ঢাকা , বৃহস্পতিবার, ১৯ ডিসেম্বর ২০২৪, ৪ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

করোনায় বিক্রয় ধসে লোকসান গুণছে বাটা সু

  • পোস্ট হয়েছে : ১১:২৮ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৩ ডিসেম্বর ২০২০
  • 80

বিজনেস আওয়ার প্রতিবেদক : জুতা তৈরী করা বহুজাতিক কোম্পানি বাটা সু’র পণ্য বিক্রয় চলতি বছরের ৯ মাসে (জানুয়ারি-সেপ্টেম্বর ২০) অর্ধেকে নেমে এসেছে। করোনা মহামারির কারনে এই সময় দুটি ঈদে স্বাভাবিক বিক্রি করতে না পারায় এমনটি হয়েছে। কোম্পানিটির রোজার ঈদের সময় সবচেয়ে বেশি বিক্রি হলেও এ বছর ওই সময় পুরো দেশ অঘোষিত লক ডাউনের মধ্যে ছিল। যার কারনে দ্বিতীয় প্রান্তিকে (এপ্রিল-জুন) বিক্রি একেবারে তলানিতে নেমে আসে। এছাড়া করোনার কারনে তৃতীয় প্রান্তিকেও (জুলাই-সেপ্টেম্বর) বিক্রয়ে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। যাতে করে নিয়মিত ভালো মুনাফা করা কোম্পানিটিকে এ বছর বড় লোকসানের মধ্য দিয়ে যেতে হচ্ছে।

কোম্পানির চলতি বছরের ৯ মাসের (জানুয়ারি-সেপ্টেম্বর ২০) অনিরীক্ষিত আর্থিক হিসাব থেকে এ তথ্য পাওয়া গেছে।

বাটা সু কোম্পানিটি দীর্ঘদিন ধরে শেয়ারবাজারে বিনিয়োগকারীদের আস্থার কোম্পানি। নিয়মিত ভালো লভ্যাংশ প্রদান করে আসছিল এবং শেয়ার দরও ভালো। ভালো ব্যবসার কারনে এমনটি করে আসতে পারলেও করোনার কারনে ২০২০ সালে কোম্পানিটি বড় লোকসানে রয়েছে। দ্বিতীয় প্রান্তিকে পণ্য বিক্রির অভাবে কোম্পানিটিকে বড় লোকসান গুণতে হয়েছে। আর তৃতীয় প্রান্তিকে বিক্রিতে উন্নতি হলেও অস্বাভাবিক ব্যয় বৃদ্ধিতে লোকসান আরও বেড়েছে।

দেখা গেছে, চলতি বছরের ৯ মাসে কোম্পানিটির ৩৪৪ কোটি ৭৮ লাখ টাকার পণ্য বিক্রয় হয়েছে। যার পরিমাণ আগের বছরের একই সময়ে হয়েছিল ৬২৮ কোটি ৪০ লাখ টাকা। এ হিসাবে বিক্রয় কমেছে ২৮৩ কোটি ৬২ লাখ টাকার বা ৪৫ শতাংশ।

এরমধ্যে চলতি বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে (এপ্রিল-জুন) বিক্রির পরিমাণ ৪১ কোটি ২৫ লাখ টাকা। যার পরিমাণ ২০১৯ সালের একইসময়ে ছিল ২৮২ কোটি ৩ লাখ টাকা। অর্থাৎ দ্বিতীয় প্রান্তিকে বিক্রি কমেছে ২৪০ কোটি ৭৮ লাখ টাকার বা ৮৫ শতাংশ। এই ধসের পেছনে রয়েছে করোনা মহামারি। অথচ এই সময় অনুষ্ঠিত হয়েছে পবিত্র ঈদ-উল ফিতর। অন্যান্যবার এই অনুষ্ঠানে সবচেয়ে বেশি বিক্রি হয় বাটা সুর।

আগের বছরের ৯ মাসে বিক্রয়ের জন্য উৎপাদন ব্যয় হয়েছিল ৩৬৯ কোটি ৮১ লাখ টাকা। যা ছিল বিক্রয়ের ৫৯ শতাংশ। যাতে গ্রোস প্রফিট (মোট মুনাফা) হয়েছিল ২৫৮ কোটি ৫৯ লাখ টাকা। আর এ বছরের ৯ মাসে বিক্রয়ের বিপরীতে ৭৭ শতাংশ হারে উৎপাদন ব্যয় হয়েছে ২৬৬ কোটি ৯৩ লাখ টাকা। যাতে গ্রোস প্রফিট হয়েছে ৭৭ কোটি ৮৫ লাখ টাকা। এ হিসাবে গ্রোস প্রফিট কমেছে ১৮৯ কোটি ৮ লাখ টাকা বা ৭১ শতাংশ

এই ধসের কারনে কোম্পানিটি পরিচালন মুনাফার পরিবর্তে লোকসানে নেমে যায়। আগের বছরের ৯ মাসে ৬১ কোটি ৫৪ লাখ টাকা পরিচালন মুনাফা করা কোম্পানিটির এ বছরের একইসময়ে পরিচালন লোকসান হয়েছে ১০৭ কোটি ৫৬ লাখ টাকা।

এই কোম্পানিটির তৃতীয় প্রান্তিকে বিক্রি অনেকাংশে উন্নতি হয়েছে। কিন্তু বিক্রিত পণ্যের ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় মুনাফা করা সম্ভব হয়নি। কোম্পানিটির আগের বছরের তৃতীয় প্রান্তিকের ১৭০ কোটি ৭০ লাখ টাকার বিক্রয় এ বছরের একইসময়ে হয়েছে ১৩৯ কোটি ৮৫ লাখ টাকা। কিন্তু তারপরেও আগের বছরের তৃতীয় প্রান্তিকের থেকে বিক্রিত পণ্যের ব্যয় এ বছরের একইসময়ে বেশি হয়েছে।

আগের বছরের তৃতীয় প্রান্তিকে ১৭০ কোটি ৭০ লাখ টাকা পণ্যের বিক্রির পেছনে সরাসরি বা প্রত্যক্ষ ব্যয় হয় ৯৪ কোটি ৩৩ লাখ টাকা। যা ছিল বিক্রির ৫৫ শতাংশ। আর এ বছরের তৃতীয় প্রান্তিকে বিক্রির পেছনে ৮০ শতাংশ হারে প্রত্যক্ষ ব্যয় হয়েছে ১১২ কোটি ১২ লাখ টাকা। যাতে আগের বছরের তৃতীয় প্রান্তিকে শেয়ারপ্রতি ৩.৫৬ টাকা মুনাফা করলেও এ বছরের একইসময়ে লোকসান হয়েছে ৩৭.৫৫ টাকা।

কোম্পানিটির ৯ মাসে বিক্রয় থেকে উৎপাদন ব্যয়, পরিচালন ব্যয়, সুদজনিত ব্যয় ও কর সঞ্চিতি বিয়োগ এবং অন্যান্য আয় যোগ শেষে নিট লোকসান দাড়িঁয়েছে ১২২ কোটি ৬ লাখ টাকা বা শেয়ারপ্রতি ৮৯.২৩ টাকা। যা আগের বছরের একই সময়ে নিট মুনাফা হয়েছিল ৩২ কোটি ১৬ লাখ টাকা বা শেয়ারপ্রতি ২৩.৫১ টাকা।

ব্যবসায় ধসের কারন হিসেবে বাটা সু কর্তৃপক্ষ ডিএসইকে জানিয়েছে, সাধারনত ২৫ শতাংশ ব্যবসা হয় ঈদে। এছাড়া ঈদে উচ্চ দরের জুতা বিক্রি হয়। কিন্তু করোনা মহামারির কারনে আগের বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকের তুলনায় মাত্র ১৫ শতাংশ বিক্রি বা আয় হয় এছাড়া তৃতীয় প্রান্তিকেও করোনার কারনে কম বিক্রি হয়েছে।

১৩ কোটি ৬৮ লাখ টাকার পরিশোধিত মূলধনের বাটা সুতে ৩৬৩ কোটি ১০ লাখ টাকার রিজার্ভ রয়েছে। যাতে কোম্পানিটির ৩০ সেপ্টেম্বর শেয়ারপ্রতি নিট সম্পদ (এনএভিপিএস) রয়েছে হিসাবে ২৭৫ টাকা।

বিজনেস আওয়ার/০৩ ডিসেম্বর, ২০২০/আরএ

ফেসবুকের মাধ্যমে আপনার মতামত জানান:
ট্যাগ :

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার মেইলে তথ্য জমা করুন

করোনায় বিক্রয় ধসে লোকসান গুণছে বাটা সু

পোস্ট হয়েছে : ১১:২৮ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৩ ডিসেম্বর ২০২০

বিজনেস আওয়ার প্রতিবেদক : জুতা তৈরী করা বহুজাতিক কোম্পানি বাটা সু’র পণ্য বিক্রয় চলতি বছরের ৯ মাসে (জানুয়ারি-সেপ্টেম্বর ২০) অর্ধেকে নেমে এসেছে। করোনা মহামারির কারনে এই সময় দুটি ঈদে স্বাভাবিক বিক্রি করতে না পারায় এমনটি হয়েছে। কোম্পানিটির রোজার ঈদের সময় সবচেয়ে বেশি বিক্রি হলেও এ বছর ওই সময় পুরো দেশ অঘোষিত লক ডাউনের মধ্যে ছিল। যার কারনে দ্বিতীয় প্রান্তিকে (এপ্রিল-জুন) বিক্রি একেবারে তলানিতে নেমে আসে। এছাড়া করোনার কারনে তৃতীয় প্রান্তিকেও (জুলাই-সেপ্টেম্বর) বিক্রয়ে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। যাতে করে নিয়মিত ভালো মুনাফা করা কোম্পানিটিকে এ বছর বড় লোকসানের মধ্য দিয়ে যেতে হচ্ছে।

কোম্পানির চলতি বছরের ৯ মাসের (জানুয়ারি-সেপ্টেম্বর ২০) অনিরীক্ষিত আর্থিক হিসাব থেকে এ তথ্য পাওয়া গেছে।

বাটা সু কোম্পানিটি দীর্ঘদিন ধরে শেয়ারবাজারে বিনিয়োগকারীদের আস্থার কোম্পানি। নিয়মিত ভালো লভ্যাংশ প্রদান করে আসছিল এবং শেয়ার দরও ভালো। ভালো ব্যবসার কারনে এমনটি করে আসতে পারলেও করোনার কারনে ২০২০ সালে কোম্পানিটি বড় লোকসানে রয়েছে। দ্বিতীয় প্রান্তিকে পণ্য বিক্রির অভাবে কোম্পানিটিকে বড় লোকসান গুণতে হয়েছে। আর তৃতীয় প্রান্তিকে বিক্রিতে উন্নতি হলেও অস্বাভাবিক ব্যয় বৃদ্ধিতে লোকসান আরও বেড়েছে।

দেখা গেছে, চলতি বছরের ৯ মাসে কোম্পানিটির ৩৪৪ কোটি ৭৮ লাখ টাকার পণ্য বিক্রয় হয়েছে। যার পরিমাণ আগের বছরের একই সময়ে হয়েছিল ৬২৮ কোটি ৪০ লাখ টাকা। এ হিসাবে বিক্রয় কমেছে ২৮৩ কোটি ৬২ লাখ টাকার বা ৪৫ শতাংশ।

এরমধ্যে চলতি বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে (এপ্রিল-জুন) বিক্রির পরিমাণ ৪১ কোটি ২৫ লাখ টাকা। যার পরিমাণ ২০১৯ সালের একইসময়ে ছিল ২৮২ কোটি ৩ লাখ টাকা। অর্থাৎ দ্বিতীয় প্রান্তিকে বিক্রি কমেছে ২৪০ কোটি ৭৮ লাখ টাকার বা ৮৫ শতাংশ। এই ধসের পেছনে রয়েছে করোনা মহামারি। অথচ এই সময় অনুষ্ঠিত হয়েছে পবিত্র ঈদ-উল ফিতর। অন্যান্যবার এই অনুষ্ঠানে সবচেয়ে বেশি বিক্রি হয় বাটা সুর।

আগের বছরের ৯ মাসে বিক্রয়ের জন্য উৎপাদন ব্যয় হয়েছিল ৩৬৯ কোটি ৮১ লাখ টাকা। যা ছিল বিক্রয়ের ৫৯ শতাংশ। যাতে গ্রোস প্রফিট (মোট মুনাফা) হয়েছিল ২৫৮ কোটি ৫৯ লাখ টাকা। আর এ বছরের ৯ মাসে বিক্রয়ের বিপরীতে ৭৭ শতাংশ হারে উৎপাদন ব্যয় হয়েছে ২৬৬ কোটি ৯৩ লাখ টাকা। যাতে গ্রোস প্রফিট হয়েছে ৭৭ কোটি ৮৫ লাখ টাকা। এ হিসাবে গ্রোস প্রফিট কমেছে ১৮৯ কোটি ৮ লাখ টাকা বা ৭১ শতাংশ

এই ধসের কারনে কোম্পানিটি পরিচালন মুনাফার পরিবর্তে লোকসানে নেমে যায়। আগের বছরের ৯ মাসে ৬১ কোটি ৫৪ লাখ টাকা পরিচালন মুনাফা করা কোম্পানিটির এ বছরের একইসময়ে পরিচালন লোকসান হয়েছে ১০৭ কোটি ৫৬ লাখ টাকা।

এই কোম্পানিটির তৃতীয় প্রান্তিকে বিক্রি অনেকাংশে উন্নতি হয়েছে। কিন্তু বিক্রিত পণ্যের ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় মুনাফা করা সম্ভব হয়নি। কোম্পানিটির আগের বছরের তৃতীয় প্রান্তিকের ১৭০ কোটি ৭০ লাখ টাকার বিক্রয় এ বছরের একইসময়ে হয়েছে ১৩৯ কোটি ৮৫ লাখ টাকা। কিন্তু তারপরেও আগের বছরের তৃতীয় প্রান্তিকের থেকে বিক্রিত পণ্যের ব্যয় এ বছরের একইসময়ে বেশি হয়েছে।

আগের বছরের তৃতীয় প্রান্তিকে ১৭০ কোটি ৭০ লাখ টাকা পণ্যের বিক্রির পেছনে সরাসরি বা প্রত্যক্ষ ব্যয় হয় ৯৪ কোটি ৩৩ লাখ টাকা। যা ছিল বিক্রির ৫৫ শতাংশ। আর এ বছরের তৃতীয় প্রান্তিকে বিক্রির পেছনে ৮০ শতাংশ হারে প্রত্যক্ষ ব্যয় হয়েছে ১১২ কোটি ১২ লাখ টাকা। যাতে আগের বছরের তৃতীয় প্রান্তিকে শেয়ারপ্রতি ৩.৫৬ টাকা মুনাফা করলেও এ বছরের একইসময়ে লোকসান হয়েছে ৩৭.৫৫ টাকা।

কোম্পানিটির ৯ মাসে বিক্রয় থেকে উৎপাদন ব্যয়, পরিচালন ব্যয়, সুদজনিত ব্যয় ও কর সঞ্চিতি বিয়োগ এবং অন্যান্য আয় যোগ শেষে নিট লোকসান দাড়িঁয়েছে ১২২ কোটি ৬ লাখ টাকা বা শেয়ারপ্রতি ৮৯.২৩ টাকা। যা আগের বছরের একই সময়ে নিট মুনাফা হয়েছিল ৩২ কোটি ১৬ লাখ টাকা বা শেয়ারপ্রতি ২৩.৫১ টাকা।

ব্যবসায় ধসের কারন হিসেবে বাটা সু কর্তৃপক্ষ ডিএসইকে জানিয়েছে, সাধারনত ২৫ শতাংশ ব্যবসা হয় ঈদে। এছাড়া ঈদে উচ্চ দরের জুতা বিক্রি হয়। কিন্তু করোনা মহামারির কারনে আগের বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকের তুলনায় মাত্র ১৫ শতাংশ বিক্রি বা আয় হয় এছাড়া তৃতীয় প্রান্তিকেও করোনার কারনে কম বিক্রি হয়েছে।

১৩ কোটি ৬৮ লাখ টাকার পরিশোধিত মূলধনের বাটা সুতে ৩৬৩ কোটি ১০ লাখ টাকার রিজার্ভ রয়েছে। যাতে কোম্পানিটির ৩০ সেপ্টেম্বর শেয়ারপ্রতি নিট সম্পদ (এনএভিপিএস) রয়েছে হিসাবে ২৭৫ টাকা।

বিজনেস আওয়ার/০৩ ডিসেম্বর, ২০২০/আরএ

ফেসবুকের মাধ্যমে আপনার মতামত জানান: