ঢাকা , বৃহস্পতিবার, ১৪ অগাস্ট ২০২৫, ৩০ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

শেয়ারবাজারের ব্যাংকের বিরুদ্ধে ডলার কারসাজির অভিযোগ

  • পোস্ট হয়েছে : এক ঘন্টা আগে
  • 2

বিজনেস আওয়ার প্রতিবেদক: কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্ধারিত নির্দেশনা উপেক্ষা করে নিয়মবহির্ভূতভাবে উচ্চমূল্যে ডলার বিক্রি করেছে শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক। তদন্তে দেখা গেছে, ব্যাংকটির ঢাকা প্রধান কার্যালয়, উত্তরাসহ একাধিক শাখা গ্রাহকের কাছ থেকে প্রায় ৮৫ কোটি টাকা অতিরিক্ত আদায় করেছে। অভিযোগের প্রমাণ মিললে এক ডেপুটি ম্যানেজিং ডিরেক্টর (ডিএমডি) ও একজন এভিপি-কে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংক, বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) ও দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) সূত্রে জানা যায়, ২০২২ সালে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের পর তীব্র ডলার-সংকটের সুযোগে এ অনিয়মে জড়ায় শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক। অতিরিক্ত দরে ডলার বিক্রির দায়ে ২০২৩ সালেই ব্যাংকটিকে জরিমানা করেছিল বাংলাদেশ ব্যাংক।

প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, ডলার কারসাজির মূল পরিকল্পনায় ছিলেন ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মোসলেহ উদ্দিন ও তৎকালীন ডিএমডি মোস্তফা হোসেন। মোসলেহ উদ্দিন ২০২২ সালে এনসিসি ব্যাংক থেকে শাহজালালে যোগ দিয়েই ঢাকা ব্যাংক থেকে মোস্তফা হোসেনকে নিয়ে আসেন এবং প্রধান কার্যালয়ের দায়িত্ব দেন। এই দুজনের যোগসাজশে গ্রাহকের কাছ থেকে বাড়তি টাকা আদায় করে তা ব্যাংকের হিসাবে না জমিয়ে ব্যক্তিগত হিসাবে লেনদেন করা হতো। ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরে ব্যাংকের অভ্যন্তরীণ অডিটে বিষয়টি ধরা পড়ে। অডিট টিম এভিপি ও ইমপোর্ট ইনচার্জ মোহাম্মদ নকিবুল হকের ড্রয়ার থেকে প্রায় ৩০ কোটি টাকার ক্যাশ চেক ও পে-অর্ডার উদ্ধার করে, পাশাপাশি ২৮ লাখ টাকা আত্মসাতের প্রমাণ পায়।

তদন্তে দেখা গেছে, ২০২৩ সালের ১ জুলাই থেকে ২০২৪ সালের ৮ মে পর্যন্ত অতিরিক্ত এক্সচেঞ্জ গেইনের নামে আদায় করা হয় ৮৪ কোটি ৩৪ লাখ টাকা। এর মধ্যে গাজী ইন্টারন্যাশনাল, গাজী ট্যাংক, গ্লোবাল ব্র্যান্ড প্রাইভেট লিমিটেড থেকে নগদে নেওয়া হয় ৪ কোটি ৬৭ লাখ টাকা। এছাড়া ইনগ্লোন ট্রাভেল অ্যান্ড ট্যুরস লিমিটেডের কাছ থেকে ‘স্পনসরশিপ’-এর আড়ালে নেওয়া হয় ৮ লাখ ৪৮ হাজার টাকা। ব্যাংকের অডিটে গাজী ট্যাংকের কাছ থেকে ৩ কোটি ৭৮ লাখ টাকার ৮টি চেক উদ্ধারের তথ্যও রয়েছে, যা নির্ধারিত হিসাবে জমা হয়নি।

ডলার সংকটের সময়ে শুধু শাহজালাল নয়, অন্তত ২০টি ব্যাংক ঘোষিত রেটের বেশি দামে ডলার বিক্রি করেছে বলে ব্যাংকাররা জানিয়েছেন। তাদের দাবি, আমদানি বিল মেটাতে বিদেশি এক্সচেঞ্জ হাউসগুলো ঘোষিত দামের চেয়ে অন্তত ১ টাকা বেশি রেটে ডলার সরবরাহ করত। ফলে ব্যাংকগুলো বাধ্য হয়ে বেশি দামে ডলার কিনে লেনদেন করত, যদিও বাংলাদেশ ব্যাংকে ঘোষিত রেটই দেখানো হতো এবং অতিরিক্ত অর্থ ভাউচার বা চেকের মাধ্যমে সমন্বয় করা হতো।

বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানান, ব্যাংক চাইলে বেশি দামে ডলার বিক্রি করতে পারে। এটা মুক্তবাজারের অন্যতম বৈশিষ্ট্যগুলোর একটি। তবে ডলারের লেনদেনের দর এবং পরিমাণ বাংলাদেশ ব্যাংককে জানাতে হবে। আর ডলার লেনদেনে যে এক্সচেঞ্জ গেইন হয়, তা ব্যাংকের হিসাবে জমা করতে হবে।

বিজনেস আওয়ার/ ১৪ আগস্ট / এ এইচ

ফেসবুকের মাধ্যমে আপনার মতামত জানান:
ট্যাগ :

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার মেইলে তথ্য জমা করুন

শেয়ারবাজারের ব্যাংকের বিরুদ্ধে ডলার কারসাজির অভিযোগ

পোস্ট হয়েছে : এক ঘন্টা আগে

বিজনেস আওয়ার প্রতিবেদক: কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্ধারিত নির্দেশনা উপেক্ষা করে নিয়মবহির্ভূতভাবে উচ্চমূল্যে ডলার বিক্রি করেছে শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক। তদন্তে দেখা গেছে, ব্যাংকটির ঢাকা প্রধান কার্যালয়, উত্তরাসহ একাধিক শাখা গ্রাহকের কাছ থেকে প্রায় ৮৫ কোটি টাকা অতিরিক্ত আদায় করেছে। অভিযোগের প্রমাণ মিললে এক ডেপুটি ম্যানেজিং ডিরেক্টর (ডিএমডি) ও একজন এভিপি-কে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংক, বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) ও দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) সূত্রে জানা যায়, ২০২২ সালে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের পর তীব্র ডলার-সংকটের সুযোগে এ অনিয়মে জড়ায় শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক। অতিরিক্ত দরে ডলার বিক্রির দায়ে ২০২৩ সালেই ব্যাংকটিকে জরিমানা করেছিল বাংলাদেশ ব্যাংক।

প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, ডলার কারসাজির মূল পরিকল্পনায় ছিলেন ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মোসলেহ উদ্দিন ও তৎকালীন ডিএমডি মোস্তফা হোসেন। মোসলেহ উদ্দিন ২০২২ সালে এনসিসি ব্যাংক থেকে শাহজালালে যোগ দিয়েই ঢাকা ব্যাংক থেকে মোস্তফা হোসেনকে নিয়ে আসেন এবং প্রধান কার্যালয়ের দায়িত্ব দেন। এই দুজনের যোগসাজশে গ্রাহকের কাছ থেকে বাড়তি টাকা আদায় করে তা ব্যাংকের হিসাবে না জমিয়ে ব্যক্তিগত হিসাবে লেনদেন করা হতো। ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরে ব্যাংকের অভ্যন্তরীণ অডিটে বিষয়টি ধরা পড়ে। অডিট টিম এভিপি ও ইমপোর্ট ইনচার্জ মোহাম্মদ নকিবুল হকের ড্রয়ার থেকে প্রায় ৩০ কোটি টাকার ক্যাশ চেক ও পে-অর্ডার উদ্ধার করে, পাশাপাশি ২৮ লাখ টাকা আত্মসাতের প্রমাণ পায়।

তদন্তে দেখা গেছে, ২০২৩ সালের ১ জুলাই থেকে ২০২৪ সালের ৮ মে পর্যন্ত অতিরিক্ত এক্সচেঞ্জ গেইনের নামে আদায় করা হয় ৮৪ কোটি ৩৪ লাখ টাকা। এর মধ্যে গাজী ইন্টারন্যাশনাল, গাজী ট্যাংক, গ্লোবাল ব্র্যান্ড প্রাইভেট লিমিটেড থেকে নগদে নেওয়া হয় ৪ কোটি ৬৭ লাখ টাকা। এছাড়া ইনগ্লোন ট্রাভেল অ্যান্ড ট্যুরস লিমিটেডের কাছ থেকে ‘স্পনসরশিপ’-এর আড়ালে নেওয়া হয় ৮ লাখ ৪৮ হাজার টাকা। ব্যাংকের অডিটে গাজী ট্যাংকের কাছ থেকে ৩ কোটি ৭৮ লাখ টাকার ৮টি চেক উদ্ধারের তথ্যও রয়েছে, যা নির্ধারিত হিসাবে জমা হয়নি।

ডলার সংকটের সময়ে শুধু শাহজালাল নয়, অন্তত ২০টি ব্যাংক ঘোষিত রেটের বেশি দামে ডলার বিক্রি করেছে বলে ব্যাংকাররা জানিয়েছেন। তাদের দাবি, আমদানি বিল মেটাতে বিদেশি এক্সচেঞ্জ হাউসগুলো ঘোষিত দামের চেয়ে অন্তত ১ টাকা বেশি রেটে ডলার সরবরাহ করত। ফলে ব্যাংকগুলো বাধ্য হয়ে বেশি দামে ডলার কিনে লেনদেন করত, যদিও বাংলাদেশ ব্যাংকে ঘোষিত রেটই দেখানো হতো এবং অতিরিক্ত অর্থ ভাউচার বা চেকের মাধ্যমে সমন্বয় করা হতো।

বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানান, ব্যাংক চাইলে বেশি দামে ডলার বিক্রি করতে পারে। এটা মুক্তবাজারের অন্যতম বৈশিষ্ট্যগুলোর একটি। তবে ডলারের লেনদেনের দর এবং পরিমাণ বাংলাদেশ ব্যাংককে জানাতে হবে। আর ডলার লেনদেনে যে এক্সচেঞ্জ গেইন হয়, তা ব্যাংকের হিসাবে জমা করতে হবে।

বিজনেস আওয়ার/ ১৪ আগস্ট / এ এইচ

ফেসবুকের মাধ্যমে আপনার মতামত জানান: