বিজনেস আওয়ার প্রতিবেদক: বিনিয়োগকারীদের প্রাপ্য কিন্তু দাবিহীন বা অবন্টিত ডিভিডেন্ড পুনরুদ্ধারের প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) ৪৪টি তালিকাভুক্ত কোম্পানিকে অবিলম্বে এই তহবিল ক্যাপিটাল মার্কেট স্ট্যাবিলাইজেশন ফান্ড (সিএমএসএফ)-এ স্থানান্তরের নির্দেশ দিয়েছে।
সিএমএসএফ সূত্র অনুযায়ী, এই ৪৪টি কোম্পানির কাছে সম্মিলিতভাবে প্রায় ১০০০ কোটি টাকার দাবিহীন ডিভিডেন্ড রয়েছে, যার বেশিরভাগই – প্রায় ৯০০ কোটি টাকা – বোনাস ডিভিডেন্ড আকারে এবং বাকিটা ক্যাশ ডিভিডেন্ড।
কোম্পানিগুলোর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে এক বৈঠকে শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা এই নির্দেশনার পুনরাবৃত্তি করেছে। সূত্রমতে, সকল দাবিহীন ডিভিডেন্ড সিএমএসএফ-এ জমা দিতে বলা হয়েছে, যা ২০২১ সালে অবন্টিত বিনিয়োগকারীর সম্পদ ব্যবস্থাপনা ও ব্যবহারের জন্য গঠিত একটি বিশেষ তহবিল। তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলো থেকে তহবিল সংগ্রহ করে সিএমএসএফ যথাযথ নথি জমা দেওয়ার পর বিনিয়োগকারীদের দাবি নিষ্পত্তি করবে।
দাবিহীন ডিভিডেন্ড ধারণকারী কিছু প্রধান কোম্পানি হলো: ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো (বিএটি), বাংলাদেশ সাবমেরিন কেবলস, ইনভেস্টমেন্ট কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ, সিঙ্গার বাংলাদেশ, অ্যাপেক্স ফুটওয়্যার, স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস, ইবনে সিনা ফার্মা, হাইডেলবার্গ সিমেন্ট, অলিম্পিক ইন্ডাস্ট্রিজ, পদ্মা অয়েল কোম্পানি, অ্যাটলাস বাংলাদেশ, মুন্ন সিরামিক, জি কিউ বল পেন, সমরিতা হাসপাতাল, নাভানা সিএনজি এবং মাকসন্স স্পিনিং মিলস।
১০ জুলাই রাজধানীর আগারগাঁওয়ের বিএসইসি ভবনে অনুষ্ঠিত এই বৈঠকে দাবিহীন বা অবন্টিত ডিভিডেন্ড এবং সাবস্ক্রিপশন মানি সংক্রান্ত নিরীক্ষা প্রতিবেদনের ওপর আলোচনা হয়। এতে বিএসইসি কর্মকর্তা, সিএমএসএফ প্রতিনিধি এবং সংশ্লিষ্ট কোম্পানিগুলোর শীর্ষ নির্বাহীরা উপস্থিত ছিলেন।
জানা গেছে, এই ৪৪টি কোম্পানির কাছে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ দাবিহীন ক্যাশ ডিভিডেন্ড, বোনাস ডিভিডেন্ড, রাইট শেয়ার এবং পাবলিক অফারিং সাবস্ক্রিপশন মানি রয়েছে যা বছরের পর বছর ধরে অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে আছে।
সিএমএসএফ-এর একজন কর্মকর্তা জানান, কিছু তালিকাভুক্ত কোম্পানি দাবিহীন ডিভিডেন্ডের পরিমাণ নিয়ে আপত্তি তুলেছে, যা পূর্বে বিএসইসি দ্বারা নির্ধারিত হয়েছিল। এমনকি কয়েকটি কোম্পানি বিএসইসি নির্দেশ দেওয়ার পরও দাবিহীন ডিভিডেন্ডের কিছু অংশ শেয়ারহোল্ডারদের মধ্যে বিতরণ করেছে।
তিনি আরও বলেন, “এখন কোম্পানিগুলোর সঙ্গে আলোচনার পর বিএসইসি তাদের নির্দেশ দিয়েছে যে দাবিহীন ডিভিডেন্ড – বিনিয়োগকারীদের যে অর্থ আসলে অবন্টিত ছিল – তা যত তাড়াতাড়ি সম্ভব সিএমএসএফ-এ জমা দিতে হবে।”
একটি আর্থিক বছরের শেষে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলো তাদের শেয়ারহোল্ডারদের জন্য ডিভিডেন্ড ঘোষণা করে। তালিকাভুক্তি বিধিমালা অনুযায়ী, ঘোষিত ক্যাশ ডিভিডেন্ড বার্ষিক সাধারণ সভায় (এজিএম) অনুমোদনের ৩০ দিনের মধ্যে বিনিয়োগকারীদের কাছে পরিশোধ করতে হবে।
তবে অসম্পূর্ণ ব্যাংক অ্যাকাউন্টের তথ্য বা অন্যান্য সমস্যার কারণে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলো প্রায়শই কিছু বিনিয়োগকারীর কাছে ঘোষিত ডিভিডেন্ড বিতরণ করতে ব্যর্থ হয়। এমন ক্ষেত্রে কোম্পানিগুলোকে অবন্টিত ডিভিডেন্ডের পরিমাণ একটি পৃথক ব্যাংক অ্যাকাউন্টে রাখতে হয়।
সিএমএসএফ তথ্য অনুসারে, অনেক কোম্পানি এই অবন্টিত ডিভিডেন্ড সংরক্ষণের জন্য পৃথক ব্যাংক অ্যাকাউন্ট বজায় রাখতে ব্যর্থ হয়েছে। কিছু ক্ষেত্রে কোম্পানিগুলো এই তহবিল তাদের ওয়ার্কিং ক্যাপিটালের অংশ হিসেবে ব্যবহার করেছে – যা আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।
বিজনেস আওয়ার/ ১৩ জুলাই / এ এইচ