বিজনেস আওয়ার প্রতিবেদক:আজ শোকাবহ ১৫ আগস্ট। ১৯৭৫ সালের এ দিনে বাঙালি হারিয়েছে স্বাধীন বাংলাদেশের প্রধান স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। ওই বছরের ১৫ আগস্ট ঘাতকের নির্মম বুলেটে ঝাঁজরা হয়েছিল তাঁর বুক। ঘাতকের দল শুধু তাঁকে হত্যা করেই ক্ষ্যান্ত হয়নি। নির্মমভাবে হত্যা করেছিল তাঁর সহধর্মিণী ও মহীয়সী নারী শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব। সেদিন আরও শহীদ হয়েছিলেন বঙ্গবন্ধুর একমাত্র ভাই শেখ আবু নাসের, জাতির পিতার জ্যেষ্ঠ পুত্র বীর মুক্তিযোদ্ধা ক্যাপ্টেন শেখ কামাল, দ্বিতীয় পুত্র বীর মুক্তিযোদ্ধা লেফটেন্যান্ট শেখ জামাল, নবপরিণীতা পুত্রবধূ সুলতানা কামাল ও রোজী। পাষণ্ডরা সেদিন বঙ্গবন্ধু কনিষ্ঠ পুত্র নিষ্পাপ শিশু শেখ রাসেলকেও রেহাই দেয়নি।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টে বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবার এবং নিকটাত্মীয়সহ ২৬ জনকে ওই রাতে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়। মুজিবকন্যা শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা সে সময় তৎকালীন পশ্চিম জার্মানিতে অবস্থান করায় প্রাণে বেঁচে যান।
১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকার ক্ষমতায় আসার পর ওই বছর রাষ্ট্রীয়ভাবে প্রথম শোক দিবস পালনের সিদ্ধান্ত হয়। ২০০১ সালে বিএনপির নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট ক্ষমতায় এলে সেই সিদ্ধান্ত বাতিল করা হয়। তবে ২০০৭ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকার আবারও ১৫ আগস্টকে রাষ্ট্রীয়ভাবে জাতীয় শোক দিবস পালনের সিদ্ধান্ত নেয়। গত বছরের ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে আওয়ায়ী লীগ সরকারের পতনের পর ক্ষমতায় আসা অন্তর্বর্তী সরকার ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবস ও সরকারি ছুটি বাতিল করে।
প্রতি বছর আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গসংগঠনগুলো শোক দিবসে ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে, টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধুর সমাধিসৌধে ও বনানী কবরস্থানে ১৫ আগস্টের নিহতদের কবরে শ্রদ্ধা নিবেদন করতো। এছাড়া ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে মিলাদসহ বিশেষ প্রার্থনা ও কাঙালিভোজের আয়োজন করা হতো।
গত বছর শোক দিবসে কোনো কর্মসূচি পালন করেনি আওয়ামীলীগ ও সহযোগী সংগঠনগুলো। আওয়ামীলীগ সরকারের পতনের পর দলের সভাপতি শেখ হাসিনা ও সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরসহ শীর্ষ নেতাদের বড় অংশ দেশ থেকে পালিয়ে যাওয়ায় এবং পট পরিবর্তনের পর নেতা-কর্মীরা ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পড়ায় কোনো কর্মসূচি পালিত হয়নি।
এবারও ১৫ আগস্টে কোনো কর্মসূচি পালন করছে না আওয়ামীলীগ ও সহযোগী সংগঠনগুলো। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ও তার নেতাদের বিচারকার্য সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত আওয়ামী লীগের সব ধরনের কার্যক্রম নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। সন্ত্রাসবিরোধী আইনে এ বছর ১০ মে আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করে অন্তর্বর্তী সরকার। গত বছর ২৩ অক্টোবর আওয়ামী লীগের ছাত্রসংগঠন ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়।
দীর্ঘ ১৫ বছর ক্ষমতায় থাকাকালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে বাড়াবাড়ি করার অভিযোগ আছে আওয়ামীলীগের বিরুদ্ধে। একটি সুবিধাবাদি গোষ্ঠি শেখ মুজিবকে সামনে রেখে বাণিজ্য মেতে উঠে। সরকারের প্রশ্রয়ে ও পৃষ্ঠপোষকতায় এ লাগামহীন বাণিজ্য চলতে থাকে। মুজিব শতবর্ষ উদযাপনের নামে শত শত কোটি টাকার ব্যয় ও অনিয়ম করা হয়। অপ্রয়োজনীয়, অতিব্যয়বহুল এমনকি পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর নানা প্রকল্পকে জায়েজ করতে শেখ মুজিবের নাম জুড়ে দেওয়া হয়। অতি বাড়াবাড়িতে মানুষ অনেকটা বীতশ্রদ্ধ হয়ে উঠে।
অন্যদিকে গত ৫ আগস্ট সরকার পরিবর্তনের পর শেখ মুজিবুর রহমানকে মুছে ফেলতে মরিয়া চেষ্টা চালাতে থাকে নানা মহল। বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনে তাঁর অবদানকে খাটো করা, নানা অপপ্রচার ও কুপ্রচারণা, শেখ হাসিনা ও তার দলের নানা অপরাধে সৃষ্ট ক্ষোভকে কাজে লাগিয়ে বঙ্গবন্ধুকে কালিমালিপ্ত করাসহ নানা অপচেষ্টা চলছে।
বিজনেস আওয়ার/ ১৫ আগস্ট / কাওছার