বিজনেস আওয়ার প্রতিবেদক (সিলেট) : সিলেটের বন্দরবাজার ফাঁড়িতে পুলিশি নির্যাতনে নিহত রায়হান হত্যা মামলার মূল অভিযুক্ত বরখাস্ত উপপরিদর্শক (এসআই) আকবর হোসেনের ৭ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। মঙ্গলবার (১০ নভেম্বর) শুনানি শেষে সিলেটের চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক আবুল কাশেম সাত দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
আকবরকে হত্যা মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতে হাজির করে সাত দিনের রিমান্ডের আবেদন করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআই পরিদর্শক আওলাদ হোসেন। শুনানি শেষে আদালত সাতদিনেরই রিমান্ড মঞ্জুর করেন। আদালতে আকবরের পক্ষে কোন আইনজীবী শুনানিতে অংশ গ্রহণ করেননি।
এর আগে কানাইঘাট সীমান্ত এলাকা থেকে সোমবার (০৯ নভেম্বর) সন্ধ্যা পৌনে ছয়টায় তাকে সিলেটে নিয়ে আসা হয়। সিলেটের কানাইঘাট উপজেলার ডনা সীমান্ত থেকে এস আই আকবরকে আটক করে স্থানীয় খাসিয়ারা। পরে বিজিবি তাকে সিলেট জেলা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করেছে।
বিকেল ৫টা ৫৩ মিনিটে কঠোর নিরাপত্তায় তাকে কানাইঘাট থেকে সিলেট পুলিশ সুপার কার্যালয়ে নিয়ে আসা হয়। পরে সন্ধ্যায় নিজ কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন পুলিশ সুপার মোহাম্মদ ফরিদ উদ্দিন। পরে রাত পৌনে ৮টার দিকে তাকে পিবিআইয়ের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
নিহত রায়হানের পরিবারের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়, গত ১১ অক্টোবর রাতে বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়িতে রায়হান উদ্দিনকে নির্যাতন করে হত্যা করা হয়েছে। যদিও পুলিশ দাবি করে ছিনতাইকালে সাধারণ জনতার মারপিটে রায়হান মৃত্যুবরণ করে। রায়হান সিলেট নগরীর আখালিয়া নেহারিপাড়া এলাকার বাসিন্দা। ঘটনার পর থেকে এসআই আকবর পালিয়ে যায়।
উল্লেখ্য, গত ১১ অক্টোবর বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়িতে নির্যাতন করে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়ার পর চিকিৎসাধীন অবস্থায় সকাল ৭টা ৫০ মিনিটে রায়হানের মৃত্যু হয়। রায়হান সিলেট নগরের আখালিয়ার নেহারিপাড়ার বিডিআরের হাবিলদার মৃত রফিকুল ইসলামের ছেলে।
এ ঘটনায় গত ১২ অক্টোবর রাতে অজ্ঞাতনামাদের আসামি করে পুলিশি হেফাজতে মৃত্যু আইনে নগরীর কোতোয়ালি মডেল থানায় মামলা করেন রায়হানের স্ত্রী তাহমিনা আক্তার তান্নি। ১৪ অক্টোবর মামলাটি পুলিশ সদর দফতরের নির্দেশে পিবিআইতে স্থানান্তর হয়।
তদন্তভার পাওয়ার পর পিবিআইয়ের টিম ঘটনাস্থল বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়ি, নগরের কাস্টঘর, নিহতের বাড়ি পরিদর্শন করে।
সর্বোপরি মরদেহ কবর থেকে তোলার পর পুনরায় ময়নাতদন্ত করা হয়। নিহত রায়হানের মরদেহে ১১১টি আঘাতের চিহ্ন উঠে এসেছে ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে। এসব আঘাতের ৯৭টি ফোলা আঘাত ও ১৪টি ছিল গুরুতর জখমের চিহ্ন। এসব আঘাত লাঠি দ্বারাই করা হয়েছে।
অসংখ্য আঘাতের কারণে হাইপোভলিউমিক শক ও নিউরোজেনিক শকে মস্তিষ্ক, হৃৎপিণ্ড, ফুসফুস, কিডনিসহ গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গগুলো কর্মক্ষমতা হারানোর কারণে রায়হানের মৃত্যু হয়েছে। ঘটনার দিন বিকেলে মহানগর পুলিশের পক্ষ থেকে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হলে রায়হানকে ফাঁড়িতে এনে নির্যাতনের প্রাথমিক প্রমাণ পায় কমিটি।
তদন্ত কমিটির সুপারিশে বন্দরবাজার ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই আকবর হোসেন ভূঁইয়া, কনস্টেবল হারুনুর রশিদ, তৌহিদ মিয়া ও টিটু চন্দ্র দাসকে সাময়িক বরখাস্ত এবং এএসআই আশেক এলাহী, এএসআই কুতুব আলী ও কনস্টেবল সজীব হোসেনকে প্রত্যাহার করে তাদের পুলিশ লাইন্সে সংযুক্ত করা হয়।
এছাড়া গত ২১ অক্টোবর এ ঘটনায় প্রধান অভিযুক্ত এসআই আকবর হোসেন ভূঁইয়াকে ফাঁড়ি থেকে পালাতে সহায়তা করা ও তথ্য গোপনের অপরাধে বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়ির টু আইসি এসআই হাসান উদ্দিনকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।
বিজনেস আওয়ার/১০ নভেম্বর, ২০২০/এ