বিজনেস আওয়ার ডেস্ক: ভারতের সঙ্গে সামরিক উত্তেজনার পর পাকিস্তান প্রতিরক্ষা ব্যয় বড় আকারে বাড়িয়েছে। মঙ্গলবার (১০ জুন) ঘোষিত ২০২৬ অর্থবছরের বাজেটে প্রতিরক্ষাখাতে বরাদ্দ ১৭ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়িয়েছে ৯ বিলিয়ন ডলারে। যা আগের বছরের তুলনায় উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধি। মোট বাজেটের পরিমাণ ৬২ বিলিয়ন ডলার, যার মধ্যে ২৯ বিলিয়ন ডলারই ঋণ পরিশোধে ব্যয় হবে।
ভারতের সঙ্গে ভয়াবহ সংঘাতের পর পাকিস্তান প্রতিরক্ষাখাতকে এমন গুরুত্ব দিলো। ওই ঘটনায় পাকিস্তানে ৫১ ও ভারতে অন্তত ১৬ জন নিহত হন।
দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক বিশ্লেষক মাইকেল কুগেলম্যান বলেন, কয়েক দশকের মধ্যে ভারতের সঙ্গে সবচেয়ে বড় সংঘর্ষই প্রতিরক্ষা ব্যয় বৃদ্ধির অনুঘটক। ভারতের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ার বিষয়টি জনসমর্থনও পাচ্ছে, যা সরকারকে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়ার রাজনৈতিক সুযোগ দিয়েছে।
অনেকে মনে করেন, দেশটির প্রতিরক্ষা বাজেট আরও বাড়ানো উচিত ছিল। টোলা অ্যাসোসিয়েটস নামের এক পরামর্শক সংস্থা তাদের প্রতিবেদনে বলেছে, যুদ্ধ পরিস্থিতি এবং নতুন সেনা নিয়োগের প্রেক্ষিতে এই বাজেট ১০ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করা দরকার।
তবে বড় প্রশ্ন শুধু বাজেট বাড়ানোর পরিমাণ নয়। ইসলামাবাদ-ভিত্তিক নিরাপত্তা বিশ্লেষক সৈয়দ মুহাম্মদ আলী বলেন, ভারতের প্রতিরক্ষা ব্যয় পাকিস্তানের তুলনায় প্রায় নয় গুণ বেশি। তাই পাকিস্তান প্রতিযোগিতামূলক অস্ত্র প্রতিযোগিতায় না গিয়ে একটি বিশ্বাসযোগ্য, তুলনামূলক কম ব্যয়বহুল প্রতিরোধ গড়তে চাইছে।
সরকারি সূত্রে জানা গেছে, পাকিস্তান চীনের তৈরি এইচকিউ-১৯ ক্ষেপণাস্ত্রসহ বেশ কিছু অস্ত্র কিনবে, যা মাঝারি পাল্লার ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরোধে ব্যবহৃত হয়।
কুগেলম্যান বলেন, ভারত ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্রের মাধ্যমে পাকিস্তানের অভ্যন্তরে আঘাত হানতে পেরেছে। এই দুর্বলতা দূর করতে বিমান প্রতিরক্ষাখাতে বাজেটের বড় অংশ ব্যয় হবে।
আলী বলেন, আধুনিক যুদ্ধ এখন আর শুধু স্থল, নৌ বা আকাশের সীমাবদ্ধতায় নেই। এয়ারস্পেস শক্তি, দূরপাল্লার যুদ্ধ, ইলেকট্রনিক ও সাইবার যুদ্ধ, ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র যুদ্ধ আজকের বাস্তবতা। এসবেই এখন অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে।
এদিকে আইএমএফের শর্ত পূরণ করতে গিয়ে পাকিস্তান উন্নয়ন ব্যয় কমিয়ে ৩.৫ বিলিয়ন ডলারে নামিয়ে এনেছে, যা গত বছরের তুলনায় ১.৪ বিলিয়ন ডলার কম। অর্থনীতিবিদ নাফি সারদার বলেন, আইএমএফের ৩৭ মাসের কর্মসূচির আওতায় পাকিস্তান এখন রয়েছে। এই কর্মসূচি অনুযায়ী বাজেট প্রণয়ন করতে হয়, না হলে অন্য বহুপাক্ষিক দাতা সংস্থার অর্থও বন্ধ হয়ে যেতে পারে।
তিনি আরও বলেন, আইএমএফ চায় করের আওতা বাড়াতে এবং কিছু খাতে কর বাড়াতে, যার ফলে বেতনভোগী শ্রেণির জন্য তেমন কোনো স্বস্তি আসছে না।
ইসলামাবাদের জাতীয় আধুনিক ভাষা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক তাহির নাঈম মালিক বলেন, প্রতিরক্ষা বাজেট বাড়লে স্বাস্থ্য ও শিক্ষা খাতে বাজেট কমে যায়। ২৫ কোটি জনসংখ্যার এই দেশের জন্য এই খাতগুলোতে ব্যয় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এখন প্রশ্ন হলো অগ্রাধিকার মানব উন্নয়নে, না কি প্রতিরক্ষায়?
সূত্র: নিক্কেই এশিয়া
বিজনেস আওয়ার/ ১১ জুন / হাসান