বিজনেস আওয়ার প্রতিবেদক: পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় কয়লাভিত্তিক বৃহৎ তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রে কয়লা সরবরাহের কাজ সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্যে বারবার আটকে যাচ্ছে। যোগ্য বিবেচিত হয়েও অনেক প্রতিষ্ঠান কাজ পাচ্ছে না। এ নিয়ে অভিযোগ তুলে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের দপ্তরে অভিযোগ জমা দিয়েছে সিঙ্গাপুরভিত্তিক ইয়াংথাই এনার্জি পিটিই লিমিটেড নামে একটি কোম্পানি।
অভিযোগে দরপত্রপ্রক্রিয়া দীর্ঘায়িত করে দেশের বিদ্যুৎ খাতের অনিরাপত্তা সৃষ্টি, অর্থনৈতিক ক্ষতি, বিদেশি কোম্পানিকে হয়রানি ও বিদেশি বিনিয়োগে অনাস্থা তৈরির আশঙ্কার কথা বলা হয়েছে।
২০২২ সাল থেকে এ পর্যন্ত সাড়ে তিন বছরে দরপত্র প্রক্রিয়া বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরে বলা হয়, বিদ্যুৎ খাত সংশ্লিষ্ট প্রভাবশালী ব্যক্তি এবং আরএনপিএল বিদ্যুৎ কেন্দ্রের সদ্য সাবেক একজন কর্মকর্তা সিঙ্গাপুরভিত্তিক কোম্পানিটির কান্ট্রি ম্যানেজারকে এসএমএস পাঠিয়ে সমঝোতার প্রস্তাব দেন। এতে রাজি না হওয়ায় তাদের বঞ্চিত করা হয়েছে বকে চিঠিতে অভিযোগ করা হয়। এসব ঘটনার প্রতিকার চেয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।
ইয়াংথাই এনার্জির কান্ট্রি ম্যানেজার হু চাও জানান, প্রধান উপদেষ্টার দপ্তরে চিঠি দিয়ে তারা বিস্তারিত অভিযোগ তুলে ধরেছেন। তাদের প্রত্যাশা ন্যায়বিচার পাবেন।
দীর্ঘ লিখিত অভিযোগের তথ্যমতে, গত ১৯ আগস্ট ইয়াংথাই এনার্জি পিটিই লিমিটেডের দরপত্র চতুর্থ দফায় বাতিল করে চিঠি দিয়েছে আরএনপিএল। কিন্তু পরিচালনা পর্ষদের বোর্ডের কোনো অনুমোদনই নেওয়া হয়নি। বোর্ডে উপস্থাপন ও অনুমোদন ছাড়াই দরপত্র বাতিলের এমন সিদ্ধান্ত খুবই রহস্যজনক ও নজিরবিহীন বলে মনে করছেন খাত সংশ্লিষ্টরা। বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরুর নির্ধারিত সময় পার হলেও বিশেষ ‘সিন্ডিকেটের’ বাধায় কয়লা আমদানির চারবার দরপত্র ডেকেও প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে পারছে না আরপিসিএল-নরিনকো ইন্টারন্যাশনাল কোম্পানি লিমিটেড (আরএনপিএল) কর্তৃপক্ষ।
অভিযোগে আরও বলা হয়, দরপত্রের শর্ত পূরণ করে ইয়াংথাই এনার্জি যোগ্য বিবেচিত হলেও স্থানীয় কোম্পানিগুলোর চাপে তা বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এর আগেও বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড ও মন্ত্রণালয়ের মতামতের ভিত্তিতে দফায় দফায় শর্ত শিথিল করা হয়েছিল। এরপরও সিন্ডিকেটের পছন্দের কোম্পানি না আসায় শর্ত শিথিলের কথা বলা হচ্ছে। যদিও সর্বশেষ মূল্যায়ন আর্থিক প্রতিবেদনে ইয়াংথাই এনার্জি প্রস্তাবিত দরকে সাশ্রয়ী বলে গ্রহণের সুপারিশ করা হয়েছিল।
বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির নথিপত্রের উল্লেখ আছে যে, কয়লার মান ও অ্যাশফিউশন আরো কমানো হলে বিদ্যুৎকেন্দ্রের ডিজাইন অনুযায়ী বয়লার তীব্রভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। পাশাপাশি বিদ্যুৎ উৎপাদনে কয়লার কিলোক্যালরি কম হলে জ্বালানি ব্যয় বৃদ্ধি পাবে।
এতে আরও উল্লেখ করা হয়, আর্থিক মূল্যায়ন প্রতিবেদনে ইয়াংথাই এনার্জির প্রস্তাবিত কয়লার দর সাশ্রয়ী উল্লেখ করে তা গ্রহণের সুপারিশ করা হয়। কিন্তু আরএনপিএলের বোর্ড সভায় বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির সদ্য বিদায়ী এমডি সেলিম ভূঁইয়া প্রকিউরমেন্ট সত্তার প্রধানের (হোপ) পদাধিকার ক্ষমতাবলে প্রস্তাবটি পুনরায় মূল্যায়নের জন্য কারিগরি কমিটির কাছে পাঠানোর সিদ্ধান্ত দেন। তবে পিপিআর আইন অনুযায়ী, মূল্যায়ন প্রক্রিয়া চলাকালে সমঝোতার সুযোগ নেই।
বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান গণমাধ্যমকে বলেন, বিদ্যুৎ বিভাগ এটি নিয়ে কাজ করছে। খুব শিগগির এ কেন্দ্র উৎপাদনে আসতে পারবে।
বিজনেস আওয়ার/ ২৬ আগস্ট / কাওছার