ঢাকা , শনিবার, ০৫ জুলাই ২০২৫, ২১ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ইরান পরমাণু স্থাপনা পরিদর্শনে সম্মতি দেয়নি, ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণও বন্ধ করেনি: ট্রাম্প

  • পোস্ট হয়েছে : ৬ মিনিট আগে
  • 2

বিজনেস আওয়ার ডেস্ক: মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, ইরান এখনো তাদের পারমাণবিক কর্মসূচির পরিদর্শনে সম্মতি দেয়নি এবং ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণও বন্ধ করেনি।

গতকাল শুক্রবার এয়ারফোর্স ওয়ানে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে ট্রাম্প বলেন, ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি ‘স্থায়ীভাবে পিছিয়ে গেছে’ বলে মনে করছেন তিনি। অবশ্য তিনি স্বীকার করেছেন, ইরান অন্য জায়গায় পরমাণু কর্মসূচি আবার শুরু করতে পারে।

ট্রাম্প আরও বলেন, আগামী সোমবার ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু হোয়াইট হাউসে আসছেন। সেখানে নেতানিয়াহুর সঙ্গে তাঁর আলোচনার মূল আলোচ্য বিষয় হবে গাজায় যুদ্ধবিরতি।

হোয়াইট হাউসে স্বাধীনতা দিবস উদ্‌যাপন শেষে নিউ জার্সি অঙ্গরাজ্যে যাওয়ার পথে ট্রাম্প সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমার মনে হয়, তারা (ইরান) অন্য কোথাও (পরমাণু কর্মসূচি) শুরু করতে বাধ্য হবে। আর যদি তারা শুরু করে, তাহলে সেটা আরেকটি সমস্যা হবে।’

ডোনাল্ড ট্রাম্প জোর দিয়ে বলেন, ইরানকে তিনি কোনোভাবেই পরমাণু কর্মসূচি আবার শুরু করতে দেবেন না। তাঁর দাবি, ইরানি কর্মকর্তারা তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে চাচ্ছেন।

গতকাল শুক্রবার আন্তর্জাতিক পারমাণবিক শক্তি সংস্থা (আইএইএ) জানায়, যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের বোমা হামলার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোতে আইএইএ পরিদর্শক দলের ফেরার বিষয়ে অচলাবস্থা দেখা দিয়েছে। এ কারণে তারা পরিদর্শক দলকে ইরান থেকে প্রত্যাহার করেছে।

যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল অভিযোগ করছে, ইরান ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করে পারমাণবিক অস্ত্র বানানোর চেষ্টা করছে। কিন্তু ইরান দীর্ঘদিন ধরেই বলে আসছে, তারা কোনো পারমাণবিক বোমা বানাতে চায় না। তাদের কর্মসূচি শুধু শান্তিপূর্ণ, বেসামরিক কাজে ব্যবহারের উদ্দেশ্যে।

মার্কিন গোয়েন্দা বিভাগ কিংবা জাতিসংঘের পারমাণবিক পর্যবেক্ষক সংস্থার প্রধান রাফায়েল গ্রোসি—কেউই এ পর্যন্ত ইরান পারমাণবিক অস্ত্র বানাচ্ছে, এমন কোনো প্রমাণ দিতে পারেননি।

ইরানের সঙ্গে ১২ দিনের যুদ্ধে তিন সপ্তাহ আগে ইসরায়েল প্রথমবারের মতো ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোতে সামরিক হামলা চালায়। ইসরায়েলের পক্ষে যুক্তরাষ্ট্র ২২ জুন এসব স্থাপনায় বড় ধরনের বিমান হামলা চালায়।

আইএইএ জানায়, ইসরায়েলের সঙ্গে ইরানের সংঘর্ষ শুরুর পর থেকেই তারা কোনো স্থাপনায় পরিদর্শন করতে পারেনি। সংস্থার প্রধান গ্রোসি এই পরিদর্শন সবচেয়ে জরুরি বিষয় বলে উল্লেখ করেছেন। গ্রোসি বলেন, ইরানের সঙ্গে আলোচনায় বসে দ্রুত পরিদর্শন ও পর্যবেক্ষণ কাজ শুরু করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

আইএইএ নিয়ে ইরানের সন্দেহ

পারমাণবিক স্থাপনায় যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের হামলার পর ইরান বলেছে, তারা এখনো পারমাণবিক অস্ত্র বিস্তার রোধ চুক্তিতে (এনপিটি) অঙ্গীকারবদ্ধ। তবে তারা এখন আইএইএকে আর আগের মতো বিশ্বাস করছে না।

ইসরায়েলের নজিরবিহীন হামলার পর ইরান আইএইএর কঠোর সমালোচনা করেছে। তারা বলেছে, আইএইএ একদিকে হামলার নিন্দা করেনি, আবার হামলার আগের দিন ১২ জুন ইরানের বিরুদ্ধে পরমাণু চুক্তির নিয়ম লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলে একটি প্রস্তাব পাস করেছে।

আইএইএর সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্নের সিদ্ধান্ত

গত বুধবার, ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান আইএইএর সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করার নির্দেশ দেন। এর আগেই ইরানের পার্লামেন্টে আইএইএর সঙ্গে সহযোগিতা স্থগিত করার একটি বিল পাস হয়েছিল এবং তা দেশের সর্বোচ্চ সংস্থা গার্ডিয়ান কাউন্সিল অনুমোদনও দিয়েছে।

গার্ডিয়ান কাউন্সিলের মুখপাত্র হাদি তাহান নাজিফ বলেন, ইরানের জাতীয় সার্বভৌমত্ব ও ভূখণ্ডের অখণ্ডতার প্রতি পূর্ণ শ্রদ্ধা জানাতে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

বিলে বলা হয়েছে, পারমাণবিক স্থাপনা ও বিজ্ঞানীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে না পারা পর্যন্ত এই স্থগিতাদেশ বহাল থাকবে। আইএইএ এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো স্থগিতাদেশের নোটিশ পায়নি বলে জানিয়েছে। তবে পরিদর্শকেরা কবে ফিরতে পারবেন, তা স্পষ্ট নয়।

গ্রোসির সফরে ‘না’

ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রের হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলো পরিদর্শনের অনুরোধ জানিয়েছিলেন গ্রোসি। গত সোমবার তাঁর সেই অনুরোধ সরাসরি প্রত্যাখ্যান করেন ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাগচি।

আরাগচি বলেন, গ্রোসির পক্ষ থেকে নিরাপত্তা পর্যবেক্ষণের অজুহাতে ক্ষতিগ্রস্ত জায়গাগুলো ঘুরে দেখার আগ্রহ একেবারেই অর্থহীন এবং হয়তো উদ্দেশ্যমূলকভাবে খারাপ। যুক্তরাষ্ট্র দাবি করেছে, তাদের হামলায় ইরানের তিনটি ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কেন্দ্র ধ্বংস বা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

তবে প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে, ইরানের ৯ টন সমৃদ্ধ ইউরেনিয়ামের কী ঘটেছে। এর মধ্যে ৪০০ কেজির বেশি ইউরেনিয়াম ৬০ শতাংশ পর্যন্ত সমৃদ্ধ ছিল। পরমাণু অস্ত্র তৈরির জন্য ৯০ শতাংশ মাত্রার কাছাকাছি সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম লাগে।

বিজনেস আওয়ার/ ০৫ জুলাই / হাসান

ফেসবুকের মাধ্যমে আপনার মতামত জানান:
ট্যাগ :

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার মেইলে তথ্য জমা করুন

ইরান পরমাণু স্থাপনা পরিদর্শনে সম্মতি দেয়নি, ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণও বন্ধ করেনি: ট্রাম্প

পোস্ট হয়েছে : ৬ মিনিট আগে

বিজনেস আওয়ার ডেস্ক: মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, ইরান এখনো তাদের পারমাণবিক কর্মসূচির পরিদর্শনে সম্মতি দেয়নি এবং ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণও বন্ধ করেনি।

গতকাল শুক্রবার এয়ারফোর্স ওয়ানে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে ট্রাম্প বলেন, ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি ‘স্থায়ীভাবে পিছিয়ে গেছে’ বলে মনে করছেন তিনি। অবশ্য তিনি স্বীকার করেছেন, ইরান অন্য জায়গায় পরমাণু কর্মসূচি আবার শুরু করতে পারে।

ট্রাম্প আরও বলেন, আগামী সোমবার ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু হোয়াইট হাউসে আসছেন। সেখানে নেতানিয়াহুর সঙ্গে তাঁর আলোচনার মূল আলোচ্য বিষয় হবে গাজায় যুদ্ধবিরতি।

হোয়াইট হাউসে স্বাধীনতা দিবস উদ্‌যাপন শেষে নিউ জার্সি অঙ্গরাজ্যে যাওয়ার পথে ট্রাম্প সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমার মনে হয়, তারা (ইরান) অন্য কোথাও (পরমাণু কর্মসূচি) শুরু করতে বাধ্য হবে। আর যদি তারা শুরু করে, তাহলে সেটা আরেকটি সমস্যা হবে।’

ডোনাল্ড ট্রাম্প জোর দিয়ে বলেন, ইরানকে তিনি কোনোভাবেই পরমাণু কর্মসূচি আবার শুরু করতে দেবেন না। তাঁর দাবি, ইরানি কর্মকর্তারা তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে চাচ্ছেন।

গতকাল শুক্রবার আন্তর্জাতিক পারমাণবিক শক্তি সংস্থা (আইএইএ) জানায়, যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের বোমা হামলার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোতে আইএইএ পরিদর্শক দলের ফেরার বিষয়ে অচলাবস্থা দেখা দিয়েছে। এ কারণে তারা পরিদর্শক দলকে ইরান থেকে প্রত্যাহার করেছে।

যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল অভিযোগ করছে, ইরান ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করে পারমাণবিক অস্ত্র বানানোর চেষ্টা করছে। কিন্তু ইরান দীর্ঘদিন ধরেই বলে আসছে, তারা কোনো পারমাণবিক বোমা বানাতে চায় না। তাদের কর্মসূচি শুধু শান্তিপূর্ণ, বেসামরিক কাজে ব্যবহারের উদ্দেশ্যে।

মার্কিন গোয়েন্দা বিভাগ কিংবা জাতিসংঘের পারমাণবিক পর্যবেক্ষক সংস্থার প্রধান রাফায়েল গ্রোসি—কেউই এ পর্যন্ত ইরান পারমাণবিক অস্ত্র বানাচ্ছে, এমন কোনো প্রমাণ দিতে পারেননি।

ইরানের সঙ্গে ১২ দিনের যুদ্ধে তিন সপ্তাহ আগে ইসরায়েল প্রথমবারের মতো ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোতে সামরিক হামলা চালায়। ইসরায়েলের পক্ষে যুক্তরাষ্ট্র ২২ জুন এসব স্থাপনায় বড় ধরনের বিমান হামলা চালায়।

আইএইএ জানায়, ইসরায়েলের সঙ্গে ইরানের সংঘর্ষ শুরুর পর থেকেই তারা কোনো স্থাপনায় পরিদর্শন করতে পারেনি। সংস্থার প্রধান গ্রোসি এই পরিদর্শন সবচেয়ে জরুরি বিষয় বলে উল্লেখ করেছেন। গ্রোসি বলেন, ইরানের সঙ্গে আলোচনায় বসে দ্রুত পরিদর্শন ও পর্যবেক্ষণ কাজ শুরু করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

আইএইএ নিয়ে ইরানের সন্দেহ

পারমাণবিক স্থাপনায় যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের হামলার পর ইরান বলেছে, তারা এখনো পারমাণবিক অস্ত্র বিস্তার রোধ চুক্তিতে (এনপিটি) অঙ্গীকারবদ্ধ। তবে তারা এখন আইএইএকে আর আগের মতো বিশ্বাস করছে না।

ইসরায়েলের নজিরবিহীন হামলার পর ইরান আইএইএর কঠোর সমালোচনা করেছে। তারা বলেছে, আইএইএ একদিকে হামলার নিন্দা করেনি, আবার হামলার আগের দিন ১২ জুন ইরানের বিরুদ্ধে পরমাণু চুক্তির নিয়ম লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলে একটি প্রস্তাব পাস করেছে।

আইএইএর সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্নের সিদ্ধান্ত

গত বুধবার, ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান আইএইএর সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করার নির্দেশ দেন। এর আগেই ইরানের পার্লামেন্টে আইএইএর সঙ্গে সহযোগিতা স্থগিত করার একটি বিল পাস হয়েছিল এবং তা দেশের সর্বোচ্চ সংস্থা গার্ডিয়ান কাউন্সিল অনুমোদনও দিয়েছে।

গার্ডিয়ান কাউন্সিলের মুখপাত্র হাদি তাহান নাজিফ বলেন, ইরানের জাতীয় সার্বভৌমত্ব ও ভূখণ্ডের অখণ্ডতার প্রতি পূর্ণ শ্রদ্ধা জানাতে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

বিলে বলা হয়েছে, পারমাণবিক স্থাপনা ও বিজ্ঞানীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে না পারা পর্যন্ত এই স্থগিতাদেশ বহাল থাকবে। আইএইএ এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো স্থগিতাদেশের নোটিশ পায়নি বলে জানিয়েছে। তবে পরিদর্শকেরা কবে ফিরতে পারবেন, তা স্পষ্ট নয়।

গ্রোসির সফরে ‘না’

ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রের হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলো পরিদর্শনের অনুরোধ জানিয়েছিলেন গ্রোসি। গত সোমবার তাঁর সেই অনুরোধ সরাসরি প্রত্যাখ্যান করেন ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাগচি।

আরাগচি বলেন, গ্রোসির পক্ষ থেকে নিরাপত্তা পর্যবেক্ষণের অজুহাতে ক্ষতিগ্রস্ত জায়গাগুলো ঘুরে দেখার আগ্রহ একেবারেই অর্থহীন এবং হয়তো উদ্দেশ্যমূলকভাবে খারাপ। যুক্তরাষ্ট্র দাবি করেছে, তাদের হামলায় ইরানের তিনটি ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কেন্দ্র ধ্বংস বা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

তবে প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে, ইরানের ৯ টন সমৃদ্ধ ইউরেনিয়ামের কী ঘটেছে। এর মধ্যে ৪০০ কেজির বেশি ইউরেনিয়াম ৬০ শতাংশ পর্যন্ত সমৃদ্ধ ছিল। পরমাণু অস্ত্র তৈরির জন্য ৯০ শতাংশ মাত্রার কাছাকাছি সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম লাগে।

বিজনেস আওয়ার/ ০৫ জুলাই / হাসান

ফেসবুকের মাধ্যমে আপনার মতামত জানান: