ঢাকা , বুধবার, ২৭ অগাস্ট ২০২৫, ১২ ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

বলিউডের তিন খান: কে আসলে সত্যিকারের রাজা

  • পোস্ট হয়েছে : এক ঘন্টা আগে
  • 3

বিনোদন ডেস্ক: সালমান খান, আমির খান এবং শাহরুখ খান! বলিউডের সুপারস্টার তিন খান। তাদের নিয়ে দীর্ঘ সময় ধরে চলেছে বক্স অফিসের লড়াই। শুধু তাই নয়, বলা যায় প্রায় তিন দশক ধরে প্রজন্মের চিন্তাধারা ও চলচ্চিত্রের দর্শনকেই বদলে দিয়েছেন তারা নিজেদের মেধা, সাফল্য আর জনপ্রিয়তা দিয়ে। এই তিন তারকা এখনো নিজেদের অনন্য ধারা বজায় রেখে হিন্দি সিনেমা ইন্ডাস্ট্রিতে রাজত্ব করছেন।

সালমান খানের পারিবারিক বিনোদন, আমির খানের নিখুঁত ও মানসম্পন্ন ছবি এবং শাহরুখ খানের বিশ্বজনীন রোমান্টিকতা আলাদা করেছে তিনজনের পরিচয় ও ফ্যানবেস। বারবার এই প্রশ্ন উঠেছে, তিন খানের মধ্যে সেরা কে? কে আসলে সত্যিকারের রাজা? জবাবটা অমীমাংসিত। কিংবা বলা যেতে পারে, এক কথায় এর উত্তর দেয়াটা সহজ নয়। উচিতও হবে না। তাহলে একটু বিশ্লেষণ করাই যাক।

সালমান খান বক্স অফিসের ‘সুলতান’ হিসেবে পরিচিত। ১৯৮৯ সালে ‘মেনে পেয়ার কিয়া’ ছবি দিয়ে তার যাত্রা শুরু হয়। সেই বছর সবচেয়ে বেশি আয়ের সিনেমা ছিল এটি। এরপর ‘হুম আপকে হ্যায় কৌন’ (১৯৯৪) সিনেমা দিয়ে ভারতীয় বক্স অফিসের ইতিহাসে এক নতুন অধ্যায় সৃষ্টি করেন তিনি। বিংশ দশকে বিভিন্ন ওঠাপড়ার মধ্য দিয়েও সালমান নিজের অবস্থান ধরে রাখেন। ২০০৯ সালের ‘ওয়ান্টেড’ ছবির মাধ্যমে নিজেকে নতুন রূপে উপস্থাপন করেন তিনি। এরপর ‘দাবাং’ (২০১০), ‘বডিগার্ড’ (২০১১), ‘এক থা টাইগার’ (২০১২), ও ‘বজরাঙ্গী ভাইজান’ (২০১৫) সিনেমাগুলো শুধু ব্যবসায় সফলই হয়নি, পারিবারিক দর্শকদেরও আকৃষ্ট করেছে। মোটামুটি নয়টি বছরে তিনি বক্স অফিস কিং হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন।

অন্যদিকে আমির খান ‘পারফেকশনিস্ট’ নামে পরিচিত। তিনি কম সিনেমা করেন কিন্তু প্রতিটি ছবি দর্শক এবং সমালোচকের কাছ থেকে প্রশংসিত হয়। ১৯৯০ সালে ‘দিল’ দিয়ে তার যাত্রা শুরু হলেও ১৯৯৬ সালে ‘রাজা হিন্দুস্তানি’ সিনেমাটি তার ক্যারিয়ারকে মজবুত করে দেয়। সেই সিনেমা দিয়েই মূলত বলা চলে প্রভাবশালী নায়ক হিসেবে আমিরের উত্থান। যার রেশ তিনি আজও বজায় রেখেছেন। ২০০৮ সালের ‘গজনী’ সিনেমা ভারতের প্রথম ১০০ কোটি ক্লাবের ছবি হিসেবে ইতিহাসে জায়গা করে নেয়। এরপর ‘থ্রি ইডিয়টস’ (২০০৯), ‘ধুম ৩’ (২০১৩), ‘পিকে’ (২০১৪) ও ‘দঙ্গল’ (২০১৬) সিনেমাগুলো দিয়ে আমির খান বক্স অফিসের নতুন রেকর্ড সৃষ্টি করেন।

সবকিছু ছাপিয়ে যায় আমিরের ‘দঙ্গল’। এটি বিশ্বব্যাপী ২০৫৯ কোটি রুপি আয় করে বলিউডের এক অভূতপূর্ব সাফল্যের উদাহরণ তৈরি করে। আমিরের ছবিগুলো শুধু ভারতেই নয়, বিদেশের বাজারেও বিশেষ সাড়া ফেলে। বিশেষ করে চীনে আমির খানের জনপ্রিয়তা অপরিসীম।

তৃতীয় সুপার খান শাহরুখ। তাকে বলিউডের ‘কিং খান’, ‘বলিউড বাদশাহ’ উপাধিতে ডাকা হয়। রোমান্সের প্রশ্ন এলেও শাহরুখ হয়ে উঠেন সবার সেরা। ১৯৯৩ সালে ‘ডর’ সিনেমা দিয়ে প্রথমবার বক্স অফিসে সাফল্য পান। তবে তার ক্যারিয়ারের আসল উত্থান ঘটে ১৯৯৫ সালে ‘দিলওয়ালে দুলহনিয়া লে জায়েঙ্গে’ সিনেমার মাধ্যমে। সেসময় ১০৩ কোটি রুপি আয় করে এই ছবি ভারতের বক্স অফিসে রেকর্ড গড়েছিল। ১৯৯০-এর দশক ও ২০০০-এর দশকে শাহরুখ খান ভারতের পাশাপাশি যুক্তরাজ্য, মধ্যপ্রাচ্য এবং যুক্তরাষ্ট্রে একাধিক সফল ছবি উপহার দেন। ‘কুচ কুচ হোতা হ্যায়’ (১৯৯৮), ‘কাভি খুশি কাভি গম’ (২০০১), ‘দেবদাস’ (২০০২), ‘কাল হো না হো’ (২০০৩) ‌এসব ছবি আন্তর্জাতিক দর্শকদের কাছে তাকে জনপ্রিয় করে তোলে। ২০০৭ সালের ‘ওম শান্তি ওম’, ২০১০ সালের ‘মাই নেম ইজ খান’ ও ২০১৩ সালের ‘চেন্নাই এক্সপ্রেস’ তার ডোমেস্টিক বাজারের শীর্ষ সাফল্য হিসেবে স্বীকৃত।

মাঝখানে ক্যারিয়ার নিয়ে বেশ স্ট্রাগল করতে দেখা গেছে শাহরুখকে। তবে সব হতাশা জয় করে সুপারস্টারের মতোই এক প্রত্যাবর্তন ঘটালেন তিনি ‘পাঠান’ সিনেমা দিয়ে। ২০২৩ সালে মুক্তি পাওয়া সিনেমাটি বক্স অফিসে ঝড় তুলে। সেই সাফল্যকেও শাহরুখ ছাড়িয়ে যান একই বছরে মুক্তি পাওয়া ‘জাওয়ান’ ছবি দিয়ে। এটি বিশ্বব্যাপী ১১৬৩ কোটি রুপি আয় করে প্রমাণ করে শাহরুখের বক্স অফিস শক্তি এখনও অটুট।

শাহরুখ খান ১১ বছর, সালমান খান ৯ বছর, আর আমির খান ৭ বছর; তিন খান মিলিয়ে মোট ২৭ বছর ধরে বক্স অফিসে শীর্ষ স্থান লাভ করেছেন। এই বছরগুলোতে ঘুরেফিরে তারাই ছিলেন সেরা ব্যবসা সফল ছবির নায়ক এবং দ্বিতীয় ও তৃতীয়। বলিউডের মতো প্রতিযোগিতাপূর্ণ ইন্ডাস্ট্রিতে সত্যি এটা দারুণ ব্যাপার! বিশেষ করে নিজেদের বয়স যখন ৫০ পেরিয়েছে তখনও তারা রাজত্ব করে দেখাচ্ছেন বলিউড তথা ভারতের সিনেমা বাজারে।

তাদের দর্শকপ্রিয়তা, সিনেমা বাছাই, অভিনয় দক্ষতা, ব্যবসায়িক সাফল্য, সামাজিক দায়বদ্ধতা অন্য সবার চেয়ে আলাদা ও এগিয়ে এটুকু বলা যায়। তবে তিন খানের মধ্যে কে সবচেয়ে বড় ‘বক্স অফিস কিং’ তার সুনির্দিষ্ট জবাব দেয়া মুশকিল। বরং এই তর্ক উঠলেই বলিউড বিশ্লেষকরা বিষয়টি সময়ের উপর ছেড়ে দেন। তাদের মতে, যতদিন সম্ভব তিন খানের অভিনয়ের জাদু উপভোগ করা যাক। তিন খান ভারতীয় সিনেমার ইতিহাসে কীভাবে-কতোটা জায়গা পাবেন সেটা না হয় ভবিষ্যতই বলবে।

বিজনেস আওয়ার/ ২৭ আগস্ট / রানা

ফেসবুকের মাধ্যমে আপনার মতামত জানান:
ট্যাগ :

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার মেইলে তথ্য জমা করুন

বলিউডের তিন খান: কে আসলে সত্যিকারের রাজা

পোস্ট হয়েছে : এক ঘন্টা আগে

বিনোদন ডেস্ক: সালমান খান, আমির খান এবং শাহরুখ খান! বলিউডের সুপারস্টার তিন খান। তাদের নিয়ে দীর্ঘ সময় ধরে চলেছে বক্স অফিসের লড়াই। শুধু তাই নয়, বলা যায় প্রায় তিন দশক ধরে প্রজন্মের চিন্তাধারা ও চলচ্চিত্রের দর্শনকেই বদলে দিয়েছেন তারা নিজেদের মেধা, সাফল্য আর জনপ্রিয়তা দিয়ে। এই তিন তারকা এখনো নিজেদের অনন্য ধারা বজায় রেখে হিন্দি সিনেমা ইন্ডাস্ট্রিতে রাজত্ব করছেন।

সালমান খানের পারিবারিক বিনোদন, আমির খানের নিখুঁত ও মানসম্পন্ন ছবি এবং শাহরুখ খানের বিশ্বজনীন রোমান্টিকতা আলাদা করেছে তিনজনের পরিচয় ও ফ্যানবেস। বারবার এই প্রশ্ন উঠেছে, তিন খানের মধ্যে সেরা কে? কে আসলে সত্যিকারের রাজা? জবাবটা অমীমাংসিত। কিংবা বলা যেতে পারে, এক কথায় এর উত্তর দেয়াটা সহজ নয়। উচিতও হবে না। তাহলে একটু বিশ্লেষণ করাই যাক।

সালমান খান বক্স অফিসের ‘সুলতান’ হিসেবে পরিচিত। ১৯৮৯ সালে ‘মেনে পেয়ার কিয়া’ ছবি দিয়ে তার যাত্রা শুরু হয়। সেই বছর সবচেয়ে বেশি আয়ের সিনেমা ছিল এটি। এরপর ‘হুম আপকে হ্যায় কৌন’ (১৯৯৪) সিনেমা দিয়ে ভারতীয় বক্স অফিসের ইতিহাসে এক নতুন অধ্যায় সৃষ্টি করেন তিনি। বিংশ দশকে বিভিন্ন ওঠাপড়ার মধ্য দিয়েও সালমান নিজের অবস্থান ধরে রাখেন। ২০০৯ সালের ‘ওয়ান্টেড’ ছবির মাধ্যমে নিজেকে নতুন রূপে উপস্থাপন করেন তিনি। এরপর ‘দাবাং’ (২০১০), ‘বডিগার্ড’ (২০১১), ‘এক থা টাইগার’ (২০১২), ও ‘বজরাঙ্গী ভাইজান’ (২০১৫) সিনেমাগুলো শুধু ব্যবসায় সফলই হয়নি, পারিবারিক দর্শকদেরও আকৃষ্ট করেছে। মোটামুটি নয়টি বছরে তিনি বক্স অফিস কিং হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন।

অন্যদিকে আমির খান ‘পারফেকশনিস্ট’ নামে পরিচিত। তিনি কম সিনেমা করেন কিন্তু প্রতিটি ছবি দর্শক এবং সমালোচকের কাছ থেকে প্রশংসিত হয়। ১৯৯০ সালে ‘দিল’ দিয়ে তার যাত্রা শুরু হলেও ১৯৯৬ সালে ‘রাজা হিন্দুস্তানি’ সিনেমাটি তার ক্যারিয়ারকে মজবুত করে দেয়। সেই সিনেমা দিয়েই মূলত বলা চলে প্রভাবশালী নায়ক হিসেবে আমিরের উত্থান। যার রেশ তিনি আজও বজায় রেখেছেন। ২০০৮ সালের ‘গজনী’ সিনেমা ভারতের প্রথম ১০০ কোটি ক্লাবের ছবি হিসেবে ইতিহাসে জায়গা করে নেয়। এরপর ‘থ্রি ইডিয়টস’ (২০০৯), ‘ধুম ৩’ (২০১৩), ‘পিকে’ (২০১৪) ও ‘দঙ্গল’ (২০১৬) সিনেমাগুলো দিয়ে আমির খান বক্স অফিসের নতুন রেকর্ড সৃষ্টি করেন।

সবকিছু ছাপিয়ে যায় আমিরের ‘দঙ্গল’। এটি বিশ্বব্যাপী ২০৫৯ কোটি রুপি আয় করে বলিউডের এক অভূতপূর্ব সাফল্যের উদাহরণ তৈরি করে। আমিরের ছবিগুলো শুধু ভারতেই নয়, বিদেশের বাজারেও বিশেষ সাড়া ফেলে। বিশেষ করে চীনে আমির খানের জনপ্রিয়তা অপরিসীম।

তৃতীয় সুপার খান শাহরুখ। তাকে বলিউডের ‘কিং খান’, ‘বলিউড বাদশাহ’ উপাধিতে ডাকা হয়। রোমান্সের প্রশ্ন এলেও শাহরুখ হয়ে উঠেন সবার সেরা। ১৯৯৩ সালে ‘ডর’ সিনেমা দিয়ে প্রথমবার বক্স অফিসে সাফল্য পান। তবে তার ক্যারিয়ারের আসল উত্থান ঘটে ১৯৯৫ সালে ‘দিলওয়ালে দুলহনিয়া লে জায়েঙ্গে’ সিনেমার মাধ্যমে। সেসময় ১০৩ কোটি রুপি আয় করে এই ছবি ভারতের বক্স অফিসে রেকর্ড গড়েছিল। ১৯৯০-এর দশক ও ২০০০-এর দশকে শাহরুখ খান ভারতের পাশাপাশি যুক্তরাজ্য, মধ্যপ্রাচ্য এবং যুক্তরাষ্ট্রে একাধিক সফল ছবি উপহার দেন। ‘কুচ কুচ হোতা হ্যায়’ (১৯৯৮), ‘কাভি খুশি কাভি গম’ (২০০১), ‘দেবদাস’ (২০০২), ‘কাল হো না হো’ (২০০৩) ‌এসব ছবি আন্তর্জাতিক দর্শকদের কাছে তাকে জনপ্রিয় করে তোলে। ২০০৭ সালের ‘ওম শান্তি ওম’, ২০১০ সালের ‘মাই নেম ইজ খান’ ও ২০১৩ সালের ‘চেন্নাই এক্সপ্রেস’ তার ডোমেস্টিক বাজারের শীর্ষ সাফল্য হিসেবে স্বীকৃত।

মাঝখানে ক্যারিয়ার নিয়ে বেশ স্ট্রাগল করতে দেখা গেছে শাহরুখকে। তবে সব হতাশা জয় করে সুপারস্টারের মতোই এক প্রত্যাবর্তন ঘটালেন তিনি ‘পাঠান’ সিনেমা দিয়ে। ২০২৩ সালে মুক্তি পাওয়া সিনেমাটি বক্স অফিসে ঝড় তুলে। সেই সাফল্যকেও শাহরুখ ছাড়িয়ে যান একই বছরে মুক্তি পাওয়া ‘জাওয়ান’ ছবি দিয়ে। এটি বিশ্বব্যাপী ১১৬৩ কোটি রুপি আয় করে প্রমাণ করে শাহরুখের বক্স অফিস শক্তি এখনও অটুট।

শাহরুখ খান ১১ বছর, সালমান খান ৯ বছর, আর আমির খান ৭ বছর; তিন খান মিলিয়ে মোট ২৭ বছর ধরে বক্স অফিসে শীর্ষ স্থান লাভ করেছেন। এই বছরগুলোতে ঘুরেফিরে তারাই ছিলেন সেরা ব্যবসা সফল ছবির নায়ক এবং দ্বিতীয় ও তৃতীয়। বলিউডের মতো প্রতিযোগিতাপূর্ণ ইন্ডাস্ট্রিতে সত্যি এটা দারুণ ব্যাপার! বিশেষ করে নিজেদের বয়স যখন ৫০ পেরিয়েছে তখনও তারা রাজত্ব করে দেখাচ্ছেন বলিউড তথা ভারতের সিনেমা বাজারে।

তাদের দর্শকপ্রিয়তা, সিনেমা বাছাই, অভিনয় দক্ষতা, ব্যবসায়িক সাফল্য, সামাজিক দায়বদ্ধতা অন্য সবার চেয়ে আলাদা ও এগিয়ে এটুকু বলা যায়। তবে তিন খানের মধ্যে কে সবচেয়ে বড় ‘বক্স অফিস কিং’ তার সুনির্দিষ্ট জবাব দেয়া মুশকিল। বরং এই তর্ক উঠলেই বলিউড বিশ্লেষকরা বিষয়টি সময়ের উপর ছেড়ে দেন। তাদের মতে, যতদিন সম্ভব তিন খানের অভিনয়ের জাদু উপভোগ করা যাক। তিন খান ভারতীয় সিনেমার ইতিহাসে কীভাবে-কতোটা জায়গা পাবেন সেটা না হয় ভবিষ্যতই বলবে।

বিজনেস আওয়ার/ ২৭ আগস্ট / রানা

ফেসবুকের মাধ্যমে আপনার মতামত জানান: