বিজনেস আওয়ার প্রতিবেদক : মুক্তিযুদ্ধকালীন রাজাকারদের তালিকা তৈরির বিধান রেখে ‘জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল আইন, ২০২০’ এর খসড়ার নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। সোমবার (৭ ডিসেম্বর) প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে ভার্চ্যুয়াল মন্ত্রিসভা বৈঠকে এ অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
বৈঠক শেষে সচিবালয়ে ব্রিফিংয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযোদ্ধা সংগঠনের নিবন্ধন কীভাবে হবে, মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযুদ্ধ সংশ্লিষ্ট বিদ্যমান সংগঠনের নিবন্ধনের বিধান রয়েছে। কাউন্সিলের কার্যকলাপ পরিচালনা, অর্থায়ন, কাউন্সিলের তহবিল ও বাজেট কীভাবে হবে, এসব বিষয় রাখা হয়েছে।
তিনি বলেন, ২০০২ সালে জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল আইন ছিল। সেই আইন পরিপূর্ণভাবে বর্তমান সময়ের চাহিদা পূরণ করতে পারছিল না। তাই মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল আইনের খসড়া করেছে। এ আইন পাস হলে আগের আইন বাতিল হয়ে যাবে।
আইনে রাজাকারদের তালিকা তৈরির সুযোগ রাখা হচ্ছে কিনা- প্রশ্নে মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানান, ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ থেকে ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত যারা মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় রাজাকার, আলবদর, আলশামস বাহিনীর সদস্য হিসেবে মানবতাবিরোধী কর্মকাণ্ডে লিপ্ত ছিলেন বা আধা-সামরিক বাহিনীর সদস্য হিসেবে সশস্ত্র যুদ্ধে নিয়োজিত থেকে বাংলাদেশের স্বাধীনতা বা মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করেছেন, তাদের একটা তালিকা প্রণয়ন ও গেজেট প্রকাশের জন্য সরকারের কাছে সুপারিশ করবে মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল।
কী ব্যবস্থার সুপারিশ করবে জানতে চাইলে আনোয়ারুল বলেন, এটা ডিপেন্ড করবে কেমন অপরাধ করেছেন, তার ওপর। শুধু সার্টিফিকেট নিয়েছেন, নাকি অন্য সুবিধা নিয়েছেন, নাকি দু’টোই নিয়েছেন বা তার সন্তানরাও সুযোগ-সুবিধা নিয়েছেন কি না, আইন অনুযায়ী শাস্তির সুপারিশ করা হবে। দণ্ডবিধি অনুযায়ী তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এক প্রশ্নে মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানান, রাজাকারের তালিকা করার বিষয়টি খসড়া আইনে রাখা হয়েছে। আইনে সব বিষয়ে ডিটেইল করা নেই, এটা রুল করবে। স্বাধীনতাবিরোধী বলতে কি বোঝাবে রুলে তা বিস্তারিত বলা থাকবে। আগে আইন হোক, এরপর বিধি করবে। তবে কীভাবে এ তালিকা করা হবে, তা নিয়ে আলোচনা হয়নি।
উল্লেখ্য, জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল আইনে এতদিন শুধু মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা তৈরির কথা উল্লেখ থাকলেও স্বাধীনতাবিরোধী, আলশামস, আলবদর, রাজাকারদের তালিকা তৈরির কোনও কথা বলা ছিল না। রাজাকারদের তালিকা প্রকাশ করতে আইনগত কোনও ভিত্তি ছিল না এতদিন।
আইনগত ভিত্তি না থাকায় রাজাকারের তালিকা তৈরির কার্যক্রম থেকে সাময়িকভাবে সরে আসে সরকার। এই তালিকা সরকারের কোন দফতর, সংস্থা বা কোন মন্ত্রণালয় কোন আইনের ক্ষমতাবলে করবে—এ নিয়েও জটিলতা দেখা দেয়। ফলে স্থগিত করা হয় রাজাকারের তালিকা তৈরির কার্যক্রম।
আশা করা হচ্ছে, নতুন আইন কার্যকরের পর এই জটিলতা আর থাকবে না এবং তৈরি করা সম্ভব হবে রাজাকারসহ মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতাকারীদের তালিকা।
বিজনেস আওয়ার/০৭ ডিসেম্বর, ২০২০/এ