বিজনেস আওয়ার প্রতিবেদক (চট্টগ্রাম) : চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীর তলদেশে নির্মাণাধীন বঙ্গবন্ধু টানেলের দ্বিতীয় টিউবের নির্মাণকাজ শুরু করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ। ডিসেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহে দেশের প্রথম এই টানেলের দ্বিতীয় ও শেষ টিউবের নির্মাণ কাজ শুরু হবে বলে জানিয়েছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল প্রকল্পের পরিচালক প্রকৌশলী হারুনুর রশিদ।
তিনি বলেন, আনোয়ারা প্রান্ত থেকে চট্টগ্রাম প্রান্তে বঙ্গবন্ধু টানেলের দ্বিতীয় টিউব নির্মাণের কাজ শুরু হবে ডিসেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহে। প্রথম টিউব থেকে ১২ মিটার দূরে নির্মাণ করা হবে দ্বিতীয় টিউব। প্রথম টিউবের মতো দ্বিতীয় টিউবও স্থলভাগ থেকে নদীর দিকে যাওয়ার সময় ধীরে ধীরে মাটির গভীরে যাবে। মাটির ১৮ মিটার থেকে ৪৩ মিটার নিচ দিয়ে যাবে টিউব।
চীনের সাংহাই শহরের আদলে বন্দরনগর চট্টগ্রাম শহরকে ‘ওয়ান সিটি, টু টাউন’ মডেলে গড়ে তুলতে নগরের পতেঙ্গা ও দক্ষিণ চট্টগ্রামের আনোয়ারার মধ্যে সংযোগ স্থাপনে কর্ণফুলী নদীর তলদেশে টানেল নির্মাণের উদ্যোগ নেয় সরকার।
৩ দশমিক ৪ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের মূল টানেল ছাড়াও পতেঙ্গা ও আনোয়ারা প্রান্তে ৫ দশমিক ৩৫ কিলোমিটার সংযোগ সড়ক এবং আনোয়ারা প্রান্তে ৭২৭ মিটার একটি ওভারব্রিজ নির্মাণ করা হচ্ছে প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে বাস্তবায়িত হতে যাওয়া এই প্রকল্পে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, ইতোমধ্যে মেগা প্রকল্প বঙ্গবন্ধু টানেলের প্রায় ৬০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। চট্টগ্রাম প্রান্ত থেকে আনোয়ারা প্রান্তে ১২ মিটার ব্যাসের একটি টিউব স্থাপনের কাজ শেষ করার পাশাপাশি টানেলের দুই পাশের সংযোগ সড়কের কাজ এগিয়ে নেওয়া হচ্ছে। এই টানেলের ৪ লেন দিয়ে ঘণ্টায় ৮০ কিলোমিটার গতিতে গাড়ি চলাচল করতে পারবে।
বঙ্গবন্ধু টানেল নির্মাণকাজের সর্বশেষ অবস্থা সম্পর্কে প্রকল্প পরিচালক প্রকৌশলী হারুনুর রশিদ বলেন, প্রথম টিউব নির্মাণ শেষ করে এখন সংযোগ সড়ক তৈরির কাজ চলছে। টানেল নির্মাণকে ঘিরে কর্ণফুলীর দুই তীরে উন্নয়নযজ্ঞ পরিচালিত হচ্ছে। সবমিলিয়ে প্রকল্পের ৬০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে।
তিনি বলেন, ডিসেম্বরে দ্বিতীয় টিউবের কাজ শুরু হবে। টানেল বোরিং মেশিন (টিবিএম) দিয়ে মাটি খননের সঙ্গে সঙ্গে সেখানে রিং সেগমেন্ট লাগানো হবে। চীনে তৈরি এসব রিং সেগমেন্ট ইতোমধ্যে প্রকল্প এলাকায় আনা হয়েছে। ২০২২ সালের ডিসেম্বরের মধ্যেই বঙ্গবন্ধু টানেল নির্মাণ শেষ করতে চাই আমরা।
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক থেকে সিটি আউটার রিং রোড দিয়ে পতেঙ্গা প্রান্তে টানেলে প্রবেশ করে আনোয়ারা প্রান্তে পটিয়া-আনোয়ারা-বাঁশখালী সড়কের চাতরী চৌমুহনী পয়েন্টে ওঠা যাবে। ফলে ঢাকা-চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারের মধ্যে আধুনিক যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে উঠবে এবং এশিয়ান হাইওয়ের সঙ্গে সংযোগ স্থাপিত হবে। যোগাযোগ ব্যবস্থার ব্যাপক উন্নয়ন সাধিত হবে।
এছাড়া কর্ণফুলী নদীর পূর্বপ্রান্তের প্রস্তাবিত শিল্প এলাকার উন্নয়ন ত্বরান্বিত হবে এবং পশ্চিম প্রান্তে অবস্থিত চট্টগ্রাম শহর, চট্টগ্রাম বন্দর ও বিমানবন্দরের সঙ্গে উন্নত ও সহজ যোগাযোগ ব্যবস্থা স্থাপিত হবে।
এতে ভ্রমণ সময় ও খরচ হ্রাস পাবে এবং পূর্বপ্রান্তের শিল্পকারখানার কাঁচামাল, প্রস্তুতকৃত মালামাল চট্টগ্রাম বন্দর, বিমানবন্দর ও দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে পরিবহন প্রক্রিয়া সহজ হবে। কর্ণফুলী নদীর পূর্ব প্রান্তের সঙ্গে সহজ যোগাযোগ ব্যবস্থা স্থাপনের ফলে পূর্বপ্রান্তে পর্যটনশিল্প বিকশিত হবে।
বিজনেস আওয়ার/২৬ নভেম্বর, ২০২০/এ