বিজনেস আওয়ার প্রতিবেদক: আওয়ামী লীগের ফিরে আসা ও নির্বাচনে অংশ নেওয়া প্রসঙ্গে জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, দেশের জনগণের জন্যই রাজনীতি। তারা অপার সুযোগ পেয়েছিলেন। নিজেদের অধীনে একটানা তিনটি নির্বাচন করেছেন। সেই নির্বাচনকে তারা নির্বাচন হিসেবে রাখলেন না কেন?
ইউরোপ সফর নিয়ে বৃহস্পতিবার (১৭ এপ্রিল) রাজধানীর একটি হোটেলে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
জামায়াত আমির বলেন, তারা তো নির্বাচনের জান কবজ করেছেন। জনগণ তো বলে যে তাদের ভোটার-সমর্থকরাও আস্থা হারিয়ে ফেলেছিল যে নিজেরাও ভোট দিতে যায়নি। এটা কিন্তু ফ্যাক্ট। সেই রকম একটি দলকে এই মুহূর্তে বাংলাদেশের জনগণ গ্রহণ করবে কি না এবং আওয়ামী লীগও তাদের মানসিকতা পরিবর্তন করেছে কি না? বিশাল প্রশ্ন।
ইউরোপ সফরের বিস্তারিত জানিয়ে জামায়াতের আমির বলেন, এটা শোনার পর তারা আর কিছু বলেননি, পাল্টা প্রশ্ন করেননি এটা কী সেটা কী। ‘দিস ইজ রিয়েলিটি’ রিয়েলিটি মেনে নিতে হবে।
তিনি জোর দিয়ে বলেন, আমি আমি এটা বলিনি যে, ফেব্রুয়ারির ভেতরেই ইলেকশন হতে হবে। অনেকগুলো কারণে আমি বলেছি যে কেন এই ফেব্রুয়ারিকে চয়েজ করা যায়। আর এটা কোরানের আয়াত নয়, বাস্তবতার প্রয়োজনে একটু আগাতে বা পেছাতে পারে। এর আগেই যদি জাতির প্রত্যাশা পূরণ করে নির্বাচন হয়, তাহলে তো আমার আপত্তি থাকবে কেন? আমরা সাড়ে ১৫ বছর ১৬ বছর অপেক্ষা করতে পেরেছি, প্রয়োজনে আমরা আরও এক-দুই মাস অপেক্ষা করতে পারবো। দেশ তো আমাদেরই ভালোর জন্য আমরা এটা করতে পারবো।
এসময় সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে জামায়াতে ইসলামীর এই নেতা বলেন, আমরা ফেব্রুয়ারি বা মার্চের মধ্যেই জুলাই হত্যার ন্যায়বিচার নিশ্চিতে বাধ্য করতে পারি কি না? না, আমরা পারি না। আমরা বিচার সম্পন্নে বাধ্য করার কথাও বলিনি। আমরা বলেছি, কিছু দৃশ্যমান বিচার দেখতে চাই। যাতে করে জাতির মনে আস্থা তৈরি হয় যে, বিচারের এই ধারা অব্যাহত থাকবে।
আপনারা চাচ্ছেন ফেব্রুয়ারির মধ্যে নির্বাচন হোক। আপনার মনে কি এরকম কোনো শঙ্কা রয়েছে যে যারা ক্ষমতা আসবে তারা জুলাই অভ্যুত্থানের বিচারটা সঠিকভাবে করবে না? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, পরবর্তী সরকারের ব্যাপারে আমরা আস্থা রাখতে চাই। আমরা মনে করি, সরকারে যারা আসবে তারা জনগণের ম্যান্ডেট নিয়ে আসবে, জনগণের পালস বুঝে আসবে। জনগণও তাদের পালস বুঝে গ্রহণ করবে।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনাল তো স্বতন্ত্র বডি। আপনারা যদি এভাবে বলেন যে ফেব্রুয়ারি মার্চের মধ্যেই বিচার হতে হবে, তাহলে তাদের স্বাধীনভাবে বিচার করার জন্য সেটাকে ক্ষতিগ্রস্ত করে কি না এই প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা বিচারকে বাধ্য করে দিতে পারি না। আমরা বলে দিতে পারি না যে এই তারিখের মধ্যে বিচার সম্পন্ন করতে হবে। তাহলে এটা হবে বিচারের ওপরে নির্লজ্জ হস্তক্ষেপ। এই অহেতুক হস্তক্ষেপের অধিকার আমাদের নেই। তবে আমরা দাবি করতে পারি, মজলুম হিসেবে দাবির জায়গা আমাদের খোলা।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন। তারা কি অংশগ্রহণ ও অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচনের কথা বলেছেন? আপনাদের জবাব কী ছিল? আর যদি আওয়ামী লীগ নির্বাচনে আসে তাহলে আপনারা নির্বাচন করবেন, নাকি তাদের প্রতিহত করবেন? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এই ইইউ সফরে আমাদের কাছে অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচনের প্রসঙ্গে জানতে চাওয়া হয়েছে। সবাই নয়, কেউ কেউ জানতে চেয়েছেন। আমরা বলেছি কেবল আমাদের দেশে একটা গণহত্যা হয়ে গেছে। শহীদদের মা, শিশু, স্ত্রীরা কান্না করছেন, আহতরা এখনো হাসপাতালের বেডে। আমরা জাতি হিসেবে তাদের জন্য যে করণীয়টা এখনো করতে পারিনি।
তিনি বলেন, পুরো জাতি ট্রমাটাইজড। কারণ জুলাই-আগস্টে এ সরকার পুরো জাতির বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে গিয়েছিল। আর এই আন্দোলন একক কোনো দলের বা পক্ষের ছিল না। এটা ছিল জনতার আন্দোলন, নেতৃত্বে ছিল আমাদের তরুণ-তরুণীরা, ইয়াং সোসাইটি। সম্পৃক্ত ছিল সারাদেশের জনগণ।
সংবাদ সম্মেলন সঞ্চালনা করেন দলটির সেক্রেটারি অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন দলের নায়েবে আমির অধ্যাপক মুজিবুর রহমান, আ ন ম শামসুল ইসলাম, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা এ টি এম মাসুম, রফিকুল ইসলাম খান, হামিদুর রহমান আজাদ, মাওলানা আব্দুল হালিম, এহসানুল মাহবুব জুবায়ের, নির্বাহী পরিষদ সদস্য মতিউর রহমান আকন্দ, অধ্যাপক ইজ্জত উল্লাহ, নুরুল ইসলাম বুলবুল ও মোহাম্মদ সেলিম উদ্দিন।
বিজনেস আওয়ার/ ১৮ এপ্রিল / কাউছার