বিজনেস আওয়ার ডেস্ক: ভাঙন থেকে রক্ষা পেলেও ব্যবসার ধরন বদলাতে হচ্ছে গুগলকে। মার্কিন ফেডারেল আদালতের এক বিচারক নির্দেশ দিয়েছেন যে, গুগলকে তাদের ক্রোম ওয়েব ব্রাউজার বিক্রি করতে হবে না, তবে প্রতিদ্বন্দ্বীদের সঙ্গে তথ্য ভাগ করতে হবে।গুগল এখন থেকে আর একচেটিয়া চুক্তি করতে পারবে না। অনলাইন সার্চে আধিপত্য নিয়ে দীর্ঘ আইনি লড়াই শেষে ডিসট্রিক্ট জজ অমিত মেহতা এই রায় দিয়েছেন। খবর বিবিসির।
মার্কিন বিচার বিভাগ চাইছিল, গুগল যেন ক্রোম ব্রাউজার বিক্রি করে দেয়। তবে রায়ে আদালত বলেছেন, প্রতিষ্ঠানটি ক্রোম ব্রাউজার নিজেদের মালিকানায় রাখতে পারবে, কিন্তু একচেটিয়া চুক্তি আর করতে পারবে না। এর পাশাপাশি প্রতিদ্বন্দ্বীদের সঙ্গে সার্চ-সংক্রান্ত তথ্য ভাগ করে নিতে হবে।
মঙ্গলবার রায়ের পর গুগল জানায়, এটি তাদের জন্য জয়। কোম্পানির মতে, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) উত্থান এ সিদ্ধান্তে ভূমিকা রেখেছে।
রায়ের পর এক বিবৃতিতে গুগল বলে, আজকের সিদ্ধান্ত প্রমাণ করে, এআই আসার ফলে তথ্য খোঁজার নানা নতুন উপায় এসেছে। ২০২০ সালে মামলা দায়ের হওয়ার পর থেকে আমরা বলে আসছি, প্রতিযোগিতা তীব্র এবং মানুষ সহজেই তাদের পছন্দমতো সেবা বেছে নিতে পারে।
২০২০ সালে অভিযোগ ওঠার পর থেকেই গুগল কোনো অনিয়মের কথা অস্বীকার করে আসছে। তাদের দাবি, তাদের সার্চ ইঞ্জিনের মান অন্যদের তুলনায় ভালো বলে বাজারে প্রাধান্য পেয়েছে এবং ব্যবহারকারীরাই এটা বেছে নিয়েছে।
গত বছর বিচারক মেহতা রায় দিয়েছিলেন, গুগল একচেটিয়া বাজার দখল করতে অন্যায় কৌশল ব্যবহার করেছে, যা মার্কিন আইনের লঙ্ঘন। তবে সর্বশেষ রায়ে তিনি বলেন, পুরো ক্রোম বিক্রি করা এই মামলার জন্য উপযুক্ত সমাধান নয়।
গুগলকে তাদের অ্যান্ড্রয়েড অপারেটিং সিস্টেমও বিক্রি করতে হবে না, যা বিশ্বের অধিকাংশ স্মার্টফোনে ব্যবহৃত হয়। গুগলের যুক্তি ছিল, অ্যান্ড্রয়েডের মতো অংশ আলাদা করে বিক্রি করলে তা কার্যত সঠিকভাবে কাজ করবে না।
মার্কিন সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল অ্যাবিগেইল স্লেটার রায়ের পর সামাজিক মাধ্যমে এক পোস্টে লিখেছেন, আজকের সিদ্ধান্ত প্রতিযোগিতা ফিরিয়ে আনার প্রয়োজনীয়তা স্বীকার করেছে। তবে আমরা এখনো ভাবছি, এই রায় লক্ষ্য পূরণে যথেষ্ট হয়েছে কি না।
রায়ের পর গুগলের মূল প্রতিষ্ঠান অ্যালফাবেটের শেয়ারের মূল্য ৮ শতাংশের বেশি বেড়ে যায়। অ্যাপল, স্যামসাং ও মটোরোলার মতো স্মার্টফোন নির্মাতারাও এতে উপকৃত হবে।
রায়ের আগে গুগল এসব কোম্পানিকে তাদের পণ্য একচেটিয়া প্রি-লোড বা প্রচারের জন্য বিলিয়ন ডলার দিত। শুনানিতে প্রকাশ হয়, ২০২১ সালে গুগল অ্যাপল, মজিলা ও অন্যদের সঙ্গে চুক্তির জন্য ২৬ বিলিয়ন ডলারের বেশি খরচ করেছে।
গুগল সার্চ, ক্রোম, গুগল অ্যাসিস্ট্যান্ট বা জেমিনি অ্যাপের ক্ষেত্রে এখন গুগল আর কোনো একচেটিয়া চুক্তি করতে পারবে না। এর মানে ফোন নির্মাতারা চাইলে অন্য সার্চ ইঞ্জিন, ব্রাউজার বা এআই অ্যাসিস্ট্যান্টও প্রি-লোড বা প্রচার করতে পারবে। তবে গুগল ডিফল্ট অবস্থান পাওয়ার জন্য ডিস্ট্রিবিউটরদের অর্থ প্রদান চালিয়ে যেতে পারবে।
ডিপওয়াটার অ্যাসেট ম্যানেজমেন্টের ম্যানেজিং পার্টনার জিন মানস্টার বলেন, এই রায় বড় প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানের জন্য সুখবর। তিনি আরও বলেন, অ্যাপলও এতে লাভবান হবে, কারণ এখন থেকে প্রতি বছর গুগলকে নতুন করে সার্চ চুক্তি করতে হবে।
এসঅ্যান্ডপি গ্লোবাল ভিজিবল আলফার গবেষণা প্রধান মেলিসা অটো মন্তব্য করেন, বাজার যেরকম কঠোর সিদ্ধান্তের আশঙ্কা করছিল, এই রায় ততটা কঠোর নয়।
তার মতে, গুগলের সার্চ ব্যবসা এ বছর প্রায় ২০০ বিলিয়ন ডলার আয় করবে বলে ধারণা, যার বড় অংশ যাবে ডিস্ট্রিবিউশন পার্টনারদের কাছে। ফলে এই মামলায় বড় করপোরেটদের জন্য এটি লাভজনক হয়েছে।
তবে প্রতিদ্বন্দ্বী ডাকডাকগো জানিয়েছে, এই রায়ে গুগলের অবৈধ আচরণ মোকাবিলায় প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। ডাকডাকগোর প্রতিষ্ঠাতা ও সিইও গ্যাব্রিয়েল ওয়েইনবার্গ বলেন, ফলস্বরূপ ভোক্তাদের ভোগান্তি চলতেই থাকবে।
এই রায়ের মধ্যেই গুগলের সব মামলা শেষ হয়নি। চলতি মাসের শেষেই মার্কিন বিচার বিভাগের আনা আরেকটি মামলায় গুগলকে আদালতে দাঁড়াতে হবে, যেখানে অভিযোগ আনা হয়েছে অনলাইন বিজ্ঞাপন প্রযুক্তিতে তাদের অবৈধ একচেটিয়া আধিপত্য নিয়ে।
বিজনেস আওয়ার/০৪ সেপ্টেম্বর / হাসান