তিনি আমাদের সঙ্গে দেখা করেননি। বরং তিনি আমাদের চিঠি বিএসইসি চেয়ারম্যানের কাছে ফরোয়ার্ড করে দেন।”

গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর দেশের অন্যান্য খাতের সংস্কারের সঙ্গে শেয়ারবাজারের নেতৃত্বেও পরিবর্তন আনা হয়। কমিশনের চেয়ারম্যানের দায়িত্বে আসে খন্দকার রাশেদ মাকসুদ। তিনি বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফেরানোর পরিবর্তে হতাশা বাড়িয়েছেন। নতুন কমিশন দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই পতনের বৃত্তে আটকে আছে শেয়ারবাজার। প্রতিনিয়ত পুঁজি হারিয়ে নিঃস্ব সাধারণ বিনিয়োগকারীরা বহু বার প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে। রাশেদ কমিশনে আস্থা না পেয়ে তাঁর পদত্যাগের দাবিতে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির কার্যালয়ের মূল গেটে তালা ঝুলিয়ে দেয় বিনিয়োগকারীরা। তবুও কোনো প্রতিকার ও সুফল পায়নি সাধারণ বিনিয়োগকারী। তারই ধারাবাহিকতায় পুঁজি রক্ষায় আগামী সোমবার (৩ ফেব্রুয়ারি) মতিঝিল পুরাতন ডিএসই ভবনের সামনে মহাসমাবেশ করবে ক্ষতিগ্রস্ত বিনিয়োগকারীরা।

বিজনেস আওয়ার/ ০২ ফেব্রুয়ারি / এ এইচ

ফেসবুকের মাধ্যমে আপনার মতামত জানান:
ট্যাগ :

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার মেইলে তথ্য জমা করুন

মহাসমাবেশে নামছে ক্ষতিগ্রস্ত বিনিয়োগকারীরা, বিএসইসি’র হুমকি

পোস্ট হয়েছে : ১৬ মিনিট আগে

বিজনেস আওয়ার প্রতিবেদক: শেয়ারবাজারের ক্ষতিগ্রস্ত বিনিয়োগকারীদের নিয়ে আগামী সোমবার (৩ ফেব্রুয়ারি) মতিঝিলে প্রতিবাদ মহাসমাবেশ কর্মসূচির ডাক দিয়েছে বাংলাদেশ ক্যাপিটাল মার্কেট ইনভেস্টর অ্যাসোসিয়েশন (বিসিএমআইএ)। বিনিয়োগকারীদের এ সমাবেশে বিএনপি, জামায়াত, এবি পার্টি ও গণঅধিকার পরিষদসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ এবং শেয়ারবাজারের ক্ষতিগ্রস্ত বিনিয়োগকারীরা বক্তব্য রাখবেন। তবে এ সমাবেশ বন্ধ করতে স্বয়ং নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) বিরুদ্ধে হুমকির অভিযোগ উঠেছে। বিভিন্ন ব্রোকারেজ হাউজ ও মার্চেন্ট ব্যাংকের কর্মকর্তারা এই সমাবেশে যাতে অংশ না নেয়, তার জন্য হুমকি দেওয়ার অভিযোগ তোলেন সমাবেশের প্রধান মুখপাত্র মো. নূরুল ইসলাম মানিক। শনিবার (১ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর বিজয়নগরে ক্যাপিটাল মার্কেট জার্নালিস্টস ফোরামের (সিএমজেএফ) কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান বিসিএমআইএ’র।

তিনি জানান, “আগামী সোমবার আমরা মহাসমাবেশ করবো। তবে এই সমাবেশে ব্রোকারেজ হাউজের কর্মী ও বিনিয়োগকারীরা যাতে অংশ না নেয়, তার জন্য হুমকি দিচ্ছে বিএসইসি।”

তিনি আরও জানান, “বিনিয়োগকারীদের সমাবেশ বন্ধ করতে বিএসইসির এমন কর্মকান্ডের যে তথ্য পাওয়া গেছে তা ন্যক্কারজনক। এটা স্বৈরাচারী আচরণ, এটা ঠিক না। প্রতিটি মানুষ ন্যায্য অধিকারের জন্য কথা বলবে, প্রতিবাদ ও সমাবেশ করবে এটাই বাস্তবতা। বিএসইসির এমন আচরণের তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি।”

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মোহাম্মদ রেজাউল করিম বলেন, “এটা সম্পূর্ণ মিথ্যা ও গুজব। কমিশন থেকে কাউকে এমন হুমকি দেওয়া হয়নি।”

তিনি আরও বলেন, “সাধারণ বিনিয়োগকারীদের অধিকার আছে সমাবেশ করা। কমিশন কখনো বাধা দেবে না। তবে কারো বিরুদ্ধে এমন কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার সুষ্ঠু প্রমাণ মিললে কমিশন ব্যবস্থা নেবে।”

এর আগে, শনিবার সিএমজেএফ কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে প্রতিবাদ সমাবেশ কর্মসূচির ঘোষণা দেওয়া হয়। সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনের পক্ষ থেকে সারাদেশের সব বিনিয়োগকারীকে মহাসমাবেশে অংশগ্রহণের আহ্বান জানানো হয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে আরও বক্তব্য রাখেন সংগঠনের সিনিয়র মুখপাত্র এস এম ইকবাল হোসেন এবং মুখপাত্র মো. ফরিদ আহমেদ। মহাসমাবেশে বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহণের আহ্বান জানিয়ে সংবাদ সম্মেলন থেকে জানানো হয়, সোমবার দুপুর ২টায় ঢাকার মতিঝিলে ডিএসই ভবনের সামনে প্রতিবাদ মহাসমাবেশ হবে।

এসময় সংগঠনের সিনিয়র মুখপাত্র এস এম ইকবাল হোসেন বলেন, “শেয়ারহারা বিনিয়োগকারীদের পুঁজি ফিরিয়ে আনার জন্য যা করার, যেখানে যাওয়ার- আমরা তাই করবো।”

তিনি বলেন, “শেয়ারবাজারে লুটতরাজ চলছে। ২০১০ সাল থেকে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট পর্যন্ত সবকিছু মেনে নিয়েছিলাম। কিন্তু ৫ আগস্টের পর নতুন আশা জাগে। বিনিয়োগকারীরা ভেবেছিল আওয়ামী লীগের আমলে যে লুটপাট হয়েছে, সবকিছু পুষিয়ে আমরা লাভের দিকে যাবো। বিরাট পরিবর্তন হবে, এটাই আশা ছিল। সেটাই হচ্ছিল। তিন দিন বাজার ভালো ছিল। কিন্তু তারপর নিয়ন্ত্রক সংস্থায় এমন লোকদের দায়িত্ব দেওয়া হলো যারা বিনিয়োগকারীদের ধ্বংস থেকে আরও ধ্বংস করছেন। ২০১০ সাল থেকে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট পর্যন্ত যা হয়েছে, গত ৫ মাসে তার থেকে বেশি ক্ষতি হয়েছে। পাঁচ মাসে ৬৬ হাজার কোটি টাকা শেয়ারবাজার থেকে উধাও হয়ে গেছে। এর জবাব কে দেবে?”

এস এম ইকবাল হোসেন বলেন, “৩ ফেব্রুয়ারি মহাসমাবেশ করার পর পরিস্থিতির উন্নতি না হলে আমরা প্রধান উপদেষ্টা বরাবর স্মারকলিপি দেবো। এর আগে আমরা কোনো স্মারকলিপি দেইনি। তবে বিএসইসির বর্তমান চেয়ারম্যানের পদত্যাগের দাবিতে অর্থ উপদেষ্টার সঙ্গে দেখা করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু তিনি আমাদের সঙ্গে দেখা করেননি। বরং তিনি আমাদের চিঠি বিএসইসি চেয়ারম্যানের কাছে ফরোয়ার্ড করে দেন।”

গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর দেশের অন্যান্য খাতের সংস্কারের সঙ্গে শেয়ারবাজারের নেতৃত্বেও পরিবর্তন আনা হয়। কমিশনের চেয়ারম্যানের দায়িত্বে আসে খন্দকার রাশেদ মাকসুদ। তিনি বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফেরানোর পরিবর্তে হতাশা বাড়িয়েছেন। নতুন কমিশন দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই পতনের বৃত্তে আটকে আছে শেয়ারবাজার। প্রতিনিয়ত পুঁজি হারিয়ে নিঃস্ব সাধারণ বিনিয়োগকারীরা বহু বার প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে। রাশেদ কমিশনে আস্থা না পেয়ে তাঁর পদত্যাগের দাবিতে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির কার্যালয়ের মূল গেটে তালা ঝুলিয়ে দেয় বিনিয়োগকারীরা। তবুও কোনো প্রতিকার ও সুফল পায়নি সাধারণ বিনিয়োগকারী। তারই ধারাবাহিকতায় পুঁজি রক্ষায় আগামী সোমবার (৩ ফেব্রুয়ারি) মতিঝিল পুরাতন ডিএসই ভবনের সামনে মহাসমাবেশ করবে ক্ষতিগ্রস্ত বিনিয়োগকারীরা।

বিজনেস আওয়ার/ ০২ ফেব্রুয়ারি / এ এইচ

ফেসবুকের মাধ্যমে আপনার মতামত জানান: