বিজনেস আওয়ার ডেস্ক: ভারতের ওপর শুল্ক ইস্যুতে দুই মাসের মধ্যে দিল্লি ক্ষমা চাইবে ও শেষ পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চুক্তির টেবিলে ফিরবে বলে মন্তব্য করেছেন মার্কিন বাণিজ্যমন্ত্রী হাওয়ার্ড লুটনিক। শনিবার (৬ সেপ্টেম্বর) মার্কিন বার্তা সংস্থা ব্লুমবার্গকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, আমার ধারণা, এক-দুই মাসের মধ্যেই ভারত টেবিলে আসবে, ‘সরি’ বলবে ও ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে সমঝোতার চেষ্টা করবে।
লুটনিক সতর্ক করে বলেন, যদি ভারত যুক্তরাষ্ট্রকে সমর্থন না করে, তবে তাদের রপ্তানিপণ্যে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক দিয়ে যেতে হবে। তিনি আরও দাবি করেন, ট্রাম্পের শুল্কের প্রতিক্রিয়ায় ভারত সরকারের দৃঢ় অবস্থান মূলত ‘লোখ দেখানো’, তবে শেষ পর্যন্ত দেশটির ব্যবসায়ীরা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চুক্তির দাবি তুলবেনই।
ভারতকে লক্ষ্য করে তিনি বলেন, তারা বাজার খুলতে চায় না, রাশিয়ার তেল কেনা বন্ধ করতে চায় না, আবার ব্রিকসের অংশ হয়েও থাকতে চায়। যদি আপনারা রাশিয়া-চীনের সেতু হতে চান, হোন। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রকে, ডলারকে সমর্থন করতে হবে। নইলে ৫০ শতাংশ শুল্ক দিতে হবে। দেখা যাক, এটা কতদিন টেকে।
ভারতের রাশিয়ান তেল কেনার বিষয়েও লুটনিক সমালোচনা করেন। তার ভাষায়, নিষিদ্ধ ও সস্তা হওয়ায় ভারত সেটি কিনছে ও বিপুল মুনাফা করছে। রাশিয়ানরা মরিয়া হয়ে ক্রেতা খুঁজছে, আর ভারতসস্তায় তেল কিনে অর্থ রোজগার করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে , বলেন তিনি।
এদিকে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প একই দিন এক সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম পোস্টে বলেন, দেখা যাচ্ছে আমরা ভারত ও রাশিয়াকে চীনের গাঢ় অন্ধকারে হারিয়ে ফেলেছি। পোস্টে তিনি বিদ্রূপ করে এই তিন দেশের সমৃদ্ধ ভবিষ্যৎ কামনা করেন। এটিকে নয়াদিল্লি-মস্কো-বেইজিংয়ের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক নিয়ে ট্রাম্পের সবচেয়ে স্পষ্ট মন্তব্য হিসেবে দেখা হচ্ছে।
ভারতের পক্ষ থেকে অবশ্য এসব মন্তব্য সরাসরি নাকচ করা হয়েছে। শনিবার (৬ সেপ্টেম্বর) সিএনবিসি টিভি১৮ তে দেওয়া সাক্ষাৎকারে দেশটির অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন স্পষ্ট করে বলেন, ভারত নিঃসন্দেহে রাশিয়ান তেল কিনতে থাকবে। তেল রাশিয়ান হোক বা অন্য দেশের, আমরা আমাদের চাহিদার ওপর ভিত্তি করে সিদ্ধান্ত নেবো। এটি যেহেতু একটি বিপুল বৈদেশিক মুদ্রা-সম্পর্কিত পণ্য, তাই আমাদের জন্য কোন বিক্রেতা সবচেয়ে উপযুক্ত, তা আমরাই ঠিক করবো।
বিকেলে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র সাপ্তাহিক ব্রিফিংয়ে বলেন, ট্রাম্প প্রশাসনের জ্যেষ্ঠ উপদেষ্টা পিটার নাভারোর বক্তব্য ‘ভুল ও বিভ্রান্তিকর’। তিনি স্পষ্ট করে দেন, আমরা এসব মন্তব্য প্রত্যাখ্যান করছি।
বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র ভারতের ওপর ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে। তার মধ্যে রাশিয়ার তেল কেনার জন্য ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। এদিকে, নয়াদিল্লির পক্ষ থেকে এই শুল্ককে ‘অন্যায্য ও অযৌক্তিক’ বলে অভিহিত করেছে। সেই সঙ্গে ভারত স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে, অন্য যেকোনো বড় অর্থনীতির মতো, তারাও নিজেদের জাতীয় স্বার্থ ও অর্থনৈতিক নিরাপত্তা রক্ষায় প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবে।
সূত্র: এনডিটিভি
বিজনেস আওয়ার/০৬ সেপ্টেম্বর / হাসান