বিজনেস আওয়ার ডেস্ক: অধিকৃত পশ্চিম তীরে ফিলিস্তিনি ভূমিতে ২২টি নতুন অবৈধ বসতি স্থাপনের ঘোষণা দিয়েছে ইসরায়েল সরকার। এর মধ্যে কিছু তথাকথিত ‘আউটপোস্ট’ বা সরকারিভাবে অননুমোদিত বসতিকে বৈধতা দেওয়ার কথাও জানানো হয়েছে। ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ ও মানবাধিকার সংস্থাগুলো এই পদক্ষেপকে আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন ও ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠনের পথে বড় বাধা বলে আখ্যায়িত করেছে।
বৃহস্পতিবার (২৯ মে) ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী ইসরায়েল কাটজ ও অর্থমন্ত্রী বেজালেল স্মোত্রিচ যৌথভাবে এই সিদ্ধান্তের ঘোষণা দেন। কাটজ বলেন, এই উদ্যোগ জুডিয়া ও সামারিয়ায় (পশ্চিম তীরের জন্য ইসরায়েলি পরিভাষা) ইসরায়েলের উপস্থিতি আরও দৃঢ় করবে। তিনি আরও বলেন, এটি একটি কৌশলগত পদক্ষেপ, যা একটি সম্ভাব্য ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র গঠনের সম্ভাবনাকে রুখে দেবে, কারণ সেটি ইসরায়েলের জন্য হুমকি হয়ে উঠতে পারে।
অর্থমন্ত্রী স্মোত্রিচ, নিজেও একটি অবৈধ বসতিতে বসবাস করেন ও তিনি পশ্চিম তীরকে ইসরায়েলের সঙ্গে যুক্ত করার জোরালো সমর্থক। এই সিদ্ধান্তকে স্মোত্রিচ ‘ঐতিহাসিক পদক্ষেপ’ বলে অভিহিত করেছেন।
ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর দল লিকুদ এক বিবৃতিতে বলেছে, এটি এমন একটি সিদ্ধান্ত, যা এক প্রজন্মে একবারই ঘটে। এটি জর্ডান সীমান্ত বরাবর ইসরায়েলের কৌশলগত অবস্থানকে আরও মজবুত করবে।
ইসরায়েল বর্তমানে পশ্চিম তীরজুড়ে একশরও বেশি অবৈধ বসতি স্থাপন করেছে, যেখানে প্রায় পাঁচ লাখ ইহুদি বসবাস করে। এসব বসতির আকার ছোট ছোট আউটপোস্ট থেকে শুরু করে পুরোপুরি উন্নত অবকাঠামোসহ গড়ে ওঠা সম্প্রদায় পর্যন্ত বিস্তৃত।
অন্যদিকে, এই অঞ্চলেই বসবাস করে প্রায় ৩০ লাখ ফিলিস্তিনি, যারা ইসরায়েলি সামরিক শাসনের অধীনে জীবনযাপন করছে। যদিও কিছু অংশে সীমিত প্রশাসনিক নিয়ন্ত্রণ রয়েছে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের হাতে। ফিলিস্তিনিরা পশ্চিম তীর, পূর্ব জেরুজালেম ও গাজা ভূখণ্ডকে ভবিষ্যৎ ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রের অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে দেখে আসছে।
ইসরায়েল সরকারের এই ঘোষণার বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনগুলো। ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মুখপাত্র নাবিল আবু রুদেইনা একে ‘বিপজ্জনক উস্কানি’ ও ‘আন্তর্জাতিক বৈধতার প্রতি চ্যালেঞ্জ’ বলে অভিহিত করেন।
তিনি বলেন, এই সিদ্ধান্ত আন্তর্জাতিক আইন এবং জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের ২৩৩৪ নম্বর প্রস্তাবনার সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। ফিলিস্তিনে ভূখণ্ডে ইসরায়েলের যে কোনো বসতি নির্মাণ আন্তর্জাতিকভাবে অবৈধ ও অনৈতিক।
এদিকে, ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাসের মুখপাত্র সামি আবু জুহরি এই ঘোষণাকে ‘ফিলিস্তিনি জনগণের বিরুদ্ধে নেতানিয়াহুর নেতৃত্বাধীন যুদ্ধেরই একটি অংশ’ বলে মন্তব্য করেছেন। তিনি যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নকে (ইইউ) এই ইস্যুতে হস্তক্ষেপ করার আহ্বান জানান।
ইসরায়েলি এনজিও ‘পিস নাও’ এই পদক্ষেপকে ‘দখলদারিত্বকে চিরস্থায়ী করার উদ্যোগ’ বলে অভিহিত করেছে। এক বিবৃতিতে তারা বলেছে, “ইসরায়েল সরকার আর মুখোশ পরে থাকছে না—দখলকৃত অঞ্চলের সংযুক্তিকরণ ও বসতি সম্প্রসারণই তাদের মূল লক্ষ্য। সংগঠনটি আরও জানায়, একক সিদ্ধান্তে অনুমোদিত এটি এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বড় অবৈধ বসতির ব্যাচ।
আল জাজিরার পশ্চিম তীর প্রতিনিধি নিদা ইব্রাহিম বলেন, নতুন বসতিগুলো ফিলিস্তিনি বসতিগুলোর মাঝখানে শূন্যস্থান পূরণ করবে, যার ফলে একটি স্বাধীন ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র গঠনের ভৌগোলিক ভিত্তি কার্যত ধ্বংস হয়ে যাবে। গাজায় চলমান উত্তেজনার সুযোগ নিয়ে ইসরায়েল পশ্চিম তীরের দখল আরও দৃঢ় করছে।
এই ঘোষণাটি এমন এক সময়ে এসেছে যখন ফ্রান্স ও সৌদি আরবের যৌথ নেতৃত্বে জাতিসংঘে একটি উচ্চপর্যায়ের আন্তর্জাতিক সম্মেলনের আয়োজন করা হচ্ছে। সম্মেলনের উদ্দেশ্য হলো, দীর্ঘদিন ধরে অচল থাকা ইসরায়েল-ফিলিস্তিন দ্বি-রাষ্ট্র সমাধান প্রক্রিয়াকে পুনরুজ্জীবিত করা।
বিশ্লেষকদের মতে, এই সিদ্ধান্ত শুধু শান্তি আলোচনার পথেই বড় বাধা হয়ে দাঁড়াবে না, বরং এটিই ইসরায়েলের দখলদার নীতির প্রকৃত অভিপ্রায়কে উন্মোচন করে।
সূত্র: আল জাজিরা
বিজনেস আওয়ার/ ৩০ মে / হাসান