ঢাকা , সোমবার, ২৮ জুলাই ২০২৫, ১৩ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

হেপাটাইটিস প্রতিরোধে পারিবারিক উদ্যোগের সময় এখনই

  • পোস্ট হয়েছে : এক ঘন্টা আগে
  • 4

বিজনেস আওয়ার ডেস্ক: লিভার মানুষের দেহের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গগুলোর একটি। খাবার হজম, শক্তি সঞ্চয়, বিষাক্ত পদার্থ পরিশোধনসহ নানা কাজ এই অঙ্গটি করে থাকে নীরবে। কিন্তু আমাদের অজান্তেই কখনো কখনো এই অঙ্গটিতেই বাসা বাঁধে নীরব ঘাতক হেপাটাইটিস। ভাইরাসঘটিত এই রোগটি একদিকে যেমন প্রাণঘাতী, অন্যদিকে দীর্ঘমেয়াদি জটিলতা তৈরির জন্যও কুখ্যাত। অথচ একটু সচেতনতা, সামান্য পরীক্ষা আর টিকা গ্রহণেই আমরা এই রোগকে রুখে দিতে পারি। নিরাপদ রাখতে পারি নিজেকে এবং পরিবারকে।

২৮ জুলাই বিশ্ব হেপাটাইটিস দিবস। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এ দিনটি পালন করা হয় হেপাটাইটিস সম্পর্কে জনসচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে। দিবসটির মূল বার্তাই হওয়া উচিত ‘উই আর নট ওয়েটিং’, অর্থাৎ আমরা আর অপেক্ষা করব না, এখনই সচেতন হবো, পরীক্ষার উদ্যোগ নেবো এবং চিকিৎসা গ্রহণ করবো।

হেপাটাইটিস ভাইরাস অনেক ক্ষেত্রেই পরিবার থেকে পরিবারে ছড়িয়ে পড়ে। বিশেষ করে হেপাটাইটিস বি ও সি ভাইরাস রক্তের মাধ্যমে সংক্রমিত হয়। অনেকে এই ভাইরাস শরীরে ধারণ করলেও দীর্ঘদিন ধরে কোনো উপসর্গ প্রকাশ পায় না। এ কারণে অনেক সময় স্বামী-স্ত্রী, মা-শিশু, ভাই-বোন এমনকি বাড়ির গৃহকর্মীর মাঝেও অজান্তেই ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ে।

তাই পরিবারের সব সদস্যকে হেপাটাইটিস বি ও সি ভাইরাস পরীক্ষার আওতায় আনা গুরুত্বপূর্ণ। কারণ দ্রুত শনাক্তকরণই পারে রোগের ভয়াবহতা কমাতে।

বর্তমানে হেপাটাইটিস ‘বি’ এর প্রতিরোধে কার্যকর টিকা রয়েছে, যা বাংলাদেশসহ বিশ্বের অনেক দেশে নিয়মিত টিকাদান কর্মসূচির আওতায় দেওয়া হচ্ছে। নবজাতক থেকে শুরু করে প্রাপ্তবয়স্করাও এই টিকা গ্রহণ করতে পারেন। মাত্র তিনটি ডোজেই একজন ব্যক্তি হেপাটাইটিস বি ভাইরাস থেকে নিরাপদ থাকতে পারেন।

অন্যদিকে হেপাটাইটিস ‘এ’ এবং ‘ই’ সাধারণত দূষিত খাবার ও পানির মাধ্যমে ছড়ায়, যা উন্নত স্যানিটেশন ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চললে প্রতিরোধ করা যায়। হেপাটাইটিস ‘সি’ এর এখনো কোনো টিকা নেই, তবে চিকিৎসা ব্যবস্থা উন্নত হয়েছে অনেক। নিয়মিত রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে এটি শনাক্ত করে যথাযথ চিকিৎসা নেওয়া জরুরি।

বাংলাদেশে এখনো অধিকাংশ মানুষ হেপাটাইটিস সম্পর্কে সচেতন নয়। অনেকেই জানেন না যে এই ভাইরাস শরীরে নীরবে বাসা বাঁধে এবং ধীরে ধীরে লিভার সিরোসিস বা লিভার ক্যানসারের দিকে ঠেলে দেয়। কেউ কেউ জানলেও পরীক্ষা কিংবা টিকা নেওয়ার প্রতি আগ্রহ দেখায় না।

অভিভাবকরা নিজেরা যদি সচেতন না হন, তাহলে সন্তানদের সুরক্ষা নিশ্চিত করাও কঠিন। এজন্য আমাদের পরিবার থেকেই এই সচেতনতার চর্চা শুরু করতে হবে। বাবা-মা নিজেরা টিকা নিলে, সন্তানরাও উৎসাহিত হবে। পরিবারে আলোচনা হতে হবে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা, নিরাপদ রক্ত গ্রহণ, ব্যবহৃত সূচ বা ব্লেড পরিহার এসব বিষয়ে।

যে কোনো স্বাস্থ্য সচেতনতা পরিবার থেকে শুরু হলেও সেটি আরও বিস্তৃত হওয়া দরকার। স্কুল-কলেজে স্বাস্থ্যশিক্ষা কার্যক্রমে হেপাটাইটিস সম্পর্কে আলাদা অংশ থাকা উচিত। কর্মস্থলে নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা এবং সচেতনতামূলক পোস্টার, লিফলেট বিতরণ কার্যকর হতে পারে। সাংবাদিকতা, সামাজিক সংগঠন ও ধর্মীয় মঞ্চ থেকেও এই বার্তাটি পৌঁছে দিতে হবে ‘সচেতনতা ও টিকা জীবনের নিরাপত্তা দেয়।’

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্যমতে, ২০৩০ সালের মধ্যে ভাইরাল হেপাটাইটিস নির্মূল করা সম্ভব, যদি আমরা এখন থেকেই কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করি। এজন্য প্রয়োজন সরকারি স্বাস্থ্য ব্যবস্থা, বেসরকারি অংশীদার, গণমাধ্যম, শিক্ষক, চিকিৎসক এবং সর্বোপরি পরিবার ও ব্যক্তির সম্মিলিত প্রচেষ্টা। তবে যদি এখনই জরুরি ও ধারাবাহিক পদক্ষেপ না নেওয়া হয়, তাহলে ২০৩০ সালের মধ্যে ভাইরাল হেপাটাইটিস থেকে অতিরিক্ত ৯৫ লাখ নতুন সংক্রমণ, ২১ লাখ লিভার ক্যানসার রোগী ও ২৮ লাখ মৃত্যু হতে পারে।

স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ ও মিটফোর্ড হাসপাতালের সহযোগী অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ জাকির হোসেন বলেন, হেপাটাইটিস রোগ প্রতিরোধে যে কোনোভাবে বিশুদ্ধ পানি খেতে হবে। পানি ফুটিয়ে পান করা সবচেয়ে নিরাপদ। যেখানে সেখানে খাবার বা পানি খাওয়া যাবে না। ব্যক্তিগত পরিচ্ছন্নতার বিকল্প নেই। মাদক থেকে মুক্ত থাকতে হবে। নিরাপদ রক্ত নিতে হবে। অনিরাপদ শারীরিক সম্পর্ক এড়িয়ে চলতে হবে। ভাইরাস প্রতিরোধে টিকা নিতে হবে। জন্ডিস হলে হেপাটাইটিসের চিকিৎসায় নিকটবর্তী রেজিস্টার্ড চিকিৎসক অথবা বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

তথ্যসূত্র: বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।

বিজনেস আওয়ার/ ২৮ জুলাই / হাসান

ফেসবুকের মাধ্যমে আপনার মতামত জানান:
ট্যাগ :

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার মেইলে তথ্য জমা করুন

হেপাটাইটিস প্রতিরোধে পারিবারিক উদ্যোগের সময় এখনই

পোস্ট হয়েছে : এক ঘন্টা আগে

বিজনেস আওয়ার ডেস্ক: লিভার মানুষের দেহের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গগুলোর একটি। খাবার হজম, শক্তি সঞ্চয়, বিষাক্ত পদার্থ পরিশোধনসহ নানা কাজ এই অঙ্গটি করে থাকে নীরবে। কিন্তু আমাদের অজান্তেই কখনো কখনো এই অঙ্গটিতেই বাসা বাঁধে নীরব ঘাতক হেপাটাইটিস। ভাইরাসঘটিত এই রোগটি একদিকে যেমন প্রাণঘাতী, অন্যদিকে দীর্ঘমেয়াদি জটিলতা তৈরির জন্যও কুখ্যাত। অথচ একটু সচেতনতা, সামান্য পরীক্ষা আর টিকা গ্রহণেই আমরা এই রোগকে রুখে দিতে পারি। নিরাপদ রাখতে পারি নিজেকে এবং পরিবারকে।

২৮ জুলাই বিশ্ব হেপাটাইটিস দিবস। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এ দিনটি পালন করা হয় হেপাটাইটিস সম্পর্কে জনসচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে। দিবসটির মূল বার্তাই হওয়া উচিত ‘উই আর নট ওয়েটিং’, অর্থাৎ আমরা আর অপেক্ষা করব না, এখনই সচেতন হবো, পরীক্ষার উদ্যোগ নেবো এবং চিকিৎসা গ্রহণ করবো।

হেপাটাইটিস ভাইরাস অনেক ক্ষেত্রেই পরিবার থেকে পরিবারে ছড়িয়ে পড়ে। বিশেষ করে হেপাটাইটিস বি ও সি ভাইরাস রক্তের মাধ্যমে সংক্রমিত হয়। অনেকে এই ভাইরাস শরীরে ধারণ করলেও দীর্ঘদিন ধরে কোনো উপসর্গ প্রকাশ পায় না। এ কারণে অনেক সময় স্বামী-স্ত্রী, মা-শিশু, ভাই-বোন এমনকি বাড়ির গৃহকর্মীর মাঝেও অজান্তেই ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ে।

তাই পরিবারের সব সদস্যকে হেপাটাইটিস বি ও সি ভাইরাস পরীক্ষার আওতায় আনা গুরুত্বপূর্ণ। কারণ দ্রুত শনাক্তকরণই পারে রোগের ভয়াবহতা কমাতে।

বর্তমানে হেপাটাইটিস ‘বি’ এর প্রতিরোধে কার্যকর টিকা রয়েছে, যা বাংলাদেশসহ বিশ্বের অনেক দেশে নিয়মিত টিকাদান কর্মসূচির আওতায় দেওয়া হচ্ছে। নবজাতক থেকে শুরু করে প্রাপ্তবয়স্করাও এই টিকা গ্রহণ করতে পারেন। মাত্র তিনটি ডোজেই একজন ব্যক্তি হেপাটাইটিস বি ভাইরাস থেকে নিরাপদ থাকতে পারেন।

অন্যদিকে হেপাটাইটিস ‘এ’ এবং ‘ই’ সাধারণত দূষিত খাবার ও পানির মাধ্যমে ছড়ায়, যা উন্নত স্যানিটেশন ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চললে প্রতিরোধ করা যায়। হেপাটাইটিস ‘সি’ এর এখনো কোনো টিকা নেই, তবে চিকিৎসা ব্যবস্থা উন্নত হয়েছে অনেক। নিয়মিত রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে এটি শনাক্ত করে যথাযথ চিকিৎসা নেওয়া জরুরি।

বাংলাদেশে এখনো অধিকাংশ মানুষ হেপাটাইটিস সম্পর্কে সচেতন নয়। অনেকেই জানেন না যে এই ভাইরাস শরীরে নীরবে বাসা বাঁধে এবং ধীরে ধীরে লিভার সিরোসিস বা লিভার ক্যানসারের দিকে ঠেলে দেয়। কেউ কেউ জানলেও পরীক্ষা কিংবা টিকা নেওয়ার প্রতি আগ্রহ দেখায় না।

অভিভাবকরা নিজেরা যদি সচেতন না হন, তাহলে সন্তানদের সুরক্ষা নিশ্চিত করাও কঠিন। এজন্য আমাদের পরিবার থেকেই এই সচেতনতার চর্চা শুরু করতে হবে। বাবা-মা নিজেরা টিকা নিলে, সন্তানরাও উৎসাহিত হবে। পরিবারে আলোচনা হতে হবে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা, নিরাপদ রক্ত গ্রহণ, ব্যবহৃত সূচ বা ব্লেড পরিহার এসব বিষয়ে।

যে কোনো স্বাস্থ্য সচেতনতা পরিবার থেকে শুরু হলেও সেটি আরও বিস্তৃত হওয়া দরকার। স্কুল-কলেজে স্বাস্থ্যশিক্ষা কার্যক্রমে হেপাটাইটিস সম্পর্কে আলাদা অংশ থাকা উচিত। কর্মস্থলে নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা এবং সচেতনতামূলক পোস্টার, লিফলেট বিতরণ কার্যকর হতে পারে। সাংবাদিকতা, সামাজিক সংগঠন ও ধর্মীয় মঞ্চ থেকেও এই বার্তাটি পৌঁছে দিতে হবে ‘সচেতনতা ও টিকা জীবনের নিরাপত্তা দেয়।’

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্যমতে, ২০৩০ সালের মধ্যে ভাইরাল হেপাটাইটিস নির্মূল করা সম্ভব, যদি আমরা এখন থেকেই কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করি। এজন্য প্রয়োজন সরকারি স্বাস্থ্য ব্যবস্থা, বেসরকারি অংশীদার, গণমাধ্যম, শিক্ষক, চিকিৎসক এবং সর্বোপরি পরিবার ও ব্যক্তির সম্মিলিত প্রচেষ্টা। তবে যদি এখনই জরুরি ও ধারাবাহিক পদক্ষেপ না নেওয়া হয়, তাহলে ২০৩০ সালের মধ্যে ভাইরাল হেপাটাইটিস থেকে অতিরিক্ত ৯৫ লাখ নতুন সংক্রমণ, ২১ লাখ লিভার ক্যানসার রোগী ও ২৮ লাখ মৃত্যু হতে পারে।

স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ ও মিটফোর্ড হাসপাতালের সহযোগী অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ জাকির হোসেন বলেন, হেপাটাইটিস রোগ প্রতিরোধে যে কোনোভাবে বিশুদ্ধ পানি খেতে হবে। পানি ফুটিয়ে পান করা সবচেয়ে নিরাপদ। যেখানে সেখানে খাবার বা পানি খাওয়া যাবে না। ব্যক্তিগত পরিচ্ছন্নতার বিকল্প নেই। মাদক থেকে মুক্ত থাকতে হবে। নিরাপদ রক্ত নিতে হবে। অনিরাপদ শারীরিক সম্পর্ক এড়িয়ে চলতে হবে। ভাইরাস প্রতিরোধে টিকা নিতে হবে। জন্ডিস হলে হেপাটাইটিসের চিকিৎসায় নিকটবর্তী রেজিস্টার্ড চিকিৎসক অথবা বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

তথ্যসূত্র: বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।

বিজনেস আওয়ার/ ২৮ জুলাই / হাসান

ফেসবুকের মাধ্যমে আপনার মতামত জানান: