বিজনেস আওয়ার ডেস্ক: রাতে ঘরে ঘরে একটু বেশি করে ভাত রান্না হয় পানি ঢেলে রাখার জন্য। অনেকে আবার পহেলা বৈশাখের সকালে ঘটা করে রেস্তোরাঁয়ও পান্তা খেতে যান।
প্রাত্যহিক শহুরে জীবনে পান্তা ভাত আজকাল তেমন গুরুত্ব না পেলেও, পহেলা বৈশাখে বাঙালিয়ানা উদযাপনে এর এখন গুরুত্ব অনেক। সে কারণে মনে করিয়ে দেওয়া যেতে পারে– পান্তার স্বাদ আসলে অনেকটাই নির্ভর করে চালের জাত ও পানিতে ভিজিয়ে রাখার সময়ের ওপর।
ঘরে প্রতিদিন যে চালের ভাত রান্না হয়, তাতে পানি ঢেলে রাখলেও পান্তা হবে নিশ্চিত। কিন্তু বিশেষ দিনটিতে সবচেয়ে সুস্বাদু ও পুষ্টিকর পান্তা ভাত খেতে চাইলে জেনে নিন কোন চালের ভাত কতক্ষণ ভিজিয়ে রাখলে পহেলা বৈশাখে খাঁটি পান্তার স্বাদ নিতে পারবেন।
বেশিরভাগ চালের ক্ষেত্রে গরম ভাতের চেয়ে পান্তা ভাতে বেশি পুষ্টি থাকে, ব্যতিক্রম নাজিরশাইল। বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের তথ্যানুযায়ী, মিনিকেট চালের পান্তা ভাতে ক্যালসিয়ামের পরিমাণ বেড়ে যায় ৩৫১ দশমিক ৯৪ শতাংশ এবং আয়রনের পরিমাণ বাড়ে ১১ দশমিক ৬৬ শতাংশ। তবে লাল চালের পান্তা ভাতের পুষ্টিগুণ বেশি। কারণ সাদা চালের তুলনায় লাল চাল এমনিতেই বেশি পুষ্টিকর। সেই সঙ্গে ঢেঁকিছাঁটা চাল ও লাল চালের পান্তা দেখতে যেমন সুন্দর, গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যের সঙ্গেও তেমন জড়িত।
পান্তা খাওয়ার চল যখন শুরু হয়, তখন না ছিল রাইস মিল, না ছিল ফ্রিজ। তাই রাতের খাবারের ঢেঁকিছাঁটা লাল চালের অতিরিক্ত ভাত দিয়েই তৈরি হতো আসল পান্তা। ফলে ঐতিহ্যের কাছাকাছি যেতে চাইলে সেই পুরোনো পদ্ধতিতেই বানিয়ে নিন এ বছরের পান্তা ভাত। কিন্তু ভাত কতক্ষণ ভিজিয়ে রাখবেন?
সাধারণত ঠান্ডা ভাত ঘরের তাপমাত্রায় ১২ ঘণ্টা ভিজিয়ে রাখাকে পান্তা তৈরির আদর্শ সময় বলে মনে করা হয়। তবে গবেষকদের মতে, গাজন প্রক্রিয়া নিরাপদভাবে কতক্ষণ চলবে তা নির্ভর করে পানির ওপর। গাজন প্রক্রিয়ায় ফাইটিক অ্যাসিড, ল্যাকটিক অ্যাসিড ও উপকারী ব্যাকটেরিয়া তৈরি হয়, যা ভাতের গুণগত মান পরিবর্তন ও বাড়িয়ে দেয়। অর্থাৎ গাজন প্রক্রিয়ায় আবদ্ধ অণুপুষ্টিগুলো মুক্ত হয়ে যায় এবং শরীরে সেগুলো শোষণ করা সহজ হয়।
তবে অনিরাপদ পানিতে চার থেকে ১০ ঘণ্টা ভিজিয়ে রেখে তৈরি করা প্রায় ৯০ শতাংশ পান্তা ভাতে ফিকাল কলিফর্ম পাওয়া গেছে। সে কারণে ভাত পান্তা করতে নিরাপদ পানি ব্যবহার অপরিহার্য। নির্দিষ্ট সময় ধরে পানি ফুটিয়ে ঠান্ডা করার পর ওই পানি ব্যবহারের মাধ্যমে এ সমস্যা কাটানো যায়। অথবা বিশুদ্ধ খাবার পানি দিয়ে ভাত ভেজান। ট্যাপের পানি ব্যবহার করবেন না।
পান্তা ভাত খাওয়া বাঙালির প্রায় দুই হাজার বছরের পুরোনো ঐতিহ্য। কিন্তু কেন যুগের পর যুগ মানুষ এই খাবার খেয়ে আসছে? কী গুণ আছে এতে?
১. পান্তা ভাত অন্ত্রের জন্য অত্যন্ত উপকারী একটি খাবার। এটি প্রোবায়োটিক সমৃদ্ধ, তাই অন্ত্রের সংক্রমণ রোধ করে এবং শরীরে শক্তিশালী রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি করতে পারে।
২. পান্তা ভাতে ল্যাকটিক অ্যাসিড ব্যাকটেরিয়া রয়েছে, যা স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। সাধারণত দইয়ের মধ্যে এই ব্যাকটেরিয়া পাওয়া যায়।
৩. পান্তা ভাত হজমশক্তি বাড়ায়। খাবার দ্রুত হজমে সহায়তা করে।
৪.অন্ত্রের পাশাপাশি গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল সমস্যা নিরাময় বা প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে এবং শরীরকে ঠান্ডা রাখে।
৫. ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ায়, চুলকে করে সুন্দর।
৬. পান্তা ভাতে পানির পরিমাণ বেশি থাকে। তাই পানিশূন্যতা দূর করতে সাহায্য করে।
৭ পান্তা ভাতে ভিটামিন বি ১২-এর উপস্থিতি ক্লান্তি কমাতে কাজ করে, শরীরকে সতেজ রাখে, দুর্বলতা নিরাময় করে।
৮. এমনকি অনিদ্রায় ভুগছেন যারা, তাদের জন্যও এটি অত্যন্ত উপকারী খাবার।
এত সব উপকার আছে সাধারণ এই পান্তা ভাতে! তবু একে বরাবরই গরীবের খাবার হিসেবে গণ্য করা হয়। আর বছরে এই একটি দিন শুধু ঐতিহ্যের খাতির পায় পান্তা। তাই বাংলার ঐতিহ্যকে সত্যিই ধারণ করতে চাইলে বৈশাখ-জ্যেষ্ঠ মাসের গরমে মাঝে মাঝে খেতে পারেন পান্তা ভাত। বিশেষ করে ছুটির দিনে দুপুর বেলা একটু আরামের ঘুম দিতে চাইলে পান্তা হতে পারে আপনার সকালের আদর্শ খাবার।”
বিজনেস আওয়ার / ১৪ এপ্রিল / হাসান