ঢাকা , রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

প্রতারণা কিভাবে করতে হয়, তা দেখিয়ে দিল সেন্ট্রাল ফার্মাসিউটিক্যালস

  • পোস্ট হয়েছে : ০৫:০১ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৩ নভেম্বর ২০২০
  • 81

রেজোয়ান আহমেদ : শেয়ারবাজার থেকে টাকা হাতানোর জন্য কিভাবে প্রতারণা করতে হয়, তা দেখিয়ে দিয়েছে সেন্ট্রাল ফার্মাসিউটিক্যালস কর্তৃপক্ষ। এ কোম্পানি কর্তৃপক্ষ ২০১৮-১৯ অর্থবছরে মজুদ পণ্য ও গ্রাহকের কাছে পাওনা টাকার পরিমাণ বেশির মাধ্যমে অতিরঞ্জিত ব্যবসা দেখায়। যা ২০১৯-২০ অর্থবছরে সমন্বয়ের জন্য তৈরী করেছে আরেক নাটক। এবছর মজুদ পণ্য ধ্বংস করা হয়েছে এবং দেনাদারের কাছ থেকে টাকা পাওয়া যাবে না বলে হিসাব থেকে বাদ (রিটেন অফ) দিয়েছে। এর মাধ্যমে ২০১৯-২০ অর্থবছরে বড় লোকসান দেখিয়েছে। এই কোম্পানিটিরই পর্ষদের পরিবর্তনের নামে নাটক সাজিয়ে শেয়ার দর আকাশুচুম্বি করা হয়েছিল। যা ঘোষণা দিয়েও পরবর্তীতে পরিবর্তন করা হয়নি। যাতে শেয়ার দরে ধস নামে।

২০১৯-২০ অর্থবছরের আর্থিক হিসাব নিরীক্ষায় নিরীক্ষকের প্রতিবেদনে এ তথ্য বেরিয়ে এসেছে।

পেশাদার হিসাববিদ প্রতিষ্ঠান দি ইনস্টিটিউট অব কস্ট অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট অ্যাকাউন্টেন্টস অব বাংলাদেশ (আইসিএমএবি) এর সাবেক সভাপতি এএসএম শায়খুল ইসলাম বিজনেস আওয়ারকে বলেন, শেয়ার দরে প্রভাবিত করার জন্য কোম্পানির আর্থিক হিসাব কারসাজি করার অভিযোগ অনেক আগের। নিরীক্ষকের প্রতিবেদন অনুযায়ি সেন্ট্রাল ফার্মাসিউটিক্যালসেও হয়তো তেমনটিই হয়েছে। আগের অর্থবছরে শেয়ার বেচা-কেনা করে টাকা হাতিয়ে নেওয়ার জন্য দেনাদার ও মজুদ পণ্য বেশি করে দেখিয়েছে এবং ২০১৯-২০ অর্থবছরে তা সমন্বয় করেছে।

সাধারন বিনিয়োগকারীদেরকে রক্ষার জন্য কোম্পানি কর্তৃপক্ষের আর্থিক কারসাজিরোধ করা খুবই জরুরী বলে মনে করেন আইসিএমএবির সাবেক এই সভাপতি। তিনি বলেন, দু-একটি কোম্পানিকে উন্নত বিশ্বের ন্যায় বড় শাস্তি প্রদানের মাধ্যমে সবার আগে নজির গড়তে হবে। তাহলে অন্যরা এমনটি করার সাহস পাবে না।

সেন্ট্রাল ফার্মাসিউটিক্যালসের আর্থিক হিসাব নীরিক্ষায় নিরীক্ষক জানিয়েছেন, কোম্পানি কর্তৃপক্ষ ২০১৯-২০ অর্থবছরে ৪৮ কোটি ২২ লাখ টাকার মজুদ পণ্য হিসাব থেকে বাদ (রিটেন অফ) দিয়েছে। ওই পরিমাণ মজুদ পণ্য ধ্বংস করেছে বলে জানিয়েছে। যা আর্থিক হিসাবে বিক্রিত পণ্যের ব্যয় (কস্ট অফ গুডস সোল্ড) হিসাবে দেখিয়েছে। কিন্তু কোম্পানি কর্তৃপক্ষ এ নিয়ে কোন প্রমাণাদি দেখাতে পারেনি। এছাড়া ধ্বংস করা হয়েছে বলে দাবি করা হলেও এর পূর্বে জানানো হয়নি। এ কোম্পানি কর্তৃপক্ষ মজুদ পণ্য ধ্বংস করা নিয়ে সঠিক প্রমাণাদি বা যুক্তিসঙ্গত কোন কিছু সরবরাহ করেনি। এমনকি বিদ্যমান বা ধ্বংস করা মজুদ পণ্যের সঠিক মূল্যও কোম্পানি দ্ধারা জাস্টিফাইড করা হয়নি।

এর আগের অর্থবছরের নীরিক্ষায় কোম্পানিটির ক্রয়, উৎপাদন সক্ষমতা, বিক্রিত পণ্যের ব্যয় ও বিক্রির তুলনায় মজুদ পণ্যের পরিমাণ বেশি দেখানো হয়েছিল বলে নিরীক্ষক জানিয়েছে। ওই অর্থবছরে পণ্যের পরিমাণ, মান ও মূল্যের বিষয়ে কোন টেকনিক্যাল স্ট্যাটাস দেয়নি কোম্পানি কর্তৃপক্ষ। যেখানে অধিকাংশ মজুদ পণ্যের অস্তিত্ব ও বিক্রয় মূল্য সন্দেহজনক ছিল। এছাড়া ওইসময় মজুদ পণ্যের হিসাব সঠিকভাবে করা হয়নি এবং যৌক্তিক কোন প্রমাণাদি তারা দেয়নি।

আরও পড়ুন…..
রবির আজিয়াটার বিরুদ্ধে কমিশনে পাওনাদারের অভিযোগ

২০১৯-২০ অর্থবছরে সেন্ট্রাল ফার্মা কর্তৃপক্ষ গ্রাহকদের কাছ থেকে পাওনা ৫৮ কোটি ৩৪ লাখ টাকা হিসাব থেকে বাদ দিয়েছে। তবে সাপোর্টিং কোন প্রমাণাদি দিতে পারেনি বলে জানিয়েছে নিরীক্ষক। কোম্পানির ম্যানেজমেন্টের দাবি, ওইসব পাওনা টাকা দীর্ঘদিনের, দোকানদার ও মেডিক্যাল অফিসারদের পাওয়া যাচ্ছে না এবং মেয়াদাত্তীর্ণ পণ্য ফেরতের কারনে এমনটি করা হয়েছে। তবে এ বিষয়ে বিস্তারিত হিসাব বা সাপোর্টিং কোন কিছু সরবরাহ করা হয়নি।

বিগত অর্থবছরের (২০১৮-১৯) নিরীক্ষায় পর্যবেক্ষনের কথা উল্লেখ করে নিরীক্ষক জানিয়েছে, প্রতিবছর দেনাদার বেড়েছে। তবে কোন কোন বিক্রিয় কেন্দ্র বা পার্টির কারনে দেনাদার বেড়েছে, তার কোন রিপোর্ট ও নিশ্চয়তার সনদ দেয়নি। তারা দেনাদারের বিস্তারিত এবং টাকা আদায়ের কোন নীতির তথ্য দেয়নি। যাতে ওই অর্থবছরেই দেনাদারের কাছ থেকে টাকা আদায় নিয়ে সন্দেহ ছিল। কিন্তু তারা কোন প্রভিশনিং গঠন করেনি।

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) অভিজ্ঞ এক ট্রেকহোল্ডার বিজনেস আওয়ারকে বলেন, সেন্ট্রাল ফার্মার মতো প্রতারণা করে অনেক কোম্পানি শেয়ারবাজার থেকে প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) মাধ্যমে টাকা সংগ্রহ করেছে এবং করছে। এসব কোম্পানির অবস্থাও সেন্ট্রাল ফার্মার মতোই হবে। এজন্য কিছুদিন অপেক্ষা করতে হবে। দু-এক বছর পরেই সব বেরিয়ে আসবে। এছাড়া বুক বিল্ডিংয়ে কারসাজির মাধ্যমে অতিমূল্যায়িত দর নির্ধারনের ফলে শেয়ারবাজারকে বড় মূল্য দিতে হবে। যার জন্য রাস্তায় নামতে হবে বিনিয়োগকারীদেরকে।

নিরীক্ষক জানিয়েছে, শ্রমিক কল্যাণ ফান্ড থেকে ৩২ লাখ টাকা প্রদান করা হয়েছে বলে আর্থিক হিসাবের নোট ২১-এ উল্লেখ করা হলেও সেন্ট্রাল ফার্মাসিউটিক্যালস কর্তৃপক্ষ তার কোন প্রমাণাদি দেখাতে পারেনি। এছাড়া ১৪ কোটি ১ লাখ টাকার নিট বিক্রয়, ৪ কোটি ৪৯ লাখ টাকার কাচাঁমাল ক্রয় এবং ২ কোটি ২৭ লাখ টাকা প্যাকিং ম্যাটেরিয়াল ক্রয়ের প্রমাণাদি দেখাতে পারেনি।

সেন্ট্রাল ফার্মার জনতার ব্যাংকের ঢাকা লোকাল অফিসে ৩টি হিসাব রয়েছে। যেগুলো ট্যাক্স অথোরিটি লেনদেন অযোগ্য (ফ্রিজ) করে রেখেছে। তাদের দাবিকৃত ৯ কোটি ৩১ লাখ টাকার ট্যাক্সের জন্য ২০১৫ সালে এমনটি করে রেখেছে। তবে এখনো এ বিষয়টির কোন সমাধান বা উন্নতি হয়নি। যাতে কোম্পানি নগদে লেনদেন করছে।

ট্যাক্স অ্যাসেসমেন্ট নিয়ে কোম্পানি কর্তৃপক্ষ সর্বশেষ অবস্থার কোন তথ্য নিরীক্ষককে সরবরাহ করেনি। তবে ট্যাক্স অথোরিটি ২০১৬-১৭ ও ২০১৭-১৮ অর্থবছরের জন্য ২০১৮ সালে এক চিঠির মাধ্যমে ৪৮ কোটি ৪২ লাখ টাকার রাজস্ব দাবি করেছে। কোম্পানি কর্তৃপক্ষও ওই ২ অর্থবছরের জন্য ২০১৯ সালে রিটার্নস দাখিল করেছে। তবে এখনো ট্যাক্স অ্যাসেসমেন্ট শেষ হয়নি। যাতে অগ্রিম ট্যাক্স ২৮ কোটি ২ লাখ টাকা ও দায় ২৭ কোটি ৯০ লাখ টাকা সমন্বয়হীন রয়েছে। ফলে সম্পদ ও দায় বেশি দেখানো হচ্ছে। এরমধ্যে অগ্রিম ৯১ লাখ টাকা ট্যাক্স প্রদানের প্রমাণাদি সরবরাহ করেনি।

কোম্পানিটির ২০১৯-২০ অর্থবছরে লোকসান হয়েছে। কিন্তু টার্নওভার ট্যাক্সের জন্য কোন সঞ্চিতি গঠন করেনি। ওই অর্থবছরে ১৪ কোটি ১ লাখ টাকা টার্নওভারের উপরে ৮ লাখ টাকা ট্যাক্স প্রভিশনিং করা উচিত। যাতে করে চলতি দায় কম দেখানো হয়েছে।

এসব বিষয়ে জানতে কোম্পানি সচিব মো. তাজুল ইসলামের ব্যক্তিগত মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

উল্লেখ্য, সোমবার (২৩ নভেম্বর) লেনদেন শেষে সেন্ট্রাল ফার্মাসিউটিক্যালসের শেয়ার দর দাড়িঁয়েছে ১২ টাকায়।

বিজনেস আওয়ার/২৩ নভেম্বর, ২০২০/আরএ

ফেসবুকের মাধ্যমে আপনার মতামত জানান:
ট্যাগ :

4 thoughts on “প্রতারণা কিভাবে করতে হয়, তা দেখিয়ে দিল সেন্ট্রাল ফার্মাসিউটিক্যালস

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার মেইলে তথ্য জমা করুন

প্রতারণা কিভাবে করতে হয়, তা দেখিয়ে দিল সেন্ট্রাল ফার্মাসিউটিক্যালস

পোস্ট হয়েছে : ০৫:০১ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৩ নভেম্বর ২০২০

রেজোয়ান আহমেদ : শেয়ারবাজার থেকে টাকা হাতানোর জন্য কিভাবে প্রতারণা করতে হয়, তা দেখিয়ে দিয়েছে সেন্ট্রাল ফার্মাসিউটিক্যালস কর্তৃপক্ষ। এ কোম্পানি কর্তৃপক্ষ ২০১৮-১৯ অর্থবছরে মজুদ পণ্য ও গ্রাহকের কাছে পাওনা টাকার পরিমাণ বেশির মাধ্যমে অতিরঞ্জিত ব্যবসা দেখায়। যা ২০১৯-২০ অর্থবছরে সমন্বয়ের জন্য তৈরী করেছে আরেক নাটক। এবছর মজুদ পণ্য ধ্বংস করা হয়েছে এবং দেনাদারের কাছ থেকে টাকা পাওয়া যাবে না বলে হিসাব থেকে বাদ (রিটেন অফ) দিয়েছে। এর মাধ্যমে ২০১৯-২০ অর্থবছরে বড় লোকসান দেখিয়েছে। এই কোম্পানিটিরই পর্ষদের পরিবর্তনের নামে নাটক সাজিয়ে শেয়ার দর আকাশুচুম্বি করা হয়েছিল। যা ঘোষণা দিয়েও পরবর্তীতে পরিবর্তন করা হয়নি। যাতে শেয়ার দরে ধস নামে।

২০১৯-২০ অর্থবছরের আর্থিক হিসাব নিরীক্ষায় নিরীক্ষকের প্রতিবেদনে এ তথ্য বেরিয়ে এসেছে।

পেশাদার হিসাববিদ প্রতিষ্ঠান দি ইনস্টিটিউট অব কস্ট অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট অ্যাকাউন্টেন্টস অব বাংলাদেশ (আইসিএমএবি) এর সাবেক সভাপতি এএসএম শায়খুল ইসলাম বিজনেস আওয়ারকে বলেন, শেয়ার দরে প্রভাবিত করার জন্য কোম্পানির আর্থিক হিসাব কারসাজি করার অভিযোগ অনেক আগের। নিরীক্ষকের প্রতিবেদন অনুযায়ি সেন্ট্রাল ফার্মাসিউটিক্যালসেও হয়তো তেমনটিই হয়েছে। আগের অর্থবছরে শেয়ার বেচা-কেনা করে টাকা হাতিয়ে নেওয়ার জন্য দেনাদার ও মজুদ পণ্য বেশি করে দেখিয়েছে এবং ২০১৯-২০ অর্থবছরে তা সমন্বয় করেছে।

সাধারন বিনিয়োগকারীদেরকে রক্ষার জন্য কোম্পানি কর্তৃপক্ষের আর্থিক কারসাজিরোধ করা খুবই জরুরী বলে মনে করেন আইসিএমএবির সাবেক এই সভাপতি। তিনি বলেন, দু-একটি কোম্পানিকে উন্নত বিশ্বের ন্যায় বড় শাস্তি প্রদানের মাধ্যমে সবার আগে নজির গড়তে হবে। তাহলে অন্যরা এমনটি করার সাহস পাবে না।

সেন্ট্রাল ফার্মাসিউটিক্যালসের আর্থিক হিসাব নীরিক্ষায় নিরীক্ষক জানিয়েছেন, কোম্পানি কর্তৃপক্ষ ২০১৯-২০ অর্থবছরে ৪৮ কোটি ২২ লাখ টাকার মজুদ পণ্য হিসাব থেকে বাদ (রিটেন অফ) দিয়েছে। ওই পরিমাণ মজুদ পণ্য ধ্বংস করেছে বলে জানিয়েছে। যা আর্থিক হিসাবে বিক্রিত পণ্যের ব্যয় (কস্ট অফ গুডস সোল্ড) হিসাবে দেখিয়েছে। কিন্তু কোম্পানি কর্তৃপক্ষ এ নিয়ে কোন প্রমাণাদি দেখাতে পারেনি। এছাড়া ধ্বংস করা হয়েছে বলে দাবি করা হলেও এর পূর্বে জানানো হয়নি। এ কোম্পানি কর্তৃপক্ষ মজুদ পণ্য ধ্বংস করা নিয়ে সঠিক প্রমাণাদি বা যুক্তিসঙ্গত কোন কিছু সরবরাহ করেনি। এমনকি বিদ্যমান বা ধ্বংস করা মজুদ পণ্যের সঠিক মূল্যও কোম্পানি দ্ধারা জাস্টিফাইড করা হয়নি।

এর আগের অর্থবছরের নীরিক্ষায় কোম্পানিটির ক্রয়, উৎপাদন সক্ষমতা, বিক্রিত পণ্যের ব্যয় ও বিক্রির তুলনায় মজুদ পণ্যের পরিমাণ বেশি দেখানো হয়েছিল বলে নিরীক্ষক জানিয়েছে। ওই অর্থবছরে পণ্যের পরিমাণ, মান ও মূল্যের বিষয়ে কোন টেকনিক্যাল স্ট্যাটাস দেয়নি কোম্পানি কর্তৃপক্ষ। যেখানে অধিকাংশ মজুদ পণ্যের অস্তিত্ব ও বিক্রয় মূল্য সন্দেহজনক ছিল। এছাড়া ওইসময় মজুদ পণ্যের হিসাব সঠিকভাবে করা হয়নি এবং যৌক্তিক কোন প্রমাণাদি তারা দেয়নি।

আরও পড়ুন…..
রবির আজিয়াটার বিরুদ্ধে কমিশনে পাওনাদারের অভিযোগ

২০১৯-২০ অর্থবছরে সেন্ট্রাল ফার্মা কর্তৃপক্ষ গ্রাহকদের কাছ থেকে পাওনা ৫৮ কোটি ৩৪ লাখ টাকা হিসাব থেকে বাদ দিয়েছে। তবে সাপোর্টিং কোন প্রমাণাদি দিতে পারেনি বলে জানিয়েছে নিরীক্ষক। কোম্পানির ম্যানেজমেন্টের দাবি, ওইসব পাওনা টাকা দীর্ঘদিনের, দোকানদার ও মেডিক্যাল অফিসারদের পাওয়া যাচ্ছে না এবং মেয়াদাত্তীর্ণ পণ্য ফেরতের কারনে এমনটি করা হয়েছে। তবে এ বিষয়ে বিস্তারিত হিসাব বা সাপোর্টিং কোন কিছু সরবরাহ করা হয়নি।

বিগত অর্থবছরের (২০১৮-১৯) নিরীক্ষায় পর্যবেক্ষনের কথা উল্লেখ করে নিরীক্ষক জানিয়েছে, প্রতিবছর দেনাদার বেড়েছে। তবে কোন কোন বিক্রিয় কেন্দ্র বা পার্টির কারনে দেনাদার বেড়েছে, তার কোন রিপোর্ট ও নিশ্চয়তার সনদ দেয়নি। তারা দেনাদারের বিস্তারিত এবং টাকা আদায়ের কোন নীতির তথ্য দেয়নি। যাতে ওই অর্থবছরেই দেনাদারের কাছ থেকে টাকা আদায় নিয়ে সন্দেহ ছিল। কিন্তু তারা কোন প্রভিশনিং গঠন করেনি।

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) অভিজ্ঞ এক ট্রেকহোল্ডার বিজনেস আওয়ারকে বলেন, সেন্ট্রাল ফার্মার মতো প্রতারণা করে অনেক কোম্পানি শেয়ারবাজার থেকে প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) মাধ্যমে টাকা সংগ্রহ করেছে এবং করছে। এসব কোম্পানির অবস্থাও সেন্ট্রাল ফার্মার মতোই হবে। এজন্য কিছুদিন অপেক্ষা করতে হবে। দু-এক বছর পরেই সব বেরিয়ে আসবে। এছাড়া বুক বিল্ডিংয়ে কারসাজির মাধ্যমে অতিমূল্যায়িত দর নির্ধারনের ফলে শেয়ারবাজারকে বড় মূল্য দিতে হবে। যার জন্য রাস্তায় নামতে হবে বিনিয়োগকারীদেরকে।

নিরীক্ষক জানিয়েছে, শ্রমিক কল্যাণ ফান্ড থেকে ৩২ লাখ টাকা প্রদান করা হয়েছে বলে আর্থিক হিসাবের নোট ২১-এ উল্লেখ করা হলেও সেন্ট্রাল ফার্মাসিউটিক্যালস কর্তৃপক্ষ তার কোন প্রমাণাদি দেখাতে পারেনি। এছাড়া ১৪ কোটি ১ লাখ টাকার নিট বিক্রয়, ৪ কোটি ৪৯ লাখ টাকার কাচাঁমাল ক্রয় এবং ২ কোটি ২৭ লাখ টাকা প্যাকিং ম্যাটেরিয়াল ক্রয়ের প্রমাণাদি দেখাতে পারেনি।

সেন্ট্রাল ফার্মার জনতার ব্যাংকের ঢাকা লোকাল অফিসে ৩টি হিসাব রয়েছে। যেগুলো ট্যাক্স অথোরিটি লেনদেন অযোগ্য (ফ্রিজ) করে রেখেছে। তাদের দাবিকৃত ৯ কোটি ৩১ লাখ টাকার ট্যাক্সের জন্য ২০১৫ সালে এমনটি করে রেখেছে। তবে এখনো এ বিষয়টির কোন সমাধান বা উন্নতি হয়নি। যাতে কোম্পানি নগদে লেনদেন করছে।

ট্যাক্স অ্যাসেসমেন্ট নিয়ে কোম্পানি কর্তৃপক্ষ সর্বশেষ অবস্থার কোন তথ্য নিরীক্ষককে সরবরাহ করেনি। তবে ট্যাক্স অথোরিটি ২০১৬-১৭ ও ২০১৭-১৮ অর্থবছরের জন্য ২০১৮ সালে এক চিঠির মাধ্যমে ৪৮ কোটি ৪২ লাখ টাকার রাজস্ব দাবি করেছে। কোম্পানি কর্তৃপক্ষও ওই ২ অর্থবছরের জন্য ২০১৯ সালে রিটার্নস দাখিল করেছে। তবে এখনো ট্যাক্স অ্যাসেসমেন্ট শেষ হয়নি। যাতে অগ্রিম ট্যাক্স ২৮ কোটি ২ লাখ টাকা ও দায় ২৭ কোটি ৯০ লাখ টাকা সমন্বয়হীন রয়েছে। ফলে সম্পদ ও দায় বেশি দেখানো হচ্ছে। এরমধ্যে অগ্রিম ৯১ লাখ টাকা ট্যাক্স প্রদানের প্রমাণাদি সরবরাহ করেনি।

কোম্পানিটির ২০১৯-২০ অর্থবছরে লোকসান হয়েছে। কিন্তু টার্নওভার ট্যাক্সের জন্য কোন সঞ্চিতি গঠন করেনি। ওই অর্থবছরে ১৪ কোটি ১ লাখ টাকা টার্নওভারের উপরে ৮ লাখ টাকা ট্যাক্স প্রভিশনিং করা উচিত। যাতে করে চলতি দায় কম দেখানো হয়েছে।

এসব বিষয়ে জানতে কোম্পানি সচিব মো. তাজুল ইসলামের ব্যক্তিগত মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

উল্লেখ্য, সোমবার (২৩ নভেম্বর) লেনদেন শেষে সেন্ট্রাল ফার্মাসিউটিক্যালসের শেয়ার দর দাড়িঁয়েছে ১২ টাকায়।

বিজনেস আওয়ার/২৩ নভেম্বর, ২০২০/আরএ

ফেসবুকের মাধ্যমে আপনার মতামত জানান: