ঢাকা , রবিবার, ০৩ অগাস্ট ২০২৫, ১৯ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

বিএসইসিকে ঘিরে তৈরি হচ্ছে শক্তিশালী ‘ওভারসাইট বডি’

  • পোস্ট হয়েছে : ১৩ মিনিট আগে
  • 1

বিজনেস আওয়ার প্রতিবেদক: শেয়ারবাজারে অনিয়ম, তদবির ও অস্বচ্ছ সিদ্ধান্ত রোধে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)-এর ওপর নজরদারি জোরদারের জন্য একটি শক্তিশালী ‘ওভারসাইট বডি’ গঠনের সুপারিশ করেছে শেয়ারবাজার সংস্কার টাস্কফোর্স। এই বডি হবে আইনগতভাবে স্বীকৃত ও কার্যকর একটি পরিদর্শন কাঠামো, যার মূল লক্ষ্য হবে কমিশনের কার্যক্রমে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করা।

প্রস্তাবিত সাত সদস্যের কমিটিতে থাকবেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) চেয়ারম্যান, অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব এবং বাজার সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাববিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ও টাস্কফোর্স সদস্য ড. আল-আমিন বলেন,“বিএসইসি দায়িত্ব পালন করতে ব্যর্থ হলে ওভারসাইট বডি করণীয় সুপারিশ করবে, যা সুশাসন নিশ্চিত করতে সাহায্য করবে।”

অতীতে একতরফা সিদ্ধান্ত ও তদবিরের কারণে বিনিয়োগকারীদের আস্থা ক্ষুণ্ণ হয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, মিউচুয়াল ফান্ডের মেয়াদ একতরফাভাবে দশ বছর বৃদ্ধি এবং বিতর্কিত আইপিও অনুমোদন বিনিয়োগকারীদের বড় ক্ষতির কারণ হয়েছে। কিছু অসাধু ফান্ড ম্যানেজার দীর্ঘ সময় ব্যবস্থাপনা ফি নেওয়ার সুযোগ নিয়েছেন, অথচ অধিকাংশ ফান্ড কাঙ্ক্ষিত মুনাফা দিতে ব্যর্থ হয়েছে।

টাস্কফোর্স ফ্লোর প্রাইস আরোপের মত সিদ্ধান্তগুলো বিদেশি বিনিয়োগকারীদের কাছে বাংলাদেশের বাজারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করেছে বলে উল্লেখ করেছে। এছাড়া বিএসইসির চেয়ারম্যান ও কমিশনারদের নিয়োগে স্বচ্ছতা আনতে ‘সার্চ কমিটি’ গঠনের প্রস্তাব দিয়েছে, যেখানে দক্ষতা, সততা ও বাজারের জ্ঞান বিবেচনা করা হবে।

২০১০ সালের শেয়ারবাজার ধসের পর গঠিত উপদেষ্টা কমিটি কার্যকর না হওয়া থেকে শিক্ষা নিয়ে এবার আইনগত ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়ে স্থায়ী ও প্রভাবশালী কমিটির পক্ষে মত দেওয়া হয়েছে। এছাড়া টাস্কফোর্সের সুপারিশ, বিএসইসি শুধু নীতিনির্ধারণে সীমাবদ্ধ থাকুক, আর দৈনন্দিন পরিচালনার দায়িত্ব হোক স্টক এক্সচেঞ্জের হাতে, যাতে রাজনৈতিক প্রভাব কমে।

তবে সাবেক অর্থ উপদেষ্টা ড. এ বি মির্জ্জা মো. আজিজুল ইসলাম বলেন,“বিএসইসি যদি সঠিকভাবে কাজ করে, তাহলে অতিরিক্ত কোনো নজরদারি বডির প্রয়োজন হবে না। এক বডি নিয়ন্ত্রণ করার জন্য আরেকটি বডি গঠনের যুক্তি নেই।”

সুতরাং, সুপারিশগুলি বাস্তবায়িত হলে শেয়ারবাজারে সুশাসন ও স্বচ্ছতা ফিরিয়ে আনা সম্ভব হতে পারে, যদিও সফলতা নির্ভর করবে প্রস্তাবিত ওভারসাইট বডির কার্যকারিতা ও নিরপেক্ষতার ওপর।

বিজনেস আওয়ার/ ০৩ আগস্ট / এ এইচ

ফেসবুকের মাধ্যমে আপনার মতামত জানান:
ট্যাগ :

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার মেইলে তথ্য জমা করুন

বিএসইসিকে ঘিরে তৈরি হচ্ছে শক্তিশালী ‘ওভারসাইট বডি’

পোস্ট হয়েছে : ১৩ মিনিট আগে

বিজনেস আওয়ার প্রতিবেদক: শেয়ারবাজারে অনিয়ম, তদবির ও অস্বচ্ছ সিদ্ধান্ত রোধে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)-এর ওপর নজরদারি জোরদারের জন্য একটি শক্তিশালী ‘ওভারসাইট বডি’ গঠনের সুপারিশ করেছে শেয়ারবাজার সংস্কার টাস্কফোর্স। এই বডি হবে আইনগতভাবে স্বীকৃত ও কার্যকর একটি পরিদর্শন কাঠামো, যার মূল লক্ষ্য হবে কমিশনের কার্যক্রমে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করা।

প্রস্তাবিত সাত সদস্যের কমিটিতে থাকবেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) চেয়ারম্যান, অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব এবং বাজার সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাববিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ও টাস্কফোর্স সদস্য ড. আল-আমিন বলেন,“বিএসইসি দায়িত্ব পালন করতে ব্যর্থ হলে ওভারসাইট বডি করণীয় সুপারিশ করবে, যা সুশাসন নিশ্চিত করতে সাহায্য করবে।”

অতীতে একতরফা সিদ্ধান্ত ও তদবিরের কারণে বিনিয়োগকারীদের আস্থা ক্ষুণ্ণ হয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, মিউচুয়াল ফান্ডের মেয়াদ একতরফাভাবে দশ বছর বৃদ্ধি এবং বিতর্কিত আইপিও অনুমোদন বিনিয়োগকারীদের বড় ক্ষতির কারণ হয়েছে। কিছু অসাধু ফান্ড ম্যানেজার দীর্ঘ সময় ব্যবস্থাপনা ফি নেওয়ার সুযোগ নিয়েছেন, অথচ অধিকাংশ ফান্ড কাঙ্ক্ষিত মুনাফা দিতে ব্যর্থ হয়েছে।

টাস্কফোর্স ফ্লোর প্রাইস আরোপের মত সিদ্ধান্তগুলো বিদেশি বিনিয়োগকারীদের কাছে বাংলাদেশের বাজারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করেছে বলে উল্লেখ করেছে। এছাড়া বিএসইসির চেয়ারম্যান ও কমিশনারদের নিয়োগে স্বচ্ছতা আনতে ‘সার্চ কমিটি’ গঠনের প্রস্তাব দিয়েছে, যেখানে দক্ষতা, সততা ও বাজারের জ্ঞান বিবেচনা করা হবে।

২০১০ সালের শেয়ারবাজার ধসের পর গঠিত উপদেষ্টা কমিটি কার্যকর না হওয়া থেকে শিক্ষা নিয়ে এবার আইনগত ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়ে স্থায়ী ও প্রভাবশালী কমিটির পক্ষে মত দেওয়া হয়েছে। এছাড়া টাস্কফোর্সের সুপারিশ, বিএসইসি শুধু নীতিনির্ধারণে সীমাবদ্ধ থাকুক, আর দৈনন্দিন পরিচালনার দায়িত্ব হোক স্টক এক্সচেঞ্জের হাতে, যাতে রাজনৈতিক প্রভাব কমে।

তবে সাবেক অর্থ উপদেষ্টা ড. এ বি মির্জ্জা মো. আজিজুল ইসলাম বলেন,“বিএসইসি যদি সঠিকভাবে কাজ করে, তাহলে অতিরিক্ত কোনো নজরদারি বডির প্রয়োজন হবে না। এক বডি নিয়ন্ত্রণ করার জন্য আরেকটি বডি গঠনের যুক্তি নেই।”

সুতরাং, সুপারিশগুলি বাস্তবায়িত হলে শেয়ারবাজারে সুশাসন ও স্বচ্ছতা ফিরিয়ে আনা সম্ভব হতে পারে, যদিও সফলতা নির্ভর করবে প্রস্তাবিত ওভারসাইট বডির কার্যকারিতা ও নিরপেক্ষতার ওপর।

বিজনেস আওয়ার/ ০৩ আগস্ট / এ এইচ

ফেসবুকের মাধ্যমে আপনার মতামত জানান: