বিজনেস আওয়ার প্রতিবেদক : করোনা মহামারির ধাক্কা কাটিয়ে পণ্য বিক্রয়ে প্রবৃদ্ধি অর্জনের ধারাবাহিকতায় ফিরে এসেছে দেশের ইলেকট্রনিক্স জায়ান্ট ওয়ালটন। চলতি বছরের জুলাই-সেপ্টেম্বর সময়ে ওয়ালটনের টেলিভিশন, ইলেকট্রিক্যাল ও হোম অ্যাপ্লায়েন্সের বিক্রি আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় প্রায় সাড়ে ১৩ শতাংশ বেড়েছে। একই সময়ে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত ওয়ালটন হাই-টেক ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের মুনাফা হয়েছে ৪০১ কোটি টাকা। বেড়েছে কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি নিট সম্পদ মূল্যও।
ওয়ালটন হাই-টেক ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের প্রকাশিত চলতি হিসাব বছরের প্রথম প্রান্তিকের (জুলাই-সেপ্টেম্বর’২০) অনিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদনে এসব তথ্য পাওয়া গেছে। এতে দেখা গেছে কোভিড-১৯ বা করোনায় ক্ষতিগ্রস্থ অর্থনৈতিক পরিস্থিতির মধ্যেও চলতি হিসাব বছরের প্রথম প্রান্তিকে ওয়ালটনের মোট বিক্রি দাঁড়িয়েছে প্রায় ১৫৭২ কোটি ৪০ লাখ টাকায়। এর মধ্যে গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ওয়ালটনের টিভি, ইলেকট্রিক্যাল ও হোম অ্যাপ্লায়েন্সের বিক্রি ১৩.৫ শতাংশের মতো বৃদ্ধি পেয়েছে।
এদিকে ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২০ শেষে পুর্নমূল্যায়ন সঞ্চিতিসহ কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি নিট সম্পদমূল্য (এনভিপিএস) বেড়ে ২৭৮ টাকা ৪৮ পয়সায় দাঁড়িয়েছে। চলতি বছরের জুন পর্যন্ত এনএভিপিএস ছিল ২৬১.৯২ টাকা। এছাড়া প্রথম প্রান্তিকে কোম্পানিটির নিট অপারেটিং ক্যাশফ্লো (এনওসিএফপিএস) হয়েছে ৪২.৩১ টাকা। আগের বছরের একই সময়ে এনওসিএফপিএস ছিল ৭.৫৭ টাকা। প্রথম প্রান্তিকে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি আয় (ইপিএস) হয়েছে ১৩ টাকা ২৬ পয়সা।
আর্থিক প্রতিবেদনের তথ্যমতে, চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে ওয়ালটন হাই-টেকের মুনাফা হয়েছে ৪০১ কোটি ৭১ লাখ ৫৬ হাজার ৩০৩ টাকা। যা গত বছরের একই সময়ে অর্জিত মুনাফার খুব কাছাকাছি। চলতি বছর সামগ্রিক অর্থনীতির ক্ষতি ও প্রতিকূল পরিস্থিতি বিবেচনায় ওয়ালটন প্রথম প্রান্তিকে যথেষ্ট ভালো মুনাফা অর্জন করেছে বলে মনে করেন আর্থিক খাতের বিশ্লেষকরা।
তাদের মতে, করোনায় লকডাইনের ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে না উঠতেই দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ব্যাপক বন্যা হয়। সার্বিকভাবে দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য ও সামগ্রিক অর্থনীতি মারাত্মক ক্ষতির সম্মূখীন হয়েছে। যার প্রভাব পড়েছে সাধারণ মানুষের আয় ও ক্রয়ক্ষমতায়। এদিকে জুনের প্রায় শেষে লকডাউন উঠতেই ওয়ালটন দ্রুত ব্যবসায়ের স্বাভাবিক ধারায় ফিরে এসে করোনার ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে সফল হয়েছে মনে করেন তারা।
শেয়ারবাজার সংশ্লিষ্টদের মতে, এক প্রান্তিকেই এতো বিশাল পরিমাণ মুনাফা অর্জনের রেকর্ড অন্য কোনো তালিকাভুক্ত দেশীয় কোম্পানির নেই।
ব্যবসায়ে স্বাভাবিক ধারায় ফিরে আসার বিষয়ে ওয়ালটন হাই-টেক ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী গোলাম মুর্শেদ বলেন, করোনা মহামারিতে শুধু ইলেকট্রনিক্স খাতই নয়; দেশের প্রতিটি খাতের ব্যবসা-বাণিজ্যের গতি মন্থর হয়ে পড়েছিলো। তবে লকডাউন শেষে দেশের সামগ্রিক ব্যবসা-বাণিজ্য ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হচ্ছে। করোনার প্রভাব কাটিয়ে ওয়ালটনের পণ্য বিক্রিতে প্রবৃদ্ধির ধারাবাহিকতা ফিরে এসেছে। একই সময়ে রপ্তানি বাণিজ্যও বেড়েছে। নতুন করে করোনা পরিস্থিতি খারাপের দিকে না গেলে সব ধরনের পণ্যে এই ধারাবাহিকতা বজায় থাকবে।
উল্লেখ্য, শেয়ারজবাজারে তালিকাভুক্তির প্রথম বছরে সাধারণ শেয়ারহোল্ডারদের জন্য ২০০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে ওয়ালটন হাই-টেক ইন্ডাস্ট্রিজ। সর্বশেষ সমাপ্ত ২০১৯-২০ হিসাব বছরের আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনা শেষে সাধারণ শেয়ারহোল্ডারদের জন্য এমন লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে কোম্পানিটির পর্ষদ। তবে উদ্যোক্তা পরিচালকরা পাবেন ৭৫ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ। ঘোষিত লভ্যাংশসহ অন্যান্য এজেন্ডায় শেয়ারহোল্ডারদের অনুমোদনের জন্য এ বছরের ২৩ ডিসেম্বর সকাল সাড়ে ১১টায় বার্ষিক সাধারণ সভা (এজিএম) আহ্বান করা হয়েছে। এজন্য রেকর্ড ডেট নির্ধারণ করা হয়েছে ১৯ নভেম্বর।
বিজনেস আওয়ার/১৮ নভেম্বও, ২০২০/এস