ঢাকা , মঙ্গলবার, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ৮ আশ্বিন ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ন্যায়ভিত্তিক বিশ্ব গড়তে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান প্রধান উপদেষ্টার

  • পোস্ট হয়েছে : ৪ মিনিট আগে
  • 3

বিজনেস আওয়ার প্রতিবেদক: নতুন এক ন্যায়ভিত্তিক, টেকসই ও আশাব্যঞ্জক বিশ্ব গড়ে তুলতে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। সোমবার (২২ সেপ্টেম্বর) জাতিসংঘ সদর দপ্তরে সোশ্যাল বিজনেস, যুব ও প্রযুক্তি বিষয়ক জাতিসংঘের উচ্চপর্যায়ের বৈঠকে মূল বক্তব্য উপস্থাপনকালে তিনি এ আহ্বান জানান।

বক্তব্যে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে হলেও সুযোগ, মর্যাদা ও টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করা তার মূল লক্ষ্য। ব্যবসা শুধু মুনাফার জন্য নয়, বরং মানুষ, পৃথিবী ও ভবিষ্যতের জন্য কাজ করবে—এই নীতিতে অটল থাকার আহ্বান জানান অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, আজ বিশ্ব এক সংকটময় মোড়ে দাঁড়িয়ে আছে। জলবায়ু পরিবর্তনের দাবানল পৃথিবীকে পুড়িয়ে দিচ্ছে, বৈষম্য গভীর হচ্ছে, সংঘাত বাড়ছে, আর ন্যায়বিচার ও শান্তির সংগ্রাম আমাদের মানবতাকেই পরীক্ষা করছে।

তিনি এ পরিস্থিতি মোকাবিলায় নবায়িত বহুপাক্ষিক কূটনীতি, গভীর আন্তর্জাতিক সহযোগিতা ও টেকসই উন্নয়নের প্রতি সমষ্টিগত প্রতিশ্রুতির প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন।

বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে তিনি বলেন, দেশটি এলডিসি থেকে উত্তরণের প্রস্তুতি নিচ্ছে, একই সঙ্গে ১৩ লাখের বেশি রোহিঙ্গা শরণার্থীকে আশ্রয় দিচ্ছে, জলবায়ু বিপর্যয়ের ধাক্কা সামলাচ্ছে এবং বৈশ্বিক অর্থনৈতিক অস্থিরতার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে।

এ প্রেক্ষাপটে জাতিসংঘের বাজেট কমানো বা উন্নয়ন সহায়তা হ্রাস করা প্রতিকূল প্রভাব ফেলবে বলে উল্লেখ করে তিনি আন্তর্জাতিক সমর্থন বাড়ানোর আহ্বান জানান। অধ্যাপক ইউনূস বলেন, বর্তমান বৈশ্বিক ব্যবস্থায় শুধুমাত্র মুনাফার জন্য ব্যবসা পরিচালনা টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনকে বাধাগ্রস্ত করছে।

এজন্য তিনি মানবকল্যাণ, সামাজিক ন্যায়বিচার ও পরিবেশ সুরক্ষাকে অগ্রাধিকার দিয়ে ‘সোশ্যাল বিজনেস’ বা সামাজিক ব্যবসাকে কেন্দ্রে রেখে একটি নতুন অর্থনীতি গড়ে তোলার আহ্বান জানান।

তিনি উল্লেখ করেন, সামাজিক ব্যবসা আর কোনো সীমিত ধারণা নয়, এটি একটি বৈশ্বিক আন্দোলন। স্বাস্থ্যসেবা, নবায়নযোগ্য জ্বালানি, শিক্ষা থেকে শুরু করে খেলাধুলা পর্যন্ত নানা খাতে সামাজিক ব্যবসা প্রমাণ করেছে যে অর্থনৈতিকভাবে টিকে থেকেও পৃথিবীর জরুরি সমস্যাগুলো সমাধান করা সম্ভব।

যুবদের উদ্দেশে অধ্যাপক ইউনুস বলেন, পুরোনো চিন্তাভাবনা দিয়ে নতুন সভ্যতা গড়া যাবে না। নতুন সভ্যতা গড়বে তরুণ প্রজন্ম—যারা কল্পনা ও উদ্ভাবনের মাধ্যমে জলবায়ু পরিবর্তন, বেকারত্ব, দারিদ্র্য ও বৈষম্য মোকাবিলা করবে।

প্রযুক্তির প্রসঙ্গে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, বিগ ডাটা, নবায়নযোগ্য জ্বালানি ও অন্যান্য উদ্ভাবন বিশ্বকে পাল্টে দিতে পারে, তবে এর সঙ্গে বড় দায়িত্বও জড়িত। প্রযুক্তি মানুষের কল্যাণে ব্যবহৃত হবে নাকি ক্ষতির কারণ হবে—এটা আজকের সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করবে, যোগ করেন তিনি।

অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস প্রযুক্তিকে ন্যায়বিচার, সমতা ও পরিবেশ সংরক্ষণের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ করতে ‘নৈতিক উদ্ভাবনের’ প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন।

প্রধান উপদেষ্টা তার দীর্ঘদিনের প্রচারিত থ্রি-জিরো ধারণার কথাও তুলে ধরেন—শূন্য নেট কার্বন নিঃসরণ, শূন্য সম্পদ কেন্দ্রীকরণ (দারিদ্র্য দূরীকরণ) এবং শূন্য বেকারত্ব।

তিনি আরও জানান, তরুণদের অংশগ্রহণে থ্রি-জিরো ক্লাব গঠন করা হচ্ছে, যাতে ব্যক্তি থেকে পরিবার, পরিবার থেকে গ্রাম, শহর হয়ে একসময় পুরো বিশ্বে টেকসই উন্নয়নের ধারা প্রতিষ্ঠিত হয়।

অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, সামাজিক ব্যবসা, তরুণদের শক্তি ও প্রযুক্তির সুযোগ কাজে লাগিয়ে আমরা জটিল বৈশ্বিক সংকটগুলো সমাধান করতে পারি। একসঙ্গে কাজ করলেই মানবজাতির জন্য ন্যায়, টেকসই উন্নয়ন ও আশার নতুন ভোর তৈরি হবে।

বিজনেস আওয়ার/ ২৩ সেপ্টেম্বর / কাওছার

ফেসবুকের মাধ্যমে আপনার মতামত জানান:
ট্যাগ :

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার মেইলে তথ্য জমা করুন

সর্বাধিক পঠিত

ন্যায়ভিত্তিক বিশ্ব গড়তে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান প্রধান উপদেষ্টার

পোস্ট হয়েছে : ৪ মিনিট আগে

বিজনেস আওয়ার প্রতিবেদক: নতুন এক ন্যায়ভিত্তিক, টেকসই ও আশাব্যঞ্জক বিশ্ব গড়ে তুলতে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। সোমবার (২২ সেপ্টেম্বর) জাতিসংঘ সদর দপ্তরে সোশ্যাল বিজনেস, যুব ও প্রযুক্তি বিষয়ক জাতিসংঘের উচ্চপর্যায়ের বৈঠকে মূল বক্তব্য উপস্থাপনকালে তিনি এ আহ্বান জানান।

বক্তব্যে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে হলেও সুযোগ, মর্যাদা ও টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করা তার মূল লক্ষ্য। ব্যবসা শুধু মুনাফার জন্য নয়, বরং মানুষ, পৃথিবী ও ভবিষ্যতের জন্য কাজ করবে—এই নীতিতে অটল থাকার আহ্বান জানান অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, আজ বিশ্ব এক সংকটময় মোড়ে দাঁড়িয়ে আছে। জলবায়ু পরিবর্তনের দাবানল পৃথিবীকে পুড়িয়ে দিচ্ছে, বৈষম্য গভীর হচ্ছে, সংঘাত বাড়ছে, আর ন্যায়বিচার ও শান্তির সংগ্রাম আমাদের মানবতাকেই পরীক্ষা করছে।

তিনি এ পরিস্থিতি মোকাবিলায় নবায়িত বহুপাক্ষিক কূটনীতি, গভীর আন্তর্জাতিক সহযোগিতা ও টেকসই উন্নয়নের প্রতি সমষ্টিগত প্রতিশ্রুতির প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন।

বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে তিনি বলেন, দেশটি এলডিসি থেকে উত্তরণের প্রস্তুতি নিচ্ছে, একই সঙ্গে ১৩ লাখের বেশি রোহিঙ্গা শরণার্থীকে আশ্রয় দিচ্ছে, জলবায়ু বিপর্যয়ের ধাক্কা সামলাচ্ছে এবং বৈশ্বিক অর্থনৈতিক অস্থিরতার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে।

এ প্রেক্ষাপটে জাতিসংঘের বাজেট কমানো বা উন্নয়ন সহায়তা হ্রাস করা প্রতিকূল প্রভাব ফেলবে বলে উল্লেখ করে তিনি আন্তর্জাতিক সমর্থন বাড়ানোর আহ্বান জানান। অধ্যাপক ইউনূস বলেন, বর্তমান বৈশ্বিক ব্যবস্থায় শুধুমাত্র মুনাফার জন্য ব্যবসা পরিচালনা টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনকে বাধাগ্রস্ত করছে।

এজন্য তিনি মানবকল্যাণ, সামাজিক ন্যায়বিচার ও পরিবেশ সুরক্ষাকে অগ্রাধিকার দিয়ে ‘সোশ্যাল বিজনেস’ বা সামাজিক ব্যবসাকে কেন্দ্রে রেখে একটি নতুন অর্থনীতি গড়ে তোলার আহ্বান জানান।

তিনি উল্লেখ করেন, সামাজিক ব্যবসা আর কোনো সীমিত ধারণা নয়, এটি একটি বৈশ্বিক আন্দোলন। স্বাস্থ্যসেবা, নবায়নযোগ্য জ্বালানি, শিক্ষা থেকে শুরু করে খেলাধুলা পর্যন্ত নানা খাতে সামাজিক ব্যবসা প্রমাণ করেছে যে অর্থনৈতিকভাবে টিকে থেকেও পৃথিবীর জরুরি সমস্যাগুলো সমাধান করা সম্ভব।

যুবদের উদ্দেশে অধ্যাপক ইউনুস বলেন, পুরোনো চিন্তাভাবনা দিয়ে নতুন সভ্যতা গড়া যাবে না। নতুন সভ্যতা গড়বে তরুণ প্রজন্ম—যারা কল্পনা ও উদ্ভাবনের মাধ্যমে জলবায়ু পরিবর্তন, বেকারত্ব, দারিদ্র্য ও বৈষম্য মোকাবিলা করবে।

প্রযুক্তির প্রসঙ্গে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, বিগ ডাটা, নবায়নযোগ্য জ্বালানি ও অন্যান্য উদ্ভাবন বিশ্বকে পাল্টে দিতে পারে, তবে এর সঙ্গে বড় দায়িত্বও জড়িত। প্রযুক্তি মানুষের কল্যাণে ব্যবহৃত হবে নাকি ক্ষতির কারণ হবে—এটা আজকের সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করবে, যোগ করেন তিনি।

অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস প্রযুক্তিকে ন্যায়বিচার, সমতা ও পরিবেশ সংরক্ষণের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ করতে ‘নৈতিক উদ্ভাবনের’ প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন।

প্রধান উপদেষ্টা তার দীর্ঘদিনের প্রচারিত থ্রি-জিরো ধারণার কথাও তুলে ধরেন—শূন্য নেট কার্বন নিঃসরণ, শূন্য সম্পদ কেন্দ্রীকরণ (দারিদ্র্য দূরীকরণ) এবং শূন্য বেকারত্ব।

তিনি আরও জানান, তরুণদের অংশগ্রহণে থ্রি-জিরো ক্লাব গঠন করা হচ্ছে, যাতে ব্যক্তি থেকে পরিবার, পরিবার থেকে গ্রাম, শহর হয়ে একসময় পুরো বিশ্বে টেকসই উন্নয়নের ধারা প্রতিষ্ঠিত হয়।

অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, সামাজিক ব্যবসা, তরুণদের শক্তি ও প্রযুক্তির সুযোগ কাজে লাগিয়ে আমরা জটিল বৈশ্বিক সংকটগুলো সমাধান করতে পারি। একসঙ্গে কাজ করলেই মানবজাতির জন্য ন্যায়, টেকসই উন্নয়ন ও আশার নতুন ভোর তৈরি হবে।

বিজনেস আওয়ার/ ২৩ সেপ্টেম্বর / কাওছার

ফেসবুকের মাধ্যমে আপনার মতামত জানান: