ঢাকা , বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

কারসজিতেই হুটহাট দাম বাড়ে ডিম-মুরগির

  • পোস্ট হয়েছে : ০৫:১৮ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৯ নভেম্বর ২০২০
  • 0

বিজনেস আওয়ার প্রতিবেদক : নিম্নআয়ের মানুষের আমিষের যোগান আসে ব্রয়লার মুরগি ও ফার্মের ডিম থেকে। কিন্তু অকারণে হঠাৎ বেড়ে যায় ব্রয়লার মুরগি ও ডিমের দাম। এমন অস্থিরতার জন্য ব্যবসায়ীরা কখনো নানা অজুহাত দাঁড় করান। কিন্তু দামের চাবিটা নাড়ায় হাতেগোনা কয়েকজন। গুটিকয়েক পোলট্রি কোম্পানির কারসজিতেই হুটহাট দাম চড়ে।

বিভিন্ন সুত্রে জানা গেছে, দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ছোটবড় পোল্ট্রি শিল্প গড়ে উঠলেও রাজধানীর অদুরে টঙ্গী, বোর্ড বাজার, জয়দেবপুর ও গাজীপুর এলাকাকে ঘিরে দেশের সবচেয়ে বড় পোল্ট্রি শিল্প গড়ে উঠেছে। মূলত এখান থেকেই নিয়ন্ত্রিত হয় ব্রয়লার মুরগি ও ডিমের বাজার। প্রতিদিন সকালে এখানকার ব্যবসায়ীরা ফোনে একে অপরের সঙ্গে পরামর্শ করে দর নির্ধারণ করেন। যার প্রভাব পড়ে প্রায় সারা দেশে।

আর দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের পোল্ট্রি ব্যবসায়ীরাও প্রতিদিন সকালে টঙ্গী, বোর্ড বাজার, জয়দেবপুর ও গাজীপুরের বাজারের দর দেখে নিজেদের বিক্রয়মূল্য ঠিক করে। একই সঙ্গে এসব শিল্পের কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহৃত পোলট্রি খাদ্য ও ওষুধ আমদানিকারক তিন-চারটি কোম্পানিও এর সঙ্গে যুক্ত বলে জানা গেছে।

এ ব্যাপারে খুচরা ব্যবসায়ীরা বলেন, কিছু কোম্পানি যে দামে ফিড ও ওষুধ আমদানি করে তার তুলনায় অনেক বেশি দামে বাজারে ছাড়ে। ফলে বাজার তো অস্থির হবেই। সারা দেশের চারটি কোম্পানি এসব পণ্য আমদানি করে বলে সিন্ডিকেট করা খুব সহজ।

জানা গেছে, গাজীপুরের সোনার বাংলা পোল্ট্রি খামারের মালিক ইদ্রিস আলী, বোর্ডবাজারের সাবিহা-সাহানা পোল্ট্রি খামারের মালিক মকবুল হোসেন ও জয়দেবপুরের আকাশ পোল্ট্রির মালিক গোলাম সরোয়ার; পাইকারি ব্যবসায়ীদের অভিযোগ এই তিনজনই মূলত রাজধানীর পোল্ট্রি বাজার নিয়ন্ত্রণ করছেন। এই তিনজনই যোগসাজস করে প্রতিদিনের ব্রয়লার মুরগি ও ডিমের দর নির্ধারণ করেন।

টঙ্গী, বোর্ড বাজার, জয়দেবপুর ও গাজীপুর থেকে পাইকারি ব্যবসায়ীরা মুরগি ও ও ডিম রাজধানীর গুলিস্তানে জড়ো করে। সেখান থেকে ভোর ৬টার আগেই রাজধানীর বিভিন্ন পাড়া মহল্লায় ছড়িয়ে পড়ে।

গুলিস্তানের এক পোল্ট্রি ব্যবসায়ী জানান, গাজীপুর, বোর্ডবাজার ও জয়দেবপুর থেকেই ডিম-মুরগির দর ঠিক করা হয়। দাম বাড়ার জন্য বোর্ডবাজার, গাজীপুর ও জয়দেবপুরের ব্যবসায়ীরা দায়ী। তাদের নির্ধারিত দরের বাইরে কেনার সুযোগ নাই। তাদের কাছ থেকে আমরা যে দামে মাল কিনি, সেই দামের সঙ্গে পরিবহনসহ অন্যসব খরচ বাদ দিয়ে কেজিতে সর্বোচ্চ ৩ টাকা মুনাফা করি। অনেক সময় মুনাফা আরো কম হয়।

এ বিষয়ে সোনার বাংলা পোল্ট্রি খামারের মালিক ইদ্রিস আলী বলেন, সিন্ডিকেট করে দাম বাড়াই -এমন অভিযোগ ঠিক নয়। আমরা ব্যবসায়ীরা আলাপ আলোচনা করে দর ঠিক করি। কারণ, মুরগির বাচ্চা, মুরগির খাবার ও ওষুধের দাম, শ্রমিকের বেতনসহ সব খরচ মিটিয়ে আমাদেরও তো বেঁচে থাকতে হবে। উৎপাদন খরচ বাদ দিয়ে মুনাফার বিষয়টি নিশ্চিত করতেই পরামর্শ করি। এটা সিন্ডিকেট নয়।

ইদ্রিস আলী আরও জানান, বিভিন্ন দুর্যোগে খামারে মুরগি মরে যায়, অসুখে মরে, ঠাণ্ডা বেশি পড়লেও মরে। নানা জটিলতায় মুরগি ঠিক সময়ে ডিম দেয় না। এসব কারণে অনেক খামারি ব্যবসাও গুটিয়ে নিয়েছেন। তাদের খবর কেউ রাখে না। দেশের সর্বত্র এখন পোল্ট্রি শিল্প গড়ে উঠছে। প্রতিযোগিতা করেই টিকে থাকতে হচ্ছে।

এদিকে পোল্ট্রি খামারিদের অভিযোগ, পোল্ট্রি শিল্প বর্তমানে অনিশ্চিয়তার বেড়াজালে বন্দি। এর জন্য বাচ্চা ও খাদ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো দায়ী। তাদের একচেটিয়া ব্যবসার কারণে ব্যবসায়ীরা পুঁজি হারিয়ে নিঃস্ব হওয়ার পথে। তাদের অভিযোগ কাঁচামাল আমদানিকারক ও সয়াবিন মিল উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো পোল্ট্রি ফিডের বাজার নিয়ন্ত্রণ করছে। এতে পোল্ট্রি পণ্যের উৎপাদন খরচ বেড়ে বাজার অস্থির হয়।

এ প্রসঙ্গে কৃষিমন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাক বলেন, পোল্ট্রি একটি উদীয়মান শিল্প। এ কারণেই সরকার এ শিল্পের প্রসারে নানা সুযোগ সুবিধা দিচ্ছে। এ শিল্পে জড়িতরা এ সব সুবিধা নিয়ে ভালো মুনাফা করছেন। এ শিল্পের ক্ষতি হয় এমন কিছু কাউকেই করতে দেওয়া হবে না।

বিজনেস আওয়ার/১৯ নভেম্বর, ২০২০/এ

ফেসবুকের মাধ্যমে আপনার মতামত জানান:
ট্যাগ :

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার মেইলে তথ্য জমা করুন

কারসজিতেই হুটহাট দাম বাড়ে ডিম-মুরগির

পোস্ট হয়েছে : ০৫:১৮ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৯ নভেম্বর ২০২০

বিজনেস আওয়ার প্রতিবেদক : নিম্নআয়ের মানুষের আমিষের যোগান আসে ব্রয়লার মুরগি ও ফার্মের ডিম থেকে। কিন্তু অকারণে হঠাৎ বেড়ে যায় ব্রয়লার মুরগি ও ডিমের দাম। এমন অস্থিরতার জন্য ব্যবসায়ীরা কখনো নানা অজুহাত দাঁড় করান। কিন্তু দামের চাবিটা নাড়ায় হাতেগোনা কয়েকজন। গুটিকয়েক পোলট্রি কোম্পানির কারসজিতেই হুটহাট দাম চড়ে।

বিভিন্ন সুত্রে জানা গেছে, দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ছোটবড় পোল্ট্রি শিল্প গড়ে উঠলেও রাজধানীর অদুরে টঙ্গী, বোর্ড বাজার, জয়দেবপুর ও গাজীপুর এলাকাকে ঘিরে দেশের সবচেয়ে বড় পোল্ট্রি শিল্প গড়ে উঠেছে। মূলত এখান থেকেই নিয়ন্ত্রিত হয় ব্রয়লার মুরগি ও ডিমের বাজার। প্রতিদিন সকালে এখানকার ব্যবসায়ীরা ফোনে একে অপরের সঙ্গে পরামর্শ করে দর নির্ধারণ করেন। যার প্রভাব পড়ে প্রায় সারা দেশে।

আর দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের পোল্ট্রি ব্যবসায়ীরাও প্রতিদিন সকালে টঙ্গী, বোর্ড বাজার, জয়দেবপুর ও গাজীপুরের বাজারের দর দেখে নিজেদের বিক্রয়মূল্য ঠিক করে। একই সঙ্গে এসব শিল্পের কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহৃত পোলট্রি খাদ্য ও ওষুধ আমদানিকারক তিন-চারটি কোম্পানিও এর সঙ্গে যুক্ত বলে জানা গেছে।

এ ব্যাপারে খুচরা ব্যবসায়ীরা বলেন, কিছু কোম্পানি যে দামে ফিড ও ওষুধ আমদানি করে তার তুলনায় অনেক বেশি দামে বাজারে ছাড়ে। ফলে বাজার তো অস্থির হবেই। সারা দেশের চারটি কোম্পানি এসব পণ্য আমদানি করে বলে সিন্ডিকেট করা খুব সহজ।

জানা গেছে, গাজীপুরের সোনার বাংলা পোল্ট্রি খামারের মালিক ইদ্রিস আলী, বোর্ডবাজারের সাবিহা-সাহানা পোল্ট্রি খামারের মালিক মকবুল হোসেন ও জয়দেবপুরের আকাশ পোল্ট্রির মালিক গোলাম সরোয়ার; পাইকারি ব্যবসায়ীদের অভিযোগ এই তিনজনই মূলত রাজধানীর পোল্ট্রি বাজার নিয়ন্ত্রণ করছেন। এই তিনজনই যোগসাজস করে প্রতিদিনের ব্রয়লার মুরগি ও ডিমের দর নির্ধারণ করেন।

টঙ্গী, বোর্ড বাজার, জয়দেবপুর ও গাজীপুর থেকে পাইকারি ব্যবসায়ীরা মুরগি ও ও ডিম রাজধানীর গুলিস্তানে জড়ো করে। সেখান থেকে ভোর ৬টার আগেই রাজধানীর বিভিন্ন পাড়া মহল্লায় ছড়িয়ে পড়ে।

গুলিস্তানের এক পোল্ট্রি ব্যবসায়ী জানান, গাজীপুর, বোর্ডবাজার ও জয়দেবপুর থেকেই ডিম-মুরগির দর ঠিক করা হয়। দাম বাড়ার জন্য বোর্ডবাজার, গাজীপুর ও জয়দেবপুরের ব্যবসায়ীরা দায়ী। তাদের নির্ধারিত দরের বাইরে কেনার সুযোগ নাই। তাদের কাছ থেকে আমরা যে দামে মাল কিনি, সেই দামের সঙ্গে পরিবহনসহ অন্যসব খরচ বাদ দিয়ে কেজিতে সর্বোচ্চ ৩ টাকা মুনাফা করি। অনেক সময় মুনাফা আরো কম হয়।

এ বিষয়ে সোনার বাংলা পোল্ট্রি খামারের মালিক ইদ্রিস আলী বলেন, সিন্ডিকেট করে দাম বাড়াই -এমন অভিযোগ ঠিক নয়। আমরা ব্যবসায়ীরা আলাপ আলোচনা করে দর ঠিক করি। কারণ, মুরগির বাচ্চা, মুরগির খাবার ও ওষুধের দাম, শ্রমিকের বেতনসহ সব খরচ মিটিয়ে আমাদেরও তো বেঁচে থাকতে হবে। উৎপাদন খরচ বাদ দিয়ে মুনাফার বিষয়টি নিশ্চিত করতেই পরামর্শ করি। এটা সিন্ডিকেট নয়।

ইদ্রিস আলী আরও জানান, বিভিন্ন দুর্যোগে খামারে মুরগি মরে যায়, অসুখে মরে, ঠাণ্ডা বেশি পড়লেও মরে। নানা জটিলতায় মুরগি ঠিক সময়ে ডিম দেয় না। এসব কারণে অনেক খামারি ব্যবসাও গুটিয়ে নিয়েছেন। তাদের খবর কেউ রাখে না। দেশের সর্বত্র এখন পোল্ট্রি শিল্প গড়ে উঠছে। প্রতিযোগিতা করেই টিকে থাকতে হচ্ছে।

এদিকে পোল্ট্রি খামারিদের অভিযোগ, পোল্ট্রি শিল্প বর্তমানে অনিশ্চিয়তার বেড়াজালে বন্দি। এর জন্য বাচ্চা ও খাদ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো দায়ী। তাদের একচেটিয়া ব্যবসার কারণে ব্যবসায়ীরা পুঁজি হারিয়ে নিঃস্ব হওয়ার পথে। তাদের অভিযোগ কাঁচামাল আমদানিকারক ও সয়াবিন মিল উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো পোল্ট্রি ফিডের বাজার নিয়ন্ত্রণ করছে। এতে পোল্ট্রি পণ্যের উৎপাদন খরচ বেড়ে বাজার অস্থির হয়।

এ প্রসঙ্গে কৃষিমন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাক বলেন, পোল্ট্রি একটি উদীয়মান শিল্প। এ কারণেই সরকার এ শিল্পের প্রসারে নানা সুযোগ সুবিধা দিচ্ছে। এ শিল্পে জড়িতরা এ সব সুবিধা নিয়ে ভালো মুনাফা করছেন। এ শিল্পের ক্ষতি হয় এমন কিছু কাউকেই করতে দেওয়া হবে না।

বিজনেস আওয়ার/১৯ নভেম্বর, ২০২০/এ

ফেসবুকের মাধ্যমে আপনার মতামত জানান: