ঢাকা , বৃহস্পতিবার, ২২ মে ২০২৫, ৮ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

শেয়ারবাজারের সংকট মোকাবেলায় বিনিয়োগকারীদের মূল চার দাবি

  • পোস্ট হয়েছে : ৪ মিনিট আগে
  • 2

বিজনেস আওয়ার প্রতিবেদক: টেকসই ও স্থিতিশীল শেয়ারবাজার গঠনে বিনিয়োগকারীদের দীর্ঘদিনের দাবি ও আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে উচ্চ পর্যায়ের আলোচনায় বসছেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী (প্রতিমন্ত্রীর মর্যাদায়) ড. আনিসুজ্জামান চৌধুরী। বৃহস্পতিবার (২২ মে) আয়োজিত এ গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে অংশ নেবেন দেশের বিভিন্ন বিনিয়োগকারী সংগঠনের প্রতিনিধিরা।

দীর্ঘদিনের দাবি এবার আলোচনার টেবিলে

শেয়ারবাজারে চলমান অস্থিরতা, ধারাবাহিক দরপতন, বিনিয়োগকারীদের আস্থার সংকট, নিয়ন্ত্রক সংস্থার দুর্বলতা এবং বাজারে চলমান অনিয়ম—এসব বিষয় নিয়ে বিনিয়োগকারীরা দীর্ঘদিন ধরে প্রতিবাদ জানিয়ে আসছেন। মানববন্ধন, স্মারকলিপি ও সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে বারবার তারা তাদের দাবিগুলো সামনে এনেছেন।

তাদের অভিযোগ—শেয়ারবাজার ব্যবস্থাপনায় জবাবদিহিতার অভাব ও অদক্ষ নেতৃত্বের কারণেই সাধারণ বিনিয়োগকারীরা বারবার ক্ষতির মুখে পড়ছেন। এমন পরিস্থিতিতে বিনিয়োগকারী সংগঠনগুলো বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) বর্তমান চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদ ও তার নেতৃত্বাধীন কমিশনের পদত্যাগ দাবি করেছে।

পতনের নেপথ্যে কী?

বর্তমানে শেয়ারবাজারের সূচক নেমে এসেছে ২০১৩ সালের পর সর্বনিম্ন পর্যায়ে। অধিকাংশ কোম্পানির শেয়ারদর ক্রমাগত কমছে, ফলে বিনিয়োগকারীরা প্রতিদিনই ক্ষতির মুখে পড়ছেন। বিশ্লেষকদের মতে, বারবার আশ্বাস ও নীতিগত হস্তক্ষেপের পরও বাজারে স্থিতিশীলতা ফিরছে না মূলত কয়েকটি কারণে। যেগুলোর মধ্যে অদক্ষ নেতৃত্ব, নতুন অর্থপ্রবাহের অভাব, বাজার মনিটরিংয়ে দুর্বলতা, কারসাজি রোধে ব্যর্থতা, সমন্বয়ের অভাব, সুশাসনের অভাব ইত্যাদি।

এছাড়া মিউচুয়াল ফান্ড ও রাষ্ট্রায়ত্ত বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রত্যাশিত ভূমিকা না থাকাও বাজারের দুরবস্থার একটি বড় কারণ বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

বিনিয়োগকারী সংগঠনগুলোর মূল দাবিচারটি:

১. দক্ষ ও পেশাদার নেতৃত্ব নিশ্চিত করা:

শেয়ারবাজার পরিচালনার দায়িত্বে এমন ব্যক্তিদের নিয়োগ দিতে হবে, যাদের শেয়ারবাজার সম্পর্কে গভীর জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা রয়েছে।

২. কারসাজি ও অনিয়ম রোধে কঠোর ব্যবস্থা:

দীর্ঘদিন ধরে সক্রিয় থাকা অসাধু চক্রগুলোকে আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। শেয়ারবাজার সম্পৃক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোতে অনিয়ম ও অব্যবস্থা দূর করতে হবে।

৩. স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদী কর্মপরিকল্পনা:

বাজারের চলমান সংকট উত্তরণে স্বল্পমেয়াদী প্রণোদনা প্যাকেজের পাশাপাশি মধ্যমেয়াদী ও দীর্ঘমেয়াদে সুসংগঠিত রোডম্যাপ গ্রহণ করতে হবে।

৪. বিনিয়োগবান্ধব নীতিমালা ও কাঠামো

করনীতি, ডিভিডেন্ডনীতি, আইপিও নীতিমালা ও কর্পোরেট গভর্ন্যান্সসহ পুরো কাঠামোয় বিনিয়োগবান্ধব সংস্কার জরুরিভাবে সম্পন্ন করতে হবে।

আজকের আলোচনায় আশাবাদ:

আজকের আলোচনাকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন বাজারসংশ্লিষ্টরা। তাদের প্রত্যাশা—সরকার বিনিয়োগকারীদের উদ্বেগ ও হতাশা উপলব্ধি করে সঠিক, বাস্তবমুখী ও গ্রহণযোগ্য পদক্ষেপ গ্রহণ করবে। আলোচনায় কার্যকর সিদ্ধান্ত এলে তা বাজারে আস্থা ফিরিয়ে আনতে বড় ভূমিকা রাখবে বলে তাদের দৃঢ় বিশ্বাস।

দেশের শেয়ারবাজারের বর্তমান সংকট কেবল বিনিয়োগকারীদের ব্যক্তিগত সমস্যা নয়, এটি দেশের সামগ্রিক অর্থনীতির জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ হুমকি। বাজারকে টিকিয়ে রাখতে হলে এখনই প্রয়োজন সময়োপযোগী, সুশাসনভিত্তিক ও বিনিয়োগবান্ধব পদক্ষেপ।

বিনিয়োগকারীদের এই সংলাপ ও আন্দোলন যদি সরকার যথাযথভাবে মূল্যায়ন করে, তবে শেয়ারবাজারে নতুন করে আস্থার সূচনা হতে পারে—যা দেশের অর্থনীতির জন্যও অত্যন্ত ইতিবাচক বার্তা বয়ে আনবে।

বিজনেস আওয়ার/ ২২ মে / এ এইচ

ফেসবুকের মাধ্যমে আপনার মতামত জানান:
ট্যাগ :

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার মেইলে তথ্য জমা করুন

শেয়ারবাজারের সংকট মোকাবেলায় বিনিয়োগকারীদের মূল চার দাবি

পোস্ট হয়েছে : ৪ মিনিট আগে

বিজনেস আওয়ার প্রতিবেদক: টেকসই ও স্থিতিশীল শেয়ারবাজার গঠনে বিনিয়োগকারীদের দীর্ঘদিনের দাবি ও আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে উচ্চ পর্যায়ের আলোচনায় বসছেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী (প্রতিমন্ত্রীর মর্যাদায়) ড. আনিসুজ্জামান চৌধুরী। বৃহস্পতিবার (২২ মে) আয়োজিত এ গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে অংশ নেবেন দেশের বিভিন্ন বিনিয়োগকারী সংগঠনের প্রতিনিধিরা।

দীর্ঘদিনের দাবি এবার আলোচনার টেবিলে

শেয়ারবাজারে চলমান অস্থিরতা, ধারাবাহিক দরপতন, বিনিয়োগকারীদের আস্থার সংকট, নিয়ন্ত্রক সংস্থার দুর্বলতা এবং বাজারে চলমান অনিয়ম—এসব বিষয় নিয়ে বিনিয়োগকারীরা দীর্ঘদিন ধরে প্রতিবাদ জানিয়ে আসছেন। মানববন্ধন, স্মারকলিপি ও সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে বারবার তারা তাদের দাবিগুলো সামনে এনেছেন।

তাদের অভিযোগ—শেয়ারবাজার ব্যবস্থাপনায় জবাবদিহিতার অভাব ও অদক্ষ নেতৃত্বের কারণেই সাধারণ বিনিয়োগকারীরা বারবার ক্ষতির মুখে পড়ছেন। এমন পরিস্থিতিতে বিনিয়োগকারী সংগঠনগুলো বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) বর্তমান চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদ ও তার নেতৃত্বাধীন কমিশনের পদত্যাগ দাবি করেছে।

পতনের নেপথ্যে কী?

বর্তমানে শেয়ারবাজারের সূচক নেমে এসেছে ২০১৩ সালের পর সর্বনিম্ন পর্যায়ে। অধিকাংশ কোম্পানির শেয়ারদর ক্রমাগত কমছে, ফলে বিনিয়োগকারীরা প্রতিদিনই ক্ষতির মুখে পড়ছেন। বিশ্লেষকদের মতে, বারবার আশ্বাস ও নীতিগত হস্তক্ষেপের পরও বাজারে স্থিতিশীলতা ফিরছে না মূলত কয়েকটি কারণে। যেগুলোর মধ্যে অদক্ষ নেতৃত্ব, নতুন অর্থপ্রবাহের অভাব, বাজার মনিটরিংয়ে দুর্বলতা, কারসাজি রোধে ব্যর্থতা, সমন্বয়ের অভাব, সুশাসনের অভাব ইত্যাদি।

এছাড়া মিউচুয়াল ফান্ড ও রাষ্ট্রায়ত্ত বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রত্যাশিত ভূমিকা না থাকাও বাজারের দুরবস্থার একটি বড় কারণ বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

বিনিয়োগকারী সংগঠনগুলোর মূল দাবিচারটি:

১. দক্ষ ও পেশাদার নেতৃত্ব নিশ্চিত করা:

শেয়ারবাজার পরিচালনার দায়িত্বে এমন ব্যক্তিদের নিয়োগ দিতে হবে, যাদের শেয়ারবাজার সম্পর্কে গভীর জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা রয়েছে।

২. কারসাজি ও অনিয়ম রোধে কঠোর ব্যবস্থা:

দীর্ঘদিন ধরে সক্রিয় থাকা অসাধু চক্রগুলোকে আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। শেয়ারবাজার সম্পৃক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোতে অনিয়ম ও অব্যবস্থা দূর করতে হবে।

৩. স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদী কর্মপরিকল্পনা:

বাজারের চলমান সংকট উত্তরণে স্বল্পমেয়াদী প্রণোদনা প্যাকেজের পাশাপাশি মধ্যমেয়াদী ও দীর্ঘমেয়াদে সুসংগঠিত রোডম্যাপ গ্রহণ করতে হবে।

৪. বিনিয়োগবান্ধব নীতিমালা ও কাঠামো

করনীতি, ডিভিডেন্ডনীতি, আইপিও নীতিমালা ও কর্পোরেট গভর্ন্যান্সসহ পুরো কাঠামোয় বিনিয়োগবান্ধব সংস্কার জরুরিভাবে সম্পন্ন করতে হবে।

আজকের আলোচনায় আশাবাদ:

আজকের আলোচনাকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন বাজারসংশ্লিষ্টরা। তাদের প্রত্যাশা—সরকার বিনিয়োগকারীদের উদ্বেগ ও হতাশা উপলব্ধি করে সঠিক, বাস্তবমুখী ও গ্রহণযোগ্য পদক্ষেপ গ্রহণ করবে। আলোচনায় কার্যকর সিদ্ধান্ত এলে তা বাজারে আস্থা ফিরিয়ে আনতে বড় ভূমিকা রাখবে বলে তাদের দৃঢ় বিশ্বাস।

দেশের শেয়ারবাজারের বর্তমান সংকট কেবল বিনিয়োগকারীদের ব্যক্তিগত সমস্যা নয়, এটি দেশের সামগ্রিক অর্থনীতির জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ হুমকি। বাজারকে টিকিয়ে রাখতে হলে এখনই প্রয়োজন সময়োপযোগী, সুশাসনভিত্তিক ও বিনিয়োগবান্ধব পদক্ষেপ।

বিনিয়োগকারীদের এই সংলাপ ও আন্দোলন যদি সরকার যথাযথভাবে মূল্যায়ন করে, তবে শেয়ারবাজারে নতুন করে আস্থার সূচনা হতে পারে—যা দেশের অর্থনীতির জন্যও অত্যন্ত ইতিবাচক বার্তা বয়ে আনবে।

বিজনেস আওয়ার/ ২২ মে / এ এইচ

ফেসবুকের মাধ্যমে আপনার মতামত জানান: