বিজনেস আওয়ার প্রতিবেদক: একটি উন্নত, সমৃদ্ধ, প্রযুক্তি ও সেবা-নির্ভর আধুনিক নগরী হিসেবে চট্টগ্রামকে গড়ে তোলার লক্ষ্য নিয়ে ‘চট্টগ্রাম ২.০’ নামক একটি নতুন সংগঠনের আত্মপ্রকাশ হয়েছে। শুক্রবার (৫ সেপ্টেম্বর) চট্টগ্রামের চকবাজারের অস্থায়ী কার্যালয়ে আয়োজিত এক সভায় এই সংগঠনের যাত্রা শুরু হয়। সংগঠনের প্রধান সমন্বয়ক ছিদ্দিকুর রহমান এতে সভাপতিত্ব করেন।
অনুষ্ঠানে দেশ-বিদেশের বিশেষজ্ঞ, শিক্ষাবিদ ও উদ্যোক্তারা অংশ নেন। সভায় বক্তারা বলেন, চট্টগ্রাম একটি বিশাল সম্ভাবনার শহর, যা সাগর, নদী ও পাহাড় দ্বারা বেষ্টিত। কিন্তু স্বাধীনতার পর থেকে এই শহরকে নিয়ে কোনো সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়নি। ফলে নাগরিক সেবা, অবকাঠামো এবং নগর ব্যবস্থাপনা আজও নিম্নমানের রয়ে গেছে। এই অবস্থার পরিবর্তন ঘটাতে চট্টগ্রামকে বারোটি ‘সিস্টার সিটির’ সমন্বয়ে একটি পূর্ণাঙ্গ ‘চট্টগ্রাম সিটি সরকার’ হিসেবে গড়ে তোলা জরুরি।
সংগঠনে প্রধান সমন্বয়ক ছিদ্দিকুর রহমান বলেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পর চট্টগ্রাম নিয়ে কার্যকর কোনো আলোচনা আমরা দেখছি না। অথচ নাগরিক সেবার দিক থেকে চট্টগ্রাম সবচেয়ে পিছিয়ে আছে। মনে হয়, শহরটির কোনো অভিভাবক নেই। অথচ চট্টগ্রাম হলো সাগরের তীরবর্তী একটি অনন্য শহর। সাগর, নদী ও পাহাড়কে কাজে লাগিয়ে একে সিঙ্গাপুর বা ব্যাংককের মতো আধুনিক নগরীতে রূপান্তর করা সম্ভব।
তিনি আরও বলেন, বিশ্বের বড় উদ্যোক্তারা যাতে এখানে এসে অফিস স্থাপন করেন, তার অনুকূল একটি পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে। তবেই চট্টগ্রাম হবে উদ্যোক্তাদের কেন্দ্র।
এই সভায় ইংলিশ অলিম্পিয়াডের প্রতিষ্ঠাতা ও সিইও আমান উল্লাহ বলেন, যুবকরাই হচ্ছে দেশের সবচেয়ে বড় শক্তি। তারা যদি উদ্যোক্তা হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করে এবং জ্ঞান বিনিময়ের আন্তর্জাতিক নেটওয়ার্কের সঙ্গে যুক্ত হতে পারে, তবে শুধু চট্টগ্রাম নয়, সমগ্র বাংলাদেশের চিত্র পাল্টে যাবে। চট্টগ্রামের মানুষের ভেতর উদ্যোক্তা চরিত্র সুপ্ত অবস্থায় আছে, সেই চরিত্রকে জাগ্রত করাই হবে আগামী দিনের কাজ।
উন্নত বিশ্ব বর্জ্যকে সম্পদে রূপান্তর করছে উল্লেখ করে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ শাহাবুদ্দিন বলেন, আধুনিক নগর ব্যবস্থাপনায় বর্জ্য ব্যবস্থাপনা একটি গুরুত্বপূর্ণ শিল্প। উন্নত বিশ্ব বর্জ্যকে সম্পদে রূপান্তর করেছে। আমাদেরও উদ্যোগী হতে হবে। প্লাস্টিক, জৈব বর্জ্য কিংবা ই-ওয়েস্ট-সবকিছুকেই আধুনিক প্রযুক্তি দিয়ে প্রক্রিয়াজাত করে আয়ের উৎসে রূপান্তর করা যায়। এতে যেমন কর্মসংস্থান তৈরি হবে, তেমনি চট্টগ্রাম হবে একটি পরিচ্ছন্ন ও পরিবেশবান্ধব নগরী।
লন্ডন প্রবাসী উদ্যোক্তা দেলোয়ার আহসান খান বলেন, দেশে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা গেলে বড় পরিবর্তন সম্ভব। বিশেষ করে ড্রাইভিং লাইসেন্স থেকে শুরু করে শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও যোগাযোগ ব্যবস্থার মতো নাগরিক সেবাগুলোতে প্রাতিষ্ঠানিক দক্ষতা ও স্বচ্ছতা থাকতে হবে। তিনি বিশ্বাস করেন, চট্টগ্রামকে সত্যিকার অর্থে নাগরিকবান্ধব শহরে রূপান্তর করা গেলে এটি দক্ষিণ এশিয়ার একটি মডেল সিটি হতে পারে।
রাজনীতিবিদ মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, চট্টগ্রামের উন্নয়নে রাজনৈতিক সদিচ্ছার অভাব ছিল। এই অভাব পূরণ করতে হলে নাগরিক আন্দোলনকে শক্তিশালী করতে হবে। ‘চট্টগ্রাম ২.০’ সেই শূন্যতা পূরণের জন্য একটি উদ্যোগ। নাগরিকদের সক্রিয় অংশগ্রহণ ছাড়া চট্টগ্রামের কোনো রূপান্তর সম্ভব নয়।
সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন আতাউর রহমান, বিএম নজরুল ইসলাম, মশিউর রহমান, দেবজিৎ মুৎসুদ্দি, অর্নিবান বিশ্বাস, আল ইহসান, তাইবা নুসরাত, আশফিকা আনিলা, নিশিথা মহাজন, সানজিদা ওয়াসি, নাহিদুল ইসলাম, শুভা, নুইশাইবা বিনতে আলতাফ, মাফি, পূর্ণতা প্রমুখ।
বিজনেস আওয়ার/০৬ সেপ্টেম্বর / কাওছার