বিজনেস আওয়ার প্রতিবেদক (টাঙ্গাইল) : টাঙ্গাইলের বাজারে আটশ টাকা মূল্যের ডাই অ্যামোনিয়া ফসফেট (ডিএপি) সারের বস্তা ১ হাজার থেকে ১১০০ টাকা ও ১১শ টাকার ট্রিপল সুপার ফসফেট (টিএসপি) সার বিক্রি করছেন ১৩০০ থেকে ১৪০০ টাকায়। তবে কৃষক সারের রশিদ চাইলে ডিলারের পক্ষ থেকে দেয়া হচ্ছে না কোন রশিদ। রশিদ দিলেও তাতে সরকার নির্ধারিত দাম ৮০০ ও ১১০০ টাকা উল্লেখ করা হয়। সরকারি নির্দেশনাকে তোয়াক্কা না করে সিন্ডিকেট করে অতিরিক্ত দামে সার বিক্রি করছে ডিলাররা।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর থেকে জানিয়েছে, চড়া দামে সার বিক্রির ব্যাপারে কিছুই জানে না তারা। সুনির্দিষ্ট ডিলারের নাম বললে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন টাঙ্গাইলের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. আহসানুল বাশার।
জানা যায়, গত প্রায় দুই মাস ধরেই বাজারে ডিএপি সারের দাম বাড়ছে। প্রতি বস্তা ডিএপি সারের মূল্য সরকার নির্ধারণ করেছে আটশ টাকা। জেলা পর্যায়ের ডিলার ৭৫০ টাকায় এই সার সাব ডিলারদের কাছে বিতরণ করবে। কিন্তু টাঙ্গাইল জেলার ডিলাররা এ নীতিমালা না মেনে দফায় দফায় দাম বাড়িয়ে বিক্রি করছেন। আর সাব ডিলাররা সে সার বিক্রি করছেন ১১০০ টাকায়।
কৃষকদের অভিযোগ, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের নিয়ন্ত্রণে থাকা এসব ডিলাররা বর্ধিত দামে সার বিক্রি করলেও নেয়া হচ্ছেনা কোন ব্যবস্থা। অথচ জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের নির্ধারিত সভায় এ ব্যাপারে আলোচনা হয়েছে। এ দিকে টাঙ্গাইল সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ডিলারদের নন ইউরিয়া সার যাতে নির্ধারিত মূল্যে বিক্রি হয় সেজন্য সতর্ক করে চিঠি দিয়েছেন। কৃষি বিভাগের কর্মকর্তাদের যোগসাজসে অবাধে ও বর্ধিত দামে সার বিক্রি হচ্ছে।
সদর উপজেলার লাউজানা গ্রামের কৃষক হালিম মিয়া বলেন, এ বছর সরিষা চাষের জন্য ডিএপি’র এক বস্তা সার ১৫৫০ টাকা দিয়ে ক্রয় করেছি। এ ছাড়াও টিএসপির এক বস্তার সার ১৪০০ টাকায় কিনতে হয়েছে। রশিদ চাইলে দোকান থেকে কোন ধরনের রশিদ দেওয়া হয় নাই।
ভাটচান্দা গ্রামের কৃষক মো. রুবেল মিয়া বলেন, শুনেছি সরকার সারের দাম কমিয়ে দিয়েছে। কিন্তু কিনতে গিয়ে দেখি সারে দাম অনেক বেশি। এক হাজার টাকার নিচে ডিএপি সার পাওয়া যাচ্ছে না। অপর দিকে ১৩’শ টাকার নিচে টিএসপি সার পাওয়া যায় না। তাহলে আমরা কিভাবে চাষ করবো। কেননা ফসল চাষের প্রায় অর্ধেক খরচ সারেই চলে যায়।
সার ডিলার ধরেরবাড়ীর হারুন এন্টার প্রাইজের মালিক মো. কবির হোসেন বলেন, ডিএপি সার তিন ধরনে হয়। একটি ৯৫০ টাকা আরেকটি ১২০০ ও অপরটি ১৫৫০ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে। সরকার ডিএপি সারের দাম ৮০০ টাকা নির্ধারন করলেও আমাদের বেশি দাম দিয়ে সার ক্রয় করতে হয়। এরপর গাড়ি ভাড়া আছে। যে কারনে সরকারের নির্ধারিত দামে সার বিক্রি করা সম্ভব হচ্ছে না। শহরের বেবীস্ট্যান্ড এলাকার সার ডিলার মো. রোকন উদ্দিন বলেন, ডিএপি সার ৯০০, ৯৫০ ও ১৪৬০ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে।
বিএডিসি বীজ ডিলার এসোসিয়েশনের জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, বেশি দামে সার বিক্রির কোন নিয়ম নেই। কোন অভিযোগ কেউ করেনি। আপনাদের মাধ্যমে জানতে পেরেছি। খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
বাংলাদেশ ফার্টিলাইজার এসোসিয়েশন জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর হোসেন তালুকদার বলেন, ডিলারদের যেটুকু ডিএপি ও টিএসপি সার দেয়া হয় তা খুবই কম। ডিলারদের বাইরে থেকে বেশি দামে এসব সার কিনতে হয়। তাই বেশি দামে বিক্রি করতে হয়। এ সময় কৃষি পুর্ণবাসনের সার দেয়ার কারণে এ সমস্যা হচ্ছে। খুব শীঘ্রই এ সমস্যা আর থাকবে না।
টাঙ্গাইল সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. জিয়াউর রহমান বলেন, সারের দাম বেশি নেয়ার বিষয়ে কোন কৃষি অভিযোগ করেননি। উপ সহকারি কৃষি কর্মকর্তাদের কঠোর নির্দেশনা দেয়া আছে। সুনির্দিষ্ট তথ্য পেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
তাহলে ডিলারদের কেন সতর্ক করে চিঠি দেয়া হলো এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এটি একটি রুটিন ওয়ার্ক। প্রতি বছর এসময় সতর্ক করে ডিলারদের চিঠি দেয়া হয়।
এ প্রসঙ্গে টাঙ্গাইল কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো.আহসানুল বাশার বলেন, বেশি দামে সার বিক্রির বিষয়টি আমার জানা নেই। সরকার নির্ধারিত মূল্য ১৬টাকা কেজি দরের বেশি বিক্রি করার কোন সুযোগ নেই। এরপরও যদি কেউ গাড়িভাড়া বা অন্যান্য অজুহাতে বেশি দামে সার বিক্রি করেন খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দিয়েছেন তিনি।
বিজনেস আওয়ার/২৯ নভেম্বর, ২০২০/টিএ/এ