বিজনেস আওয়ার প্রতিবেদক: বাংলাদেশি পণ্যের ওপর যুক্তরাষ্ট্র ৩৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের সংবাদে মঙ্গলবার (৮ জুলাই) লেনদেনের শুরুতে শেয়ারবাজারে নেতিবাচক প্রবণতা দেখা দিলেও শেষ পর্যন্ত সবকটি মূল্যসূচক বেড়ে দিনের লেনদেন শেষ হয়েছে। সেইসঙ্গে প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) লেনদেন বেড়ে ৬০০ কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে। এর মাধ্যমে ডিএসইতে সাড়ে ৪ মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ লেনদেন হয়েছে।
অন্য শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জেও (সিএসই) বেড়েছে সবকটি মূল্যসূচক। সেইসঙ্গে বেড়েছে লেনদেনের পরিমাণ। তবে ডিএসই ও সিএসই দুই বাজারেই দাম বাড়ার থেকে দাম কমার তালিকায় বেশি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। মঙ্গলবার (৮ জুলাই) মূল্যসূচক বাড়ার মাধ্যমে নতুন অর্থবছর ২০২৫-২৬ এর প্রথম চার কার্যদিবসেই মূল্যসূচক বাড়লো।
আজ শেয়ারবাজারে লেনদেন শুরু হওয়ার আগেই সংবাদ চলে আসে বাংলাদেশের পণ্যের ওপর ৩৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। এ সংবাদের পরিপ্রেক্ষিতে লেনদেনের শুরুতে বিনিয়োগকারীদের একটি অংশ শেয়ার বিক্রির চাপ বাড়ায়। ফলে লেনদেনের শুরুরদিকেই দাম কমার তালিকায় চলে যায় বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠান। একপর্যায়ে ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ২৬ পয়েন্ট কমে যায়।
তবে লেনদেনের শেষদিকে ক্রেতা বাড়ায় দাম কমার তালিকা থেকে বেশিকিছু প্রতিষ্ঠান দাম বাড়ার তালিকায় চলে আসে। সেইসঙ্গে বাড়ে লেনদেনের গতি। এতে সবকটি মূল্যসূচক বাড়ার পাশাপাশি প্রায় সাড়ে চার মাস পর ডিএসইতে আবারও ৬০০ কোটি টাকার বেশি লেনদেনের দেখা মিলেছে।
দিনের লেনদেন শেষে ডিএসইতে সব খাত মিলে দাম বাড়ার তালিকায় নাম লিখিয়েছে ১৫৮টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট। বিপরীতে দাম কমেছে ১৯১টির। আর ৪৯টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। ভালো কোম্পানি বা ১০ শতাংশ অথবা তার বেশি লভ্যাংশ দেওয়া প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে ৯৪টির শেয়ার দাম বেড়েছে। বিপরীতে ১০১টির দাম কমেছে এবং ২৩টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।
মাঝারি মানের বা ১০ শতাংশের কম লভ্যাংশ দেওয়া ৩৫টি কোম্পানির শেয়ার দাম বাড়ার বিপরীতে ৪২টির দাম কমেছে এবং ৬টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। বিনিয়োগকারীদের লভ্যাংশ না দেওয়ার কারণে পচা ‘জেড’ গ্রুপে স্থান হওয়া কোম্পানিগুলোর মধ্যে ২৯টির শেয়ার দাম বেড়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ৪৮টির এবং ২০টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। আর তালিকাভুক্ত ৩৬টি মিউচুয়াল ফান্ডের মধ্যে ৩টির দাম বেড়েছে। বিপরীতে ২৪টির দাম কমেছে এবং ৯টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।
এরপর ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স আগের দিনের তুলনায় ৫ পয়েন্ট বেড়ে ৪ হাজার ৯৮১ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। অন্য দুই সূচকের মধ্যে ডিএসই শরিয়াহ সূচক আগের দিনের তুলনায় ২ পয়েন্ট বেড়ে ১ হাজার ৮৩ পয়েন্টে অবস্থান করছে। আর বাছাই করা ভালো ৩০ কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচক আগের দিনের তুলনায় ২ পয়েন্ট বেড়ে ১ হাজার ৮৭৫ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে।
সবকটি মূল্যসূচক বাড়ার পাশাপাশি ডিএসইতে লেনদেনের পরিমাণও বেড়েছে। বাজারটিতে ৬০১ কোটি ৭৫ টাকার লেনদেন হয়েছে। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয় ৫৭৩ কোটি ৪৬ টাকা। এ হিসেবে আগের কার্যদিবসের তুলনায় লেনদেন বেড়েছে ২৮ কোটি ২৯ লাখ টাকা। এর মাধ্যমে চলতি বছরের ২৫ ফেব্রুয়ারির পর ডিএসইতে সব থেকে বেশি লেনদেন হলো।
এ লেনদেনে সব থেকে বড় ভূমিকা রেখেছে এশিয়াটিক ল্যাবরেটরিজ। কোম্পানিটির ১৬ কোটি ৪১ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। দ্বিতীয় স্থানে থাকা মিডল্যান্ড ব্যাংকের শেয়ার লেনদেন হয়েছে ১৫ কোটি ১ লাখ টাকার। ১৪ কোটি ৯৮ লাখ টাকার শেয়ার নদেনের মাধ্যমে তৃতীয় স্থানে রয়েছে সি পার্ল বিচ রিসোর্ট।
এছাড়া ডিএসইতে লেনদেনের দিক থেকে শীর্ষ ১০ প্রতিষ্ঠানের তালিকায় রয়েছে- ব্র্যাক ব্যাংক, বিচ হ্যাচারি, আলিফ ইন্ডাস্ট্রিজ, ওরিয়ন ইনফিউশন, সিটি ব্যাংক, লাভেলো আইসক্রিম এবং খান ব্রাদার্স পিপি ওভেন ব্যাগ।
অন্য শেয়ারবাজার সিএসইর সার্বিক মূল্যসূচক সিএএসপিআই বেড়েছে ১৭ পয়েন্ট। বাজারটিতে লেনদেনে অংশ নেওয়া ২৩৬ প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৮৯টির দাম বেড়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ১১৩টির এবং ৩৪টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। লেনদেন হয়েছে ৭ কোটি ২৫ লাখ টাকা। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয় ৪ কোটি ৬৬ লাখ টাকা।
বিজনেস আওয়ার/ ০৯ জুলাই / এ এইচ