বিজনেস আওয়ার প্রতিবেদক: রাজধানীর ধানমণ্ডি এলাকায় অবস্থিত ঐতিহাসিক ৩২ নম্বর বাড়ি, যা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বাসস্থান ছিল, ভাঙার কাজ চলছেই। বৃহস্পতিবার সকালে (৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫) বুলডোজার দিয়ে বাড়িটির ভাঙচুর চালানো হয়। সকাল সাড়ে ৯টার দিকে বাড়ির সামনের অংশে তিনতলা পর্যন্ত গুঁড়িয়ে দেওয়ার কাজ শুরু হয়।
গতকাল রাতে (৫ ফেব্রুয়ারি) ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে শেখ হাসিনার অনলাইন ভাষণের প্রতিবাদে বিপুলসংখ্যক মানুষ ধানমণ্ডি ৩২ নম্বরে জড়ো হন। তারা বাড়ির গেট ভেঙে ভেতরে ঢুকে ভাঙচুর শুরু করেন, লাঠিসোঁটা ও শাবল হাতে ভাঙচুরে অংশ নেন অনেকেই। জানালার গ্রিল, কাঠ, ফটকের অংশ ভেঙে নিয়ে যেতে দেখা যায় তাদের। এই সময়ে স্লোগানও দেওয়া হচ্ছিল, যেমন ‘নারায়ে তাকবির’, ‘স্বৈরাচারের আস্তানা, ভেঙে দাও গুঁড়িয়ে দাও’, এবং ‘দিল্লি না ঢাকা, আবু সাঈদ-মুগ্ধ শেষ হয়নি যুদ্ধ’।
এটি নতুন নয়, আগের বছর ৫ আগস্টও এই বাড়িতে আগুন দেওয়া হয়েছিল। গতকাল, বাড়ির ভেতরে পোড়ার মতো কিছু থাকা সত্ত্বেও, পুনরায় সেখানে আগুন লাগানো হয়। নারকেল গাছের পাতাও জ্বলতে দেখা যায় এবং পাশের একটি ভবনেও আগুন ছড়িয়ে পড়ে। রাতের দিকে, বুলডোজার ও ক্রেন পৌঁছানোর পর, বিক্ষোভকারীরা উল্লাসধ্বনি দিতে থাকে এবং স্লোগান দিতে থাকে।
শেখ হাসিনার সরকারের পতনের ছয় মাস পূর্ণ হওয়ার পর, তিনি ভার্চুয়াল ভাষণ দেওয়ার ঘোষণা দেন। এর প্রতিক্রিয়া হিসেবে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষ থেকে প্রতিবাদ জানানো হয়। আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ ফেসবুকে পোস্ট করেন, ‘হাসিনাকে বক্তব্য প্রকাশের সুযোগ দেওয়াকে বাংলাদেশের ফ্যাসিবাদবিরোধী জনগণের বিরুদ্ধে ভারতের যুদ্ধ হিসেবে দেখি।’
১৯৬১ সালের ১ অক্টোবর, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ধানমণ্ডি ৩২ নম্বর বাড়িতে বসবাস শুরু করেন এবং এখান থেকে পাকিস্তানবিরোধী আন্দোলনসহ বাংলাদেশের স্বাধীনতার সংগ্রাম নেতৃত্ব দেন। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট এই বাড়িতেই সপরিবারে তাকে হত্যা করা হয়। ১৯৮১ সালে শেখ হাসিনার দেশে ফেরার পর, তিনি এই বাড়ি জাদুঘরে রূপান্তরিত করার জন্য বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়াল ট্রাস্টের কাছে হস্তান্তর করেন।
এটি একটি ঐতিহাসিক স্থান হিসেবে গণ্য হলেও, বর্তমানে চলমান ভাঙচুরের কারণে এটি বিপদে পড়েছে।
বিজনেস আওয়ার/ ০৬ ফেব্রুয়ারি / কাউছার