স্পোর্টস ডেস্ক: ৩৩৪ বলে ৩৬৭ রান। দ্রুত গতিতেই ব্রায়ান লারার ৪০০ রানের রেকর্ড ভাঙার দিকে এগিয়ে যাচ্ছিলেন উইয়ান মুলডার। জিম্বাবুয়ের নির্বিষ বোলিং মোকাবিলা করে বাকি ৩৩ রান তোলা কোনো ব্যাপারই ছিল না দক্ষিণ আফ্রিকা অধিনায়কের।
কিন্তু দ্বিতীয় দিন লাঞ্চ বিরতিতে গিয়ে সিদ্ধান্ত পাল্টে ফেললেন মুলডার। লারার রেকর্ড অক্ষুণ্ন রেখে ওই অবস্থাতেই ইনিংস ঘোষণা করেন। দক্ষিণ আফ্রিকার রান তখন ৫ উইকেটে ৬২৬। মুলডার ৩৬৭ রানেই অপরাজিত থেকে গেলেন। কিন্তু কেন এই সিদ্ধান্ত নিলেন হঠাৎ করে? কেন সুযোগ থাকা সত্ত্বেও আর মাত্র ৩৩টি রান করলেন না? কেন ৪০০ রান করে রেকর্ডটা ভাঙলেন না মুলডার? তার এই সিদ্ধান্তে অবাক পুরো ক্রিকেট বিশ্ব। সবার কাছেই এ প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছিল।
দিন শেষে মুলডারের কাছেই এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হয়। জবাবে তিনি জানালেন আসল কারণ। মুলডার জানালেন, লারার প্রতি সম্মান জানাতেই এ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি। অনেকেরই মনে পড়ে যাচ্ছে মার্ক টেলরের কথা, যিনি ডন ব্র্যাডম্যানের রেকর্ড বাঁচানোর জন্য তার ব্যক্তিগত রান পেরিয়ে যাওয়ার আগেই ইনিংস ডিক্লেয়ার করে দেন।
দিন শেষে প্রোটিয়া অধিনায়ক আসল কারণ জানিয়ে বলেন, ‘প্রথমত, আমি ভেবেছিলাম অনেক রান হয়ে গেছে। এবার আমাদের বল করা উচিত। দ্বিতীয়ত, ব্রায়ান লারা একজন কিংবদন্তি। তার মতো মাপের একজন ক্রিকেটারের কাছে যোগ্যভাবেই এই রেকর্ড থাকা উচিত। যদি আবার আমার কাছে সুযোগ আসে, আবারও একই কাজ করবো আমি। শুক্সের (দক্ষিণ আফ্রিকার কোচ শুকরি কনরাড) সঙ্গে আলোচনা করেছিলাম। সেও একই কথা বললো। লারা কিংবদন্তি বলেই রেকর্ডটা তার নামের পাশে থাকা উচিত।’
১৯৯৮ সালে পেশোয়ারে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ৩৩৪ রানে অপরাজিত থাকাকালীন ইনিংস ঘোষণা করে দিয়েছিলেন মার্ক টেলর। ডোনাল্ড ব্র্যাডম্যানকে সম্মান জানাতে এ সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন তিনি। টেস্টে ব্র্যাডম্যানেরও সর্বাধিক ব্যক্তিগত রান ৩৩৪।
প্রথম দিনের খেলার শেষের দিকে আউট হয়েছিলেন মুলডার। নো-বল হওয়ায় সে যাত্রা বেঁচে যান। তবে ওই আউট না হওয়াটাই তার মানসিকতা বদলে দিয়েছে বলে জানালেন তিনি। মুলডারের কথায়, ‘গতকাল নো-বলে বোল্ড হওয়ার পর মাথায় অনেক চিন্তা ভিড় করে এসেছিল। তার মধ্যে ইতিবাচক ভাবনাও ছিল। আমি সেটাই বেশি করে ভাবার চেষ্টা করছিলাম। আজ খেলতে নামার পর গুনগুন করে গান গাইছিলাম। ব্রেকফাস্টের সময় কেউ আমাকে বললো, অধিনায়ক হিসেবে অভিষেক হওয়ার পর সর্বোচ্চ ইনিংস ২৭৭। ওটা পেরোনো প্রথম লক্ষ্য ছিল। তারপর হাশের (হাশিম আমলা) নজির ভেঙে ফেলে বুঝলাম ৩১২ রানে দাঁড়িয়ে আছি।’
কী গান গাইছিলেন তিনি? মৃদু হেসে মুলডারের উত্তর, ‘আগে বাংলাদেশ সফরে গিয়ে আফ্রিকান ভাষার একটি গান গেয়েছিলাম। আজ ক্র্যানবেরি ব্যান্ডের জোম্বি গানটা গাইছিলাম।’
জীবনের কঠিন সময়ে কীভাবে দক্ষিণ আফ্রিকা বোর্ডের সাহায্য পেয়েছেন তা-ও উঠে এসেছে মুলডারের কথায়। বলেছেন, ‘দক্ষিণ আফ্রিকার হয়ে খেলা শুরু করার সময় মোটেও ভাল ক্রিকেটার ছিলাম না। তারা অনেক সুযোগ দিয়েছে আমাকে। সাবেক ক্রিকেটারদের সঙ্গে কথা বলিয়ে নিজের খেলা আরও নিখুঁত করতে সাহায্য করেছে। এরপর ইংল্যান্ডে গিয়ে ক্রিকেটের টেকনিক্যাল দিকগুলো নিয়ে পরিশ্রম করি। বুঝতে পারি, কী ধরনের ক্রিকেটার হতে পারি। এছাড়া জিম্বাবুয়ের কোচ জাস্টিন সিমন্স আমাকে খুব সাহায্য করেছেন। বিশেষ করে শর্ট বল মোকাবিলা করার ব্যাপারে।’
দক্ষিণ আফ্রিকার ক্রিকেটারদের মধ্যে টেস্টে সর্বাধিক রানের ইনিংস খেলেছেন মুলডার। এর আগে হাশিম আমলা ৩১১ রান করেছিলেন। এক টেস্টেও প্রোটিয়া ক্রিকেটারদের মধ্যে সর্বাধিক রান মুলডারের। এর আগে ২০০৩ সালে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে দুই ইনিংস মিলিয়ে ৩৬২ রান করেছিলেন গ্রায়েম স্মিথ। এক ইনিংসেই তাকে টপকে গেছেন মুলডার।
বিদেশের মাটিতে টেস্টে এক ইনিংসে সর্বাধিক রানও মুলডারের। ১৯৫৮ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে পাকিস্তানের হানিফ মোহাম্মদ ৩৩৭ রান করেছিলেন। সেটাই ছিল এতদিন রেকর্ড। তা ভেঙে ফেলেছেন মুলডার।
বিজনেস আওয়ার/ ০৮ জুলাই / কাওছার