ঢাকা , রবিবার, ০৩ অগাস্ট ২০২৫, ১৯ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

শেয়ারবাজারে শৃঙ্খলা ফেরাতে বিএসইসি আইনে বড় পরিবর্তন

  • পোস্ট হয়েছে : ১২:৪৫ অপরাহ্ন, শনিবার, ২ অগাস্ট ২০২৫
  • 6

বিজনেস আওয়ার প্রতিবেদক: শেয়ারবাজারে কারসাজি রোধ ও সুশাসন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) আইন, ২০২৫-এর খসড়ায় বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন আনা হয়েছে। প্রস্তাবিত আইনে শেয়ার কারসাজির শাস্তি দ্বিগুণ করা হয়েছে এবং বিএসইসির বোর্ড গঠনের নিয়মেও বড় পরিবর্তন এসেছে।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ থেকে এই খসড়া আইন মতামতের জন্য বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও সংস্থায় পাঠানো হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, কেউ যদি প্রতারণামূলক কার্যক্রম, সুবিধাভোগী ব্যবসা, বাজার কারসাজি, অসদুপায়ে কিংবা অন্য কোনোভাবে সিকিউরিটিজ ক্রয় বা বিক্রয়ে প্ররোচিত করেন, তাহলে সেটি শেয়ার কারসাজি হিসেবে বিবেচিত হবে।

বর্তমানে এই অপরাধে সর্বোচ্চ পাঁচ বছর কারাদণ্ড ও ৫ লাখ টাকা জরিমানার বিধান থাকলেও প্রস্তাবিত আইনে তা বাড়িয়ে ১০ বছর কারাদণ্ড ও ১০ লাখ টাকা জরিমানা করার প্রস্তাব করা হয়েছে।

তবে অনেক বিশেষজ্ঞের মতে, শুধু শাস্তির পরিমাণ বাড়ালেই শেয়ারবাজারে কাঙ্ক্ষিত পরিবর্তন আসবে না। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক ও আইসিবির বোর্ড চেয়ারম্যান ড. আবু আহমেদ বলেন, যারা কারসাজিতে জড়িত, তারা আইনের ফাঁকফোকর জানে এবং কঠোর শাস্তিও তাদের দমন করতে পারে না। বরং নীতিগত সংস্কার প্রয়োজন।

তিনি আরও বলেন, বিনিয়োগকারীদের অবাধে মার্জিন লোন গ্রহণের সুযোগ সীমিত করতে হবে। নিজের টাকায় না খেলে বিনিয়োগকারীরা দুর্বল কোম্পানির শেয়ার কেনে, যা তাদের বড় ক্ষতির মুখে ফেলে। সেইসঙ্গে প্লেসমেন্ট শেয়ার ব্যবস্থাকে বাতিল এবং ভালো মিউচুয়াল ফান্ডে কমিশন সুবিধা বাড়িয়ে গুণগত ডিভিডেন্ডধারী শেয়ারের চাহিদা তৈরি করতে হবে।

প্রস্তাবিত আইনের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো—বিএসইসির চেয়ারম্যান ও কমিশনার নিয়োগ পদ্ধতিতে পরিবর্তন। বর্তমানে সরকার সরাসরি এ নিয়োগ দিয়ে থাকে। তবে নতুন আইনের খসড়ায় বলা হয়েছে, একটি স্বাধীন বাছাই কমিটির মাধ্যমে বোর্ড সদস্য নিয়োগ দেওয়া হবে।

এই কমিটির সভাপতি হবেন প্রধান বিচারপতির মনোনীত আপিল বিভাগের একজন বিচারপতি। অন্য সদস্যরা হলেন—বাংলাদেশের মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক, সরকারি কর্ম কমিশনের চেয়ারম্যান এবং অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব (সদস্যসচিব)। কমিশনার নিয়োগের সময় বিএসইসির বর্তমান চেয়ারম্যানও বোর্ড সদস্য হবেন।

প্রত্যেক পদের জন্য বাছাই কমিটি দুজন করে প্রার্থীর নাম সুপারিশ করবে, যেখান থেকে সরকার একজনকে নিয়োগ দেবে। চেয়ারম্যান ও কমিশনাররা যথাক্রমে সুপ্রিম কোর্টের আপিল ও হাইকোর্ট বিভাগের বিচারকের পদমর্যাদা, বেতন ও অন্যান্য সুবিধা পাবেন।

এই সংস্কারের মাধ্যমে শেয়ারবাজারে সুশাসন, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা আরও জোরদার হবে বলে সংশ্লিষ্ট মহলের প্রত্যাশা।

বিজনেস আওয়ার/ ০২ আগস্ট / এ এইচ

ফেসবুকের মাধ্যমে আপনার মতামত জানান:
ট্যাগ :

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার মেইলে তথ্য জমা করুন

শেয়ারবাজারে শৃঙ্খলা ফেরাতে বিএসইসি আইনে বড় পরিবর্তন

পোস্ট হয়েছে : ১২:৪৫ অপরাহ্ন, শনিবার, ২ অগাস্ট ২০২৫

বিজনেস আওয়ার প্রতিবেদক: শেয়ারবাজারে কারসাজি রোধ ও সুশাসন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) আইন, ২০২৫-এর খসড়ায় বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন আনা হয়েছে। প্রস্তাবিত আইনে শেয়ার কারসাজির শাস্তি দ্বিগুণ করা হয়েছে এবং বিএসইসির বোর্ড গঠনের নিয়মেও বড় পরিবর্তন এসেছে।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ থেকে এই খসড়া আইন মতামতের জন্য বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও সংস্থায় পাঠানো হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, কেউ যদি প্রতারণামূলক কার্যক্রম, সুবিধাভোগী ব্যবসা, বাজার কারসাজি, অসদুপায়ে কিংবা অন্য কোনোভাবে সিকিউরিটিজ ক্রয় বা বিক্রয়ে প্ররোচিত করেন, তাহলে সেটি শেয়ার কারসাজি হিসেবে বিবেচিত হবে।

বর্তমানে এই অপরাধে সর্বোচ্চ পাঁচ বছর কারাদণ্ড ও ৫ লাখ টাকা জরিমানার বিধান থাকলেও প্রস্তাবিত আইনে তা বাড়িয়ে ১০ বছর কারাদণ্ড ও ১০ লাখ টাকা জরিমানা করার প্রস্তাব করা হয়েছে।

তবে অনেক বিশেষজ্ঞের মতে, শুধু শাস্তির পরিমাণ বাড়ালেই শেয়ারবাজারে কাঙ্ক্ষিত পরিবর্তন আসবে না। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক ও আইসিবির বোর্ড চেয়ারম্যান ড. আবু আহমেদ বলেন, যারা কারসাজিতে জড়িত, তারা আইনের ফাঁকফোকর জানে এবং কঠোর শাস্তিও তাদের দমন করতে পারে না। বরং নীতিগত সংস্কার প্রয়োজন।

তিনি আরও বলেন, বিনিয়োগকারীদের অবাধে মার্জিন লোন গ্রহণের সুযোগ সীমিত করতে হবে। নিজের টাকায় না খেলে বিনিয়োগকারীরা দুর্বল কোম্পানির শেয়ার কেনে, যা তাদের বড় ক্ষতির মুখে ফেলে। সেইসঙ্গে প্লেসমেন্ট শেয়ার ব্যবস্থাকে বাতিল এবং ভালো মিউচুয়াল ফান্ডে কমিশন সুবিধা বাড়িয়ে গুণগত ডিভিডেন্ডধারী শেয়ারের চাহিদা তৈরি করতে হবে।

প্রস্তাবিত আইনের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো—বিএসইসির চেয়ারম্যান ও কমিশনার নিয়োগ পদ্ধতিতে পরিবর্তন। বর্তমানে সরকার সরাসরি এ নিয়োগ দিয়ে থাকে। তবে নতুন আইনের খসড়ায় বলা হয়েছে, একটি স্বাধীন বাছাই কমিটির মাধ্যমে বোর্ড সদস্য নিয়োগ দেওয়া হবে।

এই কমিটির সভাপতি হবেন প্রধান বিচারপতির মনোনীত আপিল বিভাগের একজন বিচারপতি। অন্য সদস্যরা হলেন—বাংলাদেশের মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক, সরকারি কর্ম কমিশনের চেয়ারম্যান এবং অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব (সদস্যসচিব)। কমিশনার নিয়োগের সময় বিএসইসির বর্তমান চেয়ারম্যানও বোর্ড সদস্য হবেন।

প্রত্যেক পদের জন্য বাছাই কমিটি দুজন করে প্রার্থীর নাম সুপারিশ করবে, যেখান থেকে সরকার একজনকে নিয়োগ দেবে। চেয়ারম্যান ও কমিশনাররা যথাক্রমে সুপ্রিম কোর্টের আপিল ও হাইকোর্ট বিভাগের বিচারকের পদমর্যাদা, বেতন ও অন্যান্য সুবিধা পাবেন।

এই সংস্কারের মাধ্যমে শেয়ারবাজারে সুশাসন, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা আরও জোরদার হবে বলে সংশ্লিষ্ট মহলের প্রত্যাশা।

বিজনেস আওয়ার/ ০২ আগস্ট / এ এইচ

ফেসবুকের মাধ্যমে আপনার মতামত জানান: