বিজনেস আওয়ার ডেস্ক: বাজারে এখন কাঁঠালের প্রাচুর্য। বাংলাদেশের জাতীয় এই ফলটি যেমন সুস্বাদু, তেমনি এর পুষ্টিগুণও অসাধারণ। তবে শুধু কাঁঠালের শাঁসই নয়, এর বীজেও লুকিয়ে আছে নানাবিধ স্বাস্থ্য উপকারিতা ও রোগমুক্তির ক্ষমতা।
১০০ গ্রাম কাঁঠালের বীজে থাকে ১৮৫ ক্যালোরি। একই সঙ্গে থাকে ৭ গ্রাম প্রোটিন, ৩৮ গ্রাম কার্বোহাইড্রেট ও ১.৫ গ্রাম ফাইবার। অন্যদিকে কাঁঠালের বীজে ১ গ্রামেরও কম চর্বি থাকে।
এই মৌসুমে অল্প খরচে শরীরের পুষ্টির চাহিদা পূরণ করতে কাঁঠালের বীজ একটি আদর্শ খাবার। এতে রয়েছে উচ্চমাত্রার প্রোটিন, পটাশিয়াম, ক্যালসিয়াম, জিংক, আয়রন, ফসফরাস এবং ডায়েটারি ফাইবার। আসুন জেনে নিই কাঁঠালের বীজ কীভাবে আমাদের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় ভূমিকা রাখে—
১. সংক্রমণ প্রতিরোধে সহায়ক
কাঁঠালের বীজে থাকা অ্যান্টি-মাইক্রোবিয়াল এবং অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল গুণাগুণ শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। গবেষণায় দেখা গেছে, এই বীজে উপস্থিত বায়োঅ্যাক্টিভ কম্পাউন্ডস্ বিভিন্ন ধরনের ব্যাকটেরিয়া ও ফাঙ্গাল ইনফেকশন প্রতিহত করতে সক্ষম। বিশেষ করে বর্ষাকালে জলবাহিত রোগ ও সংক্রমণ থেকে সুরক্ষা পেতে নিয়মিত কাঁঠালের বীজ খাওয়া উপকারী।
২. মস্তিষ্ক ও হৃদযন্ত্রের সুস্থতায়
কাঁঠালের বীজে থাকা আয়রন হিমোগ্লোবিন উৎপাদনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে, যা রক্তে অক্সিজেন পরিবহনে সাহায্য করে। এছাড়াও, এতে বিদ্যমান ম্যাগনেসিয়াম এবং পটাশিয়াম রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে ও কার্ডিওভাস্কুলার স্বাস্থ্য উন্নত করে। মস্তিষ্কের কোষের কার্যকারিতা বাড়াতেও আয়রন অপরিহার্য, যা স্মৃতিশক্তি ও কগনিটিভ ফাংশনকে শক্তিশালী করে।
৩. হজমশক্তি বৃদ্ধি ও পাচনতন্ত্রের উন্নতি
কাঁঠালের বীজে থাকা উচ্চমাত্রার ফাইবার কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে এবং হজম প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করে। এটি প্রিবায়োটিক হিসেবে কাজ করে, যা অন্ত্রের উপকারী ব্যাকটেরিয়ার বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। এছাড়া, ডায়রিয়া বা বদহজমের সমস্যায় কাঁঠালের বীজ শুকিয়ে গুঁড়ো করে খাওয়া হলে তা প্রাকৃতিক প্রতিষেধকের ভূমিকা পালন করে।
৪. দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধিতে ভিটামিন-এ
কাঁঠালের বীজে বিদ্যমান ভিটামিন-এ চোখের রেটিনার স্বাস্থ্য রক্ষায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি রাতকানা রোগ প্রতিরোধ করে এবং চোখের বিভিন্ন রোগ, যেমন – ম্যাকুলার ডিজেনারেশন ও ক্যাটারাক্টের ঝুঁকি, কমাতে সাহায্য করে।
৫. পেশী গঠন ও শক্তি বৃদ্ধি
উচ্চ প্রোটিন সমৃদ্ধ কাঁঠালের বীজ পেশী গঠনে সহায়ক এবং শরীরের শক্তি বাড়ায়। এটি একটি কম কোলেস্টেরলযুক্ত প্রোটিন সোর্স হওয়ায় যারা ওজন কমাতে চান, তাদের জন্য এটি একটি আদর্শ স্ন্যাক্স। এছাড়া, এতে থাকা জিংক ও ফসফরাস হাড় ও পেশীর সুষ্ঠু বিকাশে ভূমিকা রাখে।
৬. ত্বকের উজ্জ্বলতা ও বলিরেখা দূরীকরণ
কাঁঠালের বীজে থাকা অ্যান্টি-অক্সিডেন্টস (যেমন- ফ্ল্যাভোনয়েডস ও ফেনোলিক কম্পাউন্ডস) ত্বকের ফ্রি র্যাডিকেল ড্যামেজ কমায়, যা বয়সের ছাপ ও বলিরেখা দূর করতে সহায়ক। দুধ ও মধুর সঙ্গে কাঁঠাল বীজের পেস্ট তৈরি করে মুখে লাগালে ত্বক কোমল ও উজ্জ্বল হয়। এছাড়া, এতে থাকা ভিটামিন-সি কোলাজেন উৎপাদন বাড়িয়ে ত্বকের স্থিতিস্থাপকতা বজায় রাখে।
৭. চুলের স্বাস্থ্য রক্ষায়
কাঁঠালের বীজের ভিটামিন-এ চুলের গোড়া শক্ত করে এবং চুল পড়া রোধ করে। এছাড়া, প্রোটিন ও আয়রন চুলের কেরাটিন উৎপাদনে সাহায্য করে, যা চুলের ভঙ্গুরতা ও ফাটা আগা কমাতে কার্যকর।
৮. রক্তাল্পতা দূরীকরণ
আয়রনের ঘাটতিজনিত অ্যানিমিয়া (রক্তশূন্যতা) রোধে কাঁঠালের বীজ খুবই কার্যকর। এটি হিমোগ্লোবিন উৎপাদন বাড়িয়ে দেহের সমস্ত কোষে অক্সিজেন সরবরাহ নিশ্চিত করে, ফলে ক্লান্তি ও দুর্বলতা দূর হয়।
৯. মানসিক চাপ ও উদ্বেগ কমাতে
কাঁঠালের বীজে থাকা মাইক্রোনিউট্রিয়েন্টস (যেমন- ম্যাগনেসিয়াম ও ভিটামিন-বি কমপ্লেক্স) স্নায়ুতন্ত্রের কার্যকারিতা উন্নত করে। এটি সেরোটোনিন ও ডোপামিনের মতো নিউরোট্রান্সমিটারের ভারসাম্য বজায় রেখে মানসিক চাপ ও উদ্বেগ কমাতে সাহায্য করে।
১০. ঐতিহ্যবাহী যৌন স্বাস্থ্য চিকিৎসায়
এশিয়ার বিভিন্ন দেশে কাঁঠালের বীজকে প্রাকৃতিক অ্যাফ্রোডিজিয়াক হিসেবে ব্যবহার করা হয়। এতে থাকা জিংক ও আয়রন পুরুষ ও নারী উভয়ের প্রজনন স্বাস্থ্য উন্নত করতে সহায়তা করে।
১১. ত্বকের আর্দ্রতা ও রোগ প্রতিরোধ
কাঁঠালের বীজ ত্বকের শুষ্কতা দূর করে প্রাকৃতিক আর্দ্রতা প্রদান করে। এছাড়া, এটি এক্সিমা, ব্রণ ও অন্যান্য ত্বকের সংক্রমণ কমাতে সাহায্য করে।
এসব উপকার পেতে কাঁঠালের বীজকে সিদ্ধ করে বা ভেজে নাস্তায় যোগ করা যায়। এছাড়া, এটি গুঁড়ো করে সুপ, স্মুদি বা বিভিন্ন রান্নায় ব্যবহার করা যেতে পারে। ত্বকের যত্নে বীজের পেস্ট ব্যবহার করে প্রাকৃতিকভাবে উজ্জ্বলতা ফিরে পাওয়া সম্ভব। তাই কাঁঠালের মৌসুমে শুধু ফল নয়, এর বীজও খাদ্যতালিকায় অন্তর্ভুক্ত করে স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করুন।
বিজনেস আওয়ার/ ২২ জুন