বিজনেস আওয়ার প্রতিবেদক: সংবিধানে রাষ্ট্র পরিচালনার যে চারটি মূলনীতি রয়েছে সেগুলো বাদ দেওয়ার পক্ষে নিজেদের অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করেছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)।
দলটি বলছে, ৭২-এর ‘মুজিববাদী’ মূলনীতি তারা রাখার পক্ষে না। এ চারটি মূলনীতি বাদ দিতে হবে। এগুলো বাদ দিয়ে সংস্কার কমিশনের প্রস্তাবিত চার মূলনীতি রাখার ক্ষেত্রে তাদের কোনো আপত্তি নেই।
রোববার (২২ জুন) রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর দ্বিতীয় ধাপের সংলাপ শেষে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন এনসিপি নেতারা।
রাষ্ট্র পরিচালনার চার মূলনীতির মধ্যে তিনটি বাদ দেওয়ার সুপারিশ করে গত ১৫ জানুয়ারি প্রধান উপদেষ্টার কাছে সুপারিশ-সম্বলিত প্রতিবেদন জমা দেয় সংবিধান সংস্কার কমিশন। যেখানে ‘গণতন্ত্র’ বহাল রেখে রাষ্ট্র পরিচালনার নতুন আরও চারটি মূলনীতির সুপারিশ করে কমিশন।
বর্তমানে সংবিধানে রাষ্ট্র পরিচালনার যে চার মূলনীতি রয়েছে সেগুলো হলো- জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতা। ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে দেশ স্বাধীন হওয়ার পর বাহাত্তরে যে সংবিধান প্রণীত হয়েছিল, তাতে রাষ্ট্র পরিচালনার এ চারটি মূলনীতি গৃহীত হয়।
ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে এনসিপির যুগ্ম সদস্যসচিব জাবেদ রাসেল সাংবাদিকদের বলেন, সংবিধান সংস্কার কমিশনের একটা প্রস্তাব ছিল যে, আমাদের স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রের যে মূলনীতি সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক সুবিচার, এর সঙ্গে গণতন্ত্রকে যুক্ত করে রাষ্ট্রের মূলনীতি হিসেবে অন্তর্ভুক্ত থাকবে। ঐকমত্য কমিশনের সুপারিশ ছিল, চারটি মূলনীতি যুক্ত থাকবে। সেটা নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে একটা মতানৈক্য দেখা গেল।
বর্তমানের চার মূলনীতির মধ্যে শুধু গণতন্ত্র রাখা হয়েছে সংস্কার কমিশনের প্রস্তাবিত নতুন পাঁচ মূলনীতির মধ্যে। সুপারিশ করা নতুন পাঁচটি মূলনীতি হলো- সাম্য, মানবিক মর্যাদা, সামাজিক সুবিচার, বহুত্ববাদ ও গণতন্ত্র।
জাবেদ রাসেল বলেন, আমরা স্পষ্টভাবে জানিয়েছি, ৭২-এর মুজিববাদী মূলনীতি আমরা রাখার পক্ষে না। এ চারটি মূলনীতি বাদ দিতে হবে। এটি বাদ দিয়ে সংস্কার কমিশনের প্রস্তাবিত মূলনীতিগুলো রাখার ক্ষেত্রে আমাদের আপত্তি নেই।
তিনি বলেন, কিছু রাজনৈতিক দল তাদের আদর্শিক জায়গা থেকে এ ব্যাপারে একমত হতে পারেনি। আমরা সেক্ষেত্রে বলেছি, আমাদের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান-পরবর্তী যে স্পিরিট তার বিপরীতে গিয়ে আলোচনা করার কোনো মানে হয় না।
এনসিপির এই নেতা বলেন, আমাদের অবস্থান স্পষ্ট- ১৯৭২ সালের মূলনীতি আমরা বাতিল চাই। তবে ধর্মনিরপেক্ষতার পরিবর্তে যদি অন্য কোনো শব্দ এখানে আনা হয় অথবা অন্য কোনো মূলনীতির বিষয়েও আমরা ওপেন আছি। কিন্তু আমাদের মূল পয়েন্ট হচ্ছে ৭২-এর চার মূলনীতি বাদ দিতে হবে।
এসময় প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদ নিয়ে ঐক্য কমিশনের সংলাপে মতানৈক্যের প্রসঙ্গ টেনে এনসিপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সদস্যসচিব ডা. তাসনিম জারা সাংবাদিকদের জানান, জাতীয় ঐকমত্যের স্বার্থে প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদ সংক্রান্ত বিষয়ে ছাড় দিতেও রাজি আছে তাদের দল।
বিজনেস আওয়ার/ ২২ জুন / কাওছার