ঢাকা , মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

তাজরীন অগ্নিকাণ্ডের আট বছর আজ

  • পোস্ট হয়েছে : ১০:৪৩ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৪ নভেম্বর ২০২০
  • 80

বিজনেস আওয়ার প্রতিবেদক : ২০১৩ সালের ২৪ নভেম্বর সাভারের আশুলিয়ায় তাজরীন গার্মেন্টসে দাউ দাউ করে জ্বলে ওঠে আগুনে পুড়ে মারা যান ১১২ শ্রমিক। ভবনের আগুন নিভলেও স্বজন হারানো শ্রমিকের মনে এখনও জ্বলছে আগুন। আহত শরীরে কর্মহীন জীবনে, ক্ষতিপূরণের অধিকার আদায়ের আন্দোলন; সে আগুনও জ্বলছে।

তাজরীনের মালিকসহ বিচারের মুখোমুখি হওয়া কর্মকর্তারা আছেন জামিনে। আদালতে দিনের পর দিন সাক্ষী হাজির না হওয়ায় ঝুলে গেছে মামলা। অগ্নিকাণ্ডের আট বছর হতে চললেও ভুক্তভোগী ২৫ পরিবার গত ৬৭ দিন ধরে (১৮ সেপ্টেম্বর থেকে) ঢাকা প্রেসক্লাবের সামনের ফুটপাতে খোলা আকাশের নিচে বসে আছেন দাবি নিয়ে।

অগ্নিকাণ্ডের পর কিছু আর্থিক অনুদান ছাড়া কোনও ক্ষতিপূরণ পায়নি পরিবারগুলো। বাংলাদেশের শ্রম আইনের ক্ষতিপূরণের ধারাটি পরিবর্তন সাপেক্ষে দ্রুত ক্ষতিপূরণ দেওয়াসহ স্থায়ী পুনর্বাসনের দাবি নিয়ে হাজির হয়েছেন তারা। অভিযুক্ত মালিকের বিচারের অগ্রগতিও হয়নি। সাক্ষ্যগ্রহণের নামে চলছে টালবাহানা।

অবস্থান কর্মসূচিতে থাকা তাজরীন ফ্যাশনের পাঁচতলার সুইং অপারেটর জরিনা বেগম বলেন, ‘আমি আজ পঙ্গু। আমরা নায্য দাবি নিয়ে এসেছি কিন্তু আমাদের সাথে কেউ যোগাযোগ করছে না। কেউ কেউ আসে। তালিকা নিয়ে যায়। কিন্তু কেন তালিকা নেয় তা জানায় না। আমার ঘর নাই। পরিবার নিয়ে যেন চলতে পারি সেই মোতাবেক ক্ষতিপূরণ, পুনর্বাসন এবং সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করা হোক, এটাই আমাদের মূল দাবি।

গুরুতর আহত সোলাইমান হোসেন বলেন, ১৫ দিন আগে বিজিএমইএ ও শ্রমমন্ত্রণালয় থেকে আমাদের তালিকা নিয়ে গেছে। কিন্তু তারা তালিকা নিয়ে কী করলো সে বিষয়ে আমরা জানি না।চার বছর নিজের খরচে চিকিৎসা করিয়েছি। চার বছর পরে কিছু টাকা পেয়েছিলাম। কিন্তু ততদিনে তারচেয়ে বেশি খরচ হয়েছে। আমাদের দাবি, আমাদের পুনর্বাসন করা হোক। সম্মানজনক ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করা হোক।

তাজরীন গার্মেন্টসে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের সাত বছর পরও রাষ্ট্রপক্ষ শুনানিতে সাক্ষী হাজির করতে পারছে না বলে মামলায় অগ্রগতি নেই। মামলায় কয়েকদিন পর পর নতুন করে শুধু শুনানির দিনই ধার্য হচ্ছে। সর্বশেষ গত ১৫ অক্টোবর তাজরীন অগ্নিকাণ্ডের মামলার সাক্ষ্যগ্রহণের তারিখ ছিল। বিচারক উপস্থিত না থাকায় আদালত বসেনি।

অগ্নিকাণ্ডে আহত শ্রমিকদের অনেকে যারা গত ক্ষতিপূরণের দাবিতে প্রেসক্লাবের সামনে অবস্থান ধর্মঘট করছেন তারা আদালতে উপস্থিত ছিলেন। পরবর্তী শুনানির তারিখ আগামী বছরের ১৩ জানুয়ারি।

পরের তারিখে সাক্ষী হাজির করা সম্ভব হবে উল্লেখ করে তাজরীনের মামলার রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী এম এ মান্নান বলেন, যিনি সমন্বয়নের দায়িত্বে ছিলেন তিনি অন্য দায়িত্ব নিয়ে চলে যাওয়ায় কিছুটা স্থবিরতা এসেছিল। নতুন একজনকে দায়িত্ব দিয়ে প্রসিকিউশন টিম করে দেওয়া হয়েছে। আগামী তারিখে আমরা সাক্ষী হাজির করতে পারব বলে আশা করছি।

এতদিন সাক্ষী হাজির করতে না পারার কারণ হিসেবে তিনি বলেন, গার্মেন্টেসের শ্রমিকরা বেশিরভাগই ভাসমান। এক জায়গায় থাকে না। ফলে যোগাযোগ করা যাচ্ছে না। এই মামলা নিয়ে আমিও বিপদে আছি। ১০৪ জন সাক্ষী, আসামি একাধিক। আসামিদের পৃথক পৃথক আইনজীবী থাকলে তারা প্রত্যেকে সাক্ষীদের জেরা করবেন। ফলে সময় লাগবে।

আইনানুযায়ী শ্রমিককে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে উল্লেখ করে শ্রম অধিদফতরের মহাপরিচালক এ এ এম মিজানুর রহমান বলেন, আইন পরিবর্তনের ইস্যু নিয়ে আমরা কথা বলতে পারি না। সেটি মন্ত্রণালয় করবে। আর মনে রাখতে হবে এটি একটি লম্বা প্রক্রিয়া। এ বিষয়ে শ্রমমন্ত্রণালয়ের সচিবের সঙ্গে টেলিফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি করোনাক্রান্ত হওয়ায় কথা বলতে পারেননি।

উল্লেখ্য, সাভারের আশুলিয়ার নিশ্চিন্তপুরে ২০১২ সালের ২৪ নভেম্বর সন্ধ্যা ৭টার দিকে তাজরীন ফ্যাশন লিমিটেড কারখানায় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। এতে ১১২ জন শ্রমিক পুড়ে মারা যান। এ ছাড়াও অসংখ্য শ্রমিক গুরুতর আহত হন। ওই ঘটনায় আশুলিয়া থানায় একটি মামলা হয়।

পরে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) পরিদর্শক এ কে এম মহসিনুজ্জামান খান ২০১৩ সালের ২২ ডিসেম্বর ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম (সিএমএম) আদালতে তাজরীন ফ্যাশনের এমডি দেলোয়ারসহ ১৩ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করেন।

এদিকে তাজরীন ট্রাজেডির আট বছর পূর্তি উপলক্ষে সকালে নিহত শ্রমিকদের স্বজন ও আহতসহ বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনের নেতাকর্মীরা তাজরীন গার্মেন্টস কারখানার প্রধান ফটকের সামনে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।

এসময় বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনের নেতাকর্মীরা তাজরীন গার্মেন্টস সামনে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল বের করেন। মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল থেকে শ্রমিক সংগঠনগুলোর নেতাকর্মীরা তাজরীন ফ্যাশনে অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত সব শ্রমিককে অবিলম্বে ক্ষতিপূরণ ও মালিক দেলোয়ার হোসেনের কঠোর শাস্তি দাবি করেন।

বিজনেস আওয়ার/২৪ নভেম্বর, ২০২০/এ

ফেসবুকের মাধ্যমে আপনার মতামত জানান:
ট্যাগ :

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার মেইলে তথ্য জমা করুন

তাজরীন অগ্নিকাণ্ডের আট বছর আজ

পোস্ট হয়েছে : ১০:৪৩ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৪ নভেম্বর ২০২০

বিজনেস আওয়ার প্রতিবেদক : ২০১৩ সালের ২৪ নভেম্বর সাভারের আশুলিয়ায় তাজরীন গার্মেন্টসে দাউ দাউ করে জ্বলে ওঠে আগুনে পুড়ে মারা যান ১১২ শ্রমিক। ভবনের আগুন নিভলেও স্বজন হারানো শ্রমিকের মনে এখনও জ্বলছে আগুন। আহত শরীরে কর্মহীন জীবনে, ক্ষতিপূরণের অধিকার আদায়ের আন্দোলন; সে আগুনও জ্বলছে।

তাজরীনের মালিকসহ বিচারের মুখোমুখি হওয়া কর্মকর্তারা আছেন জামিনে। আদালতে দিনের পর দিন সাক্ষী হাজির না হওয়ায় ঝুলে গেছে মামলা। অগ্নিকাণ্ডের আট বছর হতে চললেও ভুক্তভোগী ২৫ পরিবার গত ৬৭ দিন ধরে (১৮ সেপ্টেম্বর থেকে) ঢাকা প্রেসক্লাবের সামনের ফুটপাতে খোলা আকাশের নিচে বসে আছেন দাবি নিয়ে।

অগ্নিকাণ্ডের পর কিছু আর্থিক অনুদান ছাড়া কোনও ক্ষতিপূরণ পায়নি পরিবারগুলো। বাংলাদেশের শ্রম আইনের ক্ষতিপূরণের ধারাটি পরিবর্তন সাপেক্ষে দ্রুত ক্ষতিপূরণ দেওয়াসহ স্থায়ী পুনর্বাসনের দাবি নিয়ে হাজির হয়েছেন তারা। অভিযুক্ত মালিকের বিচারের অগ্রগতিও হয়নি। সাক্ষ্যগ্রহণের নামে চলছে টালবাহানা।

অবস্থান কর্মসূচিতে থাকা তাজরীন ফ্যাশনের পাঁচতলার সুইং অপারেটর জরিনা বেগম বলেন, ‘আমি আজ পঙ্গু। আমরা নায্য দাবি নিয়ে এসেছি কিন্তু আমাদের সাথে কেউ যোগাযোগ করছে না। কেউ কেউ আসে। তালিকা নিয়ে যায়। কিন্তু কেন তালিকা নেয় তা জানায় না। আমার ঘর নাই। পরিবার নিয়ে যেন চলতে পারি সেই মোতাবেক ক্ষতিপূরণ, পুনর্বাসন এবং সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করা হোক, এটাই আমাদের মূল দাবি।

গুরুতর আহত সোলাইমান হোসেন বলেন, ১৫ দিন আগে বিজিএমইএ ও শ্রমমন্ত্রণালয় থেকে আমাদের তালিকা নিয়ে গেছে। কিন্তু তারা তালিকা নিয়ে কী করলো সে বিষয়ে আমরা জানি না।চার বছর নিজের খরচে চিকিৎসা করিয়েছি। চার বছর পরে কিছু টাকা পেয়েছিলাম। কিন্তু ততদিনে তারচেয়ে বেশি খরচ হয়েছে। আমাদের দাবি, আমাদের পুনর্বাসন করা হোক। সম্মানজনক ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করা হোক।

তাজরীন গার্মেন্টসে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের সাত বছর পরও রাষ্ট্রপক্ষ শুনানিতে সাক্ষী হাজির করতে পারছে না বলে মামলায় অগ্রগতি নেই। মামলায় কয়েকদিন পর পর নতুন করে শুধু শুনানির দিনই ধার্য হচ্ছে। সর্বশেষ গত ১৫ অক্টোবর তাজরীন অগ্নিকাণ্ডের মামলার সাক্ষ্যগ্রহণের তারিখ ছিল। বিচারক উপস্থিত না থাকায় আদালত বসেনি।

অগ্নিকাণ্ডে আহত শ্রমিকদের অনেকে যারা গত ক্ষতিপূরণের দাবিতে প্রেসক্লাবের সামনে অবস্থান ধর্মঘট করছেন তারা আদালতে উপস্থিত ছিলেন। পরবর্তী শুনানির তারিখ আগামী বছরের ১৩ জানুয়ারি।

পরের তারিখে সাক্ষী হাজির করা সম্ভব হবে উল্লেখ করে তাজরীনের মামলার রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী এম এ মান্নান বলেন, যিনি সমন্বয়নের দায়িত্বে ছিলেন তিনি অন্য দায়িত্ব নিয়ে চলে যাওয়ায় কিছুটা স্থবিরতা এসেছিল। নতুন একজনকে দায়িত্ব দিয়ে প্রসিকিউশন টিম করে দেওয়া হয়েছে। আগামী তারিখে আমরা সাক্ষী হাজির করতে পারব বলে আশা করছি।

এতদিন সাক্ষী হাজির করতে না পারার কারণ হিসেবে তিনি বলেন, গার্মেন্টেসের শ্রমিকরা বেশিরভাগই ভাসমান। এক জায়গায় থাকে না। ফলে যোগাযোগ করা যাচ্ছে না। এই মামলা নিয়ে আমিও বিপদে আছি। ১০৪ জন সাক্ষী, আসামি একাধিক। আসামিদের পৃথক পৃথক আইনজীবী থাকলে তারা প্রত্যেকে সাক্ষীদের জেরা করবেন। ফলে সময় লাগবে।

আইনানুযায়ী শ্রমিককে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে উল্লেখ করে শ্রম অধিদফতরের মহাপরিচালক এ এ এম মিজানুর রহমান বলেন, আইন পরিবর্তনের ইস্যু নিয়ে আমরা কথা বলতে পারি না। সেটি মন্ত্রণালয় করবে। আর মনে রাখতে হবে এটি একটি লম্বা প্রক্রিয়া। এ বিষয়ে শ্রমমন্ত্রণালয়ের সচিবের সঙ্গে টেলিফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি করোনাক্রান্ত হওয়ায় কথা বলতে পারেননি।

উল্লেখ্য, সাভারের আশুলিয়ার নিশ্চিন্তপুরে ২০১২ সালের ২৪ নভেম্বর সন্ধ্যা ৭টার দিকে তাজরীন ফ্যাশন লিমিটেড কারখানায় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। এতে ১১২ জন শ্রমিক পুড়ে মারা যান। এ ছাড়াও অসংখ্য শ্রমিক গুরুতর আহত হন। ওই ঘটনায় আশুলিয়া থানায় একটি মামলা হয়।

পরে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) পরিদর্শক এ কে এম মহসিনুজ্জামান খান ২০১৩ সালের ২২ ডিসেম্বর ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম (সিএমএম) আদালতে তাজরীন ফ্যাশনের এমডি দেলোয়ারসহ ১৩ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করেন।

এদিকে তাজরীন ট্রাজেডির আট বছর পূর্তি উপলক্ষে সকালে নিহত শ্রমিকদের স্বজন ও আহতসহ বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনের নেতাকর্মীরা তাজরীন গার্মেন্টস কারখানার প্রধান ফটকের সামনে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।

এসময় বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনের নেতাকর্মীরা তাজরীন গার্মেন্টস সামনে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল বের করেন। মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল থেকে শ্রমিক সংগঠনগুলোর নেতাকর্মীরা তাজরীন ফ্যাশনে অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত সব শ্রমিককে অবিলম্বে ক্ষতিপূরণ ও মালিক দেলোয়ার হোসেনের কঠোর শাস্তি দাবি করেন।

বিজনেস আওয়ার/২৪ নভেম্বর, ২০২০/এ

ফেসবুকের মাধ্যমে আপনার মতামত জানান: