ঢাকা , সোমবার, ০২ জুন ২০২৫, ১৮ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

কোরবানির ঈদ এলেই চাহিদা বাড়ে তেঁতুল গাছের খাটিয়ার

  • পোস্ট হয়েছে : ১০:০০ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ৩১ মে ২০২৫
  • 5

বিজনেস আওয়ার প্রতিবেদক: ঈদুল আজহার দিন কোরবানির পশুর মাংস কাটতে খাটিয়ার (গাছের গুঁড়ি) গুরুত্ব অপরিহার্য। তাই কোরবানি উপলক্ষে বরিশালে তেঁতুলের খাটিয়ার কদর সবচেয়ে বেশি থাকে। পশু জবাইয়ের পর পরিচ্ছন্নভাবে ভাগবাটোয়ারার জন্য মাংসের টুকরা করতে গাছের গুঁড়ি বেশি প্রয়োজন হওয়ায় সর্বত্রই এর কদর। কোরবানির সময় যতই ঘনিয়ে আসছে, বরিশালে সর্বত্র গাছের গুঁড়ির চাহিদাও বাড়ছে।

আকারভেদে একেকটি খাটিয়া বিক্রি হচ্ছে ৩০০ থেকে ১০০০ টাকা দরে। বরিশালের স্থানীয়দের চাহিদা মিটিয়ে কাঠ ব্যবসায়ীরা এই খাটিয়া প্রতিবছর পাঠাচ্ছেন ঢাকাসহ দেশের বড় বড় শহরে। শহরের বিভিন্ন করাতকল, কাঠ ব্যবসায়ীদের পাশাপাশি মুদি দোকানিরাও খাটিয়া বিক্রি করেন মৌসুমী ব্যবসায়ী হিসেবে। বিক্রিও বেশ ভালো হওয়ায় ঈদের আগের দিন রাত পর্যন্ত এসব খাটিয়ার বিকিকিনি চলে।

দক্ষিণাঞ্চলের সবচেয়ে বড় কাঠের মোকাম পিরোজপুর জেলার স্বরূপকাঠির কাঠ ব্যবসায়ী মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, সারা বছর কাঠের বেচাবিক্রিতে সরগরম থাকে স্বরূপকাঠির কাঠের মোকাম। কিন্তু কোরবানি এলেই খাটিয়ার চাহিদা বেড়ে যায়। তবে এর মধ্যে তেঁতুল গাছের খাটিয়ার কদর থাকে সবচেয়ে বেশি। কোরবানির আগের ১৫ দিন করাতকলগুলোতে শ্রমিকরা সাইজ অনুযায়ী খাটিয়া কেটে প্রস্তুত করেন। সেখান থেকে স্থানীয়দের চাহিদা মিটিয়ে কাঠ ব্যবসায়ীরা এই খাটিয়া প্রতিবছর ঢাকাসহ দেশের বড় বড় শহরে পাঠাচ্ছেন।

এ ব্যবসায়ী আরও বলেন, গত বছর সাড়ে ৫০০ টাকা দরে প্রায় ৬০০ সিএফটি (এক সিএফটি সমান ১২ ইঞ্চি/১২ ইঞ্চি) গোল তেঁতুলের কাঠ পাঠিয়েছি ঢাকায়। এছাড়া ৫০০ পিস খাটিয়া পাঠিয়েছি। এ বছর আরও বেশি বিক্রি হবে বলে আশা করছেন তিনি। শুধু মো. সিরাজুল ইসলাম নন, স্বরূপকাঠির আরও অনেক ব্যবসায়ী ঢাকাসহ বড় বড় শহরে তেঁতুলকাঠ পাঠিয়ে থাকেন কোরবানির ঈদ এলে।

এদিকে বরিশাল শহরের বিভিন্ন করাতকল ঘুরে দেখা গেছে, কাঠ ব্যবসায়ীরা বড় বড় গাছের গুঁড়ি কেটে কোরবানির জন্য খাটিয়া তৈরি করছেন। তাদের কাছ থেকে এসব খাটিয়া কিনে নগরীর বিভিন্ন রাস্তার পাশে বসে বিক্রি করছেন মৌসুমী বিক্রেতারা। নগরীর বিভিন্ন স্থান থেকে লোকজন এসে এসব খাটিয়া ক্রয় করেন।

নগরীর নাজির মহল্লা কাঠের পুল এলাকার করাতকল ব্যবসায়ী মুন্না বলেন, খাটিয়া মূলত তেঁতুল, নিম, কড়ইসহ বিভিন্ন গাছের হয়। এরমধ্যে ক্রেতাদের কাছে তেঁতুল গাছের খাটিয়ার চাহিদা সবার ওপরে। কারণ তেঁতুল গাছের গুঁড়ি সবচেয়ে ভালো হয়। আর তেঁতুল গাছ ছাড়া অন্য গাছ দিয়ে খাটিয়া তৈরি করলে মাংসের সঙ্গে গাছের গুঁড়ি উঠে মাংসের মান নষ্ট হয়ে যায়। এছাড়া তেঁতুল গাছের গুঁড়ি সহজে নষ্ট হয় না। কাজ শেষে পরিষ্কার করে যত্ন করে রাখলে বহুদিন থাকে। তাই ঈদুল আজহা এলেই সবার কাছে তেঁতুল গাছের গুঁড়ির চাহিদা বেড়ে যায়।

আরেক ব্যবসায়ী পারভেজ বলেন, এখন আর আগের মতো বেশি তেঁতুল গাছ পাওয়া যায় না। পাওয়া গেলেও অতিরিক্ত দামে ক্রয় করতে হয়। তারপর স’মিলে নিয়ে খণ্ড খণ্ড করে গুঁড়ি তৈরি করে বিক্রি করা হয়। একেকটি গাছের গুঁড়ি ১ ফুট বা সোয়া ফুট লম্বা রাখা হয়। প্রতিটি গাছের গুঁড়ি সাইজ অনুযায়ী ৩০০ টাকা থেকে ১০০০ টাকায় বিক্রি হয়। তাছাড়া সব গাছ দিয়ে কিন্তু ভালো খাটিয়া তৈরি করা যায় না।

মৌসুমি তেঁতুল গাছের গুঁড়ি বিক্রেতা নগরীর বাংলাবাজার এলাকার বাসিন্দা কাঞ্চন ফকির বলেন, কোরবানির ঈদকে কেন্দ্র করে খাটিয়ার কদর বেড়েছে। ক্রেতাদের চাহিদা অনুযায়ী ছোট, মাঝারি ও বড় তিন ধরনের খাটিয়া তিনি বিক্রি করেন। তার কাছে বেশি বিক্রি হচ্ছে তেঁতুল গাছের গুঁড়ি।

তিনি আরও বলেন, স্বরূপকাঠীতে তেমন তেঁতুল গাছ পাওয়া যায়নি, তাই পটুয়াখালী থেকে কিছু তেঁতুল গাছ ক্রয় করেছি। সেখান থেকে গাড়িভর্তি করে গাছ এনে সাইজ অনুযায়ী কাটাতে খরচ পড়েছে ২০০ থেকে ৪০০ টাকার মতো। সেই গুঁড়ি বিক্রি করছি ৩০০ থেকে ৬৫০ টাকায়।

নগরীর মৌসুমী খাটিয়া ব্যবসায়ীরা জানান, কোরবানির এক সপ্তাহ আগে থেকে গৃহস্থরা এই খাটিয়া কেনা শুরু করেন। তবে অনেকেই কোরবানির এক দুই দিন আগে কেনেন। বছরে একবার কিনতে হয় বলে মানুষ বেশি দরদাম করেন না। তাই কোরবানির মৌসুমে খাটিয়া বিক্রি করে ভালোই লাভ হয়।

বিজনেস আওয়ার/ ৩১ মে / কাওছার

ফেসবুকের মাধ্যমে আপনার মতামত জানান:
ট্যাগ :

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার মেইলে তথ্য জমা করুন

কোরবানির ঈদ এলেই চাহিদা বাড়ে তেঁতুল গাছের খাটিয়ার

পোস্ট হয়েছে : ১০:০০ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ৩১ মে ২০২৫

বিজনেস আওয়ার প্রতিবেদক: ঈদুল আজহার দিন কোরবানির পশুর মাংস কাটতে খাটিয়ার (গাছের গুঁড়ি) গুরুত্ব অপরিহার্য। তাই কোরবানি উপলক্ষে বরিশালে তেঁতুলের খাটিয়ার কদর সবচেয়ে বেশি থাকে। পশু জবাইয়ের পর পরিচ্ছন্নভাবে ভাগবাটোয়ারার জন্য মাংসের টুকরা করতে গাছের গুঁড়ি বেশি প্রয়োজন হওয়ায় সর্বত্রই এর কদর। কোরবানির সময় যতই ঘনিয়ে আসছে, বরিশালে সর্বত্র গাছের গুঁড়ির চাহিদাও বাড়ছে।

আকারভেদে একেকটি খাটিয়া বিক্রি হচ্ছে ৩০০ থেকে ১০০০ টাকা দরে। বরিশালের স্থানীয়দের চাহিদা মিটিয়ে কাঠ ব্যবসায়ীরা এই খাটিয়া প্রতিবছর পাঠাচ্ছেন ঢাকাসহ দেশের বড় বড় শহরে। শহরের বিভিন্ন করাতকল, কাঠ ব্যবসায়ীদের পাশাপাশি মুদি দোকানিরাও খাটিয়া বিক্রি করেন মৌসুমী ব্যবসায়ী হিসেবে। বিক্রিও বেশ ভালো হওয়ায় ঈদের আগের দিন রাত পর্যন্ত এসব খাটিয়ার বিকিকিনি চলে।

দক্ষিণাঞ্চলের সবচেয়ে বড় কাঠের মোকাম পিরোজপুর জেলার স্বরূপকাঠির কাঠ ব্যবসায়ী মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, সারা বছর কাঠের বেচাবিক্রিতে সরগরম থাকে স্বরূপকাঠির কাঠের মোকাম। কিন্তু কোরবানি এলেই খাটিয়ার চাহিদা বেড়ে যায়। তবে এর মধ্যে তেঁতুল গাছের খাটিয়ার কদর থাকে সবচেয়ে বেশি। কোরবানির আগের ১৫ দিন করাতকলগুলোতে শ্রমিকরা সাইজ অনুযায়ী খাটিয়া কেটে প্রস্তুত করেন। সেখান থেকে স্থানীয়দের চাহিদা মিটিয়ে কাঠ ব্যবসায়ীরা এই খাটিয়া প্রতিবছর ঢাকাসহ দেশের বড় বড় শহরে পাঠাচ্ছেন।

এ ব্যবসায়ী আরও বলেন, গত বছর সাড়ে ৫০০ টাকা দরে প্রায় ৬০০ সিএফটি (এক সিএফটি সমান ১২ ইঞ্চি/১২ ইঞ্চি) গোল তেঁতুলের কাঠ পাঠিয়েছি ঢাকায়। এছাড়া ৫০০ পিস খাটিয়া পাঠিয়েছি। এ বছর আরও বেশি বিক্রি হবে বলে আশা করছেন তিনি। শুধু মো. সিরাজুল ইসলাম নন, স্বরূপকাঠির আরও অনেক ব্যবসায়ী ঢাকাসহ বড় বড় শহরে তেঁতুলকাঠ পাঠিয়ে থাকেন কোরবানির ঈদ এলে।

এদিকে বরিশাল শহরের বিভিন্ন করাতকল ঘুরে দেখা গেছে, কাঠ ব্যবসায়ীরা বড় বড় গাছের গুঁড়ি কেটে কোরবানির জন্য খাটিয়া তৈরি করছেন। তাদের কাছ থেকে এসব খাটিয়া কিনে নগরীর বিভিন্ন রাস্তার পাশে বসে বিক্রি করছেন মৌসুমী বিক্রেতারা। নগরীর বিভিন্ন স্থান থেকে লোকজন এসে এসব খাটিয়া ক্রয় করেন।

নগরীর নাজির মহল্লা কাঠের পুল এলাকার করাতকল ব্যবসায়ী মুন্না বলেন, খাটিয়া মূলত তেঁতুল, নিম, কড়ইসহ বিভিন্ন গাছের হয়। এরমধ্যে ক্রেতাদের কাছে তেঁতুল গাছের খাটিয়ার চাহিদা সবার ওপরে। কারণ তেঁতুল গাছের গুঁড়ি সবচেয়ে ভালো হয়। আর তেঁতুল গাছ ছাড়া অন্য গাছ দিয়ে খাটিয়া তৈরি করলে মাংসের সঙ্গে গাছের গুঁড়ি উঠে মাংসের মান নষ্ট হয়ে যায়। এছাড়া তেঁতুল গাছের গুঁড়ি সহজে নষ্ট হয় না। কাজ শেষে পরিষ্কার করে যত্ন করে রাখলে বহুদিন থাকে। তাই ঈদুল আজহা এলেই সবার কাছে তেঁতুল গাছের গুঁড়ির চাহিদা বেড়ে যায়।

আরেক ব্যবসায়ী পারভেজ বলেন, এখন আর আগের মতো বেশি তেঁতুল গাছ পাওয়া যায় না। পাওয়া গেলেও অতিরিক্ত দামে ক্রয় করতে হয়। তারপর স’মিলে নিয়ে খণ্ড খণ্ড করে গুঁড়ি তৈরি করে বিক্রি করা হয়। একেকটি গাছের গুঁড়ি ১ ফুট বা সোয়া ফুট লম্বা রাখা হয়। প্রতিটি গাছের গুঁড়ি সাইজ অনুযায়ী ৩০০ টাকা থেকে ১০০০ টাকায় বিক্রি হয়। তাছাড়া সব গাছ দিয়ে কিন্তু ভালো খাটিয়া তৈরি করা যায় না।

মৌসুমি তেঁতুল গাছের গুঁড়ি বিক্রেতা নগরীর বাংলাবাজার এলাকার বাসিন্দা কাঞ্চন ফকির বলেন, কোরবানির ঈদকে কেন্দ্র করে খাটিয়ার কদর বেড়েছে। ক্রেতাদের চাহিদা অনুযায়ী ছোট, মাঝারি ও বড় তিন ধরনের খাটিয়া তিনি বিক্রি করেন। তার কাছে বেশি বিক্রি হচ্ছে তেঁতুল গাছের গুঁড়ি।

তিনি আরও বলেন, স্বরূপকাঠীতে তেমন তেঁতুল গাছ পাওয়া যায়নি, তাই পটুয়াখালী থেকে কিছু তেঁতুল গাছ ক্রয় করেছি। সেখান থেকে গাড়িভর্তি করে গাছ এনে সাইজ অনুযায়ী কাটাতে খরচ পড়েছে ২০০ থেকে ৪০০ টাকার মতো। সেই গুঁড়ি বিক্রি করছি ৩০০ থেকে ৬৫০ টাকায়।

নগরীর মৌসুমী খাটিয়া ব্যবসায়ীরা জানান, কোরবানির এক সপ্তাহ আগে থেকে গৃহস্থরা এই খাটিয়া কেনা শুরু করেন। তবে অনেকেই কোরবানির এক দুই দিন আগে কেনেন। বছরে একবার কিনতে হয় বলে মানুষ বেশি দরদাম করেন না। তাই কোরবানির মৌসুমে খাটিয়া বিক্রি করে ভালোই লাভ হয়।

বিজনেস আওয়ার/ ৩১ মে / কাওছার

ফেসবুকের মাধ্যমে আপনার মতামত জানান: