বিজনেস আওয়ার প্রতিবেদক: নোয়াখালীতে মাইক্রোবাস নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খালে পড়ে শিশুসহ সাতজন নিহতের ঘটনায় পরিবারের সঙ্গে বাকরুদ্ধ এলাকাবাসীও। শান্তনা দেওয়ার ভাষা হারিয়ে ফেলছেন তারা। অথচ উৎসবের আমেজ থাকার কথা ছিল পরিবারটিতে। ওমান থেকে আসা বাহার উদ্দিনকে বিমানবন্দর থেকে নিয়ে বাড়ি ফিরছিলেন পরিবারের সদস্যরা। বাড়ি থেকে ১০ কিলোমিটার দূরে এ দুর্ঘটনা ঘটে। পরে বাহারকে নিথর স্ত্রী, সন্তান, মাসহ সাত স্বজনকে নিয়ে লক্ষ্মীপুরের গ্রামের বাড়ি ফিরতে হয়।
এদিকে অভিযুক্ত মাইক্রোবাস চালকের নাম এনায়েত আকবর হোসেন (২৪)। তিনি সদর উপজেলার হাজিরপাড়া ইউনিয়নের চরচামিতা গ্রামের মৃত ফয়েজ আহমেদের ছেলে। ঘটনার দুদিন পরও তাকে আটক করতে পারেনি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। তবে বৃহস্পতিবার রাত পর্যন্ত থানায় কোনো মামলা হয়নি বলে জানিয়েছেন চন্দ্রগঞ্জ হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি)।
অন্যদিকে বৃহস্পতিবার (৭ আগস্ট) লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার উত্তর জয়পুর ইউনিয়নের চৌপল্লী এলাকায় কাশারি বাড়িতে গেলে কবরস্থানের পাশে কয়েকজনকে দাঁড়িয়ে কান্না করতে দেখা যায়। এরমধ্যে নিহত কবিতার বড় বোন লিপি আক্তারও ছিলেন। তিনি আদরের বোন, ভাগ্নি মীমকে স্মৃতিচারণ করে আহাজারি করেন।
এসময় তিনি তার বোন, ভাগ্নিকে জীবিত করে দিতে বলেন। তিনি যেন তাদের আদর করতে পারেন- এ বলেই মূর্ছা যান। একই দৃশ্য নিহত লাবনীর ঘরে। লাবনী ও নাতনি লামিয়ার শোকে কাতর নানি সেলিনা বেগম ও নানা নুরুল ইসলামসহ স্বজনরা। কান্নায় ভেঙে পড়েন তারা। তাদের মেয়েও আর জীবিত হবে না, নাতনিকেও আর কোলে নিয়ে আদর করতে পারবে না, মেয়ে-নাতনিকে দেখতে এ বাড়িতেও তাদের আর আসা হবে না বলে কেঁদেই যাচ্ছেন তারা।
থানা পুলিশ ও স্থানীয়রা জানান, বুধবার ভোরে নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলার আলাইয়ারপুর ইউনিয়নের চন্দ্রগঞ্জ পূর্ব বাজারের অদূরে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে মাইক্রোবাস সড়কের পাশে খালে ফেলে পালিয়ে যান চালক। এতে প্রবাসী বাহারের মা মোরশেদা বেগমসহ (৫০) পরিবারের ৭ সদস্য নিহত হয়েছেন। এরমধ্যে মোরশেদাসহ তিন নাতনি মীম আক্তার (২), রেশমা আক্তার (৯), লামিয়া ইসলাম (৮) এবং দুই পুত্রবধূ কবিতা আক্তার (২৪) ও লাবনী আক্তার (২৫) পাশাপাশি কবরে শুয়ে আছেন।
অপর নিহত মোরশেদার মা ফয়জুন নেছাকে (৭০) হাজিরপাড়া গ্রামের বাড়িতে দাফন করা হয়। দাফন হয়ে গেলেও স্বজনের আহাজারি থেমে নেই। বাকরুদ্ধ এলাকাবাসীও। বুধবার (৬ আগস্ট) বাদ আছর স্থানীয় উত্তর জয়পুর জয়তারা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠে নিহত সাতজনের জানাজা হয়।
ওই এলাকার স্কুলশিক্ষক ফারুক হোসেন বলেন, এমন দুর্ঘটনা আমরা কল্পনাও করতে পারি না। বাহারের বাড়িতে পরিবারের সদস্যরা আনন্দ-উৎসবে থাকার কথা ছিল। এমন ঘটনায় আমরাও বাকরুদ্ধ। আমরা চালকের বিচার চাই।
দুর্ঘটনা থেকে বেঁচে ফেরা প্রবাসী বাহার উদ্দিনের বাবা আব্দুর রহিম বলেন, চালকের ঘুমের কারণেই দুর্ঘটনা ঘটেছে। পথে আমরা তাকে বিশ্রাম নেওয়ার জন্য একাধিকবার বলেছি, সে শুনেনি। তার কারণেই একসঙ্গে পরিবারের সাতজনকে হারাতে হয়েছে। এখন পর্যন্ত পুলিশ তাকে গ্রেফতার করতে পারেনি। আমরা তাকে ছেড়ে দেবো না। তার বিরুদ্ধে মামলা করবো। গ্লাস ভেঙে বের হলে চালককে বলার পরও লক না খুলে সে পালিয়ে যায়।
বেঁচে ফেরা প্রবাসী বাহার, আব্দুর রহিম ও ইস্কান্দার মির্জা জানায়, আড়াই বছর পর ওমান থেকে দেশে আসেন বাহার। তাকে আনতে মঙ্গলবার (৫ আগস্ট) রাতে পরিবারের ১১ সদস্য মাইক্রোবাসযোগে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে যান। সেখান থেকে বাহারকে নিয়ে ফেরার পথে ঘটনাস্থল পৌঁছলে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে গাড়িটি প্রায় ৩০ মিটার গভীর খালে পড়ে যায়। এ ঘটনায় পানিতে ডুবে ৪ নারী ও ৩ শিশু মারা যান। সেখান থেকে বেঁচে ফেরেন বাহার, তার বাবা আব্দুর রহিম, শ্বশুর ইস্কান্দার মীর্জা, ভাবি সুইটি আক্তার ও শ্যালক রিয়াজ হোসেন।
চন্দ্রগঞ্জ হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মোবারক হোসেন বলেন, চালক আকবর ঘটনার পর থেকেই পালিয়ে। তাকে আটকের চেষ্টা চলছে। পরিবারের পক্ষ থেকে মামলা করা হবে। পরিবার মামলা না করলে আমরা মামলা করবো।
বিজনেস আওয়ার/ ০৮ আগস্ট / কাওছার