বিজনেস আওয়ার প্রতিবেদক: অন্তর্বর্তী সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ সোমবার ২০২৫-২০২৬ অর্থবছরের জন্য ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকার জাতীয় বাজেট উপস্থাপন করেছেন। যা দেশের ৫৪তম বাজেট এবং অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনুসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রথম বাজেট।
ঘোষিত বাজেটে পুঁজিবাজারের সার্বিক উন্নয়নে তিনটি প্রত্যক্ষ প্রণোদনার প্রস্তাব করা হয়েছে। ১. পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ও তালিকাবহির্ভূত প্রতিষ্ঠানগুলোর কর্পোরেট করের ব্যবধান ৫% থেকে বাড়িয়ে সাড়ে ৭.৫% করা, ২. মার্চেন্ট ব্যাংকগুলোর বিদ্যমান কর্পোরেট করহার ৩৭.৫% থেকে কমিয়ে সাড়ে ২৭.৫% করা এবং ৩. পুঁজিবাজারে লেনদেনের ওপর উৎস অগ্রিম কর বিদ্যমান ০.০৫% থেকে কমিয়ে ০.০৩% করা। এসব প্রণোদনা ভালো প্রতিষ্ঠানগুলোকে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত করতে এবং ব্রোকারেজ হাউজসহ বাজার-সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর করের বোঝা হ্রাস পাওয়ায় পুঁজিবাজারে গতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে ইতিবাচক ভুমিকা রাখবে বলে সিএসই মনে করে।
বাজেট বক্তৃতায় অর্থ উপদেষ্টা পুঁজিবাজার উন্নয়নে গত ১১ মে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনুসের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকে প্রদত্ত পাঁচটি নির্দেশনা বাস্তবায়নের বিষয়ে গুরুত্বারোপ করেছেন।
সাধারণ বিনিয়োগকারীদের জন্য সরাসরি কোন প্রণোদনার প্রস্তাব প্রস্তাবিত বাজেটে উল্লেখ না থাকলেও স্মর্তব্য যে, গত বছরের ৪ নভেম্বর জাতীয় রাজস্ব বোর্ড তালিকাভুক্ত কোম্পানি হতে ব্যক্তি বিনিয়োগকারীদের অর্জিত ৫০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত মূলধনি আয় সম্পূর্ণ করমুক্ত রাখার বিধান অব্যাহত রাখার পাশাপাশি ৫০ লক্ষ টাকার ঊর্ধ্বে মূলধনি আয়ের উপর কর ১৫% হ্রাস করেছে। এছাড়া, সম্প্রতি বাংলাদেশ সিকিউরিটিস এন্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন কর্তৃক বিনিয়োগকারীদের বিও অ্যাকাউন্ট-এর উপর ধার্য বার্ষিক রক্ষণাবেক্ষণ ফি ৭৫% হ্রাসের নীতিগত সিদ্ধান্ত, এবং গ্রাহক একাউট-এ অর্জিত সুদ-এর ২৫% ক্ষতিগ্রস্ত বিনিয়োগকারীদের স্বার্থে ব্যয়ের জন্য ইনভেস্টর্স প্রটেকশন ফান্ড-এ জমার সিদ্ধান্ত পুঁজিবাজারের টেকসই উন্নয়নে বড় প্রভাব রাখবে বলে আশা করা যায়।
এছাড়া বাজেটে প্রস্তাবিত পুঁজিবাজারসংশ্লিষ্ট আরো কিছু বিষয় উল্লেখ করা যায়। যেমন: করমুক্ত দানের আওতায় স্থাবর/অস্থাবর সম্পদ হস্তান্তরের ক্ষেত্রে বিদ্যমান তালিকায় আপন ভাই ও বোনকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, যা পুঁজিবাজারে অলিকাভুক্ত কোম্পানির শেয়ার হস্তান্তরের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য হবে। ট্রেজারি বিল-বন্ডের সুদ আয়ে উৎস কর ৫% এর পরিবর্তে ১০% করা হয়েছে। এর ফলে প্রকৃত সুদ আয় কমে যাওয়ায় শেয়ারে বিনিয়োগে ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে পারে। অন্যদিকে, স্টক এক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্ত কোন শেয়ার বা তহবিলের স্পনসর, ডিরেক্টর বা প্লেসমেন্ট হোল্ডার হস্তান্তর কার্যক্রম করার পূর্বে উৎস কর ১০% থেকে ১৫% (পূর্বে এ হার ছিল ৫%) নির্ধারণ করা হয়েছে, যা পুনর্বিবেচনার দাবি রাখে।
তবে তালিকাভুক্ত কোম্পানির ঘোষিত লভ্যাংশ আয় সম্পূর্ণ করমুক্ত বা অগ্রিম কর্তিত আয় চূড়ান্ত করদায় হিসেবে বাজেটে বিবেচনা করলে তাতে সরাসরি সাধারণ বিনিয়োগকারীরা কিছুটা উপকৃত হতো। আবাসন খাতের মতো পুঁজিবাজারেও অপ্রদর্শিত আয় বিনিয়োগের সুযোগ দিয়ে দেখা যেত পুঁজিবাজারে গতি সঞ্চারিত হয় কিনা।
উল্লেখ করা প্রয়োজন, বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এন্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন সম্প্রতি “চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (কমোডিটি ডেরিভেটিভ) প্রবিধানমালা, ২০২৫” অনুমোদন দিয়েছে। ফলশ্রুতিতে দেশের প্রথম কমোডিটি এক্সচেঞ্জ হিসেবে নিবন্ধন সনদ পাওয়া চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে কমোডিটি মার্কেট অপারেশন চালুর মাধ্যমে ডেরিভেটিভ পন্যের যুগে
প্রবেশ করতে যাচ্ছে যা নিঃসন্দেহে দেশের পুঁজিবাজারের জন্য একটি অনন্য মাইলফলক। সিএসই আশা করে, কমোডিটি এক্সচেঞ্জ বিকাশে সিএসইকে কর অবকাশ প্রদানের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতা ও সীমাবদ্ধতার মধ্যেও সাম্প্রতিক সময়ে পুঁজিবাজারের উন্নয়নে সরকার কর্তৃক গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপগুলো প্রশংসার দাবি রাখে। পুঁজিবাজারের বর্তমান পরিস্থিতিতে সেগুলো যথেষ্ট কিনা তা সময়ই বলে দেবে। সিএসই মনে করে পুঁজিবাজারের বর্তমান সংকট থেকে উত্তরণ এবং পুঁজিবাজারকে অর্থনৈতিক উন্নয়নের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসাবে প্রতিষ্ঠা করার জন্য সংশ্লিষ্ট সকল পক্ষের সমন্বিত ও কৌশলগত উদ্যোগ প্রয়োজন।
সার্বিকভাবে প্রধান উপদেষ্টার নির্দেশনা, বাজেটে উল্লিখিত প্রস্তাবনা, এনবিআর এবং বিএসইসি কর্তৃক গৃহীত সকল সিদ্ধান্ত পুঁজিবাজারের দীর্ঘমেয়াদী টেকসই উন্নয়নে সরকারের সদিচ্ছা, আন্তরিকতা, ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গী এবং দৃঢ় প্রতিশ্রুতির পরিচায়ক প্রতীয়মাণ হওয়ায় সিএসই পরিচালনা পর্ষদের পক্ষ থেকে প্রধান উপদেষ্টা, অর্থ উপদেষ্টা, প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী, সিকিউরিটিজ এন্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন এবং এনবিআরকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানানো হচ্ছে।
বিজনেস আওয়ার/ ০৩ জুন / এ এইচ